ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিজয়ের দিনে মামলা ছাড়াই যুবলীগ নেতা গ্রেফতার জুড়ীতে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ সংসদে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা অবাধ নির্বাচন ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার: মুক্তির আহ্বান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
পদত্যাগের পর রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগের ঘটনায় চাপের মুখে প্রশাসন, ব্যাখ্যা নেই দুই সাবেক উপদেষ্টার !
বাংলাদেশ কি ঋণের ফাঁদে? সংখ্যার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অস্বস্তিকর বাস্তবতা
খুনের ৭ মামলায় ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর জামিন স্থগিত
নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকায় ইন্ডিয়া ভিসা সেন্টার সাময়িক বন্ধ
‘ভ্যালুলেস সোনাদিয়া-সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব বাড়িয়েছে মালাক্কা প্রণালী’ চৌধুরী মুজাহিদুল হক সৌরভ
সেন্টমার্টিন নিয়ে ক্যাচাল বাংলাদেশের সব জায়গায় লেগে আছে। অকাট্য দলিল বিহীন কিছু বিষয় বুঝলেও তা বলা ও প্রকাশে রিস্কটা হচ্ছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির IQ ও EQ ধারীরা কুতর্কে জড়িয়ে ফেলে যেটা অনেকটা বিরক্তিকর। বলে রাখা ভাল যে IQ এর সাথে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার বা কে কোথাথেকে ও কোন শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করেছে তার কোন সম্পর্ক নাই। একটু ঘাটলে দেখা যায় হার্বার্ড/ইয়েল/অক্সফোর্ড/ক্যামব্রিজ/হুনান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট করা একজনের তুলনায় সোনাদিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা একজনের IQ অনেক অনেক উপরে। তাই IQ পরিমাপের সাথে কে কয় বস্তা সার্টিফিকেট পেলো তার কোন সম্পর্ক নেই। সেন্টমার্টিনে আমেরিকার নজর নিয়ে অল্প অল্প করে জানছি
বা পড়ছি অনেক আগে থেকে। মানে শেখ হাসিনা যখন আমেরিকাকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছিলেন বছর কয়েক আগে। তবে বেশী পড়া হয়েছে বা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বিশেষ করে আমেরিকার ন্যাভাল ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঘাঁটি করা বিষয়ে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করার পর থেকে। গতকাল(০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪) 'পরিবেশ রক্ষা' ইস্যুতে সেন্টমার্টিনের ক্যাঁচাল যখন শুরু হয়েছে তখন আমি পৃথিবীর মানচিত্রটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। বিশেষ করে চীন সাপ্লাই চেইন ব্যবহার করে এমন এলাকা ও তাদের নতুন সাপ্লাই চেইন তৈরির এটেম্পট নেওয়া অঞ্চলগুলো। সাথে আমেরিকা ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কিছু আর্টিকেল ও গবেষকদের মতামত। একটা অঞ্চলের নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
বারবার আসছে, সেটা হলো 'মালাক্কা' প্রণালী যে পথ দিয়ে পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ মালামাল পরিবহণ হয় এবং পূর্ব এশিয়ার প্রায় ১০০% বাণিজ্য ও জ্বালানি বাহী জাহাজ চলাচল করে। পৃথিবীর আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য জ্বালানির সিংহভাগই পরিবহন হয় এই মালাক্কা প্রণালী দিয়ে। সুয়েজ খালের পর এটি পৃথিবীর ২য় ব্যস্ততম জলপথ। ১৫ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এর কৌশলগত গুরুত্ব এটিকে আন্তর্জাতিক সংঘাতেরও কেন্দ্রবিন্দু করে রেখেছে। একটি দেশের উন্নয়ন জ্বালানির সাথে সম্পর্কযুক্ত(বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানায় পণ্য উৎপাদন সচল রাখা, সেসব পরিবহন ইত্যাদি কারণে!)। চীনের আমদানিকৃত জ্বালানির ৮০% এর বেশী আসে মালাক্কা প্রণালী হয়ে। ভাবছেন, সেন্টমার্টিন ইস্যুতে শীবের গীত শুরু করলাম কেন!? অপেক্ষা
