কেন আফগানিস্তানেই নজর চীন, ভারত ও পাকিস্তানের? – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ১৬ আগস্ট, ২০২৫
     ৯:৫৪ অপরাহ্ণ

কেন আফগানিস্তানেই নজর চীন, ভারত ও পাকিস্তানের?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ আগস্ট, ২০২৫ | ৯:৫৪ 126 ভিউ
আফগানিস্তান—ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বরাবরই বৈশ্বিক শক্তিগুলোর কৌশলগত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু। মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দেশটি ইতিহাসে বারবার পরাশক্তির দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। একসময় ব্রিটিশ ও রুশ সাম্রাজ্যের প্রতিযোগিতা, পরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ঠান্ডা যুদ্ধ সবকিছুরই কেন্দ্রই ছিল আফগানিস্তান। ২০২১ সালে পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করে তালেবান। এরপরই দেশটি ঘিরে প্রতিবেশীদের যেমন- চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে এক ধরনের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, অর্থনৈতিকভাবে মৃতপ্রায় আফগানিস্তানকে নিয়ে কেন এ প্রতিযোগিতা? ১. ভৌগোলিক অবস্থান : সবার জন্যই কৌশলগত সম্পদ আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্রসরোড বা মিলনস্থল। পাকিস্তানের সীমান্ত

ঘেঁষা এই দেশটি চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গেও সংযুক্ত। ভারত সরাসরি আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ না করলেও পাকিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের পথে আফগানিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। চীনের জন্য : আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের দিকে একটি প্রবেশদ্বার এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর জন্য অপরিহার্য। পাকিস্তানের জন্য : আফগানিস্তান তার পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তার সাথে গভীরভাবে জড়িত। কাবুলে কোন ধরনের সরকার থাকবে, তা ইসলামাবাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে। ভারতের জন্য : আফগানিস্তান পাকিস্তানকে ঘিরে ভারতের কৌশলগত পাল্টা ভারসাম্যের জায়গা। কাবুলে ভারতের উপস্থিতি ইসলামাবাদকে বাড়তি চাপের মধ্যে রাখে। ২. নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী ইস্যু আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিগোষ্ঠী ও মাদক পাচারের জন্য পরিচিত। তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার

পর এ উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চীনের দুশ্চিন্তা মূলত শিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে। চীন আশঙ্কা করে, আফগানিস্তান আবারও যদি জঙ্গিগোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয় হয়ে ওঠে, তবে ‘ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ (ETIM)-এর মতো সংগঠন চীনের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানভিত্তিক তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র হামলার শিকার। ইসলামাবাদ তাই চায় কাবুল সরকার এদের দমন করুক। ভারতের উদ্বেগ আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট খোরাসান শাখা (আইএস-কে) নিয়ে। কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় ভারত সবসময় সতর্ক। ৩. অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদ আফগানিস্তানকে বলা হয় ‘অব্যবহৃত খনিজ ভান্ডার।’ যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের খনিজ সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম, তামা,

লোহা, স্বর্ণসহ নানা বিরল ধাতু, যা আধুনিক প্রযুক্তি, ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক শিল্পের জন্য অপরিহার্য। চীন, যাকে বিশ্বে ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী বলা হয়, আফগানিস্তানের এই সম্পদে বিনিয়োগে আগ্রহী। তালেবান সরকার ইতোমধ্যেই চীনের সঙ্গে বেশ কিছু চুক্তি করেছে। ভারত বিগত দুই দশকে আফগানিস্তানে অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে সড়ক, হাসপাতাল, বাঁধ থেকে শুরু করে সংসদ ভবন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। ভারতের লক্ষ্য ছিল কেবল আঞ্চলিক প্রভাব নয়, ভবিষ্যতে খনিজ সম্পদেও অংশীদার হওয়া। পাকিস্তান মূলত ট্রানজিট ও বাণিজ্য রুটের সুবিধা চায়। আফগানিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ার বাজারে প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য বড় অর্থনৈতিক সুযোগ। ৪. রাজনৈতিক প্রভাব ও কূটনৈতিক প্রতিযোগিতা আফগানিস্তান ঘিরে চীন, ভারত

ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তীব্র। চীন তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার প্রথম দেশগুলোর একটি। তাদের লক্ষ্য—পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত করে আফগানিস্তানকে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক জালে টেনে আনা। ভারত সরাসরি তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে মানবিক সহায়তার মাধ্যমে কাবুলে প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ভারতের কৌশল হলো—পাকিস্তানের একচেটিয়া প্রভাব ঠেকানো। পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে এখন সম্পর্ক জটিল। ইসলামাবাদ চায় তালেবান তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্ব দিক, কিন্তু কাবুলের নেতারা সবসময় তা মানছে না। ৫. আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন আফগানিস্তান অস্থিতিশীল থাকলে এর অভিঘাত শুধু কাবুল বা ইসলামাবাদে সীমাবদ্ধ থাকে না; তা পুরো দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। উদ্বাস্তু সংকট, মাদক পাচার, চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা—সবই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্য

হুমকি। তাই চীন, ভারত ও পাকিস্তান প্রত্যেকে চাইছে নিজেদের মতো করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। উপসংহার আফগানিস্তান আজ যেন এক দাবার ছক, যেখানে চীন, ভারত ও পাকিস্তান প্রত্যেকে নিজেদের চাল দিতে ব্যস্ত। কারও লক্ষ্য খনিজ সম্পদ, কারও লক্ষ্য নিরাপত্তা, আবার কারও লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার। তবে এক জিনিস পরিষ্কার—আফগানিস্তানকে ঘিরে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা যত বাড়বে, ততই দেশটি বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আফগানিস্তানকে ঘিরে তৈরি প্রতিযোগিতা শুধু দেশটির মাটিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এই প্রতিযোগিতার প্রভাব পড়বে সরাসরি দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ওপর।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
অবৈধ দখলদার সরকারের শাসনে জনরোষ, ঘরে ঘরে অসন্তোষ জামাতি ষড়যন্ত্রে নির্বাচন অনিশ্চিত, দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষমতায় থাকছেন ডঃ ইউনুস! ইউক্রেন হওয়ার পথে বাংলাদেশ, আতঙ্কিত জনগণ ড. ইউনুসের কূটনীতি সেভেন সিস্টার্সের জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১—অস্ত্রহীন এক ভারতীয় সেনা আর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী উদ্ধার ধর্মান্ধতার নৃশংস উন্মাদনা—ভালুকায় হিন্দু শ্রমিককে হত্যা করে মরদেহে আগুন আইন-শৃঙ্খলা সংকটে বাংলাদেশ,হাদীর মৃত্যুর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার বিজয় দিবসে ফুল দেওয়াই অপরাধ—এই রাষ্ট্র এখন কার দখলে? লুটপাটের মহোৎসবে ঢাকার পানি প্রকল্প বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে একাত্তরের সত্য—সহ্য করতে না পেরে শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জামায়াত–শিবির বাংলাদেশের গর্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক ছায়ানট— অ/গ্নি/সন্ত্রা/সে ভস্মীভূত প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়, ধ্বং/স/স্তূপে পরিণত সংবাদকেন্দ্র সংবাদমাধ্যমে স/ন্ত্রা/স: উ/গ্র/বাদী/দের হামলায় স্তব্ধ “প্রথম আলো” ও “ডেইলি স্টার” ছাপা ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ। গণমাধ্যমে হামলাকারীদের ‘বি/চ্ছি/ন্নতাবাদী উগ্রগোষ্ঠী’ বলে আখ্যায়িত করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে জামাতময় বিজয় উৎসব! তারেকের দেশে ফেরার আগে লন্ডনে জামায়াত আমির: সমঝোতা নাকি গোপন ষড়যন্ত্রের ছক? ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ধ্বংসের মুখে, ইউনূস শাসনে অর্থনীতি ধ্বস! শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইসিটির রায় ‘আইনগতভাবে অবৈধ’: মোহাম্মদ আলী আরাফাত একজন বিদেশি বীরপ্রতীকের গল্প Bangladesh’s Export Downturn: Four Months of Decline