মাতৃভূমিতে ফিরতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা, গভীর জঙ্গলে চলছে প্রশিক্ষণ – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ২৭ মার্চ, ২০২৫
     ১১:০১ অপরাহ্ণ

মাতৃভূমিতে ফিরতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা, গভীর জঙ্গলে চলছে প্রশিক্ষণ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৭ মার্চ, ২০২৫ | ১১:০১ 75 ভিউ
রোহিঙ্গারা নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরতে সশস্ত্র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের জঙ্গলের ভেতরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন রোহিঙ্গা যুবকরা। গোপনে চলা এ প্রশিক্ষণের সময় কয়েকদিন পর পর সরিয়ে নিতে হচ্ছে তাঁবুও। দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ শিবিরের আকার বাড়ছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট। সংবাদমাধ্যমটি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা এবং একজন শরণার্থী শিবিরের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা যোদ্ধারা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে যান এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসেন। তারা প্রস্তুত হচ্ছেন আবারও মিয়ানমারে গিয়ে সামরিক জান্তা ও প্রতিপক্ষ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়তে। নিজেদের সামরিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ২৫ বছর বয়সি রোহিঙ্গা

তরুণ মোহাম্মদ আয়াস। ২০১৭ সালে তিনি প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের বার্মিজ ভাষা শেখান। সম্প্রতি মিয়ানমারের জঙ্গলে ছয় মাসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুদ্ধের। আয়াস বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। আমার নিজের জীবনের পরোয়া নেই। আমাদের অধিকার, স্বাধীনতা আর মাতৃভূমি ফিরিয়ে আনতে যা লাগে আমি তা করতে প্রস্তুত। ’ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, আয়াসের মতো শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী স্বেচ্ছায় সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছেন; যারা কুতুপালং শিবিরে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন। চার বছরের কন্যা সন্তানের জনক আয়াস জানান, তিনি ছয় মাস জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রতিদিন তারা তাঁবু স্থানান্তর করে অবস্থান বদলাতেন যেন ধরা না পড়েন।

সকালে বাঁশির আওয়াজে ঘুম ভাঙত, তারপর শুরু হতো শারীরিক প্রশিক্ষণ। এরপর ভাগ হয়ে কেউ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মার্শাল আর্ট শিখতো, কেউ শিখতো প্রযুক্তিগত দক্ষতা—যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, শত্রু নজরদারি ও কৌশলগত তথ্য সংগ্রহ। দুপুরে গোসল, খাওয়া ও বিশ্রামের পর আবার শুরু হতো প্রশিক্ষণ। আয়াস বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তি। আমরা অধিকার ও সুযোগ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু আমাদের ভূমি আজ সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের দখলে। আমরা আমাদের মাতৃভূমি ফেরত চাই—এবং সেটার জন্য লড়াই করব। তিনি তার গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি, তবে দাবি করেন, এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা যুবক ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। সব শিবিরেই নিয়োগ চলছে। রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করছে, ২০২১

সালের অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের মধ্যে সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীরা উভয়পক্ষই তাদের (রোহিঙ্গাদের) গণহত্যা ও জোরপূর্বক নিয়োগের শিকার করছে। এক রোহিঙ্গা যোদ্ধা জানান, যদি সু চি ক্ষমতায় ফেরেন, তবে হয়তো পরিস্থিতি বদলাতে পারে—কিন্তু তারা আর অপেক্ষা করতে চান না। ৪২ বছর বয়সি আরেক যোদ্ধা আবু নিয়ামত উল্লাহ বলেন, আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, যারা গণহত্যা চালাচ্ছে, এরপর আরাকান আর্মি। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, কেউ প্রশিক্ষণে মিয়ানমারে গিয়ে আবার ফিরে এসে শিবিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে। ‘কাউকে জোর করি না। শুধু বলি, তুমি কি ফিরতে চাও? কেউ রাজি হলে আমরা তাদের পথ দেখাই। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, চলছে।’ তিন সন্তানের বাবা

নিয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর সবসময়ই অন্যায় হয়েছে। অথচ বিশ্ব মিডিয়া শুধু গাজা ও ইউক্রেন নিয়ে ব্যস্ত। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আর অপেক্ষা করব না। সময় এসেছে নিজেদের রক্ষা করার, নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়ার।’ ৩০ বছর বয়সি রোহিঙ্গা কমান্ডার রাইনাইং সো (ছদ্মনাম) জানান, এখন আর শান্তির অপেক্ষা নয়—যদি শান্তি না আসে, তবে তারা লড়াই করতেই প্রস্তুত। রাইনাইং বলেন, পুরো রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এখন ঐক্যবদ্ধ। আমরা সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে লড়তে চাই, আমাদের ভূমি ফেরত চাই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই। তিনি জানান, ২০২১ সালের পর আরাকান আর্মির সঙ্গে সমন্বয়ের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এই কমান্ডার বলেন, ‘তারা মুসলিমদের

