ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় বানু
প্রশিক্ষিত ক্যাডেটরা হন গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় কান্ডারী : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সেবাপ্রত্যাশীর মনোভাব বুঝতে গোপনে তথ্য সংগ্রহ পুলিশের
ত্রিপুরায় হাইকমিশনে হামলা, নিন্দা প্রতিবাদের ঝড়
বন্ধ হতে পারে ভারতীয় টিভি চ্যানেল সম্প্রচার?
বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা, দিল্লিকে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে ঢাকার কড়া বার্তা
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৭৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ
শহিদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে কাজ করা দলগুলোর কর্তব্য: নাহিদ ইসলাম
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের আজীবন বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যেই দাবিদাওয়া পূরণ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে আহতদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রধান উপদেষ্টা ড.
মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান। এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সমন্বয়ক সারজিস আলম, আন্দোলনে শহিদ মুগ্ধর যমজ ভাই ও জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ অংশ নিয়েছেন। আর শতাধিক আহত ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহতরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো: গণ-অভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের অতিদ্রুত মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা আহত হলে যে মানের চিকিৎসা দেওয়া হতো, সে মানের চিকিৎসা দিতে হবে। যারা নিজ খরচে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে শহিদপরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা কার্ডের মাধ্যমে একটি প্রজন্ম পর্যন্ত মাসিক ভাতা
ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহিদ ও আহতদের স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে জাদুঘর নির্মাণ করে প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহিদদের স্মরণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন এবং আহত হয়ে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের মেডিকেল ফাইল তদন্ত করে কোনো ডাক্তার বা মেডিকেলের অবহেলার কারণ খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী দিনে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহিদপরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের মতামত নিতে হবে। বৈঠক শেষে ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন,
যারা গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন, তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবং বেসরকারি বিভিন্ন ফাউন্ডেশনসহ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেগুলো সমন্বয় করে আহত যোদ্ধাদের আমৃত্যু সম্মানের সঙ্গে সব ধরনের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেক আহত যোদ্ধার একটি ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে। কার্ডধারীদের সব ধরনের সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সারা জীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবে। একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে চুক্তির সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। ইতোমধ্যে আহতরা চিকিৎসা করতে যে ব্যয় করেছেন, তা প্রমাণ সাপেক্ষে ফেরত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যারা অন্ধ হয়েছেন, তারা সারা জীবন কীভাবে পরিচালনা করবেন, সেজন্য
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযথ প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে পঙ্গুদের জন্য যার যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, দ্রুত ফিজিওথেরাপি, যন্ত্রের প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের আলোচনায় এসেছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রবোটিক্স চিকিৎসা এবং উন্নত যন্ত্রাংশের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে যারা মানসিক ট্রমায় আছেন, তাদের টেলিমেডেসিনের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি দেওয়া হবে। আমাদের ৮ বিভাগে একটি করে সেন্টার থাকবে, সেখান থেকে এ সেবা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বরের পর একটি সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে ৫ আগস্টের আগে যারা এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা
হবে। সেখানে আপনাদের সব অভিযোগ দেবেন এবং সেখান থেকেই সমাধান করা হবে। এছাড়াও সারা দেশে আপনাদের জন্য ডেডিকেটেড বেড থাকবে সরকারি হাসপাতালগুলোয়। বিশেষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনাদের ঢাকামুখী হতে হবে। ঢাকার সব হাসপাতাল একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা হবে। কোন হাসপাতালে আপনার জন্য সিট আছে, সেটা জানতে পারবেন। এভাবেই আমরা আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে চাই। আহতদের জন্য যে সেবা প্রয়োজন, সেটা যদি দেশে না হয়, তাহলে বিদেশে নিয়ে সেই সেবা নিশ্চিত করা হবে। এসব প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে কোনোটি তিনদিন আবার কোনোটি পাঁচদিন বা ১৫ দিন লাগতে পারে। তবে আমি আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সব দৃশ্যমান হবে। যেগুলো স্বল্পমেয়াদি,