করেন, একটু পরে টের পাবেন। ২০১৩ সালে চীন কর্তৃক ঘোষিত Belt & Road Initiative(BRI)-এর অংশ হিসেবে মায়ানমার ও পাকিস্তান এই দুই দেশ হয়ে চীনে ভিন্ন দুটি জ্বালানি পরিবহনের বিকল্প রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। মায়ানমার অংশটির নাম Trans Myanmar Oil & Gas Pipeline এবং পাকিস্তান অংশটির নাম China-Pakistan Economic/Energy Corridor(CPEC)। এই দুই রাস্তা দিয়ে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে থেকে (আমেরিকার স্যাংঙ্কশন খাওয়া দেশ সমূহ সহ) আমদানিকৃত জ্বালানি মালাক্কা প্রণালী ব্যবহার না করে নিজ দেশে পরিবহনই চীনের মূল উদ্দেশ্য। মিয়ানমারের আকিয়াবের সিৎওয়ে বন্দর থেকে চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশের কুইনমিং শহর পর্যন্ত মিয়ানমার-চীন জ্বালানি পাইপলাইনের পরিধি। একটি দেশ যখন অন্য একটি দেশকে আক্রমন করে তখন সর্বাত্মক
যুদ্ধ হয়। সর্বাত্মক যুদ্ধ মানে অস্ত্র ছাড়াও অন্যান্য ফ্রন্টে খেলা। একটু খেয়াল করলে দেখবেন বর্তমান বিশ্বে অস্ত্রের চেয়ে অস্ত্রের বাইরের যুদ্ধটা বেশী (নিষেধাজ্ঞা, সাপ্লাইচেইন কেটে দেওয়া, ইন্ডাস্ট্রি সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি)। এগুলোকে সাধারণত আমরা স্ট্র্যাটেজি হিসেবে জানি। ধরুন, চীন তাদের টেরিটরির ভূমি ফিরে পেতে তাইওয়ান আক্রমন করলো। তখন চুক্তি অনুসারে আমেরিকা তাইওয়ানকে অস্ত্র সাপ্লাই দিলেও সে অস্ত্র দিয়ে তারা যে চীনের কিছুই করতে পারবে না সেটা আমেরিকা নিজেই জানে। কারণ তাইওয়ানের তুলনায় চীন ধারণার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। তাছাড়া তাইওয়ান খুব ছোট একটি অঞ্চল যেটার ডান থেকে বামে মুহুর্তের মধ্যে দখল করে নেওয়া সম্ভব চীনের পক্ষে। কিন্তু চীন অপেক্ষায় আছে কখন আমেরিকা
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের যুদ্ধ ইস্যুতে ব্যস্ত থাকে! ঠিক একিই ভাবে আমেরিকাও চাইছে বিভিন্ন ইস্যুতে চীনকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে যাতে তা সমাধান করতে গিয়ে তাইওয়ানের দিকে চীন নজর না দিতে পারে! চীনকে ব্যতিব্যস্ত রাখার ক্ষুদ্র একটি ইস্যু হচ্ছে মায়ানমারের মাধ্যমে চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশ এবং ভারতের সেভেন সিস্টার অঞ্চলের মাধ্যমে চীনের তিব্বত সায়ত্তশাসিত অঞ্চলে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলে দেয়া! তখন চীন নিজেদের এই দুই অঞ্চল রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। বিখ্যাত দার্শনিক সুনঝে বিংফা/ সাঞ্জু-আবে তাঁর বিখ্যাত বই "দ্যা আর্ট অভ ওয়ারে" এই পদ্ধতিকে উল্লেখ করেছেন - "প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন দিক থেকে ছোট ছোট আক্রমনের মাধ্যমে ব্যতিব্যস্ত রাখা" যা অনেকটা বনকুকুর ও হায়েনাদের আক্রমনের ধরনের
