ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
ধানমন্ডিতে দুই কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত কয়েকজন
যাত্রাবাড়ীতে অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে হাজার কোটির মালিক আ.লীগ নেতা দিলীপ
৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে
মিরপুরে আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেফতার ৮
ফের ঢাকা মেডিকেলে ভুয়া নারী চিকিৎসক আটক
রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে কিশোর খুন
সভাপতির পোস্টে লাইক শিক্ষককে অব্যাহতি
শুধু ফেসবুকে একটি পোস্টে লাইক দেওয়ায় শাস্তিস্বরূপ দুই মাসের জন্য সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় এক শিক্ষককে। এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ক্ষমতার প্রভাবে সিনিয়র শিক্ষক নুসরাত জাহানকে এই শাস্তি দেন। অথচ এই সভাপতি পড়াশোনা করেছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকার বিনিময় ১০ শিক্ষককে নিয়োগ, ১৫ শিক্ষককে পদায়ন ও স্থায়ীকরণ করেছেন তিনি। নিজের বলয়ের দুই শিক্ষকের ছয় মাসে দুবার বেতন বৃদ্ধি করেছেন। আর এসব করেছেন এ কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও ক্ষমতার প্রভাবে রাজধানীর উইমেন্স কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোমিওপ্যাথি কলেজ,
শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি কলেজের গভর্নিং বডির দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিটি কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে উইমেন্স কলেজের গভর্নিং বডির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। একইভাবে আর্থিক অনিয়মের কারণে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির পদ ছাড়েন। একই কলেজ থেকে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় থেকে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হন রিয়াজ। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনির ছায়া পড়ে। শিক্ষকদের বিভাজন ও একের পর এক
প্রিন্সিপাল দায়িত্ব থেকে সরে যান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের জন্য কলেজে শিক্ষকদের রেস্টরুম বরাদ্দ নেন সভাপতির নামে। পরবর্তী সময়ে এটা হয় আড্ডাখানা ও গোপন কক্ষ। গভীর রাত পর্যন্ত ওই রুমে অবস্থান করতেন। সেখানে বসে রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলা দিতেন। পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি মনিটরিং করতেন নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে। শিক্ষকদের সাজগোজ ও পোশাক নিয়েও কথা বলতেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছের লোক বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হলেও কেউ মুখ খুলতেন না। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই কথায় কথায় নোটিশ দিয়ে হেনস্তা করা হতো। নারী শিক্ষকদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমন কিছু স্ক্রিনশট আছে
কাছে। জানা গেছে, রিয়াজ গভর্নিং বডির সভাপতি পদ পেয়েই তৎকালীন প্রিন্সিপাল মো. মনোয়ার হোসেনকে সরিয়ে দেন। এরপর ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নেন। নিয়ম না মেনে ১০ জন শিক্ষককে চাকরি দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, মাত্র ছয় মাসে দুবার ঘনিষ্ঠ দুজন শিক্ষককের বেতন বাড়ান। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠান অডিট করানোর নিয়ম থাকলেও তা করেননি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয়, শিক্ষকদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শিক্ষকরা আবেদন করে প্রতিকার চান। এরপর তার অপকর্মের ফিরিস্তি সামনে এলে ২০২৩ সালে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদও হারান তিনি।
এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে পুরো তদন্ত রিয়াজ পক্ষে নেন। তার ক্ষমতার দাপটে এতদিন কেউ মুখ খোলেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়সহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষকরা। রিয়াজের অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ফের তদন্ত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালায়, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন তারা। জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন রিয়াজ। অভিযোগকারী শিক্ষকরা বলেন, রিয়াজের মতের বিরুদ্ধে গেলেই প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের নানা অভিযোগ তুলে সাময়িক অব্যাহতি দিতেন। সাবেক প্রিন্সিপাল মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে
সরিয়ে দেওয়া হয়। আমি সততা ও সম্মানের সঙ্গে চাকরি করেছি। আমি চলে আসার পর ফান্ডের টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি। মনোয়ার হোসেনের পর সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার ভদ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন চাপের কারণে তিনিও পদত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়াকে। তিনি রিয়াজ উদ্দিনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে রিয়াজ পদত্যাগ করার পর তিনিও ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নুরুন্নাহারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তিন মাস দায়িত্ব পালন করেন, এরপরে অবসরে চলে যান। সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পান জোবেদা
