ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
লাইভে এসে শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যা বললেন মেজর ডালিম
বিএসএমএমইউর দুই চিকিৎসকসহ ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত
ভারত থেকে দেশের পথে ৯০ জেলে, হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন
ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ আহত ১৫, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনল সেনাবাহিনী
‘সরকার বাজার ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছুই করতে পারেনি’
চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষানবিশ এসআইরা
হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে কারাগারে প্রেরণ
রেলওয়ের ১২ মার্কেট ডিএনসিসির কব্জায়
রাজনৈতিক দখলদারদের কব্জায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৯ হাজার একর সম্পত্তি। এর মধ্যে ঢাকায় বেদখল আছে প্রায় শতাধিক একর। এসব সম্পত্তির মধ্যে ঢাকায় নিজেদের খামখেয়ালি মতো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ১২টি মার্কেট স্থাপন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরে সিটি করপোরেশনের শীর্ষ ব্যক্তিসহ সম্পত্তি দেখভালে যুক্তদের সঙ্গে আঁতাত করে এসব মার্কেট দখলে নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রভাবশালী ব্যক্তি এমন কিছু ব্যবসায়ী। রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে নিয়ে সিটি করপোরেশ মার্কেট করলেও তা এখন তাদের দখলেও নেই। রেলওয়ের জমি উদ্ধারে বিগত সময়ে মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীলরা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ভাঁওতাবাজিতে পরিণত হয়। লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নতুন করে দখলের ব্যবস্থা করা হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার
দখলদারদের আরও শক্তিশালী করেছে-এমন অভিযোগ রেল সংশ্লিষ্টদেরও। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এবং এর আশপাশের জমি অনেকটা উধাও। রাজনৈতিক প্রভাবে দখলদাররা রেলের জমিতে বহুতল আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে রেখেছে। এই দখলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও হাত রয়েছে। তারাও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাজনৈতিক বিবেচনার সঙ্গে রেলসংশ্লিষ্টদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জমি হরিলুটের কারবার সব সময় যেমন চলমান ছিল, এখনো তেমনই। সাম্প্রতিক সময়ে জমি উদ্ধার এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে হুংকার দেওয়া হলেও প্রকৃত পক্ষে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। নথিপত্র অনুযায়ী, রেলভবনসংশ্লিষ্ট ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দখলকৃত জমি উদ্ধারে বহুবার অভিযান পরিচালনা হয়। কিন্তু কোনো অভিযানই সফলতার মুখ দেখেনি। সবই
ছিল লোক দেখানো। রেলপথ মন্ত্রণালয় সৃষ্টির পর ক্রমান্বয়ে ছয়জন রেলপথমন্ত্রীও রেলের মূল্যবান এ জমি উদ্ধারে ‘নাটক’ করেছেন-এমন অভিযোগ রেল অঙ্গনে রয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কব্জায় থাকা রেলের ১২টি মার্কেট উদ্ধার এবং বকেয়া প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আদায়ে সাবেক রেলপথমন্ত্রী, সচিব ও রেলওয়ে মহাপরিচালকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীতে থাকা রেলের ১২টি মার্কেট উদ্ধার এবং এরপর রেলের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বহুতল ভবন-শপিংমল তৈরির নির্দেশনা আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ের রেলপথমন্ত্রী, সচিব ও রেলওয়ের মহাপরিচালক এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখাননি। বরং দখলদারদের কাছ থেকে ‘উচ্ছেদ
অভিযান’ পরিচালনার ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন-এমন অভিযোগও রয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যে ১২টি মার্কেট ঢাকা সিটি করপোরেশনের কব্জায় রয়েছে সেগুলো থেকে নামে মাত্র (৫ শতাংশ) অর্থ রেলওয়েকে প্রদান করতে হবে। কিন্তু সেই অর্থও পরিশোধ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এদিকে প্রতিটি মার্কেটের একেকটি দোকান ১২ থেকে ১৫ জনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, ৫ থেকে ৮ ফুটের প্রতিটি দোকান ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুরুতে রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নামে নামে মাত্র টাকায় দোকান বরাদ্দ দেয় সিটি করপোরেশন। তারপর সুবিধাভোগী দলীয় নেতাকর্মীরা যার
