ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
মোহাম্মদপুর থানার সামনে পরিত্যক্ত বাজারের ব্যাগে অস্ত্র-গুলি
‘অবৈধ’ নিয়োগে ৩৫ বছর শিক্ষকতা
মিরপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িতে আগুনের ঘটনায় গ্রেফতার ৩
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ‘মাস্টারমাইন্ড’ ওসি সায়েদ গ্রেফতার
মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার, আটক ৭
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৫ কর্মী গ্রেপ্তার
অপরাধের স্বর্গরাজ্য মোহাম্মদপুর দিনদুপুরে ডাকাতি-ছিনতাই
টাকার বিনিময়ে পদ পেয়ে নিয়ম মানতেন না নাজমা
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম। ২০১৪ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি এ পদে বসেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হন প্রধান শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি সহকারী প্রধান ও প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্লাসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রতিবন্ধীদের টাকা মেরে খাওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এ ছাড়া ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফি, সিটি পরীক্ষার ফি, সরকারি খাতে আসা টাকা, ডায়েরি, সিলেবাস, আইডি কার্ড ও খাতা বিক্রির টাকা ঠিকমতো বিদ্যালয়ের হিসাবে
জমা না দিয়ে আত্মসাৎ এবং গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারের সরঞ্জাম কেনার টাকাসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা ঠিকমতো খরচ না করার অভিযোগ উঠেছে। এত অভিযোগ থাকলেও এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো প্রতিবাদ করার সাহস কারও ছিল না। কারণ, তার প্রশ্রয়দাতা ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিম (হাজী সেলিম)। তার প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ছাত্রী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগমের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এর সঙ্গে যোগ দেন এলাকাবাসী। পরবর্তী সময়ে তোপের মুখে বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ফের বিদ্যালয়ে ঢুকতে
বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে নাজমা বেগম যেভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন, একই কায়দায় গত বছর প্রধান শিক্ষক হন। এজন্য তাকে দিতে হয়েছে ২৮ লাখ টাকা, যা তিনি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে। যেখানে একজনের সঙ্গে কথোপকথনের সময় নাজমা বেগমকে বলতে শোনা গেছে, ‘হেড মাস্টারের সময় কইতাছে, ডিজির প্রতিনিধি হইব, ২ লাখ টাকা দিতে হইব। আমি বলছি, আমার যে ২৮ লাখ খাইছেন, আমি সেটি বের করমু। আপনি আবার ২ লাখ টাকা চান কেন?’ নাজমা বেগম বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাদ আহমেদকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন। তবে যার সঙ্গে
তিনি এসব কথা বলেছেন, তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। সূত্র আরও জানায়, ২০১৫ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে নাজমা বেগম পেয়েছিলেন ৩২, যা ছিল তৃতীয় সর্বনিম্ন। সে সময় মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করেন নাজমা বেগম। এরপর হাজী সেলিমের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। পরবর্তী সময়ে ফের অর্থের বিনিময়ে হন প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, নাজমা বেগম মূল ক্লাসের সময় ক্লাস না করিয়ে শিক্ষকদের দিয়ে ‘বিশেষ ক্লাসে’র নামে অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকাসহ প্রতি মাসে শিক্ষার্থী বাবদ ২ হাজার
১০০ টাকা করে নিতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানান, নিয়মিত ক্লাসের জায়গায় প্রধান শিক্ষক বিশেষ ক্লাস চাপিয়ে দিতে চাইলে অভিভাবকরা রাজি হননি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবে তিনি সেটি চাপিয়ে দেন। আমরা এর প্রতিবাদ করি, সঙ্গে অভিভাবকরাও ছিলেন। এ কারণে তিনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং ভয়ভীতি দেখান। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বিদ্যালয়টিতে ‘স্কুল ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান’ হিসেবে ৫ লাখ টাকা আসে। এর মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রণোদনা বাবদ ৯০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়। খরচের খাতে আরও ছিল, বই, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষণার সরঞ্জাম কেনা; পানি, শৌচাগার ও কমনরুম উন্নয়ন;
সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ব্যয়। অথচ এসব খাতে এই টাকা খরচ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার, ওয়াকার ও লাঠি দেওয়া হয়েছে মর্মে জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া ১৫ জন সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীকে ৫ হাজার করে ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বাস্তবে প্রতিবন্ধীরা কোনো উপকরণ পাননি। আবার সুবিধাবঞ্চিত সবাই টাকা পাননি। প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য কোনো টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞানাগারে যেসব যন্ত্র কেনা হয়েছে মর্মে ভাউচার দেওয়া হয়েছে, তা-ও সত্য নয়। তিনি বলেন, তালিকা অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিত
ছাত্রীদের যে টাকা দেওয়া হয়েছে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগই তা পাননি বলে আমাদের জানিয়েছেন। একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, একটি তালিকায় দেখলাম, আমার মেয়েকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা এ টাকা পাইনি। আবার আমার মৃত স্বামীর যে স্বাক্ষর, সেই তালিকায় রয়েছে, সেটিও তার নয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, জোর করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে গাইড কিনতে ছাত্রীদের বাধ্য করতেন প্রধান শিক্ষক। বিশেষ ক্লাসের নাম করেও অনেক টাকা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু অভিভাবকদের অনেকের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়, এটি জানালে তিনি উল্টো ক্ষেপে যান। নিয়োগপত্র বা যোগদানপত্র কিংবা একাডেমিক সনদ না থাকলেও ১৪ বছর ধরে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর পদে আছেন সাজিদুর রহমান। যখন যে প্রধান শিক্ষক হন, তাকেই তিনি ম্যানেজ করে ফেলেন। নাজমা বেগমের সময়ও সাজিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারও। জানতে চাইলে সাজিদুর রহমান তার নিয়োগপত্র বা একাডেমিক সনদপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি কী পার? আমি বলেছি, কম্পিউটার চালাতে পারি। তখন আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন আমি কম্পিউটারের কাজগুলো করি। মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি কম্পিউটার কোর্স করার পর অন্য একটি চাকরি নিয়েছিলেন। তারপর এখানে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমা বেগম সব দায় বিদ্যালয়টির আরেক শিক্ষক সাদ আহমেদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সবকিছু পরিচালনা করেন সাদ আহমেদ। এজন্য বিদ্যালয়ের কোনো টাকা-পয়সা আমার হাত দ্বারা স্পর্শও করিনি। এ ছাড়া ২৮ লাখ টাকা দিয়ে প্রধান শিক্ষক হইনি। অডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানানো। নাজমা বেগম বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পরীক্ষায় ভালো করার পরও সাদ আহমদ আমাকে নিয়োগপত্র দিতে চায়নি, উল্টো টাকা চেয়েছে। তখন আমি হাজী সেলিমকে বিষয়টি জানাই। এতে তিনি ক্ষেপে যান। এক সপ্তাহ পর নিয়োগপত্র দেন। কিন্তু আমাকে অফিসিয়াল কোনো কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি। বিশেষ ক্লাসের নামে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেননি বলে দাবি নাজমা বেগমের। অনুদানের টাকারও কোনো হেরফের হয়নি বলে দাবি তার। গাইড বই চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেছেন। অন্য খাতগুলো থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও মিথ্যা দাবি করেন তিনি। সহকারী শিক্ষক সাদ আহমেদ ২৮ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, নাজমা বেগম তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেগুলো মিথ্যা।
জমা না দিয়ে আত্মসাৎ এবং গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারের সরঞ্জাম কেনার টাকাসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা ঠিকমতো খরচ না করার অভিযোগ উঠেছে। এত অভিযোগ থাকলেও এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত দিন কোনো প্রতিবাদ করার সাহস কারও ছিল না। কারণ, তার প্রশ্রয়দাতা ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিম (হাজী সেলিম)। তার প্রশ্রয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ছাত্রী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগমের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এর সঙ্গে যোগ দেন এলাকাবাসী। পরবর্তী সময়ে তোপের মুখে বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ফের বিদ্যালয়ে ঢুকতে
বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে নাজমা বেগম যেভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন, একই কায়দায় গত বছর প্রধান শিক্ষক হন। এজন্য তাকে দিতে হয়েছে ২৮ লাখ টাকা, যা তিনি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড হাতে এসেছে। যেখানে একজনের সঙ্গে কথোপকথনের সময় নাজমা বেগমকে বলতে শোনা গেছে, ‘হেড মাস্টারের সময় কইতাছে, ডিজির প্রতিনিধি হইব, ২ লাখ টাকা দিতে হইব। আমি বলছি, আমার যে ২৮ লাখ খাইছেন, আমি সেটি বের করমু। আপনি আবার ২ লাখ টাকা চান কেন?’ নাজমা বেগম বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাদ আহমেদকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন। তবে যার সঙ্গে
