ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
পরিবারের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বললেন জয়
জাহাজে সাত খুন: গ্রেপ্তার ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে
প্রকাশ্যে দুর্নীতি কমার সঙ্গে কমেছে কাজের গতিও
খুলনা থেকে পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস
আসামে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেফতার
জলবায়ু প্রশমনে নতুন এনডিসিতে ভূমি, বন ও জলাভূমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
বৃদ্ধি ভাতা ৫০০০ টাকা প্রত্যাখ্যান, বৈষম্য না মানার প্রত্যয়
কৃষক ও মিলারের অনীহা, সরকারের ভান্ডার খাঁ খাঁ
দফায় দফায় বন্যায় এবার বেশ ভুগেছে মাঠের কৃষক। বানে আমন ক্ষেত ডুবলেও হাল ছাড়েননি তারা। নতুন করে লাগিয়েছেন ধানের চারা। শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে শেষমেশ গোলায় ধান তুলতে পেরে চাষির ঘরে ঘরে আনন্দের দোল। এই অর্থবছরে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। এত উৎপাদনের পরও ধান-চাল সংগ্রহে যেন খাবি খাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
দেশজুড়ে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে তাও মাস পেরিয়েছে। অথচ গত বছরের চেয়ে কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করলেও সরকারের ভান্ডার খাঁ খাঁ করছে। অনেক জেলায় এক ছটাক ধান-চালও সংগ্রহ করা যায়নি। কোথাও কোথাও লক্ষ্যমাত্রার ১ থেকে
২ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত ধান মিলেছে মাত্র ৪ হাজার ৭১২ টন আর সেদ্ধ চাল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ২১ হাজার ৫২৪ টন। বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরা লোকসানের ছুতা তুলে চাল দিচ্ছেন না। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বাইরে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরাও সরকারি গুদামে ধান দিতে নিস্পৃহা দেখাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সংগ্রহ অভিযান বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে সরকার বলছে, এখনও সময় আছে। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। চাষি ও মিলাররা বলছেন, বছর বছর কারসাজি, প্রক্রিয়া জটিলতা, বাজারের চেয়ে কম দামসহ নানা কারণে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ
হয়। কৃষকের আশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিনের জটিলতা দূর করবে। তবে পুরোনো পথে হেঁটে একই গাড্ডায় পড়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকল মালিকরা কারসাজি করছেন। দাম বাড়ানোর চাপে রাখতে সরকারের গুদামে চাল দিচ্ছেন না তারা। আবার সরকারি গুদামে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকায় কৃষক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে স্থানীয় বাজারেই বেচে দেন। ফলে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এবারও পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধান-চালের অভ্যন্তরীণ মজুত না বাড়ালে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও রাষ্ট্রীয় সংগ্রহ পরিকল্পনা সফল করতে জোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের। চালের চুক্তিতে নিস্পৃহা দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অটুট
রেখে মজুত বাড়াতে স্থানীয় বাজার থেকে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে প্রতিবছর। এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য, সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। অন্যদিকে, দেশের কলগুলো থেকেও সরকার চাল কেনে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে চালকলগুলো। চুক্তি অনুযায়ী সরকারের খাদ্যগুদামে কলগুলো চাল সরবরাহ করে। সরকার প্রয়োজনের সময় এই চাল খোলাবাজারে বিক্রি করে। উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে এবারের আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান কেনা হবে সাড়ে তিন লাখ টন। নির্ধারিত কলগুলো থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করার
কথা রয়েছে। এবার সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রতি কেজি ধান ৩৩ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৭ ও আতপ চাল ৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ধান ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আতপ চাল নেওয়া হবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এই মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তরের চুক্তিযোগ্য সেদ্ধ ও আতপ চালকলের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৮১। নির্ধারিত সময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৬টি। চুক্তি করেনি ২ হাজার ৫২৫টি। এ পরিস্থিতিতে গত ২২ ডিসেম্বর এক চিঠিতে চুক্তিবদ্ধ হয়নি– এমন চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তি না মানলে মিলের নিবন্ধন স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্তের মতো শাস্তির মুখোমুখি
