গাজার ঘরবাড়ি-রাস্তায় লাখ লাখ টন বর্জ্য – ইউ এস বাংলা নিউজ




গাজার ঘরবাড়ি-রাস্তায় লাখ লাখ টন বর্জ্য

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৪ জুন, ২০২৫ | ৯:১৩ 15 ভিউ
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। যুদ্ধের ভয়াবহতায় ঘরহারা হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে তাঁবুতে। শুধু বোমা নয়, গাজাবাসীর জীবন এখন আটকে আছে আরেকটি নীরব বিপর্যয়ের মুখে—ময়লা ও বর্জ্যরে ভয়াবহ স্তূপে। ইসরাইলের টানা বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অবকাঠোমো ধ্বংসের ফলে বর্জ্যরে পাহাড়ে ডুবে গেছে। ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এ শহর এখন লাখ লাখ টন বর্জ্যরে ভাগাড়। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ নগরীর অলিগলি, রাস্তা-ঘরবাড়ির আনাচে-কানাচে এখন বর্জ্য। যার জেরে বেড়েই চলেছে প্রাণঘাতী রোগ, তীব্র দুর্গন্ধ এবং চরম মানবিক সংকট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশনের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও আর অবশিষ্ট নেই সেখানে। বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাঘাট, আশ্রয়কেন্দ্র, এমনকি বাসস্থানগুলোও এখন একেকটা জীবাণু খনিতে পরিণত হয়েছে। ফলে শিশুদের গায়ে

ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এ নীরব সংকট এখন যুদ্ধের সমান ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মিডল ইস্ট আই। ইসরাইলি অবরোধে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে গাজায়। শহরের রাস্তাজুড়ে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন বর্জ্য জমে আছে। যেগুলো থেকে বড় ধরনের রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়েছে। গাজার পৌরসভা জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা দিনরাত চেষ্টা করেও শুধু প্রধান সড়কগুলোই পরিষ্কার রাখতে পারছে। তাও খুব সীমিতভাবে। কারণ, পর্যাপ্ত গাড়ি, তেল, এমনকি যন্ত্রপাতির যে কোনো খুচরা যন্ত্রাংশও নেই তাদের কাছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, গাজার প্রধান বর্জ্য ফেলার জায়গা জাহর আল-দিক এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইলি সেনারা। পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মুহান্না

বলেছেন, শহরটা আবর্জনায় ডুবে যাচ্ছে। রাস্তায় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টন বর্জ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। ইসরাইলের অবরোধের কারণে শুধু বর্জ্য নয়, যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষও গাজার আরেকটি বড় সমস্যা। গত কয়েক মাসের হামলায় গাজায় প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ জমে গেছে। এগুলো সরাতে দরকার ভারী যন্ত্রপাতি। কিন্তু সেসব ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী। পৌরসভা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে, যাতে অন্তত বর্জ্য পরিষ্কারের যন্ত্রপাতি ও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়। তা না হলে, গাজার দুই মিলিয়ন মানুষের জন্য বড় ধরনের রোগ ও মহামারির ঝুঁকি তৈরি হবে। ইতোমধ্যে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয়

নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুতে বাস করা এসব মানুষের চারপাশে জমে আছে ময়লা, আবর্জনা এবং মৃত পশুর দেহ। এ পরিস্থিতি থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। ফলে ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক রোগে ভুগছেন বাসিন্দারা। এ এলাকার বাসিন্দা উম ইয়াসির দাউদ বলেছেন, আমি হাঁপানির রোগী। বাতাসে আসা দুর্গন্ধে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। গাজা শহরের আল-সাহা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু দান জানিয়েছেন, আমার চার মাসের মেয়ের শরীরে ছোট ছোট ফোসকা আর চুলকানি হচ্ছে। এর আগে গত এপ্রিলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় শিশু ও পরিবারগুলো চরম পুষ্টিহীনতা, অসহ্যকর গরম, অপরিষ্কার পরিবেশ ও

চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছে। হাজার হাজার মানুষ বসবাস করা গাজার উপকূলীয় শিবির আল-মাওয়াসিতে বর্জ্যরে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ইউএনআরডব্লিউএ-এর সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা লুইস ওয়াটারিজ বলেছেন, ‘ময়লা, নর্দমা, ইঁদুর, পোকামাকড়—এসব প্রাণী মানুষের আশ্রয়স্থলগুলোয় ঘোরাফেরা করছে।’ দেড় বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে গাজার মানবিক সংকট তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষকে একত্রে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে সেখানে। গাজার কৃষি ও পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে একটি নতুন ভয়াবহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। এতে বলা হয়েছে, গাজার উর্বর জমিগুলো পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্য করে ধ্বংস করা হয়েছে। এ কারণে খাদ্য উৎপাদন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের

অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গাজার ৭৫ শতাংশ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। একসময় গাজা নিজের চাহিদার ৬০ শতাংশ খাদ্য নিজেই উৎপাদন করত। কিন্তু সেই কৃষি খাত এখন প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১ লাখ ২ হাজার ডুনাম (প্রায় ২৫ হাজার একর) কৃষিজমি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাফাহ ও খান ইউনিস এলাকার অসংখ্য সেচক‚প বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছে। আগুন লাগিয়ে অনেক জমিকে বিষাক্ত ও চাষের অযোগ্য করে তোলা হয়েছে। ট্যাংক দিয়ে চাষযোগ্য মাটির উপরের স্তর চ্যাপ্টা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে সেচব্যবস্থা ও ফসল উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবেদনটি বলছে,

এ ক্ষতিগুলো কেবল যুদ্ধের ‘দুর্ঘটনা’ নয়, এটি জীবনধারণের সক্ষমতা মুছে ফেলার একটি পরিকল্পিত প্রয়াস। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এখন গাজার প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থার মধ্যে দিন পার করছে। যারা প্রায় পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, গত মার্চ থেকে ইসরাইলের পূর্ণ অবরোধে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গাজার মানুষ এখন মারাত্মক দুর্ভিক্ষ, অনাহার এবং চিকিৎসাহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। যদিও এখন ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ, ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ প্রস্তুত ২০ হাজার কর্মী, কুরবানির বর্জ্য দিনেই সরাতে চায় ঢাকার দুই সিটি গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে এনসিপি ও চীনা রাষ্ট্রদূতের মধ্যে সংলাপ পবিত্র হজের খুতবা দিলেন ড. সালেহ আল হুমাইদ গাজার পথে গ্রেটা, যা বলল ইসরাইল কুরবানির পশু কেনার পর শরিকের সংখ্যা বাড়ানো যাবে কি? যে কারণে কুরবানি না করার আদেশ দিল মরক্কো সরকার শরিকি কুরবানিতে কেউ হারাম টাকায় অংশ নিলে কুরবানি হবে কি? ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’, হয় না সত্যি সবার দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ জেনেভা ক্যাম্প থেকে ৪ বস্তা টাকা উদ্ধার ফিরতি ঈদযাত্রায় আজ মিলবে ১৫ জুনের টিকিট আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া নেতানিয়াহু ও ইসরায়েল এখন বিশ্বদৃষ্টিতে বিতর্কিত : জরিপ যে নফল রোজা মুছে দেয় দুই বছরের গুনাহ পাকিস্তানে যৌথ অভিযানে খতম ১৪ ‘ভারতীয় মদতপুষ্ট’ সন্ত্রাসী শাহজালালে বিশৃঙ্খলা, যাত্রীর ক্ষোভ নিয়ে মুখ খুলল বেবিচক ১৬ জেলায় সতর্কতা