ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
সাংবাদিকের পরে উদ্যোক্তা ‘অপহরণ’ ডিবির: দেশের সব মোবাইল ফোনের দোকান বন্ধের ঘোষণা
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের হামলার পিছনে ছাত্রশিবির, ডিসি মাসুদের বক্তব্য ভাইরাল
৫ ঘণ্টার শৃঙ্খল: জামায়াতের প্রস্তাব নারীকে কর্মক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করার নীলনকশা
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলো নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে ‘গোপন চুক্তি’র অভিযোগ আশরাফুল আলম খোকনের
জুলাই আন্দোলনের মামলার ভয় দেখিয়ে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ: নেপথ্যে ভাইরাল তাহরিমা ও ভুয়া সাংবাদিক চক্র
প্রতিহিংসার রাজনীতি ও ধর্মীয় মেরুকরণই কাল! চাকরিচ্যুত ৩ সহকারী কমিশনার
তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাকরিচ্যুত
ইউনূস সরকারের অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনায় উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে অর্থপাচার
দেশ থেকে ডলারের অস্বাভাবিক বহির্গমন নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা বজায় রয়েছে- ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও অর্থবছরের শুরুতেই আমদানি ব্যয়ের দ্রুত উল্লম্ফনে বৈদেশিক বাণিজ্যে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই অস্বাভাবিক প্রবাহের আড়ালে নতুন করে অর্থপাচারের ধাক্কা কাজ করছে কিনা—তা জরুরি ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন অর্থবছরের শুরুতেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়া, চলতি হিসাবের ঘাটতি ফিরে আসা এবং ডলারের দ্রুত বহির্গমন—সব মিলিয়ে অর্থনীতির জন্য এক স্পষ্ট সতর্কসংকেত। রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে বৃদ্ধি থাকলেও যদি পাচারের কারণে ডলার বাইরে চলে যেতে থাকে, তাহলে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, অর্থপাচারের
আশঙ্কা বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি আন্তঃসম্পর্কিত কারণ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে ডলার বেরিয়ে যাওয়া এবং আমদানির হঠাৎ বৃদ্ধি বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে। ইনভয়েসিংয়ে অনিয়ম, মূল্যঘাটতি, বিদেশ ভ্রমণ–চিকিৎসা–শিক্ষা ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পুরোনো পাচারের পথগুলো আবার সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থপাচারের ঝুঁকি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ডলারে—যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০৭ কোটি ডলার বেশি। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ১,১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যেখানে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কোটি
ডলারে। রমজানকে ঘিরে খাদ্য, ভোজ্যতেল, চিনি ও নিত্যপণ্যে অতিরিক্ত আমদানির পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যয় ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এতে দীর্ঘ সময় পর চলতি হিসাব আবারও ঋণাত্মক হয়ে ৪৮ কোটি ডলার ঘাটতিতে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রয়োজনীয় আমদানির ব্যয় হলেও ডলারের হঠাৎ এত দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। এর মধ্যে অর্থপাচারের প্রভাব আছে বলে তাদের ধারণা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবাহ ভালো থাকলেও এতো বড় অঙ্কের ডলার কোথায় যাচ্ছে—তার সঠিক ব্যাখ্যা নেই। অস্বাভাবিক বহির্গমনের ভেতরে পাচারের উপাদান স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।” তার মতে, আমদানিতে শিথিলতা আসার সুযোগে কিছু গোষ্ঠী ওভার-ইনভয়েসিং ও অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে ডলার
পাচার করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে অর্থপাচার বন্ধ হয়নি—বরং যাদের হাত সুযোগে পৌঁছেছে তারা এখনও পাচার করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “৫ই আগস্টের পর পাচার বন্ধ হয়েছে—এমনটি ভাবার কারণ নেই। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা দেখা গেলেও পাচার ঠেকানোর কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এখন মূল গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিরোধে।” এ সময়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স—যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগও বেড়ে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে—যা এক বছরে তিন গুণের বেশি। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ উল্টো পতনের পথে—গত বছর ৫০ লাখ ডলার নিট বিনিয়োগ থাকলেও এবার তা ঋণাত্মক
৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা ও দেশীয় গোষ্ঠীর ডলার পাচার করার সক্ষমতা—এই বৈপরীত্যই আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাচার হওয়া মোট অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশই হচ্ছে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার বা ট্রেড-বেসড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিতে ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং, মিথ্যা ঘোষণা—এসবের মাধ্যমেই বিপুল অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। বিআইবিএম আয়োজিত সাম্প্রতিক গোলটেবিল আলোচনায় এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এসব উঠে আসে। গবেষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের আইন সংশোধনের পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৯৫টি অর্থপাচারের মামলা তদন্ত করেছে—সবকটিই বাণিজ্যভিত্তিক। এসব ঘটনায় জড়িত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,২০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান
বলেন, “ডলার সংকট মোকাবিলায় আমদানি–সংক্রান্ত কিছু নীতি শিথিল করা হয়েছে। রমজানকে ঘিরে আমদানি বেড়েছে—এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বড় হয়েছে।” তবে তিনি অর্থপাচার নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। ১৬ বছরে দেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের একটি প্রশ্নবিদ্ধ তত্ত্ব হাজির করেছিল ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি। যার সপক্ষে কোনো তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে পারেনি কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বশীলরা উপাত্ত তুলে ধরে দেখিয়েছেন, জাতীয় বাজেটের চেয়ে বাৎসরিক পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে শ্বেতপত্র কমিটি, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থ পাচারের প্রবাহ থামেনি; বরং নতুন অর্থবছরের শুরুতে ডলারের অস্বাভাবিক বহির্গমন বৈদেশিক খাতে নতুন চাপ তৈরি করছে। শ্বেতপত্র কমিটির দাবি—পাচার হওয়া
টাকার বড় অংশই বিভিন্ন ট্যাক্স হ্যাভেনে গেছে, যেখানে অপরাধচক্র বাড়ি কেনা, ব্যবসা স্থাপনসহ নানা বিনিয়োগে অর্থ ব্যবহার করেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক ফার্ম, নজরদারি সংস্থা ও আইনজীবী গোষ্ঠীর মাধ্যমে লবিং চলছে। সরকারি দপ্তরগুলোকেও সমন্বিতভাবে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “অন্তত দেড়শত ব্যক্তির বিদেশে পাঠানো অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যারা টাকা সরিয়েছে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে বিদেশে অর্থ পাঠানো অনেক ব্যক্তির লেনদেনও নজরদারিতে আছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন করে পাচার বন্ধ না করলে পুরোনো অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা অর্থহীন হয়ে পড়বে। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন বলেন, “ক্ষমতায় থাকলে যে–কোনো সরকারই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরই অনিয়ম সামনে আসে। তাই পুরোনো অর্থ উদ্ধারের চাইতে এখনই পাচার রোধ জরুরি।” এদিকে বাণিজ্যভিত্তিক পাচার ঠেকাতে এডি ব্যাংকগুলোকে আমদানিতে কঠোর নীতি মানার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উচ্চমূল্যের এলসি খোলা, পণ্যমূল্য যাচাই, নথির যথাযথ রিপোর্টিং—সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ায় নীতিমালায় সংশোধন আনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে—কিছু ব্যাংক পণ্যমূল্য যাচাই না করে এলসি খুলছে, যা ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ বাড়াচ্ছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে—“প্রতি আমদানিতে ঘোষিত মূল্যের সত্যতা নিশ্চিত করতেই হবে।” ১৫ই অক্টোবর জারি করা সার্কুলারে বলা হয়—ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ১লা নভেম্বর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এখন