বেগম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনিও পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরও নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলে দাবি করেন তিনি। জোবেদা বেগম বলেন, জোরপূর্বক একটি কাগজে তারা স্বাক্ষর নিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে গ্রাফিতি করতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জোবেদা বেগম অস্বীকৃতি জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবি করেন। অভিযোগ আছে, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জোবেদা বেগম ক্ষমতা ব্যবহার করে কলেজের নিজস্ব ভবনে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য কলেজের ৬ লাখ টাকা খরচ করে ভবনটি মেরামত করান। কলেজের মাঠ সংস্কার করান আড়াই লাখ টাকা দিয়ে। কলেজ প্রাঙ্গণে গাছ লাগানোর জন্য এক দাতা সদস্য ২০ লাখ টাকা দিলেও সেই টাকার তথ্য নেই। এদিকে বিয়াজের পদত্যাগের পর ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনিও রিয়াজের আমলে হওয়া দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে জোরালো কোনো ভূমিকার রাখেননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, শিক্ষকদের দাবির মুখে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম আমাদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রিয়াজের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো জোরাল ভূমিকা রাখেননি। নিয়মবহির্ভূতভাবে রিয়াজ যেসব শিক্ষকের বেতন বাড়িয়েছেন, বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছেন, শিক্ষকরা এক বছর ধরে মমতাজ বেগমের কাছে সেগুলো ঠিক করতে বললেও কোনো ফল হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সর্বশেষ যে প্রিন্সিপাল পদত্যাগ করেছেন, তাকেও আমরা বৈষম্য দূর করতে বলেছিলাম, তিনিও তা করেননি। রিয়াজ উদ্দিন শিক্ষকদের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরি করে গেছেন, তা এখনো রয়ে গেছে। ফেসবুক পোস্টে লাইক দেওয়ায় দুই মাস অব্যাহতি দেওয়া শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমি আসলে ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কিছু বুঝি না। কিন্তু একটি পোস্টে না বুঝে লাইক দিয়েছি এবং শেয়ার করেছি, তাতে আমাকে দুই মাস সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ।’ যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক হাসনা খানম বলেন, এক বছর ধরে কলেজ থেকে শিক্ষকরা বেতন পান না। রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগমের সঙ্গে মিলে কলেজের ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন কলেজের ফান্ড খালি; তাই আমাদের বেতন দিতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সরকারি কাজ বাগিয়ে নেন রিয়াজ। এসবের বেশিরভাগ কাজই তিনি বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৫ শতাংশ কমিশনে বিভিন্ন ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেন তিনি। এমনকি মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ঘুষ-বাণিজ্যও করেছেন রিয়াজ। এরপর দীপু মনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হলে মতিঝিল এলাকায় মুক্তা পানির ডিলারকে বাতিল করে ডিলারশিপ নেন রিয়াজ। বালুখেকো সেলিমের কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা চাঁদা নিতেন তিনি। অনিয়ম আর দুর্নীতি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হন রিয়াজ। রাজধানীর টিকাটুলী ও ওয়ারি এলাকায় চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এর মধ্যে দুই স্ত্রীকে দুটি ফ্ল্যাট গিফট করেছেন। রয়েছে দুটি গাড়ি। নারায়ণগঞ্জ ও মোহাম্মদপুরে জমি কিনেছেন। চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে ১০০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, ‘কলেজ থেকে টাকা যদি নিয়ে থাকি, তাহলে তো আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট তো থাকবে। ব্যাংকে প্রমাণও থাকবে। আর ওখানে তো আমি যাওয়ার পরে ফান্ডে টাকা ছিল না। ব্যাংকে যোগাযোগ করলে সব পাওয়া যাবে।’ বাকি অভিযোগের বিষয়ে তিনি কথা বলেননি।
শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি কলেজের গভর্নিং বডির দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিটি কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে উইমেন্স কলেজের গভর্নিং বডির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। একইভাবে আর্থিক অনিয়মের কারণে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির পদ ছাড়েন। একই কলেজ থেকে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় থেকে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হন রিয়াজ। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শনির ছায়া পড়ে। শিক্ষকদের বিভাজন ও একের পর এক
প্রিন্সিপাল দায়িত্ব থেকে সরে যান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের জন্য কলেজে শিক্ষকদের রেস্টরুম বরাদ্দ নেন সভাপতির নামে। পরবর্তী সময়ে এটা হয় আড্ডাখানা ও গোপন কক্ষ। গভীর রাত পর্যন্ত ওই রুমে অবস্থান করতেন। সেখানে বসে রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলা দিতেন। পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি মনিটরিং করতেন নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে। শিক্ষকদের সাজগোজ ও পোশাক নিয়েও কথা বলতেন। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছের লোক বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হলেও কেউ মুখ খুলতেন না। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই কথায় কথায় নোটিশ দিয়ে হেনস্তা করা হতো। নারী শিক্ষকদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমন কিছু স্ক্রিনশট আছে
কাছে। জানা গেছে, রিয়াজ গভর্নিং বডির সভাপতি পদ পেয়েই তৎকালীন প্রিন্সিপাল মো. মনোয়ার হোসেনকে সরিয়ে দেন। এরপর ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নেন। নিয়ম না মেনে ১০ জন শিক্ষককে চাকরি দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, মাত্র ছয় মাসে দুবার ঘনিষ্ঠ দুজন শিক্ষককের বেতন বাড়ান। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠান অডিট করানোর নিয়ম থাকলেও তা করেননি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয়, শিক্ষকদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শিক্ষকরা আবেদন করে প্রতিকার চান। এরপর তার অপকর্মের ফিরিস্তি সামনে এলে ২০২৩ সালে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পদও হারান তিনি।
এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির প্রভাব খাটিয়ে পুরো তদন্ত রিয়াজ পক্ষে নেন। তার ক্ষমতার দাপটে এতদিন কেউ মুখ খোলেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়সহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষকরা। রিয়াজের অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ফের তদন্ত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালায়, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন তারা। জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন রিয়াজ। অভিযোগকারী শিক্ষকরা বলেন, রিয়াজের মতের বিরুদ্ধে গেলেই প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের নানা অভিযোগ তুলে সাময়িক অব্যাহতি দিতেন। সাবেক প্রিন্সিপাল মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে
সরিয়ে দেওয়া হয়। আমি সততা ও সম্মানের সঙ্গে চাকরি করেছি। আমি চলে আসার পর ফান্ডের টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি। মনোয়ার হোসেনের পর সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার ভদ্রকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন চাপের কারণে তিনিও পদত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়াকে। তিনি রিয়াজ উদ্দিনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে রিয়াজ পদত্যাগ করার পর তিনিও ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নুরুন্নাহারকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তিন মাস দায়িত্ব পালন করেন, এরপরে অবসরে চলে যান। সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পান জোবেদা
বেগম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনিও পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরও নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বলে দাবি করেন তিনি। জোবেদা বেগম বলেন, জোরপূর্বক একটি কাগজে তারা স্বাক্ষর নিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে গ্রাফিতি করতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জোবেদা বেগম অস্বীকৃতি জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবি করেন। অভিযোগ আছে, ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জোবেদা বেগম ক্ষমতা ব্যবহার করে কলেজের নিজস্ব ভবনে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য কলেজের ৬ লাখ টাকা খরচ করে ভবনটি মেরামত করান। কলেজের মাঠ সংস্কার করান আড়াই লাখ টাকা দিয়ে। কলেজ প্রাঙ্গণে গাছ লাগানোর জন্য এক দাতা সদস্য ২০ লাখ টাকা দিলেও সেই টাকার তথ্য নেই। এদিকে বিয়াজের পদত্যাগের পর ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনিও রিয়াজের আমলে হওয়া দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে জোরালো কোনো ভূমিকার রাখেননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, শিক্ষকদের দাবির মুখে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম আমাদের প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রিয়াজের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো জোরাল ভূমিকা রাখেননি। নিয়মবহির্ভূতভাবে রিয়াজ যেসব শিক্ষকের বেতন বাড়িয়েছেন, বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা দিয়েছেন, শিক্ষকরা এক বছর ধরে মমতাজ বেগমের কাছে সেগুলো ঠিক করতে বললেও কোনো ফল হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সর্বশেষ যে প্রিন্সিপাল পদত্যাগ করেছেন, তাকেও আমরা বৈষম্য দূর করতে বলেছিলাম, তিনিও তা করেননি। রিয়াজ উদ্দিন শিক্ষকদের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরি করে গেছেন, তা এখনো রয়ে গেছে। ফেসবুক পোস্টে লাইক দেওয়ায় দুই মাস অব্যাহতি দেওয়া শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমি আসলে ফেসবুক সম্পর্কে তেমন কিছু বুঝি না। কিন্তু একটি পোস্টে না বুঝে লাইক দিয়েছি এবং শেয়ার করেছি, তাতে আমাকে দুই মাস সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ।’ যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক হাসনা খানম বলেন, এক বছর ধরে কলেজ থেকে শিক্ষকরা বেতন পান না। রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগমের সঙ্গে মিলে কলেজের ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন কলেজের ফান্ড খালি; তাই আমাদের বেতন দিতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সরকারি কাজ বাগিয়ে নেন রিয়াজ। এসবের বেশিরভাগ কাজই তিনি বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৫ শতাংশ কমিশনে বিভিন্ন ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেন তিনি। এমনকি মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ঘুষ-বাণিজ্যও করেছেন রিয়াজ। এরপর দীপু মনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হলে মতিঝিল এলাকায় মুক্তা পানির ডিলারকে বাতিল করে ডিলারশিপ নেন রিয়াজ। বালুখেকো সেলিমের কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা চাঁদা নিতেন তিনি। অনিয়ম আর দুর্নীতি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হন রিয়াজ। রাজধানীর টিকাটুলী ও ওয়ারি এলাকায় চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এর মধ্যে দুই স্ত্রীকে দুটি ফ্ল্যাট গিফট করেছেন। রয়েছে দুটি গাড়ি। নারায়ণগঞ্জ ও মোহাম্মদপুরে জমি কিনেছেন। চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে ১০০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, ‘কলেজ থেকে টাকা যদি নিয়ে থাকি, তাহলে তো আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট তো থাকবে। ব্যাংকে প্রমাণও থাকবে। আর ওখানে তো আমি যাওয়ার পরে ফান্ডে টাকা ছিল না। ব্যাংকে যোগাযোগ করলে সব পাওয়া যাবে।’ বাকি অভিযোগের বিষয়ে তিনি কথা বলেননি।