ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিজয় দিবসে ফুল দেওয়াই অপরাধ—এই রাষ্ট্র এখন কার দখলে?
বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে একাত্তরের সত্য—সহ্য করতে না পেরে শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জামায়াত–শিবির
বাংলাদেশের গর্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক ছায়ানট—
অ/গ্নি/সন্ত্রা/সে ভস্মীভূত প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়, ধ্বং/স/স্তূপে পরিণত সংবাদকেন্দ্র
সংবাদমাধ্যমে স/ন্ত্রা/স: উ/গ্র/বাদী/দের হামলায় স্তব্ধ “প্রথম আলো” ও “ডেইলি স্টার” ছাপা ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ।
গণমাধ্যমে হামলাকারীদের ‘বি/চ্ছি/ন্নতাবাদী উগ্রগোষ্ঠী’ বলে আখ্যায়িত করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে জামাতময় বিজয় উৎসব!
লুটপাটের মহোৎসবে ঢাকার পানি প্রকল্প
৩৮০১ কোটি টাকার একটা প্রকল্প। নাম দেওয়া হয়েছে মেট্রো ঢাকা ওয়াটার সিকিউরিটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম। শুনতে বেশ ভালো লাগে। পানি নিরাপত্তা, খাল খনন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এসব তো দরকারি কাজ। ঢাকার মানুষ বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই প্রকল্পে আসল কাজের চেয়ে পরামর্শকদের পকেট ভরার ব্যবস্থাই বেশি করা হয়েছে। ৮০৮ কোটি টাকা খরচ হবে শুধু পরামর্শকদের পেছনে। ভাবুন তো, পুরো প্রকল্পের প্রায় একুশ শতাংশ শুধু পরামর্শ দেওয়ার জন্য।
এটা কোনো স্বাভাবিক হিসাব নয়। কোনো দেশে এভাবে ঋণের টাকা পরামর্শকদের পেছনে উড়িয়ে দেওয়ার নজির নেই। বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৬৩০ কোটি টাকা ঋণ আসবে। সেই ঋণের একটা মোটা অংশ চলে
যাবে দেশি-বিদেশি পরামর্শকদের হাতে। যে টাকা দেশের মানুষকে শোধ করতে হবে, সেই টাকা দিয়ে কিছু মানুষের ব্যাংক ব্যালেন্স মোটা করার আয়োজন চলছে। এর চেয়ে হাস্যকর ব্যাপার আর কী হতে পারে? প্রশ্ন হলো, খাল খনন করতে বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে এত পরামর্শকের কী দরকার? স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, তিনটা সিটি করপোরেশন তো বহু বছর ধরে এই ধরনের কাজ করে আসছে। তাদের নিজস্ব প্রকৌশলী আছে, অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আছে। তারপরও ১৬ ক্যাটাগরির পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন? কারণ সম্ভবত এটাই আসল উদ্দেশ্য। কাজ হোক বা না হোক, পরামর্শকদের পকেট ভারী করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যে কথাটা বলেছেন,
সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনা দরকার। তিনি বলেছেন, খাল খনন বা পুনর্বাসনে বাইরে থেকে পরামর্শক লাগবে কেন? এগুলো তো নিয়মিত কাজ। যারা এতদিন ধরে এই কাজ করছে, তারা কি হঠাৎ করে অযোগ্য হয়ে গেছে? না, তারা অযোগ্য হয়নি। কিন্তু পরামর্শক খাতে টাকা খরচ করার একটা সুযোগ তৈরি করতে হবে। এজন্যই এই পুরো নাটক। আরও মজার ব্যাপার হলো, যারা এই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই পরামর্শক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গ্রুপকে দিয়ে ডিপিপি তৈরি করানো হয়েছে। তাদের সরকারি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তারাই ঠিক করেছে কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে। এবং স্বাভাবিকভাবেই, পরামর্শক খাতে সবচেয়ে বেশি টাকা
রাখা হয়েছে। নিজেদের জন্য তো টাকা রাখতেই হবে, তাই না? পরামর্শক খাতের পাশাপাশি প্রশাসনিক খরচ ও বেতন-ভাতায়ও প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। অফিসের জন্য সরঞ্জাম, সেমিনার, প্রশিক্ষণ এসব বাবদ আরও প্রায় একশ কোটি টাকা। মানে পুরো প্রকল্পের প্রায় এক-চতুর্থাংশ টাকাই খরচ হবে এসব খাতে। আসল কাজে যাবে বাকিটা। এভাবে কি কোনো প্রকল্প করা হয়? খালের হিসাবটাও দেখুন। ঢাকায় কিলোমিটার প্রতি খাল পুনর্বাসনে খরচ ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। অথচ নারায়ণগঞ্জে একই কাজে খরচ পড়ছে ২৫ কোটি টাকা। একই দেশে, একই ধরনের কাজে খরচের এত বিশাল পার্থক্য কেন? ঢাকার খাল কি সোনা দিয়ে বানানো? নাকি ঢাকার মাটি খুঁড়তে বিশেষ