মতো। এরকম ছোট ছোট আক্রমনের আরেকটি হচ্ছে মালাক্কা প্রণালী বা চ্যানেল যেটি দিয়ে চীনের জ্বালানি ও পণ্য পরিবহনে বন্ধ করে দেওয়া। খুব সরু একটি পথ হওয়ায় একটি ডেস্ট্রয়ার বা নৌবহর বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চীনের জাহাজগুলোর গতিপথ রুখে দেওয়া সম্ভব(চীন ৮০% জ্বালানি এই পথ দিয়ে পরিবহন করে)। এতে চীন ভালই বিপদে পড়বে। কারণ যুদ্ধে ''যুদ্ধ বিমান, আর্মড ভ্যাহিকল, ট্যাংক ইত্যাদি লাগে; সর্বোপরি এসব চালাতে লাগে জ্বালানি''। একটি যুদ্ধ এক অর্থে তেল ও অস্ত্রের খেলা যা চীনের জন্য রিস্কি হয়ে যাবে। এই ঝুঁকি এভয়েড করতে, তার জ্বালানি সরবরাহের রাস্তা ঝুকিমুক্ত রাখতে, চীন ২০০৩/০৪ সাল থেকে পরিকল্পনা নেয়। চীন-পাকিস্তান করিডোরে(CPEC) সমস্যাটা হচ্ছে আমেরিকা অলরেডি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলো (ইসলামিস্ট জিহাদী সহ) দিয়ে টেরোরিস্ট বোম্বিং চালু রেখেছে। আর এই টেরোরিস্ট বোম্বিং জ্বালানি সরবরাহ লাইনের জন্য খুবই রিস্কি। একটা উদাহরণ দিলে আরেকটু ক্লিয়ারলি বুঝতে পারবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যু্দ্ধ শুরুর সময় জার্মানি প্যাকরপ্যাকর করা শুরু করেছিল। তখন কে বা কাহারা নরওয়ে থেকে সমুদ্র পথে জার্মানির গ্যাস সরবরাহ লাইনটিতে খুবই ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র করে দেয়। এই এক ছিদ্রের চোটে বা থাপ্পরে জার্মানি চুপ হয়ে যায়। যদি ইউরোপের মতো সিকিউরড একটি এলাকার সমুদ্রের নিচে অবস্থিত পাইপ লাইনে ছিদ্র করা যায় তবে পাকিস্তানের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামিস্ট জিহাদীদের দ্বারা বানানো জাহান্নামে কি হতে পারে একটু ভাবুন! তাছাড়া আফগান তালেবানদের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কটা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চেয়েও খারাপ। ফাইনালি মহামতি আমেরিকার পথের কাঁটা ইমরান খান সরকারকে প্রথমে লেজিজলেটিভ ক্যু ও তারপরে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে সরিয়ে দিয়েছে। তালেবানরা পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে এই পাইপলাইনে হঠকারী হামলা করলে আল্টিমেট ক্ষতিতো চীনেরই হবে। সুতরাং এই পথও আমেরিকা সিস্টেমে চীনের জন্য বন্ধ করে রেখেছে। এসব প্রেক্ষাপটে মায়ানমারের আকিয়াবের সিৎওয়ে বন্দর থেকে চীনের কুইনমিং শহর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহ পথটি চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বটি যেমন চীন বুঝে, ঠিক তেমনিভাবে আমেরিকাও জানে। কাজেই আমেরিকার পক্ষ থেকে এই মুহুর্তে এই জায়গায় একটি আঘাত দেয়া ফরজ হয়ে গিয়েছে। আর মায়ানমারের আকিয়াব থেকে শুরু হওয়া পাইপলাইনে আঘাত করার জন্য সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়া সহ দক্ষিণ-চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব খুবই খুবই বেশী। অনেকেই সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করে বলার চেষ্টা করছে - সেন্টমার্টিনেতো ক্যান্টনমেন্ট করার মতো জায়গা নাই, রণতরী রাখার মতো গভীরতা নাই! তাদের এসব যুক্তি হচ্ছে বাতুলতা। পাতানো বিপ্লবের নতুন দুই নম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই বিপ্লবী, যার যা খুশী বলে চলেছে। ওহে মদনের পাল, আমেরিকার এখানে ক্যান্টনমেন্ট করার দরকারও নাই। যাস্ট কিছু যুদ্ধ ড্রোন যদি রাখা যায় এবং সেসকল ড্রোন কন্ট্রোলের জন্য যদি ছোট একটি ইউনিট স্থাপন করা যায়, সেটাই আমেরিকার জন্য মোর দ্যান এনাফ! কারণ সেন্টমার্টিনের ভৌগোলিক অবস্থান আকিয়াবের (আইক্কাফ) খুবই কাছে এবং এটিই সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব, অন্যকিছু না। অপরদিকে সোনাদিয়ায় অবস্থান নিতে পারলে পুরো কক্সবাজার জেলার যতগুলো সমুদ্র চ্যানেল রয়েছে সবই তাদের