সেগুলো দ্রুত হবে। যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি, সেগুলো একটু সময় লাগবে। তবে প্রক্রিয়ার মধ্যে চলবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ কোনো ধরনের গাফিলতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির বন্দোবস্ত করা হবে। উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা-পুনর্বাসন এবং শহিদপরিবারের পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্তব্য। আহতদের রাস্তায় নামতে হলো কেন? আপনাদের সঙ্গে কি তাহলে সমন্বয়ের অভাব ছিল-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আহত ও যারা শহিদ, তারা কিন্তু শুধু সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত না। তারা রাষ্ট্র এবং জাতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের শ্রদ্ধা, সম্মান করা এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। বর্তমান সরকারের দিক থেকে সেটা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক আলাপে, কথাবার্তায় এবং মিডিয়ায় তাদের কথাবার্তা কম ফোকাস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে কোনো সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না, রাজনৈতিক দলগুলোর এ শহিদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা তাদের রাজনৈতিক কর্তব্য। সর্বোপরি এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য, এই কর্তব্য যেন কেউ অবহেলা না করি। বর্তমান সরকারই তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমাদের সবার আছে। নাহিদ বলেন, যখন শহিদ ও আহতদের কথা জাতীয় পরিসরে আলোচনায় থাকা উচিত ছিল, তখন সবাই শুধু সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে বাকিরা নির্বাচন ও অমুক-তমুক বলার চেষ্টা করছে। তাই সবার কাছে আহ্বান জানাব-আমাদের সবার ফোকাস শহিদপরিবার ও আহতসহ তাদের পরিবারের প্রতি দিই। এর আগে বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতকে দেখতে না যাওয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তারা উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন। কিছু সময় পর উপদেষ্টা ওই হাসপাতাল ত্যাগ করলে বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, তবে আন্দোলনকারীরা তার কাছে দাবিদাওয়া তুলে ধরতে চাননি। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রাত আড়াইটার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সামনে উপস্থিত হন। সেসময় অবস্থানরত জনতার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে আহতদের বিষয়ে প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধারা হবে জানান। তিনি আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের একটি রূপরেখা তৈরি করে তা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকের আশ্বাস দিলে হাসপাতালে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।
মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান। এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সমন্বয়ক সারজিস আলম, আন্দোলনে শহিদ মুগ্ধর যমজ ভাই ও জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ অংশ নিয়েছেন। আর শতাধিক আহত ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহতরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো: গণ-অভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের অতিদ্রুত মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা আহত হলে যে মানের চিকিৎসা দেওয়া হতো, সে মানের চিকিৎসা দিতে হবে। যারা নিজ খরচে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে শহিদপরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা কার্ডের মাধ্যমে একটি প্রজন্ম পর্যন্ত মাসিক ভাতা
ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহিদ ও আহতদের স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে জাদুঘর নির্মাণ করে প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহিদদের স্মরণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন এবং আহত হয়ে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের মেডিকেল ফাইল তদন্ত করে কোনো ডাক্তার বা মেডিকেলের অবহেলার কারণ খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী দিনে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহিদপরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের মতামত নিতে হবে। বৈঠক শেষে ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন,
যারা গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন, তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবং বেসরকারি বিভিন্ন ফাউন্ডেশনসহ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেগুলো সমন্বয় করে আহত যোদ্ধাদের আমৃত্যু সম্মানের সঙ্গে সব ধরনের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেক আহত যোদ্ধার একটি ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে। কার্ডধারীদের সব ধরনের সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সারা জীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবে। একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে চুক্তির সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। ইতোমধ্যে আহতরা চিকিৎসা করতে যে ব্যয় করেছেন, তা প্রমাণ সাপেক্ষে ফেরত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যারা অন্ধ হয়েছেন, তারা সারা জীবন কীভাবে পরিচালনা করবেন, সেজন্য