যার ইচ্ছেমতো দোকানগুলো বিক্রি করতে শুরু করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং জিল্লুল হাকিম রেলওয়ের উন্নয়ন সমন্বয়ক সভায় একাধিকবার বলেছিলেন ফুলবাড়িয়া এলাকায় রেলওয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে ‘রেলওয়ে আইকন ভবন’ নির্মাণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে রেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এমনটা প্রতিটি রেলপথমন্ত্রী-সচিবই বলতেন। এটি বলে তারা দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অকের টাকা কামাতেন।’ রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর নথিপত্র অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কব্জায় ১২টি মার্কেটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স মার্কেট ০.৩৪ একর জমিতে, বঙ্গবাজার মার্কেট ও গুলিস্তান হকার্স মার্কেট ০.৪৯ একর জমিতে, আদর্শ হকার্স মার্কেট ও মহানগরী হকার্স মার্কেট যৌথভাবে নির্মিত ০.৬৭ একর জমিতে।
এছাড়া প্রায় তিন একর জমিতে জনতা মার্কেট, সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, মালেক শাহ মার্কেট, শেরেবাংলা মার্কেট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মার্কেট। অন্যদিকে খিলগাঁওয়ে প্রায় ১ একর জমিতে রেলওয়ে খিলগাঁও বাজার মার্কেট এবং আনন্দবাজার এলাকায় প্রায় চার একর রেলওয়ের জমিতে একটি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের কোনোটাই রেল বিভাগের হাতে নেই। মার্কেটগুলোর সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়াদের ভাষ্য, একেক দোকানের মালিক বহুজন। তারা লাখ লাখ টাকা এডভান্স দিয়ে ব্যবসা করছেন। মাসিক ভাড়া দিচ্ছেন ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর বলছে, তাদের অব্যবহৃত যত সম্পত্তি রয়েছে সবই ভূসম্পত্তি বিভাগের দায়িত্বে। ওই বিভাগের প্রধান কর্তা অন্তত ছয়জন। ওই ছয়জন কর্মকর্তা আবার বাইরের বিভাগের। ভূ-সম্পত্তি দপ্তরের কর্মকর্তারা
বলছেন, রেলওয়ের সবচেয়ে জনবল কম এ বিভাগে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও রেলওয়ের সম্পদ উদ্ধারে তারা কোনো ম্যাজিক দেখাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে জমি দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা বা তদারকি করতে। কিন্তু সিটি করপোরেশন রাজনৈতিক ক্ষমতায় রেলওয়ের কোনো মতামত ছাড়াই জমিগুলো দখলে নিয়ে ইচ্ছেমতো বহুতল ভবন ও মার্কেট তৈরি করে। ওইসব মার্কেট থেকে কত টাকা আয় হচ্ছে এর হিসাবও দেয়নি সিটি করপোরেশন। নিজের মতো মার্কেটগুলোর দোকানপাট লুটপাট করে নেওয়া হয়। বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও-শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী এবং সচিবদের ‘অপ-কৌশলের’ কারণে মার্কেটগুলো রেল উদ্ধার করতে পারছে না। সবকটি মার্কেটই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। পটপরিবর্তনের পরও একই দশা। এদিকে, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট আগুনে পুড়ে যায়। ওই মার্কেটের প্রায় দুই একর জমি রেলওয়ের। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ ও জমি হস্তান্তরের বিষয়গুলো রেলকে জানানো হয়নি। খিলগাঁও কাঁচাবাজার মার্কেটেও বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শেখ রাসেল পার্কও রেলের জমিতে। এসব মার্কেট কিংবা পার্ক সবই অবৈধভাবে নেওয়া। রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর বলছে, ঢাকায় রেলের জমিতে যে ১২টি মার্কেট রয়েছে-এ মার্কেটগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পনা অনুযায়ী শপিংলমল, ব্যাংক-বিমা, হাসপাতাল, হোটেল নির্মাণ করা হলে বছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা আয় হতো। এদিকে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া ২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি কেনার প্রকল্প রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ সাবেক কোনো রেলপথমন্ত্রী-সচিব, রেলওয়ে মহাপরিচালকরা রাজধানীর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে থাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ রেলের জমি উদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখেননি। বরং রেলওয়ের অনেক জমি নিজেদের স্বার্থে