
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ঢাকায় আরেকটি জাপানি সিনেমা

অডিশন ছাড়াই শাকিব খানের ‘প্রিন্স’ সিনেমায় তাসনিয়া ফারিণ

সালমান শাহ মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা, স্ত্রী সামিরাসহ আসামি ১১

অস্ট্রেলিয়ায় ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’ মঞ্চস্থ: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অদম্য সাহসের আখ্যান

প্রতারণার অভিযোগে মুখ খুললেন তানজিন তিশা

এবার দীঘির সঙ্গে জুটি বাঁধছেন বাপ্পারাজ

১৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনাক্ষী!
সালমান শাহ: ২৯ বছর পর হত্যা মামলা, রহস্যের জট খুলছে না কেন

শহরে একজন নায়ক মারা গেছেন। কীভাবে মারা গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কখনো সামনে এসেছে আত্মহত্যা আবার কখনো হত্যার সন্দেহ। তদন্তে নেমেছে থানা-পুলিশ, দায়িত্বভার বদল হয়ে গেছে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের হাতে। কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য উত্তর মেলেনি। তাই ২৯ বছর শেষে প্রশ্নটা থেকেই গেছে- সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি হত্যা?
গতকাল সোমবার আদালতের এক আদেশের পর সালমান শাহর (পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন) মৃত্যুর প্রসঙ্গ আবার সামনে এসেছে। আদেশটি ছিল হত্যা মামলা করার। এতদিন যেসব তদন্ত হয়েছে সেগুলো ছিল রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা ও হত্যা সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রমনা থানাতেই অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
যেখানে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ১১ জনকে। সালমানের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময় ঘুরে ফিরে অভিযুক্ত হিসেবে যেসব ব্যক্তিদের নাম সামনে এসেছিল তারাই আছেন আসামির তালিকায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আত্মহত্যার মামলা এতদিন পর কিসের ভিত্তিতে হত্যা মামলা হলো? পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন। এতদিন আত্মহত্যাই বা কিসের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। হঠাৎ যেভাবে আলোচনায় সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে সবশেষ তদন্তটি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সালমান শাহ খুন হননি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতায় স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহে সালমান আত্মহত্যা করেন। পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ২০২১ সালে ‘নারাজি’ দেন
সালমানের মা নীলা চৌধুরী। প্রায় চার বছর পর গতকাল সোমবার আদালত সালমানের মায়ের সেই রিভিশন আবেদনটি মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার আদেশ দেন। যে ভিত্তিতে হত্যা মামলা সালমান শাহ মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তখন রাজধানীর রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। তদন্ত করে ১৯৯৭ সালে প্রথম সিআইডি আদালতকে জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন। তখনই সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন সালমানের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি রিভিশন মামলা করেন। অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন। কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর মামলাটি পরিচালনা করেন নীলা চৌধুরী। তাঁর আইনজীবী ফারুক আহমেদ গতকাল সোমবার একটি গণমাধ্যমে বলেন, সালমানের মৃত্যুর দিনই অনেকটা পরিবারের অজান্তে
কমর উদ্দিনের স্বাক্ষর নিয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ। সেই মামলার তদন্ত চলছিল। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে রিজভি আহমেদ নামের একজন অন্য এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, সালমানকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে। তিনি নিজেও সেই হত্যায় জড়িত ছিলেন। সালমানের বাবা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে নালিশি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার যাঁরা আসামি, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন হত্যা মামলা করা হবে। আজ মঙ্গলবার ফারুক আহমেদ বলেন, সালমান শাহর মা প্রবাসী হওয়ায় তাঁর পক্ষে মৃতের মামা মোহাম্মদ আলমগীর মামলাটি পরিচালনা করবেন। আসামি কারা মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক। বাকিরা হলেন- শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র
প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ, লতিফা হক লুছি, খলনায়ক ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মে–ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রেজভি আহমেদ ফরহাদ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা আগে যা বলেছিলেন ২০২০ সালে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে সালমানের আত্মহত্যার সঙ্গে শাবনূরের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিল। এ নিয়ে তখন সালমানের স্ত্রী সামিরা হকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সহকর্মী অনিন্দ্য মামুন। সামিরা বলেছিলেন, ‘কাজ করতে করতে একে অপরের কাছাকাছি এসেছিলেন সালমান-শাবনূর। এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। সালমানের সঙ্গে শাবনূর সিঙ্গাপুরেও যান। এই কথাগুলো আমি পিবিআইকে বলেছি। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সালমানও ব্ল্যাকমেইল হওয়ার শঙ্কায় থাকতো।’ একই সময় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন বিভিন্ন সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়
করা ডন। তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। অবশেষে কলিজার বন্ধুকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্ত হলাম।’ আজিজ মোহাম্মদ কোথায় মামলার আরেক আসামি আজিজ মোহাম্মদ (তিনি আজিজ মোহাম্মদ ভাই নামেও পরিচিত)। সালমান শাহ ছাড়াও নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলারও আসামি তিনি। এ মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তবে তিনি বিদেশে থাকেন, মামলায় পলাতক। গত বছরের ৯ মে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে কথা হয়েছিল সহকর্মী সাহাদাত হোসেন পরশের। থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজ বলেছিলেন, তিনি থাইল্যান্ডে নেই। পৃথিবীর কোনো না কোনো এক প্রান্তে আছেন। পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। সালমানের মা যা বলছেন মঙ্গলবার মামলা হওয়ার পর সহকর্মী ইন্দ্রজিৎ সরকারের সঙ্গে