দখলে চলে আসবে। কারণ যুদ্ধকালীন চীনের জ্বালানি সরবরাহের অন্যান্য পাইপলাইন কেটে দেওয়া সম্ভব হলেও মায়ানমার হয়ে চীনের কুইনমিং পর্যন্ত বিস্তৃত এই লাইন সহজে কাটতে বা হামলা করতে সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়া ছাড়া মহামতি আমেরিকার হাতে আর কোন উপায় বা অল্টারনেটিভ নাই! এর বিপরীতে যুদ্ধকালীন জ্বালানি সরবরাহ লাইন মেরামত বা ঠিক করা প্রায় অসাধ্য একটি কাজ। তখন বাধ্য হয়ে একপক্ষকে আত্মসমর্পণ করতে হবে! যুদ্ধ শুরু করাটা সহজ, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করাটা কঠিন। বুদ্ধিমান লোক মাত্রই যুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধ বন্ধ করার পথটা ঠিক করে রাখে। অন্যদিকে বেবুন শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কের বাঙালি ও শয়তান মস্তিষকের পাকিস্তানিরা খালি যুদ্ধ শুরুর তালে থাকে, যুদ্ধ কিভাবে বন্ধ করবে সে প্রতিষেধক তাদের কাছে নাই। কিন্তু আমেরিকা, চীন সহ অন্যান্য পরাশক্তিগুলো যুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধ শেষ করার পথগুলো তৈরি করে নেয়। আর যুদ্ধ শেষ করতে গেলে আমেরিকা ও চীন উভয় দেশের কাছে সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমেরিকা সেন্টমার্টিনে বসতে চেয়েছে, অল্টারনেটিভ হিসেবে সোনাদিয়া দ্বীপ। এর বিপরীতে চীন চেয়েছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি নিবেদিত সরকারের মাধ্যমে আমেরিকাকে সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়ায় বসতে না দেওয়া। এবং মহামতি আমেরিকা সিস্টেমে সেই সরকারকেই উৎখাত করে দিয়েছে বাংলাদেশে এবং নিজেদের নাম্বার ওয়ান এজেন্টকে প্রধান করে তাদের অন্যান্য তাবেদারদের নিয়ে নতুন একটি বে-আইনি সরকার স্থাপন করেছে। হেনরি কিসিঞ্জারের আবিস্কৃত 'মানবাধিকার' নামক অস্ত্রের মতো 'পরিবেশ রক্ষা' নামক অস্ত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের জনগণকে সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া থেকে দূরে রাখতে পারলে আমেরিকার জন্য কাজটা আরেকটু এগিয়ে যাবে। যদিও বাংলাদেশের মিডিয়ায় (ntv-তে প্রচারিত প্রতিবেদন) প্রপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে 'বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় রেয়ার-আর্থ উপাদানের বিশাল মজুদ পাওয়া গিয়েছে এবং সেসব মজুদকে ভারত থেকে রক্ষায় পাকিস্তান নৌবাহিনী, মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক কমাণ্ডের বাহিনী ও তুরস্কের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করতে দেওয়া প্রয়োজন! এবং এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সোনাদিয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশের এলাকায় বিশাল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। লেখক: পিএইচডি ফেলো, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এণ্ড জিওপলিটিক্স, হুনান ইউনিভার্সিটি।
বা পড়ছি অনেক আগে থেকে। মানে শেখ হাসিনা যখন আমেরিকাকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছিলেন বছর কয়েক আগে। তবে বেশী পড়া হয়েছে বা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, বিশেষ করে আমেরিকার ন্যাভাল ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঘাঁটি করা বিষয়ে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করার পর থেকে। গতকাল(০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪) 'পরিবেশ রক্ষা' ইস্যুতে সেন্টমার্টিনের ক্যাঁচাল যখন শুরু হয়েছে তখন আমি পৃথিবীর মানচিত্রটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। বিশেষ করে চীন সাপ্লাই চেইন ব্যবহার করে এমন এলাকা ও তাদের নতুন সাপ্লাই চেইন তৈরির এটেম্পট নেওয়া অঞ্চলগুলো। সাথে আমেরিকা ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কিছু আর্টিকেল ও গবেষকদের মতামত। একটা অঞ্চলের নাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
