তুরস্কে বিক্ষোভ শেষ, টিকে গেল এরদোগানের মসনদ – ইউ এস বাংলা নিউজ




তুরস্কে বিক্ষোভ শেষ, টিকে গেল এরদোগানের মসনদ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৭ মার্চ, ২০২৫ | ৮:১১ 13 ভিউ
ইস্তাম্বুলের মেয়র ইকরাম ইমামোগলুকে গ্রেফতার করার পর তুরস্কজুড়ে যে নজিরবিহীন বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে। গত ১৯ মার্চ থেকে টানা ৭ দিন আন্দোলন করার পর বিক্ষোভকারীরা বাড়ি ফিরে গেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভের সমাপ্তি ঘোষণা করেন দেশটির প্রধান বিরোধীদল সিএইচপির নেতা ওজগুল ওজেল। বলেন, ‘আমরা ৭ দিন সফলভাবে আন্দোলন করেছি। আমরা এখন এই ময়দান থেকে চলে যাব। আন্দোলন নতুন ফরমেটে যাবে। আমরা ইস্তাম্বুলের প্রতিটি ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিল করব। আমরা ঈদের দিন ঈদ জমায়েত করব। আজ ময়দান থেকে চলে যাওয়ার সময় যদি আমাদের কোনো নেতাকর্মীর ওপর আবারও পিপার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়, আবারও লাঠিচার্জ করা হয়,

তাহলে আমরা ৫ লাখ লোক নিয়ে আবারও ময়দানে ফিরে আসব। আমরা মাথানত করিনি। করব না’। এদিকে সরকার পতনের এই আন্দোলনকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সমঝোতার মাধ্যমে কোনো রক্তপাত ছাড়াই এতবড় আন্দোলনকে থামিয়ে দিয়ে তিনি তুরস্কের রাজনীতির অপ্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় হিসাবে নিজেকে আবারও প্রমাণ করলেন। আপাতত তুরস্ক বড় ধরনের অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেল। দুই বারের নির্বাচিত ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলু দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করার পর সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল তুরস্কের প্রধান বিরোধীদল সিএইচপি। টানা ৭ দিন ধরে ইস্তাম্বুল সিটি কর্পোরেশন অফিসের সামনে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীকে হাজির করাতে সক্ষম

হয় দলটি। এতে তুরস্কের মুদ্রার মান কমে গিয়েছিল ৬ শতাংশ। এই সফলতা মেয়রের কারামুক্তির আন্দোলনকে এরদোগানের পতন আন্দোলনে রূপান্তর করে। বিশ্ব মিডিয়ায় আন্দোলন তুরস্কের এরদোগান বিরোধী এই আন্দোলন বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ পায়। সে সঙ্গে বাংলাদেশি মিডিয়াও গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। এরদোগানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলতে থাকে। কেউ কেউ এটিকে এরদোগানের ক্ষমতার শেষ সময় বলে প্রচার করেন। বাংলাদেশি মিডিয়ায় যেসব সংবাদ প্রচার হয় তার বেশিরভাগ পশ্চিমা মিডিয়ার সংবাদের অনুবাদ। যে প্রতিবেদনগুলোতে বেশিরভাগ সময় উঠে এসেছে এরদোগান বিরোধীদের বক্তব্য। তবে এরদোগানের সমর্থক বা তুরস্কের সাধারণ জনগণের বক্তব্য খুব একটা চোখে পড়েনি। ফলে প্রায়ই তুরস্কের সঠিক চিত্রটি ধরতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের

মিডিয়া। আন্দোলন কিভাবে ব্যর্থ হলো এই আন্দোলনে বিরোধীদল তাদের প্রচুর নেতাকর্মীদের জড়ো করতে সফল হলেও সাধারণ জনগণকে খুব একটা টানতে পারেনি। ফলে এটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়নি। কারণ ইস্তাম্বুলের মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেক দিনের এবং তাকে মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও সোশ্যাল মিডিয়াতে চাউর ছিল। তার দলের থেকে কেউ তাকে দুর্নীতি মুক্ত বলতে পারেনি। বরং তার দলের একটি অংশই গোপনে তার দুর্নীতির দলিল দস্তাবেজ তুলে দিয়েছে আদালতের হাতে। উদাহরণ স্বরূপ- একটি কোম্পানিকে ৩২২ মিলিয়ন লিরার টেন্ডার দিয়েছে ইস্তাম্বুল সিটি কর্পোরেশন, সেই একই হিসাব থেকে ২ দিন পর ইমামোগলুর ব্যক্তিগত কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫০ মিলিয়ন লিরা প্রবেশ করেছে। এই জাতীয় অনেক দুর্নীতির