কথা হয় নীলা চৌধুরীর। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে আলাপের সময় বলেন, ‘এখন একটাই চাওয়া- ছেলে হত্যার বিচার।’ আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সরকারকে সে বিষয়টি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন সালমানের মা। তিনি বলেন, প্রশাসনকে এখন বিষয়টি দেখতে হবে। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুকে বারবার আত্মহত্যা বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আদালত রিভিশন মঞ্জুরের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে আমাদের অভিযোগই সঠিক। আমরা আদালতে এটি প্রমাণও করতে পারবো।’ কেন ‘আত্মহত্যা’ বলা হয়েছে ২০২০ সালে পিবিআই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমার পর গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিলেন সংস্থাটির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার বশির আহমেদ। সেখানে সালমানের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়। ১. চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা ২. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ৩. মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টা ৪. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা; জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া ৫. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা মৃত্যুর দিন যা ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। সালমানকে দেখতে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় যান বাবা কমর উদ্দিন। কিন্তু সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে আসেন। দিনটির স্মৃতিচারণ করে ২০১৭ সালে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেন নীলা চৌধুরী। বেলা ১১টার দিকে একটি টেলিফোন কল পেয়ে বাসাটিতে যান নীলা। দেখেন বিছানার ওপর সালমানের হাতে ও পায়ে সর্ষের তেল মালিশ করছেন কয়েকজন। খারাপ কিছুর শঙ্কায় ছেলেকে দ্রুত পাশের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেখানে সালমানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর জানানো হয়, এটি আত্মহত্যা। হত্যার অভিযোগ, তদন্ত হাতবদল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানার পর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সালমানের জন্মস্থান সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করেন। সেখানেও আত্মহত্যার আলামত পাওয়ার কথা বলা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান আত্মহত্যা করেছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই নায়কের মৃত্যু আত্মহত্যা হিসেবেই দেখা হয়। তবে শুরু থেকেই পরিবার সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করায় ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম আদালত। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। এরপর মামলার তদন্ত শুরু করে র্যাব। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালে র্যাবও তদন্তের দায়িত্ব হারায়। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ডিসেম্বরে পুনঃতদন্ত শুরু করেছিল পিবিআই। নতুন করে হত্যা মামলা হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব কোন সংস্থা পাবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে এবারও একটি প্রশ্ন সামনে আসছে। এত বছর পর আদৌ কি সালমানের মৃত্যুর রহস্যের জট কাটবে? নাকি আরও দীর্ঘায়িত হবে?
যেখানে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ১১ জনকে। সালমানের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময় ঘুরে ফিরে অভিযুক্ত হিসেবে যেসব ব্যক্তিদের নাম সামনে এসেছিল তারাই আছেন আসামির তালিকায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আত্মহত্যার মামলা এতদিন পর কিসের ভিত্তিতে হত্যা মামলা হলো? পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন। এতদিন আত্মহত্যাই বা কিসের ভিত্তিতে বলা হয়েছে। হঠাৎ যেভাবে আলোচনায় সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে সবশেষ তদন্তটি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সালমান শাহ খুন হননি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যাজনিত। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতায় স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহে সালমান আত্মহত্যা করেন। পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ২০২১ সালে ‘নারাজি’ দেন
সালমানের মা নীলা চৌধুরী। প্রায় চার বছর পর গতকাল সোমবার আদালত সালমানের মায়ের সেই রিভিশন আবেদনটি মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার আদেশ দেন। যে ভিত্তিতে হত্যা মামলা সালমান শাহ মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তখন রাজধানীর রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। তদন্ত করে ১৯৯৭ সালে প্রথম সিআইডি আদালতকে জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন। তখনই সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন সালমানের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি রিভিশন মামলা করেন। অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন। কমর উদ্দিনের মৃত্যুর পর মামলাটি পরিচালনা করেন নীলা চৌধুরী। তাঁর আইনজীবী ফারুক আহমেদ গতকাল সোমবার একটি গণমাধ্যমে বলেন, সালমানের মৃত্যুর দিনই অনেকটা পরিবারের অজান্তে