বারবার আসছে, সেটা হলো 'মালাক্কা' প্রণালী যে পথ দিয়ে পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ মালামাল পরিবহণ হয় এবং পূর্ব এশিয়ার প্রায় ১০০% বাণিজ্য ও জ্বালানি বাহী জাহাজ চলাচল করে। পৃথিবীর আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য জ্বালানির সিংহভাগই পরিবহন হয় এই মালাক্কা প্রণালী দিয়ে। সুয়েজ খালের পর এটি পৃথিবীর ২য় ব্যস্ততম জলপথ। ১৫ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এর কৌশলগত গুরুত্ব এটিকে আন্তর্জাতিক সংঘাতেরও কেন্দ্রবিন্দু করে রেখেছে। একটি দেশের উন্নয়ন জ্বালানির সাথে সম্পর্কযুক্ত(বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানায় পণ্য উৎপাদন সচল রাখা, সেসব পরিবহন ইত্যাদি কারণে!)। চীনের আমদানিকৃত জ্বালানির ৮০% এর বেশী আসে মালাক্কা প্রণালী হয়ে। ভাবছেন, সেন্টমার্টিন ইস্যুতে শীবের গীত শুরু করলাম কেন!? অপেক্ষা
করেন, একটু পরে টের পাবেন। ২০১৩ সালে চীন কর্তৃক ঘোষিত Belt & Road Initiative(BRI)-এর অংশ হিসেবে মায়ানমার ও পাকিস্তান এই দুই দেশ হয়ে চীনে ভিন্ন দুটি জ্বালানি পরিবহনের বিকল্প রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। মায়ানমার অংশটির নাম Trans Myanmar Oil & Gas Pipeline এবং পাকিস্তান অংশটির নাম China-Pakistan Economic/Energy Corridor(CPEC)। এই দুই রাস্তা দিয়ে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে থেকে (আমেরিকার স্যাংঙ্কশন খাওয়া দেশ সমূহ সহ) আমদানিকৃত জ্বালানি মালাক্কা প্রণালী ব্যবহার না করে নিজ দেশে পরিবহনই চীনের মূল উদ্দেশ্য। মিয়ানমারের আকিয়াবের সিৎওয়ে বন্দর থেকে চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশের কুইনমিং শহর পর্যন্ত মিয়ানমার-চীন জ্বালানি পাইপলাইনের পরিধি। একটি দেশ যখন অন্য একটি দেশকে আক্রমন করে তখন সর্বাত্মক
যুদ্ধ হয়। সর্বাত্মক যুদ্ধ মানে অস্ত্র ছাড়াও অন্যান্য ফ্রন্টে খেলা। একটু খেয়াল করলে দেখবেন বর্তমান বিশ্বে অস্ত্রের চেয়ে অস্ত্রের বাইরের যুদ্ধটা বেশী (নিষেধাজ্ঞা, সাপ্লাইচেইন কেটে দেওয়া, ইন্ডাস্ট্রি সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি)। এগুলোকে সাধারণত আমরা স্ট্র্যাটেজি হিসেবে জানি। ধরুন, চীন তাদের টেরিটরির ভূমি ফিরে পেতে তাইওয়ান আক্রমন করলো। তখন চুক্তি অনুসারে আমেরিকা তাইওয়ানকে অস্ত্র সাপ্লাই দিলেও সে অস্ত্র দিয়ে তারা যে চীনের কিছুই করতে পারবে না সেটা আমেরিকা নিজেই জানে। কারণ তাইওয়ানের তুলনায় চীন ধারণার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। তাছাড়া তাইওয়ান খুব ছোট একটি অঞ্চল যেটার ডান থেকে বামে মুহুর্তের মধ্যে দখল করে নেওয়া সম্ভব চীনের পক্ষে। কিন্তু চীন অপেক্ষায় আছে কখন আমেরিকা