ধরনের প্রযুক্তি লাগে? আসলে কিছুই না। শুধু যেখানে পারা যায়, সেখানে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ বিশাল একটা প্রকল্পে সবাই একটু একটু করে নিতে চায়। যন্ত্রপাতি ও যানবাহন কেনায় ৫৫৩ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ১৬০টা ভ্যাকিউম ট্রাক, থ্রিহুইলার আর ছোট গাড়ি কেনায় ৩০৬ কোটি টাকা। এছাড়া ১০০টা কমপ্যাকটর ট্রাক কিনতে ১৭০ কোটি টাকা। এই গাড়িগুলো কিনতে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা, সেটাও পরিষ্কার নয়। মানে যেখানে যা ইচ্ছা, তাই করা হচ্ছে। কোনো নিয়মকানুন মানার দরকার নেই। পুরো ব্যাপারটা আরও অদ্ভুত হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, এই প্রকল্পটা এডিপির তালিকায়ই নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্থান পাওয়ার আগেই অনুমোদন
প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এটা নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু কোনো এক উপদেষ্টার বিশেষ চাপে প্রকল্পটা দ্রুত পাস করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেপ্টেম্বরে ডিপিপি জমা হয়েছে, নভেম্বরেই পিইসি সভায় উঠে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে এত দ্রুত কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয় না। কিন্তু এখানে সব নিয়ম ভেঙে দ্রুততম সময়ে পাস করিয়ে নেওয়ার আয়োজন চলছে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা অবশ্য বেশ কিছু আপত্তি তুলেছেন। পিইসি সভায় পরামর্শক খাতের অস্বাভাবিক ব্যয়, বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ এবং ডিপিপির নানা অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তাদের বলা হয়েছে ডিপিপি সংশোধন করে আবার জমা দিতে। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব স্বীকার করেছেন যে পরামর্শক খাতের
ব্যয় প্রাক্কলনে ভুল হয়েছিল। ভুল! এত বড় একটা প্রকল্পে ৮০৮ কোটি টাকার ভুল! এটা কি সত্যিই ভুল, নাকি ইচ্ছাকৃত? ইউনুস সাহেবের অ-সরকার যে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, সেটা নিয়ে এখন আর তেমন বিতর্ক নেই। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় বসার পরে প্রথম কয়েক মাস তারা বেশ সংযত ছিল। সংস্কারের কথা বলছিল। কিন্তু এখন সেই মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এই পানি প্রকল্পটা তার একটা উদাহরণ মাত্র। যেখানে দেশের টাকা লুটপাটের সুযোগ আছে, সেখানেই তারা তৎপর। যে দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একটা বিলাসিতা, শিক্ষা একটা চ্যালেঞ্জ, সেখানে ঋণের টাকা এভাবে পরামর্শকদের পেছনে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই ঋণ শোধ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। ট্যাক্সের টাকা দিয়ে, বছরের পর বছর ধরে। যারা এই দুর্নীতি করছে, তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে সেই মানুষগুলোর, যারা দিনরাত খেটে সামান্য একটু বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এই প্রকল্পের আরেকটা মজার দিক হলো, এটাকে জনগণের কল্যাণে একটা বিশাল উদ্যোগ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ৭০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। খাল পরিষ্কার হবে, পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এসবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, যে পরিমাণ টাকা খরচ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় খাতে যাচ্ছে। যদি সত্যিই জনগণের কল্যাণ করতে চাইতেন, তাহলে এই টাকা সরাসরি কাজে লাগাতেন। পরামর্শকদের পকেট ভরার ব্যবস্থা করতেন না। এখন প্রশ্ন হলো, এই প্রকল্পটা কি শেষ পর্যন্ত পাস হয়ে যাবে? সম্ভাবনা আছে। কারণ যে ধরনের তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় না যে এটা আটকানো সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি সত্ত্বেও কোনো এক উপদেষ্টার চাপে এটা অনুমোদিত হয়ে যেতে পারে। আর একবার অনুমোদন হয়ে গেলে বাকিটা তো ইতিহাস। কাজ হোক বা না হোক, পরামর্শকরা তাদের টাকা পেয়ে যাবে। ঠিকাদাররা কমিশন নেবে। কর্মকর্তারা তাদের ভাগ পাবে। আর সাধারণ মানুষ দেখবে আরেকটা অর্ধসমাপ্ত প্রকল্প, যার জন্য ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে আগামী কয়েক দশক। এই যে অবৈধ সরকার, যারা বলে তারা দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশ গড়বে বলেই ক্ষমতা দখল করেছেন ক্যু করে, তারাই এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে। এটা কি দুর্নীতি নয়? নাকি দুর্নীতির নতুন সংজ্ঞা এসেছে? হয়তো তাদের হিসাবে এটা দুর্নীতি না, এটা উন্নয়ন। কারণ উন্নয়নের নামে যা করা হয়, তা কখনও দুর্নীতি হতে পারে না। এমনকি সেই উন্নয়নে যদি আসল কাজের চেয়ে পরামর্শকদের পকেট ভরাই বেশি হয়, তবুও না। এই প্রকল্পের শেষ পরিণতি কী হবে, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু এতটুকু নিশ্চিত যে যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। ঋণের বোঝা বাড়বে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। আর যারা এই সব করছে, তারা নিরাপদে থাকবে। কারণ তাদের জবাবদিহি করতে হয় না কারও কাছে। নির্বাচিত সরকার না হলে জবাবদিহির প্রশ্নই ওঠে না।
যাবে দেশি-বিদেশি পরামর্শকদের হাতে। যে টাকা দেশের মানুষকে শোধ করতে হবে, সেই টাকা দিয়ে কিছু মানুষের ব্যাংক ব্যালেন্স মোটা করার আয়োজন চলছে। এর চেয়ে হাস্যকর ব্যাপার আর কী হতে পারে? প্রশ্ন হলো, খাল খনন করতে বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে এত পরামর্শকের কী দরকার? স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, তিনটা সিটি করপোরেশন তো বহু বছর ধরে এই ধরনের কাজ করে আসছে। তাদের নিজস্ব প্রকৌশলী আছে, অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আছে। তারপরও ১৬ ক্যাটাগরির পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন? কারণ সম্ভবত এটাই আসল উদ্দেশ্য। কাজ হোক বা না হোক, পরামর্শকদের পকেট ভারী করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যে কথাটা বলেছেন,
সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনা দরকার। তিনি বলেছেন, খাল খনন বা পুনর্বাসনে বাইরে থেকে পরামর্শক লাগবে কেন? এগুলো তো নিয়মিত কাজ। যারা এতদিন ধরে এই কাজ করছে, তারা কি হঠাৎ করে অযোগ্য হয়ে গেছে? না, তারা অযোগ্য হয়নি। কিন্তু পরামর্শক খাতে টাকা খরচ করার একটা সুযোগ তৈরি করতে হবে। এজন্যই এই পুরো নাটক। আরও মজার ব্যাপার হলো, যারা এই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই পরামর্শক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গ্রুপকে দিয়ে ডিপিপি তৈরি করানো হয়েছে। তাদের সরকারি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তারাই ঠিক করেছে কোন কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে। এবং স্বাভাবিকভাবেই, পরামর্শক খাতে সবচেয়ে বেশি টাকা
রাখা হয়েছে। নিজেদের জন্য তো টাকা রাখতেই হবে, তাই না? পরামর্শক খাতের পাশাপাশি প্রশাসনিক খরচ ও বেতন-ভাতায়ও প্রায় হাজার কোটি টাকার বেশি খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। অফিসের জন্য সরঞ্জাম, সেমিনার, প্রশিক্ষণ এসব বাবদ আরও প্রায় একশ কোটি টাকা। মানে পুরো প্রকল্পের প্রায় এক-চতুর্থাংশ টাকাই খরচ হবে এসব খাতে। আসল কাজে যাবে বাকিটা। এভাবে কি কোনো প্রকল্প করা হয়? খালের হিসাবটাও দেখুন। ঢাকায় কিলোমিটার প্রতি খাল পুনর্বাসনে খরচ ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। অথচ নারায়ণগঞ্জে একই কাজে খরচ পড়ছে ২৫ কোটি টাকা। একই দেশে, একই ধরনের কাজে খরচের এত বিশাল পার্থক্য কেন? ঢাকার খাল কি সোনা দিয়ে বানানো? নাকি ঢাকার মাটি খুঁড়তে বিশেষ
ধরনের প্রযুক্তি লাগে? আসলে কিছুই না। শুধু যেখানে পারা যায়, সেখানে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ বিশাল একটা প্রকল্পে সবাই একটু একটু করে নিতে চায়। যন্ত্রপাতি ও যানবাহন কেনায় ৫৫৩ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ১৬০টা ভ্যাকিউম ট্রাক, থ্রিহুইলার আর ছোট গাড়ি কেনায় ৩০৬ কোটি টাকা। এছাড়া ১০০টা কমপ্যাকটর ট্রাক কিনতে ১৭০ কোটি টাকা। এই গাড়িগুলো কিনতে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা, সেটাও পরিষ্কার নয়। মানে যেখানে যা ইচ্ছা, তাই করা হচ্ছে। কোনো নিয়মকানুন মানার দরকার নেই। পুরো ব্যাপারটা আরও অদ্ভুত হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, এই প্রকল্পটা এডিপির তালিকায়ই নেই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্থান পাওয়ার আগেই অনুমোদন