কমর উদ্দিনের স্বাক্ষর নিয়ে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ। সেই মামলার তদন্ত চলছিল। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে রিজভি আহমেদ নামের একজন অন্য এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, সালমানকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে। তিনি নিজেও সেই হত্যায় জড়িত ছিলেন। সালমানের বাবা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে নালিশি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার যাঁরা আসামি, তাঁদের বিরুদ্ধে এখন হত্যা মামলা করা হবে। আজ মঙ্গলবার ফারুক আহমেদ বলেন, সালমান শাহর মা প্রবাসী হওয়ায় তাঁর পক্ষে মৃতের মামা মোহাম্মদ আলমগীর মামলাটি পরিচালনা করবেন। আসামি কারা মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা হক। বাকিরা হলেন- শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র
প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ, লতিফা হক লুছি, খলনায়ক ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মে–ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রেজভি আহমেদ ফরহাদ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা আগে যা বলেছিলেন ২০২০ সালে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে সালমানের আত্মহত্যার সঙ্গে শাবনূরের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিল। এ নিয়ে তখন সালমানের স্ত্রী সামিরা হকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সহকর্মী অনিন্দ্য মামুন। সামিরা বলেছিলেন, ‘কাজ করতে করতে একে অপরের কাছাকাছি এসেছিলেন সালমান-শাবনূর। এটা আমি মেনে নিতে পারিনি। সালমানের সঙ্গে শাবনূর সিঙ্গাপুরেও যান। এই কথাগুলো আমি পিবিআইকে বলেছি। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সালমানও ব্ল্যাকমেইল হওয়ার শঙ্কায় থাকতো।’ একই সময় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন বিভিন্ন সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়
করা ডন। তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। অবশেষে কলিজার বন্ধুকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্ত হলাম।’ আজিজ মোহাম্মদ কোথায় মামলার আরেক আসামি আজিজ মোহাম্মদ (তিনি আজিজ মোহাম্মদ ভাই নামেও পরিচিত)। সালমান শাহ ছাড়াও নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলারও আসামি তিনি। এ মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তবে তিনি বিদেশে থাকেন, মামলায় পলাতক। গত বছরের ৯ মে আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে কথা হয়েছিল সহকর্মী সাহাদাত হোসেন পরশের। থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজ বলেছিলেন, তিনি থাইল্যান্ডে নেই। পৃথিবীর কোনো না কোনো এক প্রান্তে আছেন। পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। সালমানের মা যা বলছেন মঙ্গলবার মামলা হওয়ার পর সহকর্মী ইন্দ্রজিৎ সরকারের সঙ্গে
কথা হয় নীলা চৌধুরীর। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে আলাপের সময় বলেন, ‘এখন একটাই চাওয়া- ছেলে হত্যার বিচার।’ আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সরকারকে সে বিষয়টি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন সালমানের মা। তিনি বলেন, প্রশাসনকে এখন বিষয়টি দেখতে হবে। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুকে বারবার আত্মহত্যা বলে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আদালত রিভিশন মঞ্জুরের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে আমাদের অভিযোগই সঠিক। আমরা আদালতে এটি প্রমাণও করতে পারবো।’ কেন ‘আত্মহত্যা’ বলা হয়েছে ২০২০ সালে পিবিআই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমার পর গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিলেন সংস্থাটির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার বশির আহমেদ। সেখানে সালমানের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়। ১. চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা ২. স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ৩. মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টা ৪. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা; জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া ৫. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা মৃত্যুর দিন যা ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। সালমানকে দেখতে রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় যান বাবা কমর উদ্দিন। কিন্তু সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে আসেন। দিনটির স্মৃতিচারণ করে ২০১৭ সালে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেন নীলা চৌধুরী। বেলা ১১টার দিকে একটি টেলিফোন কল পেয়ে বাসাটিতে যান নীলা। দেখেন বিছানার ওপর সালমানের হাতে ও পায়ে সর্ষের তেল মালিশ করছেন কয়েকজন। খারাপ কিছুর শঙ্কায় ছেলেকে দ্রুত পাশের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেখানে সালমানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর জানানো হয়, এটি আত্মহত্যা। হত্যার অভিযোগ, তদন্ত হাতবদল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানার পর পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সালমানের জন্মস্থান সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করেন। সেখানেও আত্মহত্যার আলামত পাওয়ার কথা বলা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান আত্মহত্যা করেছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই নায়কের মৃত্যু আত্মহত্যা হিসেবেই দেখা হয়। তবে শুরু থেকেই পরিবার সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করায় ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম আদালত। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। এরপর মামলার তদন্ত শুরু করে র্যাব। কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালে র্যাবও তদন্তের দায়িত্ব হারায়। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ডিসেম্বরে পুনঃতদন্ত শুরু করেছিল পিবিআই। নতুন করে হত্যা মামলা হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব কোন সংস্থা পাবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে এবারও একটি প্রশ্ন সামনে আসছে। এত বছর পর আদৌ কি সালমানের মৃত্যুর রহস্যের জট কাটবে? নাকি আরও দীর্ঘায়িত হবে?