বেসরকারি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওইসব জমি ভবিষ্যতে রেলের উন্নয়নে কাজের কথা বলে একসময় এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই অধিগ্রহণ করা হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, বেদখল রেলওয়ের জমি উদ্ধারে আমরা কঠোর হচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেক জমি উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে উদ্ধারকাজ আরও শক্তিশালী হবে। রেলওয়ের জমি উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা ১২টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের অনেকগুলোই সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবই নিজেদের দখলে নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে বকেয়া আদায় করা হবে। রেলের জমি ব্যবহার করে আয় বাড়ানো সম্ভব হবে মলে মন্তব্য করেন তিনি।
দখলদারদের আরও শক্তিশালী করেছে-এমন অভিযোগ রেল সংশ্লিষ্টদেরও। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এবং এর আশপাশের জমি অনেকটা উধাও। রাজনৈতিক প্রভাবে দখলদাররা রেলের জমিতে বহুতল আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে রেখেছে। এই দখলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও হাত রয়েছে। তারাও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাজনৈতিক বিবেচনার সঙ্গে রেলসংশ্লিষ্টদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে জমি হরিলুটের কারবার সব সময় যেমন চলমান ছিল, এখনো তেমনই। সাম্প্রতিক সময়ে জমি উদ্ধার এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে হুংকার দেওয়া হলেও প্রকৃত পক্ষে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। নথিপত্র অনুযায়ী, রেলভবনসংশ্লিষ্ট ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দখলকৃত জমি উদ্ধারে বহুবার অভিযান পরিচালনা হয়। কিন্তু কোনো অভিযানই সফলতার মুখ দেখেনি। সবই
ছিল লোক দেখানো। রেলপথ মন্ত্রণালয় সৃষ্টির পর ক্রমান্বয়ে ছয়জন রেলপথমন্ত্রীও রেলের মূল্যবান এ জমি উদ্ধারে ‘নাটক’ করেছেন-এমন অভিযোগ রেল অঙ্গনে রয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কব্জায় থাকা রেলের ১২টি মার্কেট উদ্ধার এবং বকেয়া প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আদায়ে সাবেক রেলপথমন্ত্রী, সচিব ও রেলওয়ে মহাপরিচালকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীতে থাকা রেলের ১২টি মার্কেট উদ্ধার এবং এরপর রেলের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বহুতল ভবন-শপিংমল তৈরির নির্দেশনা আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ের রেলপথমন্ত্রী, সচিব ও রেলওয়ের মহাপরিচালক এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখাননি। বরং দখলদারদের কাছ থেকে ‘উচ্ছেদ
অভিযান’ পরিচালনার ভয়ভীতি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন-এমন অভিযোগও রয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যে ১২টি মার্কেট ঢাকা সিটি করপোরেশনের কব্জায় রয়েছে সেগুলো থেকে নামে মাত্র (৫ শতাংশ) অর্থ রেলওয়েকে প্রদান করতে হবে। কিন্তু সেই অর্থও পরিশোধ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এদিকে প্রতিটি মার্কেটের একেকটি দোকান ১২ থেকে ১৫ জনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে মার্কেটের একাধিক দোকান মালিক জানান, ৫ থেকে ৮ ফুটের প্রতিটি দোকান ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুরুতে রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নামে নামে মাত্র টাকায় দোকান বরাদ্দ দেয় সিটি করপোরেশন। তারপর সুবিধাভোগী দলীয় নেতাকর্মীরা যার
যার ইচ্ছেমতো দোকানগুলো বিক্রি করতে শুরু করে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং জিল্লুল হাকিম রেলওয়ের উন্নয়ন সমন্বয়ক সভায় একাধিকবার বলেছিলেন ফুলবাড়িয়া এলাকায় রেলওয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে ‘রেলওয়ে আইকন ভবন’ নির্মাণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে রেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এমনটা প্রতিটি রেলপথমন্ত্রী-সচিবই বলতেন। এটি বলে তারা দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অকের টাকা কামাতেন।’ রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর নথিপত্র অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কব্জায় ১২টি মার্কেটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হকার্স মার্কেট ০.৩৪ একর জমিতে, বঙ্গবাজার মার্কেট ও গুলিস্তান হকার্স মার্কেট ০.৪৯ একর জমিতে, আদর্শ হকার্স মার্কেট ও মহানগরী হকার্স মার্কেট যৌথভাবে নির্মিত ০.৬৭ একর জমিতে।