হতে হয় বলে বেশির ভাগ মিলার সরকারের কাছে শেষ পর্যন্ত চাল বিক্রি করেন। এ কারণে ধান সংগ্রহে পিছিয়ে থাকলেও চাল সংগ্রহ প্রতিবছর ভালো হয়। তবে এবার চাল সংগ্রহ অভিযানেও ভাটার টান। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলেছে, দেশে ধান-চালের বাজারে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হাত বদল হয় পাঁচবার। প্রতিবার হাত বদলের সময় যোগ হয় খরচ আর মুনাফা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও অস্বাভাবিক মুনাফা করেন চালকল মালিকরা। তারা প্রতি কেজি চাল ও এর উপজাত বিক্রি করে ৮ থেকে ১৩ টাকা ৬৬ পয়সা পর্যন্ত মুনাফা করছেন। ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, অতি মুনাফার লোভে মৌসুমি
ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে গুদামে ভরছেন। এই ধান সিন্ডিকেট করে মিলারদের কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দরে। পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি দামে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে ধান মজুত করছে। এ কারণে মিল পর্যায়ে চাল উৎপাদনে দাম বেড়ে যাচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি গুদামে পৌঁছে দিয়ে ধান বিক্রি করে কৃষক তেমন লাভ করতে পারছেন না। ফলে মিল মালিকদের নিয়োজিত ফড়িয়াদের কাছে বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, এ অবস্থায় মিল মালিকরা এক টাকা বেশি দামে ধান কিনে সরকারের কাছে তিন টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। এতে দুই দিকে ক্ষতি হচ্ছে। যে চাল তারা সরকারের গুদামে দিচ্ছেন, তা আর বাজারে আসছে না। ফলে বাজারে চাল সরবরাহে ভাটা পড়েছে। এতে চালের দাম আরও বাড়ছে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলে বিনিয়োগ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ তলানিতে চাল উৎপাদনের জেলা কুষ্টিয়ায় এ বছর ১৯ হাজার ১০০ টন সেদ্ধ চাল, ৬ হাজার ৭০০ টন ধান এবং ১ হাজার ৬০০ টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। মিল মালিকরা জানান, অন্য বছর নতুন আমন ধান বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমে। এবার ভিন্ন ছবি। প্রতি মণ মোটা ধান কৃষক পর্যায় থেকে মিল মালিকরা কিনছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। সেই চাল ট্রাক ভাড়া দিয়ে মিলে এসে চাল তৈরি করে খরচ পড়ছে প্রায় ৫০ টাকা। সরকার ৪৭ টাকা দর দিলেও মিল মালিকরা বলছেন, কেজিতে তাদের ৩ থেকে ৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। খাজানগর মোকামের চালকল মালিকরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে তারা এখন বিপদে আছেন। ধানের বাজার প্রথম দিকে স্থিতিশীল থাকলেও এখন প্রতিদিন দাম বাড়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। নিবন্ধন ও জামানত বাঁচাতে অনেক মালিক কিছু লোকসান হলেও চাল সরবরাহ করছেন। চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রশিদ অটোরাইস মিলের কর্ণধার আবদুর রশিদ বলেন, এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। খোলাবাজারে যেখানে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি, সেখানে সরকার দর দিয়েছে ৪৭ টাকা। লোকসানে চাল দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। নতুন দর নির্ধারণ করাসহ বোনাস ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার দেশের বাইরে থেকে চাল সংগ্রহ করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীর কোনো লাভ হবে না। ডলার সংকটের এ সময় দেশের বাইরে চাল না কিনে বরং দুই টাকা দর বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাল সংগ্রহ করা উচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার শিমরাইল কান্দি গ্রামের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, আমনের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াই সরকারি গুদামে ধান দিয়ে পোষায় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তকবীর হোসেন জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য ১৫ দিন আগে মাইকিং করেছি। বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষক সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে অনাগ্রহী। কৃষকের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্যগুদাম। এ উপজেলার ২৬ মিলারের মধ্যে ছয়জন চুক্তি করলেও সামান্য চাল দিয়েছেন এক মিলার। কালীগঞ্জসহ ছয় উপজেলাতে প্রায় একই ছবি। ঝিনাইদহের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কোমল চাকমা জানান, কোনো উপজেলাতেই গুদামে ধান নিয়ে আসেননি কৃষক। এ কারণে এক বস্তাও ধান কেনা সম্ভব হয়নি। রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত খাদ্যশস্য নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর অন্য এলাকায় সরবরাহ করা হয়। অথচ রংপুর বিভাগের আট জেলায় ধান সংগ্রহ চলছে শামুক গতিতে। এক মাসের বেশি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ শতাংশ ধান সংগৃহীত হয়েছে। রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪০ টন। গত সোমবার পর্যন্ত ধান সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭১৮ টন। কৃষকের অভিযোগ, ধানে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা না থাকলে তা নিতে চায় না। অনেক সময় এ কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষক ফিরে আসে। পাশাপাশি প্রতি টন ধানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিতে হয় কর্মকর্তাদের। তার ওপর রয়েছে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকদের চাঁদা। এর চেয়ে বাজারে ধান বিক্রিতেই লাভ বেশি। রংপুরের গঙ্গাচড়ার নবনীদাস এলাকার কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, ‘হামরা ধান আবাদ করি। বাড়িত মেশিন না থাকায় ঠিকমতন আর্দ্রতা মাপতে পারি না। ফের খাদ্যগুদামের ধান ফ্যান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। এর হেরফের হইলে ধান ফেরত দেয়। তাতে হামার লাকসান গুনতে হয়।’ নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান থমকে দাঁড়িয়েছে। বাজারে দাম বেশি হওয়াই এ সংকটের প্রধান কারণ। গ্রামে গ্রামে ফড়িয়ার দৌরাত্ম্যও সংগ্রহ অভিযানের বড় বাধা। নওগাঁয় ১৩ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৫ হাজার ৪৩৩ টন লক্ষ্যের বিপরীতে সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ৮৪ টন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চড়া দামে ধান সংগ্রহ করছে। জয়পুরহাটে ৪ হাজার ৮৩৯ টন ধান এবং ৯ হাজার ৫৫৯ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সোমবার পর্যন্ত জেলায় ধান সংগৃহীত হয়েছে ৮১ টন, আর চাল ৭ হাজার টন। বগুড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান-চাল উৎপাদন হয় শেরপুর উপজেলায়। এবার ৮ হাজার ৭৫৫ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ চালকলের বিপরীতে মাত্র ৪ হাজার ৯২১ টন চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে। বাকি মিলাররা চুক্তি করছেন না; কৃষকরাও গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের ভূঁইয়ারহাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেশি হলেও দাম ধরা হয়েছে কম। অন্যদিকে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। অ্যাপস আমরা বুঝি না। খোলাবাজার থেকে কম দামে সরকার ধান কিনছে। সরকারের কাছে ধান বেচে লাভ কী?’ খাদ্যনীতি-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন; ২৬ শতাংশ হচ্ছেন বর্গাচাষি। ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, অনেক এলাকায় ধান-চাল সংগ্রহ একেবারেই কম হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব মিল মালিক এখনও চুক্তি করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুক্তি করেও যারা চাল সরবরাহ করেননি, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে মজুতবিরোধী কার্যক্রম চালানো হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের অবহেলা প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমন সংগ্রহ মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল সরবরাহ করলে কৃষক-মিলারদের লোকসানের সুযোগ নেই। কারণ উৎপাদন খরচের সঙ্গে কিছু লাভ যুক্ত করেই এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী মৌসুমে এই দাম আবারও সমন্বয় করা হবে।
২ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত ধান মিলেছে মাত্র ৪ হাজার ৭১২ টন আর সেদ্ধ চাল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ২১ হাজার ৫২৪ টন। বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরা লোকসানের ছুতা তুলে চাল দিচ্ছেন না। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বাইরে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরাও সরকারি গুদামে ধান দিতে নিস্পৃহা দেখাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সংগ্রহ অভিযান বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে সরকার বলছে, এখনও সময় আছে। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। চাষি ও মিলাররা বলছেন, বছর বছর কারসাজি, প্রক্রিয়া জটিলতা, বাজারের চেয়ে কম দামসহ নানা কারণে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ
হয়। কৃষকের আশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিনের জটিলতা দূর করবে। তবে পুরোনো পথে হেঁটে একই গাড্ডায় পড়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকল মালিকরা কারসাজি করছেন। দাম বাড়ানোর চাপে রাখতে সরকারের গুদামে চাল দিচ্ছেন না তারা। আবার সরকারি গুদামে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকায় কৃষক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে স্থানীয় বাজারেই বেচে দেন। ফলে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এবারও পূরণ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধান-চালের অভ্যন্তরীণ মজুত না বাড়ালে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও রাষ্ট্রীয় সংগ্রহ পরিকল্পনা সফল করতে জোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের। চালের চুক্তিতে নিস্পৃহা দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অটুট