প্রতিটি আমদানিতে স্বচ্ছ মূল্যঘোষণা, সঠিক নথি ও নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আমদানির মূল্য ও নথি যাচাই: সব আমদানিতে বাণিজ্যিক নথি ও সংশ্লিষ্ট কাগজ ওআইএমএস-এ রিপোর্ট করতে হবে। ইনভয়েসে উল্লেখিত মূল্য যাচাই বাধ্যতামূলক। স্বচ্ছ নিরীক্ষণ: রপ্তানি–আমদানির সব তথ্যভিত্তিক নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের দায়িত্ব: শাখা ও ক্লায়েন্টদের এসব নিয়ম অবহিত করা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নিয়ম না মানলে আমদানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সার্বিকভাবে, অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য—অন্তর্বর্তী সরকারের যে অদক্ষতা, অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ও আমদানি নীতির শিথিলতা মিলিয়ে অর্থপাচারের প্রবাহ আরও বেড়ে গেছে, যা অর্থনীতির জন্য গভীর ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।
আশঙ্কা বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি আন্তঃসম্পর্কিত কারণ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে ডলার বেরিয়ে যাওয়া এবং আমদানির হঠাৎ বৃদ্ধি বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে। ইনভয়েসিংয়ে অনিয়ম, মূল্যঘাটতি, বিদেশ ভ্রমণ–চিকিৎসা–শিক্ষা ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পুরোনো পাচারের পথগুলো আবার সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থপাচারের ঝুঁকি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ডলারে—যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০৭ কোটি ডলার বেশি। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ১,১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যেখানে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কোটি
ডলারে। রমজানকে ঘিরে খাদ্য, ভোজ্যতেল, চিনি ও নিত্যপণ্যে অতিরিক্ত আমদানির পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যয় ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এতে দীর্ঘ সময় পর চলতি হিসাব আবারও ঋণাত্মক হয়ে ৪৮ কোটি ডলার ঘাটতিতে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রয়োজনীয় আমদানির ব্যয় হলেও ডলারের হঠাৎ এত দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। এর মধ্যে অর্থপাচারের প্রভাব আছে বলে তাদের ধারণা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবাহ ভালো থাকলেও এতো বড় অঙ্কের ডলার কোথায় যাচ্ছে—তার সঠিক ব্যাখ্যা নেই। অস্বাভাবিক বহির্গমনের ভেতরে পাচারের উপাদান স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।” তার মতে, আমদানিতে শিথিলতা আসার সুযোগে কিছু গোষ্ঠী ওভার-ইনভয়েসিং ও অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে ডলার
পাচার করছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে অর্থপাচার বন্ধ হয়নি—বরং যাদের হাত সুযোগে পৌঁছেছে তারা এখনও পাচার করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “৫ই আগস্টের পর পাচার বন্ধ হয়েছে—এমনটি ভাবার কারণ নেই। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা দেখা গেলেও পাচার ঠেকানোর কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এখন মূল গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিরোধে।” এ সময়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স—যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগও বেড়ে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে—যা এক বছরে তিন গুণের বেশি। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ উল্টো পতনের পথে—গত বছর ৫০ লাখ ডলার নিট বিনিয়োগ থাকলেও এবার তা ঋণাত্মক
৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা ও দেশীয় গোষ্ঠীর ডলার পাচার করার সক্ষমতা—এই বৈপরীত্যই আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাচার হওয়া মোট অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশই হচ্ছে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার বা ট্রেড-বেসড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিতে ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং, মিথ্যা ঘোষণা—এসবের মাধ্যমেই বিপুল অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। বিআইবিএম আয়োজিত সাম্প্রতিক গোলটেবিল আলোচনায় এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এসব উঠে আসে। গবেষণায় বলা হয়, ২০১৫ সালের আইন সংশোধনের পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৯৫টি অর্থপাচারের মামলা তদন্ত করেছে—সবকটিই বাণিজ্যভিত্তিক। এসব ঘটনায় জড়িত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩,২০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান
বলেন, “ডলার সংকট মোকাবিলায় আমদানি–সংক্রান্ত কিছু নীতি শিথিল করা হয়েছে। রমজানকে ঘিরে আমদানি বেড়েছে—এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বড় হয়েছে।” তবে তিনি অর্থপাচার নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। ১৬ বছরে দেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের একটি প্রশ্নবিদ্ধ তত্ত্ব হাজির করেছিল ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি। যার সপক্ষে কোনো তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে পারেনি কমিটি। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বশীলরা উপাত্ত তুলে ধরে দেখিয়েছেন, জাতীয় বাজেটের চেয়ে বাৎসরিক পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বেশি দেখিয়েছে শ্বেতপত্র কমিটি, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থ পাচারের প্রবাহ থামেনি; বরং নতুন অর্থবছরের শুরুতে ডলারের অস্বাভাবিক বহির্গমন বৈদেশিক খাতে নতুন চাপ তৈরি করছে। শ্বেতপত্র কমিটির দাবি—পাচার হওয়া
টাকার বড় অংশই বিভিন্ন ট্যাক্স হ্যাভেনে গেছে, যেখানে অপরাধচক্র বাড়ি কেনা, ব্যবসা স্থাপনসহ নানা বিনিয়োগে অর্থ ব্যবহার করেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক ফার্ম, নজরদারি সংস্থা ও আইনজীবী গোষ্ঠীর মাধ্যমে লবিং চলছে। সরকারি দপ্তরগুলোকেও সমন্বিতভাবে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “অন্তত দেড়শত ব্যক্তির বিদেশে পাঠানো অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যারা টাকা সরিয়েছে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে বিদেশে অর্থ পাঠানো অনেক ব্যক্তির লেনদেনও নজরদারিতে আছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন করে পাচার বন্ধ না করলে পুরোনো অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা অর্থহীন হয়ে পড়বে। জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন বলেন, “ক্ষমতায় থাকলে যে–কোনো সরকারই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরই অনিয়ম সামনে আসে। তাই পুরোনো অর্থ উদ্ধারের চাইতে এখনই পাচার রোধ জরুরি।” এদিকে বাণিজ্যভিত্তিক পাচার ঠেকাতে এডি ব্যাংকগুলোকে আমদানিতে কঠোর নীতি মানার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উচ্চমূল্যের এলসি খোলা, পণ্যমূল্য যাচাই, নথির যথাযথ রিপোর্টিং—সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ায় নীতিমালায় সংশোধন আনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে—কিছু ব্যাংক পণ্যমূল্য যাচাই না করে এলসি খুলছে, যা ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ বাড়াচ্ছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে—“প্রতি আমদানিতে ঘোষিত মূল্যের সত্যতা নিশ্চিত করতেই হবে।” ১৫ই অক্টোবর জারি করা সার্কুলারে বলা হয়—ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ১লা নভেম্বর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এখন প্রতিটি আমদানিতে স্বচ্ছ মূল্যঘোষণা, সঠিক নথি ও নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আমদানির মূল্য ও নথি যাচাই: সব আমদানিতে বাণিজ্যিক নথি ও সংশ্লিষ্ট কাগজ ওআইএমএস-এ রিপোর্ট করতে হবে। ইনভয়েসে উল্লেখিত মূল্য যাচাই বাধ্যতামূলক। স্বচ্ছ নিরীক্ষণ: রপ্তানি–আমদানির সব তথ্যভিত্তিক নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের দায়িত্ব: শাখা ও ক্লায়েন্টদের এসব নিয়ম অবহিত করা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নিয়ম না মানলে আমদানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সার্বিকভাবে, অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য—অন্তর্বর্তী সরকারের যে অদক্ষতা, অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা ও আমদানি নীতির শিথিলতা মিলিয়ে অর্থপাচারের প্রবাহ আরও বেড়ে গেছে, যা অর্থনীতির জন্য গভীর ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।