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযথ প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে পঙ্গুদের জন্য যার যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, দ্রুত ফিজিওথেরাপি, যন্ত্রের প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের আলোচনায় এসেছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রবোটিক্স চিকিৎসা এবং উন্নত যন্ত্রাংশের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে যারা মানসিক ট্রমায় আছেন, তাদের টেলিমেডেসিনের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি দেওয়া হবে। আমাদের ৮ বিভাগে একটি করে সেন্টার থাকবে, সেখান থেকে এ সেবা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ১৭ নভেম্বরের পর একটি সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে ৫ আগস্টের আগে যারা এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা
হবে। সেখানে আপনাদের সব অভিযোগ দেবেন এবং সেখান থেকেই সমাধান করা হবে। এছাড়াও সারা দেশে আপনাদের জন্য ডেডিকেটেড বেড থাকবে সরকারি হাসপাতালগুলোয়। বিশেষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনাদের ঢাকামুখী হতে হবে। ঢাকার সব হাসপাতাল একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা হবে। কোন হাসপাতালে আপনার জন্য সিট আছে, সেটা জানতে পারবেন। এভাবেই আমরা আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে চাই। আহতদের জন্য যে সেবা প্রয়োজন, সেটা যদি দেশে না হয়, তাহলে বিদেশে নিয়ে সেই সেবা নিশ্চিত করা হবে। এসব প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে কোনোটি তিনদিন আবার কোনোটি পাঁচদিন বা ১৫ দিন লাগতে পারে। তবে আমি আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে সব দৃশ্যমান হবে। যেগুলো স্বল্পমেয়াদি,
সেগুলো দ্রুত হবে। যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি, সেগুলো একটু সময় লাগবে। তবে প্রক্রিয়ার মধ্যে চলবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ কোনো ধরনের গাফিলতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির বন্দোবস্ত করা হবে। উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা-পুনর্বাসন এবং শহিদপরিবারের পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্তব্য। আহতদের রাস্তায় নামতে হলো কেন? আপনাদের সঙ্গে কি তাহলে সমন্বয়ের অভাব ছিল-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আহত ও যারা শহিদ, তারা কিন্তু শুধু সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত না। তারা রাষ্ট্র এবং জাতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের শ্রদ্ধা, সম্মান করা এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। বর্তমান সরকারের দিক থেকে সেটা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক আলাপে, কথাবার্তায় এবং মিডিয়ায় তাদের কথাবার্তা কম ফোকাস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে কোনো সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না, রাজনৈতিক দলগুলোর এ শহিদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা তাদের রাজনৈতিক কর্তব্য। সর্বোপরি এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য, এই কর্তব্য যেন কেউ অবহেলা না করি। বর্তমান সরকারই তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারবে, এ বিশ্বাস আমাদের সবার আছে। নাহিদ বলেন, যখন শহিদ ও আহতদের কথা জাতীয় পরিসরে আলোচনায় থাকা উচিত ছিল, তখন সবাই শুধু সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে বাকিরা নির্বাচন ও অমুক-তমুক বলার চেষ্টা করছে। তাই সবার কাছে আহ্বান জানাব-আমাদের সবার ফোকাস শহিদপরিবার ও আহতসহ তাদের পরিবারের প্রতি দিই। এর আগে বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতকে দেখতে না যাওয়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তারা উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন। কিছু সময় পর উপদেষ্টা ওই হাসপাতাল ত্যাগ করলে বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, তবে আন্দোলনকারীরা তার কাছে দাবিদাওয়া তুলে ধরতে চাননি। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহিদস্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রাত আড়াইটার দিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সামনে উপস্থিত হন। সেসময় অবস্থানরত জনতার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সচিবালয়ে আহতদের বিষয়ে প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধারা হবে জানান। তিনি আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের একটি রূপরেখা তৈরি করে তা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বৈঠকের আশ্বাস দিলে হাসপাতালে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।