রেখে মজুত বাড়াতে স্থানীয় বাজার থেকে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে প্রতিবছর। এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য, সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। অন্যদিকে, দেশের কলগুলো থেকেও সরকার চাল কেনে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে চালকলগুলো। চুক্তি অনুযায়ী সরকারের খাদ্যগুদামে কলগুলো চাল সরবরাহ করে। সরকার প্রয়োজনের সময় এই চাল খোলাবাজারে বিক্রি করে। উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে কেজিপ্রতি তিন টাকা বাড়িয়ে এবারের আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান কেনা হবে সাড়ে তিন লাখ টন। নির্ধারিত কলগুলো থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহ করার
কথা রয়েছে। এবার সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রতি কেজি ধান ৩৩ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৭ ও আতপ চাল ৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ধান ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আতপ চাল নেওয়া হবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এই মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তরের চুক্তিযোগ্য সেদ্ধ ও আতপ চালকলের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৮১। নির্ধারিত সময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৬টি। চুক্তি করেনি ২ হাজার ৫২৫টি। এ পরিস্থিতিতে গত ২২ ডিসেম্বর এক চিঠিতে চুক্তিবদ্ধ হয়নি– এমন চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তি না মানলে মিলের নিবন্ধন স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্তের মতো শাস্তির মুখোমুখি
হতে হয় বলে বেশির ভাগ মিলার সরকারের কাছে শেষ পর্যন্ত চাল বিক্রি করেন। এ কারণে ধান সংগ্রহে পিছিয়ে থাকলেও চাল সংগ্রহ প্রতিবছর ভালো হয়। তবে এবার চাল সংগ্রহ অভিযানেও ভাটার টান। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলেছে, দেশে ধান-চালের বাজারে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হাত বদল হয় পাঁচবার। প্রতিবার হাত বদলের সময় যোগ হয় খরচ আর মুনাফা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও অস্বাভাবিক মুনাফা করেন চালকল মালিকরা। তারা প্রতি কেজি চাল ও এর উপজাত বিক্রি করে ৮ থেকে ১৩ টাকা ৬৬ পয়সা পর্যন্ত মুনাফা করছেন। ব্রির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, অতি মুনাফার লোভে মৌসুমি
ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে গুদামে ভরছেন। এই ধান সিন্ডিকেট করে মিলারদের কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দরে। পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি দামে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে ধান মজুত করছে। এ কারণে মিল পর্যায়ে চাল উৎপাদনে দাম বেড়ে যাচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারি গুদামে পৌঁছে দিয়ে ধান বিক্রি করে কৃষক তেমন লাভ করতে পারছেন না। ফলে মিল মালিকদের নিয়োজিত ফড়িয়াদের কাছে বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, এ অবস্থায় মিল মালিকরা এক টাকা বেশি দামে ধান কিনে সরকারের কাছে তিন টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। এতে দুই দিকে ক্ষতি হচ্ছে। যে চাল তারা সরকারের গুদামে দিচ্ছেন, তা আর বাজারে আসছে না। ফলে বাজারে চাল সরবরাহে ভাটা পড়েছে। এতে চালের দাম আরও বাড়ছে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলে বিনিয়োগ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ তলানিতে চাল উৎপাদনের জেলা কুষ্টিয়ায় এ বছর ১৯ হাজার ১০০ টন সেদ্ধ চাল, ৬ হাজার ৭০০ টন ধান এবং ১ হাজার ৬০০ টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। মিল মালিকরা জানান, অন্য বছর নতুন আমন ধান বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমে। এবার ভিন্ন ছবি। প্রতি মণ মোটা ধান কৃষক পর্যায় থেকে মিল মালিকরা কিনছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। সেই চাল ট্রাক ভাড়া দিয়ে মিলে এসে চাল তৈরি করে খরচ পড়ছে প্রায় ৫০ টাকা। সরকার ৪৭ টাকা দর দিলেও মিল মালিকরা বলছেন, কেজিতে তাদের ৩ থেকে ৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। খাজানগর মোকামের চালকল মালিকরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে তারা এখন বিপদে আছেন। ধানের বাজার প্রথম দিকে স্থিতিশীল থাকলেও এখন প্রতিদিন দাম বাড়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। নিবন্ধন ও জামানত বাঁচাতে অনেক মালিক কিছু লোকসান হলেও চাল সরবরাহ করছেন। চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রশিদ অটোরাইস মিলের কর্ণধার আবদুর রশিদ বলেন, এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। খোলাবাজারে যেখানে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি, সেখানে সরকার দর দিয়েছে ৪৭ টাকা। লোকসানে চাল দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। নতুন দর নির্ধারণ করাসহ বোনাস ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার দেশের বাইরে থেকে চাল সংগ্রহ করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীর কোনো লাভ হবে না। ডলার সংকটের এ সময় দেশের বাইরে চাল না কিনে বরং দুই টাকা দর বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাল সংগ্রহ করা উচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার শিমরাইল কান্দি গ্রামের কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, আমনের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াই সরকারি গুদামে ধান দিয়ে পোষায় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তকবীর হোসেন জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য ১৫ দিন আগে মাইকিং করেছি। বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষক সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে অনাগ্রহী। কৃষকের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কিনতে পারেনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্যগুদাম। এ উপজেলার ২৬ মিলারের মধ্যে ছয়জন চুক্তি করলেও সামান্য চাল দিয়েছেন এক মিলার। কালীগঞ্জসহ ছয় উপজেলাতে প্রায় একই ছবি। ঝিনাইদহের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কোমল চাকমা জানান, কোনো উপজেলাতেই গুদামে ধান নিয়ে আসেননি কৃষক। এ কারণে এক বস্তাও ধান কেনা সম্ভব হয়নি। রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত খাদ্যশস্য নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর অন্য এলাকায় সরবরাহ করা হয়। অথচ রংপুর বিভাগের আট জেলায় ধান সংগ্রহ চলছে শামুক গতিতে। এক মাসের বেশি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ শতাংশ ধান সংগৃহীত হয়েছে। রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪০ টন। গত সোমবার পর্যন্ত ধান সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭১৮ টন। কৃষকের অভিযোগ, ধানে ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা না থাকলে তা নিতে চায় না। অনেক সময় এ কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষক ফিরে আসে। পাশাপাশি প্রতি টন ধানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিতে হয় কর্মকর্তাদের। তার ওপর রয়েছে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকদের চাঁদা। এর চেয়ে বাজারে ধান বিক্রিতেই লাভ বেশি। রংপুরের গঙ্গাচড়ার নবনীদাস এলাকার কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, ‘হামরা ধান আবাদ করি। বাড়িত মেশিন না থাকায় ঠিকমতন আর্দ্রতা মাপতে পারি না। ফের খাদ্যগুদামের ধান ফ্যান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। এর হেরফের হইলে ধান ফেরত দেয়। তাতে হামার লাকসান গুনতে হয়।’ নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান থমকে দাঁড়িয়েছে। বাজারে দাম বেশি হওয়াই এ সংকটের প্রধান কারণ। গ্রামে গ্রামে ফড়িয়ার দৌরাত্ম্যও সংগ্রহ অভিযানের বড় বাধা। নওগাঁয় ১৩ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৫ হাজার ৪৩৩ টন লক্ষ্যের বিপরীতে সংগৃহীত হয়েছে মাত্র ৮৪ টন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চড়া দামে ধান সংগ্রহ করছে। জয়পুরহাটে ৪ হাজার ৮৩৯ টন ধান এবং ৯ হাজার ৫৫৯ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সোমবার পর্যন্ত জেলায় ধান সংগৃহীত হয়েছে ৮১ টন, আর চাল ৭ হাজার টন। বগুড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান-চাল উৎপাদন হয় শেরপুর উপজেলায়। এবার ৮ হাজার ৭৫৫ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ চালকলের বিপরীতে মাত্র ৪ হাজার ৯২১ টন চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে। বাকি মিলাররা চুক্তি করছেন না; কৃষকরাও গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের ভূঁইয়ারহাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেশি হলেও দাম ধরা হয়েছে কম। অন্যদিকে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। অ্যাপস আমরা বুঝি না। খোলাবাজার থেকে কম দামে সরকার ধান কিনছে। সরকারের কাছে ধান বেচে লাভ কী?’ খাদ্যনীতি-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন; ২৬ শতাংশ হচ্ছেন বর্গাচাষি। ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, অনেক এলাকায় ধান-চাল সংগ্রহ একেবারেই কম হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব মিল মালিক এখনও চুক্তি করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চুক্তি করেও যারা চাল সরবরাহ করেননি, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে মজুতবিরোধী কার্যক্রম চালানো হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের অবহেলা প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমন সংগ্রহ মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান-চাল সরবরাহ করলে কৃষক-মিলারদের লোকসানের সুযোগ নেই। কারণ উৎপাদন খরচের সঙ্গে কিছু লাভ যুক্ত করেই এই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী মৌসুমে এই দাম আবারও সমন্বয় করা হবে।