প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এটা নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু কোনো এক উপদেষ্টার বিশেষ চাপে প্রকল্পটা দ্রুত পাস করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেপ্টেম্বরে ডিপিপি জমা হয়েছে, নভেম্বরেই পিইসি সভায় উঠে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে এত দ্রুত কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয় না। কিন্তু এখানে সব নিয়ম ভেঙে দ্রুততম সময়ে পাস করিয়ে নেওয়ার আয়োজন চলছে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা অবশ্য বেশ কিছু আপত্তি তুলেছেন। পিইসি সভায় পরামর্শক খাতের অস্বাভাবিক ব্যয়, বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ এবং ডিপিপির নানা অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তাদের বলা হয়েছে ডিপিপি সংশোধন করে আবার জমা দিতে। স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব স্বীকার করেছেন যে পরামর্শক খাতের
ব্যয় প্রাক্কলনে ভুল হয়েছিল। ভুল! এত বড় একটা প্রকল্পে ৮০৮ কোটি টাকার ভুল! এটা কি সত্যিই ভুল, নাকি ইচ্ছাকৃত? ইউনুস সাহেবের অ-সরকার যে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, সেটা নিয়ে এখন আর তেমন বিতর্ক নেই। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় বসার পরে প্রথম কয়েক মাস তারা বেশ সংযত ছিল। সংস্কারের কথা বলছিল। কিন্তু এখন সেই মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এই পানি প্রকল্পটা তার একটা উদাহরণ মাত্র। যেখানে দেশের টাকা লুটপাটের সুযোগ আছে, সেখানেই তারা তৎপর। যে দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একটা বিলাসিতা, শিক্ষা একটা চ্যালেঞ্জ, সেখানে ঋণের টাকা এভাবে পরামর্শকদের পেছনে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এই ঋণ শোধ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। ট্যাক্সের টাকা দিয়ে, বছরের পর বছর ধরে। যারা এই দুর্নীতি করছে, তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে সেই মানুষগুলোর, যারা দিনরাত খেটে সামান্য একটু বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এই প্রকল্পের আরেকটা মজার দিক হলো, এটাকে জনগণের কল্যাণে একটা বিশাল উদ্যোগ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ৭০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। খাল পরিষ্কার হবে, পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এসবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্যা হলো, যে পরিমাণ টাকা খরচ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় খাতে যাচ্ছে। যদি সত্যিই জনগণের কল্যাণ করতে চাইতেন, তাহলে এই টাকা সরাসরি কাজে লাগাতেন। পরামর্শকদের পকেট ভরার ব্যবস্থা করতেন না। এখন প্রশ্ন হলো, এই প্রকল্পটা কি শেষ পর্যন্ত পাস হয়ে যাবে? সম্ভাবনা আছে। কারণ যে ধরনের তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় না যে এটা আটকানো সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি সত্ত্বেও কোনো এক উপদেষ্টার চাপে এটা অনুমোদিত হয়ে যেতে পারে। আর একবার অনুমোদন হয়ে গেলে বাকিটা তো ইতিহাস। কাজ হোক বা না হোক, পরামর্শকরা তাদের টাকা পেয়ে যাবে। ঠিকাদাররা কমিশন নেবে। কর্মকর্তারা তাদের ভাগ পাবে। আর সাধারণ মানুষ দেখবে আরেকটা অর্ধসমাপ্ত প্রকল্প, যার জন্য ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে আগামী কয়েক দশক। এই যে অবৈধ সরকার, যারা বলে তারা দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশ গড়বে বলেই ক্ষমতা দখল করেছেন ক্যু করে, তারাই এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে। এটা কি দুর্নীতি নয়? নাকি দুর্নীতির নতুন সংজ্ঞা এসেছে? হয়তো তাদের হিসাবে এটা দুর্নীতি না, এটা উন্নয়ন। কারণ উন্নয়নের নামে যা করা হয়, তা কখনও দুর্নীতি হতে পারে না। এমনকি সেই উন্নয়নে যদি আসল কাজের চেয়ে পরামর্শকদের পকেট ভরাই বেশি হয়, তবুও না। এই প্রকল্পের শেষ পরিণতি কী হবে, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু এতটুকু নিশ্চিত যে যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। ঋণের বোঝা বাড়বে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। আর যারা এই সব করছে, তারা নিরাপদে থাকবে। কারণ তাদের জবাবদিহি করতে হয় না কারও কাছে। নির্বাচিত সরকার না হলে জবাবদিহির প্রশ্নই ওঠে না।



