ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
আ‘লীগকে রাজনীতি করতে দেয়ার পক্ষে ৫৭% মানুষ
জামিন পেলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার
আইনজীবী আলিফ হত্যার ভিডিও দেখে ৬ জনকে আটক
‘ইসকন’ বিশ্বের যেসব দেশে নিষিদ্ধ
দেশকে অস্থিতিশীল করার সর্বশেষ ট্রাম্পকার্ড খেলা হচ্ছে: আজহারী
জামা মসজিদ ঘিরে সংঘর্ষের দু’দিন পরে যে চিত্র দেখা গেছে
চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতির কড়া জবাব বাংলাদেশের
হত্যাকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা প্রশাসনের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের রক্ষার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, এরই অংশ হিসাবে মামলার এজাহারে হামলাকারীদের অনেকের নাম উল্লেখ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি মামলা করার পরও এজাহারে নাম পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওইদিন শামীমকে বেধড়ক মারধরের পুরো ঘটনাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে ঘটেছে। এদিকে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় মাহমুদুল হাসান রায়হানকে (২০) গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকা থেকে রোববার ভোরে আশুলিয়া থানা-পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রায়হান জাবির ইংরেজি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ সালনার আরালিয়া গ্রামে। গ্রেফতারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন রায়হানের মা রেহানা
পারভিন। তার দাবি, গণপিটুনি দেখতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি হয়েছে তার ছেলে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘১৮ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অফিস কক্ষের বাইরে শামীম মোল্লাকে বেধড়ক পেটানো হচ্ছিল। ওই সময় প্রক্টরের অফিস কক্ষে বসে ছিলেন ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করেন দুই যুবক। তাদের একজন শার্টের হাতা গুটাচ্ছেন আর ভিসি স্যারকে বলছেন, ‘এরাতো মারতেও পারে না। কি লাঠি দিয়েছে আমাকে। আমিতো মেরে শান্তি পেলাম না। তখন ভিসি স্যার উনাকে বললেন, হাঁফিয়ে গেছ, এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন-এই নাও পানি খাও।’ পানি খাওয়ার পর ভিসি স্যার উঠে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। তিনি
বলেন, তখন আমার ডানপাশে বসা ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছানোয়ার হোসেনকে বললাম ভাই এরা কারা? ভিসি স্যার উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন? তিনি তখন জানালেন এর নাম আবু সাঈদ ভূঁইয়া। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম ব্যাচের সাবেক ছাত্র এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এরপর ভিসির সঙ্গে সেলফি তুলে তারা বেরিয়ে চলে যান। জানা গেছে, আবু সাঈদকে এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি। শুধু তাই নয়, মামলার একদিন পর আসামির সিরিয়াল নতুন করে পরিবর্তন করা হয়েছে। এক নম্বর আসামিকে আট নম্বরে, আর আট নম্বরকে করা হয়েছে এক নম্বর আসামি। এছাড়া চার নম্বর আসামি পরিবর্তন করে নতুন নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ
কামরুল আহসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সঠিক নয়। যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন নতুন দুই প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেন। ওই যোগদান অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম কনফারেন্স কক্ষে। সাড়ে ৭টার দিকে প্রোগ্রাম শেষ হলে আমি জানতে পারি একজন পুরোনো ছাত্রকে মারধর করা হচ্ছে। তাকে প্রক্টর অফিসে আনা হয়েছে। এরপর আমি প্রক্টর অফিসে যাই। পুলিশ আসতে দেরি করছিল। পরে পুলিশ আসে, তখন আমি চলে যাই। তিনি বলেন, সাঈদ নামে যে ছেলেটার কথা বলা হয়েছে, সে এসেছিল, অন্য অনেকেই এসেছিল। উপাচার্য নতুন হওয়াতে তারা সেলফি তুলেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখে আইনের আওতায়
আনা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর একেএম রাশিদুল হাসান বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রক্টর অফিসের পাশে নিরাপত্তা কর্মকর্তার ইউনিটের একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে তালা ভেঙে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। আমরা ঢাল হিসাবে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েও রক্ষা করতে পারিনি। একজনের নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে তাকে অপরাধী হিসাবে আমরা চিহ্নিত করেছি এবং যার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আহসান লাবীবকে এক নাম্বার থেকে আট নাম্বার আসামি কেন করা হলো এই প্রশ্নের উত্তর প্রক্টরের কাছ থেকেও মেলেনি। জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক এলাকায় একটি সেলুনে বসেছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ
ওরফে শামীম মোল্লা। সেখান থেকে তাকে ধরে এনে মারধর করা হয়। তাকে মারতে মারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমের কাছে নিয়ে আসা হয়। আক্রমণকারীরা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের কাছে ভিড়তে পারছিলেন না। একপর্যায়ে শামীম মোল্লাকে প্রক্টরের অফিসের পাশের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখান থেকে তালা ভেঙে তাকে আবারও বের করে নিয়ে এসে মারধর করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে শামীম মোল্লাকে বের করে নেয় আক্রমণকারীরা। একপর্যায়ে শামীম মোল্লাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার সময়ে সমন্বয়ক জিতু, সিয়াম, আরিফ সোহেলসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তারা ছাড়াও সাঈদসহ আরও অনেকেই ছিলেন ঘটনাস্থলে। কেউ কেউ এতটাই উগ্র ছিলেন যে, তাদের কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যায়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সাঈদের ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এই ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়। মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের ছাত্র এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব, ৪৫ ব্যাচের ছাত্র রাজু আহাম্মদ, ৫০ ব্যাচের ছাত্র মাহমুদুল হাসান রায়হান, ৪৪ ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, ৪৯ ব্যাচের হামিদুল্লাহ সালমান, ৪৯ ব্যাচের আতিকুজ্জামান, ৪৭ ব্যাচের সোহাগ মিয়া ও ৪৬ ব্যাচের রাজন মিয়া সরকার। মামলার পর ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই মামলার এজাহারে আসামির নাম আবার বদল করা হয়। এক নম্বর আসামি আহসান লাবীবকে করা হয় আট নম্বর আসামি, আর ৮ নম্বর আসামি রাজন মিয়া সরকারকে করা হয় এই মামলার এক নম্বর আসামি। তাছাড়া ৪ নম্বর আসামি জুবায়ের আহমেদের নাম মামলা থেকে বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয় ৫২ ব্যাচের সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার নাম। এদিকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকায় আহসান লাবিবকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) সুদীপ্ত শাহীন বলেন, এই আটজনের বাইরেও আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই শামীম হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। অজ্ঞাতনামা হিসাবে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাদের স্থলে তদন্ত করে পুলিশ অন্য ঘাতকদের চিহ্নিত করবে বলে আমি মনে করি। চার নম্বর আসামি বদলের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন নিরপরাধ যুবককে আসামি হিসাবে নাম দেওয়া হয়েছিল ভুলবশত। সেটি সংশোধন করে জড়িত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের দাবি গণপিটুনি দেখতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি : জাবি প্রতিনিধি জানান, এদিকে ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে তার পিতা-মাতা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলছেন, কোটা সংস্কার থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন সব জায়গায় রায়হান শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে। এর জন্য আটক, হামলা-মামলাসহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রায়হানের মা রেহেনা পারভিন বলেন, ‘আমার ছেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলন করেছে। এজন্য শামীম মোল্লাসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে। বের করে দিয়েছিল হল থেকেও। পালিয়েও রেহাই পায়নি। সে সময় পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার ছেলেকে আটক করে নির্যাতন করেছে। অথচ ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসায় শামীম মোল্লাসহ ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করে রায়হানসহ অন্যদের মারধর করে। সেই ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘রায়হান আমার একমাত্র আশা-ভরসার স্থল। সেদিন সে শামীম মোল্লার আটকের খবর শুনে দেখতে গিয়েছিল। এজন্য তাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা তো আমার ছেলের প্রতি অবিচার। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই।’ রায়হানের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটা ভিডিও ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। সেদিন আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের কারও নামে তো মামলা হলো না? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’ আসামিদের ক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যাদের বহিষ্কার করা হয়, তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ক্রমিকভাবে বহিষ্কারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই বহিষ্কারাদেশের তালিকা অনুযায়ী মামলা করতে বলা হয়। তবে যিনি মামলা করেছেন তার টাইপিং মিসটেকের কারণে আট নম্বরে থাকা আহসান লাবিবের নাম এক নম্বরে চলে আসে। সেটিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মামলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে মামলার অনুলিপি পৌঁছালে সেখানে ব্যত্যয় দেখা যায়। এখানে কোনো গাফিলতি বা অদক্ষতা কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
পারভিন। তার দাবি, গণপিটুনি দেখতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি হয়েছে তার ছেলে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘১৮ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অফিস কক্ষের বাইরে শামীম মোল্লাকে বেধড়ক পেটানো হচ্ছিল। ওই সময় প্রক্টরের অফিস কক্ষে বসে ছিলেন ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করেন দুই যুবক। তাদের একজন শার্টের হাতা গুটাচ্ছেন আর ভিসি স্যারকে বলছেন, ‘এরাতো মারতেও পারে না। কি লাঠি দিয়েছে আমাকে। আমিতো মেরে শান্তি পেলাম না। তখন ভিসি স্যার উনাকে বললেন, হাঁফিয়ে গেছ, এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন-এই নাও পানি খাও।’ পানি খাওয়ার পর ভিসি স্যার উঠে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। তিনি
বলেন, তখন আমার ডানপাশে বসা ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছানোয়ার হোসেনকে বললাম ভাই এরা কারা? ভিসি স্যার উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন? তিনি তখন জানালেন এর নাম আবু সাঈদ ভূঁইয়া। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম ব্যাচের সাবেক ছাত্র এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এরপর ভিসির সঙ্গে সেলফি তুলে তারা বেরিয়ে চলে যান। জানা গেছে, আবু সাঈদকে এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি। শুধু তাই নয়, মামলার একদিন পর আসামির সিরিয়াল নতুন করে পরিবর্তন করা হয়েছে। এক নম্বর আসামিকে আট নম্বরে, আর আট নম্বরকে করা হয়েছে এক নম্বর আসামি। এছাড়া চার নম্বর আসামি পরিবর্তন করে নতুন নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ
কামরুল আহসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সঠিক নয়। যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন নতুন দুই প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেন। ওই যোগদান অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম কনফারেন্স কক্ষে। সাড়ে ৭টার দিকে প্রোগ্রাম শেষ হলে আমি জানতে পারি একজন পুরোনো ছাত্রকে মারধর করা হচ্ছে। তাকে প্রক্টর অফিসে আনা হয়েছে। এরপর আমি প্রক্টর অফিসে যাই। পুলিশ আসতে দেরি করছিল। পরে পুলিশ আসে, তখন আমি চলে যাই। তিনি বলেন, সাঈদ নামে যে ছেলেটার কথা বলা হয়েছে, সে এসেছিল, অন্য অনেকেই এসেছিল। উপাচার্য নতুন হওয়াতে তারা সেলফি তুলেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখে আইনের আওতায়
আনা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর একেএম রাশিদুল হাসান বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রক্টর অফিসের পাশে নিরাপত্তা কর্মকর্তার ইউনিটের একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে তালা ভেঙে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। আমরা ঢাল হিসাবে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েও রক্ষা করতে পারিনি। একজনের নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে তাকে অপরাধী হিসাবে আমরা চিহ্নিত করেছি এবং যার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আহসান লাবীবকে এক নাম্বার থেকে আট নাম্বার আসামি কেন করা হলো এই প্রশ্নের উত্তর প্রক্টরের কাছ থেকেও মেলেনি। জানা গেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক এলাকায় একটি সেলুনে বসেছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ
ওরফে শামীম মোল্লা। সেখান থেকে তাকে ধরে এনে মারধর করা হয়। তাকে মারতে মারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমের কাছে নিয়ে আসা হয়। আক্রমণকারীরা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের কাছে ভিড়তে পারছিলেন না। একপর্যায়ে শামীম মোল্লাকে প্রক্টরের অফিসের পাশের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখান থেকে তালা ভেঙে তাকে আবারও বের করে নিয়ে এসে মারধর করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে শামীম মোল্লাকে বের করে নেয় আক্রমণকারীরা। একপর্যায়ে শামীম মোল্লাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার সময়ে সমন্বয়ক জিতু, সিয়াম, আরিফ সোহেলসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তারা ছাড়াও সাঈদসহ আরও অনেকেই ছিলেন ঘটনাস্থলে। কেউ কেউ এতটাই উগ্র ছিলেন যে, তাদের কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যায়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সাঈদের ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এই ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়। মামলায় ৮ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের ছাত্র এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব, ৪৫ ব্যাচের ছাত্র রাজু আহাম্মদ, ৫০ ব্যাচের ছাত্র মাহমুদুল হাসান রায়হান, ৪৪ ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, ৪৯ ব্যাচের হামিদুল্লাহ সালমান, ৪৯ ব্যাচের আতিকুজ্জামান, ৪৭ ব্যাচের সোহাগ মিয়া ও ৪৬ ব্যাচের রাজন মিয়া সরকার। মামলার পর ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই মামলার এজাহারে আসামির নাম আবার বদল করা হয়। এক নম্বর আসামি আহসান লাবীবকে করা হয় আট নম্বর আসামি, আর ৮ নম্বর আসামি রাজন মিয়া সরকারকে করা হয় এই মামলার এক নম্বর আসামি। তাছাড়া ৪ নম্বর আসামি জুবায়ের আহমেদের নাম মামলা থেকে বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয় ৫২ ব্যাচের সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার নাম। এদিকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকায় আহসান লাবিবকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) সুদীপ্ত শাহীন বলেন, এই আটজনের বাইরেও আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই শামীম হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। অজ্ঞাতনামা হিসাবে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তাদের স্থলে তদন্ত করে পুলিশ অন্য ঘাতকদের চিহ্নিত করবে বলে আমি মনে করি। চার নম্বর আসামি বদলের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন নিরপরাধ যুবককে আসামি হিসাবে নাম দেওয়া হয়েছিল ভুলবশত। সেটি সংশোধন করে জড়িত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের দাবি গণপিটুনি দেখতে গিয়ে হত্যা মামলার আসামি : জাবি প্রতিনিধি জানান, এদিকে ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে তার পিতা-মাতা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারা বলছেন, কোটা সংস্কার থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন সব জায়গায় রায়হান শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে। এর জন্য আটক, হামলা-মামলাসহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রায়হানের মা রেহেনা পারভিন বলেন, ‘আমার ছেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে আন্দোলন করেছে। এজন্য শামীম মোল্লাসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে নির্যাতন ও অত্যাচার করেছে। বের করে দিয়েছিল হল থেকেও। পালিয়েও রেহাই পায়নি। সে সময় পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার ছেলেকে আটক করে নির্যাতন করেছে। অথচ ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসায় শামীম মোল্লাসহ ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করে রায়হানসহ অন্যদের মারধর করে। সেই ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘রায়হান আমার একমাত্র আশা-ভরসার স্থল। সেদিন সে শামীম মোল্লার আটকের খবর শুনে দেখতে গিয়েছিল। এজন্য তাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা তো আমার ছেলের প্রতি অবিচার। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই।’ রায়হানের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটা ভিডিও ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। সেদিন আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের কারও নামে তো মামলা হলো না? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’ আসামিদের ক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যাদের বহিষ্কার করা হয়, তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ক্রমিকভাবে বহিষ্কারের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই বহিষ্কারাদেশের তালিকা অনুযায়ী মামলা করতে বলা হয়। তবে যিনি মামলা করেছেন তার টাইপিং মিসটেকের কারণে আট নম্বরে থাকা আহসান লাবিবের নাম এক নম্বরে চলে আসে। সেটিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির দেওয়া প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মামলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কাছে মামলার অনুলিপি পৌঁছালে সেখানে ব্যত্যয় দেখা যায়। এখানে কোনো গাফিলতি বা অদক্ষতা কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’