ফাইলগুলো এখন ঘুরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই প্রমাণগুলোকে মিথ্যা বলতে পারছে না বিরোধীদল। ইমামোগলুর বিরুদ্ধে ৫৫৬ বিলিয়ন লিরার ফান্ড তসরুপ করার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষ বলছে, তদন্ত হোক, নির্দোষ হলে ছাড়া পাবে, দোষী হলে সাজা হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। একদিকে দুর্নীতির প্রমাণ অন্যদিকে দলের ভেতরের অন্তর্কোন্দলে এই আন্দোলন টিকতে পারেনি। সেই সঙ্গে তুরস্কে এই মুহূর্তে এরদোগানের বিরুদ্ধে বড় কোনো জনঅসন্তোষ নেই। অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো। রপ্তানি আয় বাড়ছে। রিজার্ভ ১৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে নির্ভার ছিল এরদোগান। যেভাবে আন্দোলন দমন করলেন এরদোগান প্রথম দিকে বিরোধীদলের এই আন্দোলন ছিল চমত্কার সুশৃঙ্খল। প্রতিরাতে নিয়ম করে তারা সিটি অফিসের সামনে জড়ো হতো। দিনে সবাই যার

যার কাজে চলে যেত। কিন্তু পরবর্তীতে তুরস্কের নিষদ্ধি ঘোষিত কিছু দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশ হাজারের বেশি (১,১৩৩) বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। পরে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদলের একটি সমঝোতা হয়। সেখানে সিটি মেয়র কারাগারে থাকায় সেখানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ না দিয়ে বরং বিরোধীদলের থেকেই একজনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকার করা হয়। এতো সিটি কর্পোরেশন কার্যত বিরোধীদলের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আন্দোলন সমাপ্তির ঘোষণা দেয় প্রধান বিরোধীদল। এতে একদিকে যেমন এরদোগানের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পর্দার আড়ালে চলে গেল। একই সঙ্গে তুরস্ক বড় ধরনের ঝামেলা থেকে রেহাই পেল। শক্তি প্রয়োগ না করে কেৌশলে বিরোধীদলকে

ম্যানেজ করে ফেলেছেন এরদোগান। সামনের দিনের রাজনীতি আসলে সময়টা এরদোগানের পক্ষে ছিল। এই আন্দোলনে বিরোধীদল অন্য কোনো বিরোধীদলের সমর্থন পায়নি। কুর্দিরা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আছে। তাই আন্দোলনে যোগ দেয়নি। অন্য দলগুলোও সিটির কাজের ভাগ না পাওয়ার অভিমানে আন্দোলনে আসেনি। এদিকে তুরস্কে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে ট্রাম্প। এরদোগানকে বলেছেন ভালো লিডার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আমেরিকা সফরে গেছেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে উষ্ঞ সম্পর্কের আভাস পাওয়া গেছে। সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব ঠেকাতে এরদোগানকে পাশে দরকার ট্রাম্পের। সামনে এরদোগানের প্রধান চ্যালেঞ্জ মুদ্রাস্ফিতি আরও কমিয়ে আনা। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা। ততদিনে মানুষ ইমামলুর প্রতি মানুষের আবেগ কমে আসতে পারে। সুবিধাজনক পরিস্থিতি দেখতে আগাম নির্বাচন দিয়ে নিজেকে আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করবেন এরদোগান। এই ধরনের জল্পনা রয়েছে তুরস্কে। বড় কোনো ঝামেলা তৈরি না হলে তুরস্কে আবারও এরদোগানই আসছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ভূমিকম্পের পরও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকার বেতন বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ-কান্না শ্রমিকদের সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে লক্ষ্মীপুরের ১০ গ্রামে ঈদ উদযাপন মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ১৬০০ ছোট্ট শিশুর লাশ নেওয়ার কেউ নেই শেষবেলায় ভিড় হলেও ভোগান্তি হয়নি চাঁদের অপেক্ষায় ঈদ খুলনায় মধ্যরাতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি, গ্রেপ্তার ১১ বদলে গেছে ঈদ উদযাপনের ধারা মিয়ানমারে নিহত হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০ মালয়েশিয়ায় ঈদ কবে জানা যাবে রোববার আবেদনের আগেই অর্থছাড় নৌকাডুবি: নারী ও শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু, সংখ্যা আরও বাড়তে পারে রমজানজুড়ে সরব ছিলেন ক্রেতারা স্টেট ডিপার্টমেন্টের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন উমামা নাড়ির টানে বাড়ির পথে জনস্রোত আনন্দঘন ঈদ উপহার দিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে ঈদ রোববার ঈদের বেতন-বোনাস দেয়নি ৭ কারখানা ভূমিকম্পের মধ্যেই ব্যাংককের রাস্তায় শিশুর জন্ম