তিনি এসব কথা বলেছেন, তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। সূত্র আরও জানায়, ২০১৫ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে নাজমা বেগম পেয়েছিলেন ৩২, যা ছিল তৃতীয় সর্বনিম্ন। সে সময় মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করেন নাজমা বেগম। এরপর হাজী সেলিমের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হন। পরবর্তী সময়ে ফের অর্থের বিনিময়ে হন প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, নাজমা বেগম মূল ক্লাসের সময় ক্লাস না করিয়ে শিক্ষকদের দিয়ে ‘বিশেষ ক্লাসে’র নামে অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকাসহ প্রতি মাসে শিক্ষার্থী বাবদ ২ হাজার
১০০ টাকা করে নিতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানান, নিয়মিত ক্লাসের জায়গায় প্রধান শিক্ষক বিশেষ ক্লাস চাপিয়ে দিতে চাইলে অভিভাবকরা রাজি হননি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবে তিনি সেটি চাপিয়ে দেন। আমরা এর প্রতিবাদ করি, সঙ্গে অভিভাবকরাও ছিলেন। এ কারণে তিনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং ভয়ভীতি দেখান। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বিদ্যালয়টিতে ‘স্কুল ব্যবস্থাপনা জবাবদিহি অনুদান’ হিসেবে ৫ লাখ টাকা আসে। এর মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রণোদনা বাবদ ৯০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়। খরচের খাতে আরও ছিল, বই, শিক্ষা উপকরণ ও গবেষণার সরঞ্জাম কেনা; পানি, শৌচাগার ও কমনরুম উন্নয়ন;
সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ব্যয়। অথচ এসব খাতে এই টাকা খরচ হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ার, ওয়াকার ও লাঠি দেওয়া হয়েছে মর্মে জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া ১৫ জন সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীকে ৫ হাজার করে ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বাস্তবে প্রতিবন্ধীরা কোনো উপকরণ পাননি। আবার সুবিধাবঞ্চিত সবাই টাকা পাননি। প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের প্রণোদনার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য কোনো টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞানাগারে যেসব যন্ত্র কেনা হয়েছে মর্মে ভাউচার দেওয়া হয়েছে, তা-ও সত্য নয়। তিনি বলেন, তালিকা অনুযায়ী সুবিধাবঞ্চিত
ছাত্রীদের যে টাকা দেওয়া হয়েছে বলা হচ্ছে, বেশিরভাগই তা পাননি বলে আমাদের জানিয়েছেন। একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, একটি তালিকায় দেখলাম, আমার মেয়েকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা এ টাকা পাইনি। আবার আমার মৃত স্বামীর যে স্বাক্ষর, সেই তালিকায় রয়েছে, সেটিও তার নয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, জোর করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে গাইড কিনতে ছাত্রীদের বাধ্য করতেন প্রধান শিক্ষক। বিশেষ ক্লাসের নাম করেও অনেক টাকা নিয়েছেন তিনি। কিন্তু অভিভাবকদের অনেকের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়, এটি জানালে তিনি উল্টো ক্ষেপে যান। নিয়োগপত্র বা যোগদানপত্র কিংবা একাডেমিক সনদ না থাকলেও ১৪ বছর ধরে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর পদে আছেন সাজিদুর রহমান। যখন যে প্রধান শিক্ষক হন, তাকেই তিনি ম্যানেজ করে ফেলেন। নাজমা বেগমের সময়ও সাজিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস ছিল না কারও। জানতে চাইলে সাজিদুর রহমান তার নিয়োগপত্র বা একাডেমিক সনদপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি কী পার? আমি বলেছি, কম্পিউটার চালাতে পারি। তখন আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন আমি কম্পিউটারের কাজগুলো করি। মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি কম্পিউটার কোর্স করার পর অন্য একটি চাকরি নিয়েছিলেন। তারপর এখানে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমা বেগম সব দায় বিদ্যালয়টির আরেক শিক্ষক সাদ আহমেদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সবকিছু পরিচালনা করেন সাদ আহমেদ। এজন্য বিদ্যালয়ের কোনো টাকা-পয়সা আমার হাত দ্বারা স্পর্শও করিনি। এ ছাড়া ২৮ লাখ টাকা দিয়ে প্রধান শিক্ষক হইনি। অডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানানো। নাজমা বেগম বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পরীক্ষায় ভালো করার পরও সাদ আহমদ আমাকে নিয়োগপত্র দিতে চায়নি, উল্টো টাকা চেয়েছে। তখন আমি হাজী সেলিমকে বিষয়টি জানাই। এতে তিনি ক্ষেপে যান। এক সপ্তাহ পর নিয়োগপত্র দেন। কিন্তু আমাকে অফিসিয়াল কোনো কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি। বিশেষ ক্লাসের নামে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেননি বলে দাবি নাজমা বেগমের। অনুদানের টাকারও কোনো হেরফের হয়নি বলে দাবি তার। গাইড বই চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেছেন। অন্য খাতগুলো থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও মিথ্যা দাবি করেন তিনি। সহকারী শিক্ষক সাদ আহমেদ ২৮ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, নাজমা বেগম তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেগুলো মিথ্যা।