সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা – ইউ এস বাংলা নিউজ




সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৪ জুলাই, ২০২৫ | ৬:৫৬ 12 ভিউ
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরেছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে লোকজনের মাঝে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা বেশি দেখা দিয়েছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, পেনশনার গ্রুপ ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক নাগরিকদের কাছে সঞ্চয়পত্রের আকর্ষণ কমতে শুরু করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয়নির্বাহের অন্যতম খাত সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোয় সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার বিগত তিন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা নামিয়ে এনেছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি অর্থবছরে ব্যয়ের আকার না বাড়িয়ে সংকোচনমূলক বাজেট দিয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করছে। ফলে এ দুইয়ের সঙ্গে

সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো সাংঘর্ষিক। এর ফলে উচ্চ সুদ দেওয়া ব্যাংকগুলোয় মানুষ টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। সঞ্চয়পত্রে তারা বিনিয়োগ করবে না। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নে যে টাকার প্রয়োজন হবে, সরকার তা সঞ্চয়পত্র থেকে খুব বেশি নিতে পারবে না। ফলে ব্যাংক খাতের ওপর সরকারের বেশি নির্ভরতা বাড়বে। ব্যাংক থেকে বেশি বেশি ঋণ করলে বেসরকারি খাতে ঋণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা পক্ষান্তরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমায় মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা হবে। কারণ, অনেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। আমি মনে করি, সুস্থ বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে

সরকারের ঋণ নেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী জানান, উপযোগী হোক বা না হোক, ঋণ নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোয় বয়স্ক, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত হচ্ছে। আগে ঘনঘন সুদহার পরিবর্তন করা হতো। কারণ তখন আইএমএফ-এর শর্ত ছিল না। তবে বাস্তবতা হলো-মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা আর্থিক সংকটে পড়ে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ দেওয়ায় আগামী দিনে সঞ্চয়পত্রে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমবে। তিনি আরও বলেন, আগে মানুষ প্রাইজবন্ডে বিনিয়োগ করত। এখন সে আকর্ষণ আর নেই। নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে মধ্যবিত্তের কাছে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসাবে সঞ্চয়পত্রের আকর্ষণ কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সঞ্চয়পত্রে

বেশি সুদ দেওয়ায় আর্থিক সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বন্ড মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ খাতে সুদহার বেশি থাকায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে বন্ড ছাড়তে আগ্রহী হচ্ছে না। আর বন্ড মার্কেট উন্নতি না হলে আর্থিক খাতের উন্নয়ন হবে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সরকার ভিন্নভাবেও সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা দিতে পারে। অবসরভোগীদের সুবিধা দিতে হলে সরকার পেনশনের অঙ্ক বাড়াতে পারে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিপরীতে আইএমএফ-এর কয়েকটি শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো-সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কম নেওয়া। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টানতে হবে। শর্ত হলো-ঘাটতি বাজেট পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণের এক-চতুর্থাংশ নিতে হবে সঞ্চয়পত্র থেকে। পাশাপাশি গ্রাহকদের প্রদেয় সুদহার বাজারভিত্তিক চালু করা। আর সুদহার

বাজারভিত্তিক হলো-সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। অর্থাৎ ছয় মাসের গড় ট্রেজারি বিলের সুদহারের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা। ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়লে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়বে। আর ট্রেজারি বিলের সুদহার কমলে সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমবে। অর্থ বিভাগ পর্যালোচনা করে দেখেছে-গত ছয় মাসে ট্রেজারি বিলের সুদহার কমেছে। ফলে আইএমএফ-এর শর্ত মানতে গিয়ে ট্রেজারি বিলের সুদের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমানো হয়েছে। এ হিসাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং সাড়ে সাত লাখ টাকার উপরে ১২ দশমিক ৩৭ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে আনা হয়েছে। মধ্য মেয়াদে সঞ্চয়পত্রের সার্বিক সুদহার ৬

শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এরপর পরবর্তী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এক লাফে ১৮ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়। সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) আরও কমে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা আরেক দফা কমিয়ে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্রকে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসাবে নিলেও আইএমএফ বলছে, এটি সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদি দায়। কারণ সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে প্রতিবছর বড় অঙ্কের

সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সঞ্চয়পত্র সামাজিক সুরক্ষা হিসাবে কাজ করছে। কিন্তু এর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ও সুদহার কমিয়ে আনায় বড় একটি শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্তের মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বালিতে ফেরি ডুবে মৃত ৪, নিখোঁজ ৩০ ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলবে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহায়তা বন্ধে রুশ আগ্রাসন বাড়ার শঙ্কা স্থানীয় নির্বাচনেও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা জারি ভিআইপি রুম না পাওয়ায় বার ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ শাহবাগে এনসিপির জুলাই প্রদর্শনীতে ২ ককটেল বিস্ফোরণ এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক আমানতের অর্থে ঋণের জামানত রাখা যাবে মৌলভীবাজারের চার সীমান্ত দিয়ে ৮৩ জনকে পুশইন তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি তিন দিনে হাজার ছাড়াল ডেঙ্গুরোগী ভর্তি ৮২ প্রকৌশলী নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন, রুল ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ ‘রাতের ভোটে’র মতোই সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেলেছে ইসরাইল শেখ হাসিনার কারাদন্ডের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে আ.লীগের বিক্ষোভ গুমে সেনাসদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা: সদরদপ্তর দাবানলে পুড়ছে গ্রিস, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকল বাহিনী