উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ ১০ কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি – ইউ এস বাংলা নিউজ




উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ ১০ কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৭ আগস্ট, ২০২৫ | ৯:৪৮ 22 ভিউ
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থান না হওয়া, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ প্রধান ১০ কারণে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। এছাড়া আছে কম জিডিপি প্রবৃদ্ধি, প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও বরাদ্দ না বাড়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যারা আগে থেকেই দরিদ্র, তাদের জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়েছে। পাশাপাশি যারা কিছুটা দারিদ্র্য সীমার উপরে বা কাছাকাছি ছিলেন তারা নিচে নেমে যাওয়ায় নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে। সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন দেশের তিন অর্থনীতিবিদ-ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান

এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। সোমবার প্রকাশিত ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড-২০২৫’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আলাপকালে তারা এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩ বছরে বেড়েছে দেশের দারিদ্র্য হার। ২০২২ সালের বিবিএসের হিসাবে দেশে অতি দারিদ্র্য ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, সেটি ২০২৫ সালে বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া সাধারণ দারিদ্র্য হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মাসিক আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায়

ধারদেনা করে চলছে সংসার। একটি পরিবারের খাবার কিনতে ব্যয় করতে হবে মোট আয়ের ৫৫ শতাংশ। পরিবারে আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা ব্যয় ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ঋণ পরিশোধে যায় ২৭ শতাংশ। বেড়েছে আয়বৈষম্য। এছাড়া নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে সবচেয়ে বড় সংকট। অর্থনীতিবিদরা শুধু দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণই চিহ্নিত করেননি পাশাপাশি সমাধানের পথও দেখিয়েছেন। তারা বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে না পারলে কিছুই হবে না। সুতরাং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে স্বস্তি আনতে হবে। পাশাপাশি মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও বরাদ্দ বাড়ানোর

বিকল্প নেই। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, ২০২২ সালের পর দারিদ্র্য বৃদ্ধির দুটো বড় কারণ তৈরি হয়েছে। একটি হলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীর গতি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি। গত ৩ বছরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে ক্রয় ক্ষমতা নিচে নেমে গেছে। এছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি খুব বেশি হয়নি। দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে নতুন কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ বিনিয়োগ অনুকূল নয়। পাশাপাশি দারিদ্র্য কমানোর মতো কার্যক্রম অর্থনীতিতে অনুপস্থিত ছিল। দেশীয় উৎপাদন বাড়েনি। গত অর্থবছর জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল এ অর্থবছর তার চেয়ে বেশি

কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। সেই সঙ্গে আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশে যতক্ষণ না কোনো নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিচ্ছে ততক্ষণ কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলা যায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো কিছুই হবে না। যতদিন রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থা চলতে থাকবে ততদিন দারিদ্র্য আরও বাড়বে। আসলে শান্তি না এলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতি গতিশীল হয় কিভাবে। তিনি আরও বলেন, সরকার পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আগের মতোই আছে। টাকার অঙ্ক কিংবা পরিসর কোনোটিই বাড়েনি। ট্রাকসেলের কিছু উদ্যোগ আছে। কিন্তু এর প্রভাব খুব বেশি নয়। কেননা যেসব নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হয় সেগুলোর পরিমাণ কম। এছাড়া কতদিন কতজনকে

দেওয়া হচ্ছে সেটি একটি প্রশ্ন। কিন্তু মানুষের তো প্রতিদিন এসব পণ্য দরকার। ট্রাকসেলে যে পরিমাণ পণ্য পাওয়া যায় তা একটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে না। বিষয়টি তো এমন নয় যে, একদিন খেলাম আর বাকি ৬ দিন না খেয়ে থাকা যাবে। প্রতিদিন এবং একাধিকবার মানুষকে খেতে হয়। এদিকে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কৃষি উৎপাদনেও সমস্যা। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। শ্রমিকের মজুরি হার বাড়েনি। অর্থনীতির গতিহীনতা আছে। এগুলো সবকিছুই মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তিনি বলেন, বেসরকারি খাত আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কোনো কিছুই ভাবতে পারছেন না। বেসরকারি খাত যদি সচল না হয় তাহলে