সঙ্গে কাজ করতে চায় না। শুধু বৌদ্ধদের নিয়ে কাজ করতে চায়। তাই এখন যারাই আমাদের সামনে আসবে—সেনাবাহিনী হোক বা আরাকান আর্মি—আমরা লড়াই করব।’ তবে শিবিরের রোহিঙ্গারা জোরপূর্বক নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করলেও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় এক ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয়; যাদের বিরুদ্ধে মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, খুন ও মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা সংহতি সংস্থা (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) এবং ইসলামি মাহাজ। এরমধ্যে আরএসও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে কাজ করছে এবং আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শরণার্থী শিবির থেকে জোরপূর্বক লোক

নিয়োগ করছে। ইতোমধ্যে তাদের নাম খারাপ হওয়ায় তারা মাঝে মাঝে ‘মংডু মিলিশিয়া’ নামে পরিচয় দেয়। ফর্টিফাই রাইটস-এর পরিচালক জন কুইনলি জানান, তাদের সংস্থা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করছে। তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ১৭ বছরের কিশোরদেরও অপহরণ করে প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিবিরে মানবিক সহায়তা ক্রমাগত কমছে। রোহিঙ্গাদের চলাচলে কড়াকড়ি, শিক্ষার সুযোগ নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই।’ ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় দুহাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ফর্টিফাই রাইটস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিয়োগে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী ও আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি ও বাধ্যতামূলক কৌশল’। এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউএসএইড বন্ধের নির্বাহী আদেশও বড় হুমকি। কারণ, শিবিরের মানবিক সহায়তার ৫৫ শতাংশই ইউএসএইড থেকে আসত। কুইনলি বলেন, ‘এই অবস্থায়, আরও মানুষ অস্ত্র হাতে নেওয়ার পথ বেছে নিতে পারে—যদি না বাংলাদেশ সরকার তাদের কাজের সুযোগ, স্বাধীন চলাফেরা বা সম্মানজনক জীবন যাপনের অনুমতি দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের সঙ্গে আমি শিবিরে কথা বলেছি, তারা প্রবল হতাশ ছিলেন। অনেকের জন্য অস্ত্র তুলে নেওয়াই এখন নিজের ভাগ্য গড়ার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ক্যু করে পদচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়ে ইউনুসের কাছে রাষ্ট্রপতি এখন অচ্ছুৎ! সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লুটপাট: জুলাইয়ের খুনিদের আসল চেহারা ফেব্রুয়ারিতে ভোট, নাকি সংঘর্ষ—সংকটময় মোড়ে বাংলাদেশ বিচারের নামে শেখ হাসিনার সাথে চলছে অবিচার, বিশ্বে নিন্দিত বাংলাদেশ ইনিয়ে-বিনিয়ে পাকিস্তানকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা, জুতা মেরে বাঙালির জবাব! একটি জাতিকে পঙ্গু করতেই রাও ফরমানের নীলনকশা, বাস্তবায়নে জামাত প্রহসন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, জনগণের রায় ছাড়াই ক্ষমতার বন্দোবস্ত মানবে না দেশ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বাণী মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ আত্মসমর্পণের আগের সেই মুহূর্তগুলো এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলবনা। একাত্তরে তাঁদের সাহস, দৃঢ়তা আর সংকল্প আমাদের এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে আদালতে তোলা হচ্ছে ৭১–কে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে ইউনুস সরকার: কুচকাওয়াজ বাতিল ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা নিয়ে সরব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গোয়াইনঘাটে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার, গ্রেপ্তার নেই প্রকৃত চোরাকারবারি আড়াল করার অভিযোগ বাংলাদেশকে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া যাবে না”: শেখ হাসিনা মুহাম্মদ ইউনুস সরকারকে কড়া সমালোচনা পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ, ইউনুস সরকার নিখোঁজ ১৯৭১, নীলফামারীর গোলাহাট গণহত্যা PBI Findings: 56% of July–August 2024 Cases Were “False & Baseless” ‘৭১ এর রণাঙ্গনের ৩ জন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা। জনগণের ঘাড়ে নতুন করে চাপছে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তৃত্ববাদী খড়্গ