এছাড়া প্রায় তিন একর জমিতে জনতা মার্কেট, সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, মালেক শাহ মার্কেট, শেরেবাংলা মার্কেট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মার্কেট। অন্যদিকে খিলগাঁওয়ে প্রায় ১ একর জমিতে রেলওয়ে খিলগাঁও বাজার মার্কেট এবং আনন্দবাজার এলাকায় প্রায় চার একর রেলওয়ের জমিতে একটি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের কোনোটাই রেল বিভাগের হাতে নেই। মার্কেটগুলোর সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়াদের ভাষ্য, একেক দোকানের মালিক বহুজন। তারা লাখ লাখ টাকা এডভান্স দিয়ে ব্যবসা করছেন। মাসিক ভাড়া দিচ্ছেন ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে। রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর বলছে, তাদের অব্যবহৃত যত সম্পত্তি রয়েছে সবই ভূসম্পত্তি বিভাগের দায়িত্বে। ওই বিভাগের প্রধান কর্তা অন্তত ছয়জন। ওই ছয়জন কর্মকর্তা আবার বাইরের বিভাগের। ভূ-সম্পত্তি দপ্তরের কর্মকর্তারা
বলছেন, রেলওয়ের সবচেয়ে জনবল কম এ বিভাগে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও রেলওয়ের সম্পদ উদ্ধারে তারা কোনো ম্যাজিক দেখাতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে জমি দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা বা তদারকি করতে। কিন্তু সিটি করপোরেশন রাজনৈতিক ক্ষমতায় রেলওয়ের কোনো মতামত ছাড়াই জমিগুলো দখলে নিয়ে ইচ্ছেমতো বহুতল ভবন ও মার্কেট তৈরি করে। ওইসব মার্কেট থেকে কত টাকা আয় হচ্ছে এর হিসাবও দেয়নি সিটি করপোরেশন। নিজের মতো মার্কেটগুলোর দোকানপাট লুটপাট করে নেওয়া হয়। বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও-শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী এবং সচিবদের ‘অপ-কৌশলের’ কারণে মার্কেটগুলো রেল উদ্ধার করতে পারছে না। সবকটি মার্কেটই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। পটপরিবর্তনের পরও একই দশা। এদিকে, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট আগুনে পুড়ে যায়। ওই মার্কেটের প্রায় দুই একর জমি রেলওয়ের। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ ও জমি হস্তান্তরের বিষয়গুলো রেলকে জানানো হয়নি। খিলগাঁও কাঁচাবাজার মার্কেটেও বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শেখ রাসেল পার্কও রেলের জমিতে। এসব মার্কেট কিংবা পার্ক সবই অবৈধভাবে নেওয়া। রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর বলছে, ঢাকায় রেলের জমিতে যে ১২টি মার্কেট রয়েছে-এ মার্কেটগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পনা অনুযায়ী শপিংলমল, ব্যাংক-বিমা, হাসপাতাল, হোটেল নির্মাণ করা হলে বছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা আয় হতো। এদিকে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া ২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি কেনার প্রকল্প রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ সাবেক কোনো রেলপথমন্ত্রী-সচিব, রেলওয়ে মহাপরিচালকরা রাজধানীর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বিভিন্ন শহরে থাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ রেলের জমি উদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখেননি। বরং রেলওয়ের অনেক জমি নিজেদের স্বার্থে বেসরকারি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওইসব জমি ভবিষ্যতে রেলের উন্নয়নে কাজের কথা বলে একসময় এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই অধিগ্রহণ করা হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, বেদখল রেলওয়ের জমি উদ্ধারে আমরা কঠোর হচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেক জমি উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে উদ্ধারকাজ আরও শক্তিশালী হবে। রেলওয়ের জমি উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা ১২টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের অনেকগুলোই সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবই নিজেদের দখলে নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে বকেয়া আদায় করা হবে। রেলের জমি ব্যবহার করে আয় বাড়ানো সম্ভব হবে মলে মন্তব্য করেন তিনি।