অর্থনীতির পালে হওয়া লাগবে না। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দারিদ্র্য বাড়তেই থাকবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ২০২২ সালের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বড় ফ্যাক্টর ছিল। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে এর সঙ্গে তাল রেখে মজুরি বাড়েনি। ফলে দারিদ্র্য সীমার কাছাকাছি বা উপরে যারা ছিলেন তারা নিচে নেমে গেছেন। এ কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। একটি পরিবারের খাদ্যের পেছনেই খরচ হয় মোট আয়ের ৫৫ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতার অবনমন ঘটেছে। যদি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আয় বাড়ত তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। এদিকে ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর্মসংস্থান বাড়েনি। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়েনি। ফলে বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান হয়নি। যদি কর্মসংস্থান বৃষ্টি হতো তাহলে ইতিবাচক ফল আসত। যদিও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা চাঙা ছিল। সেটি না হলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। গত ৩ বছরে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক অর্থনীতি কিছুটা ভালো হলেও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও ঋণ প্রবাহ বাড়েনি। সেই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ছিল। বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই জায়গায়তেই বড় ঘাটতি দেখেছি। চলতি অর্থবছরে বর্তমান সরকার যে বাজেট দিয়েছে সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে তেমন উদ্যম চোখে পড়েনি। সেটি থাকলে হয়তো ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় পরিবর্তন দরকার ছিল। পাশাপাশি অনেক কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হলো আসল কথা। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস (ব্যবসার খরচ) কমাতে হবে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো গেলে বিনিয়োগ বাড়বে। ফলে কর্মসংস্থান বেড়ে মানুষের আয়ও বাড়বে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে। এজন্য পুরোনো বিনিয়োগকারীরা বসে বসে সময় গুনছেন। বিনিয়োগ করতে তারা পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। দারিদ্র্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, জ্বালানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সংকট দূর করতে হবে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গত তিন বছরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিবেশ দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিম্নমুখী প্রবণতা থাকলেও এখনো যে মূল্যস্ফীতি আছে তা যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। খুব কম দেশই আছে আমাদের চেয়ে কম মূল্যস্ফীতি। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সংকট আছে, মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। অত্যধিক মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে এর প্রভাব পড়েছে দারিদ্র্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূল নয়। ফলে নতুন কর্মসংস্থানও হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার যেমন গুরুত্ব দেয়নি, তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও খুব তেমন কোনো উন্নতি করেনি। এক্ষেত্রে সমস্যা রয়েই গেছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা থাকত। এছাড়া একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার থাকলে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি হতো। এটি না হওয়ায় দারিদ্র্যের উল্লম্ফন থাকবে। এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে না। এর মধ্যেই থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আরও ভয়ংকর হচ্ছে উত্তর কোরিয়া গাজায় একদিনে নিহত আরও ৬৪, ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ১৩ জনের বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে পাকিস্তানি আলেম আলি মির্জা গ্রেফতার ভোটযুদ্ধে প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস ইসরাইলের সঙ্গে আব্রাহাম চুক্তির সম্ভাবনা নাকচ করল সিরিয়া উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ ১০ কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ সংকটাপন্ন ৫ ব্যাংকে ভুগছে তৈরি পোশাক খাত গাজায় একদিনে নিহত আরও ৬৪, ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ১৩ জনের আজারবাইজানের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাস আনবে ইরান বিটিভির নাটকে গাইলেন পপি-রিফাত আরও ২৯২ যুদ্ধবন্দি বিনিময় করল রাশিয়া-ইউক্রেন রাশিয়ার নাকচ, যা বললেন ‘নাছোড়বান্দা’ জেলেনস্কি ভয়ংকর ক্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্রে বিপর্যস্ত ইসরাইল, কিভাবে পেল ইয়েমেন? দারিদ্র্য বেড়ে ২৭.৯৩ শতাংশে ৩ দিনে ৩৩ জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমশক্তির শীর্ষে বাংলাদেশি কর্মী ধেয়ে আসছে বছরের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘কাজিকি’ হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিতে কনটেন্ট বানাতেন তৌহিদ আফ্রিদি