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের যুদ্ধ ইস্যুতে ব্যস্ত থাকে! ঠিক একিই ভাবে আমেরিকাও চাইছে বিভিন্ন ইস্যুতে চীনকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে যাতে তা সমাধান করতে গিয়ে তাইওয়ানের দিকে চীন নজর না দিতে পারে! চীনকে ব্যতিব্যস্ত রাখার ক্ষুদ্র একটি ইস্যু হচ্ছে মায়ানমারের মাধ্যমে চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশ এবং ভারতের সেভেন সিস্টার অঞ্চলের মাধ্যমে চীনের তিব্বত সায়ত্তশাসিত অঞ্চলে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলে দেয়া! তখন চীন নিজেদের এই দুই অঞ্চল রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। বিখ্যাত দার্শনিক সুনঝে বিংফা/ সাঞ্জু-আবে তাঁর বিখ্যাত বই "দ্যা আর্ট অভ ওয়ারে" এই পদ্ধতিকে উল্লেখ করেছেন - "প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন দিক থেকে ছোট ছোট আক্রমনের মাধ্যমে ব্যতিব্যস্ত রাখা" যা অনেকটা বনকুকুর ও হায়েনাদের আক্রমনের ধরনের
মতো। এরকম ছোট ছোট আক্রমনের আরেকটি হচ্ছে মালাক্কা প্রণালী বা চ্যানেল যেটি দিয়ে চীনের জ্বালানি ও পণ্য পরিবহনে বন্ধ করে দেওয়া। খুব সরু একটি পথ হওয়ায় একটি ডেস্ট্রয়ার বা নৌবহর বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চীনের জাহাজগুলোর গতিপথ রুখে দেওয়া সম্ভব(চীন ৮০% জ্বালানি এই পথ দিয়ে পরিবহন করে)। এতে চীন ভালই বিপদে পড়বে। কারণ যুদ্ধে ''যুদ্ধ বিমান, আর্মড ভ্যাহিকল, ট্যাংক ইত্যাদি লাগে; সর্বোপরি এসব চালাতে লাগে জ্বালানি''। একটি যুদ্ধ এক অর্থে তেল ও অস্ত্রের খেলা যা চীনের জন্য রিস্কি হয়ে যাবে। এই ঝুঁকি এভয়েড করতে, তার জ্বালানি সরবরাহের রাস্তা ঝুকিমুক্ত রাখতে, চীন ২০০৩/০৪ সাল থেকে পরিকল্পনা নেয়। চীন-পাকিস্তান করিডোরে(CPEC) সমস্যাটা হচ্ছে আমেরিকা অলরেডি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলো (ইসলামিস্ট জিহাদী সহ) দিয়ে টেরোরিস্ট বোম্বিং চালু রেখেছে। আর এই টেরোরিস্ট বোম্বিং জ্বালানি সরবরাহ লাইনের জন্য খুবই রিস্কি। একটা উদাহরণ দিলে আরেকটু ক্লিয়ারলি বুঝতে পারবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যু্দ্ধ শুরুর সময় জার্মানি প্যাকরপ্যাকর করা শুরু করেছিল। তখন কে বা কাহারা নরওয়ে থেকে সমুদ্র পথে জার্মানির গ্যাস সরবরাহ লাইনটিতে খুবই ক্ষুদ্র একটি ছিদ্র করে দেয়। এই এক ছিদ্রের চোটে বা থাপ্পরে জার্মানি চুপ হয়ে যায়। যদি ইউরোপের মতো সিকিউরড একটি এলাকার সমুদ্রের নিচে অবস্থিত পাইপ লাইনে ছিদ্র করা যায় তবে পাকিস্তানের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামিস্ট জিহাদীদের দ্বারা বানানো জাহান্নামে কি হতে পারে একটু ভাবুন! তাছাড়া আফগান তালেবানদের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কটা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চেয়েও খারাপ। ফাইনালি মহামতি আমেরিকার পথের কাঁটা ইমরান খান সরকারকে প্রথমে লেজিজলেটিভ ক্যু ও তারপরে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে সরিয়ে দিয়েছে। তালেবানরা পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে এই পাইপলাইনে হঠকারী হামলা করলে আল্টিমেট ক্ষতিতো চীনেরই হবে। সুতরাং এই পথও আমেরিকা সিস্টেমে চীনের জন্য বন্ধ করে রেখেছে। এসব প্রেক্ষাপটে মায়ানমারের আকিয়াবের সিৎওয়ে বন্দর থেকে চীনের কুইনমিং শহর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহ পথটি চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বটি যেমন চীন বুঝে, ঠিক তেমনিভাবে আমেরিকাও জানে। কাজেই আমেরিকার পক্ষ থেকে এই মুহুর্তে এই জায়গায় একটি আঘাত দেয়া ফরজ হয়ে গিয়েছে। আর মায়ানমারের আকিয়াব থেকে শুরু হওয়া পাইপলাইনে আঘাত করার জন্য সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়া সহ দক্ষিণ-চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব খুবই খুবই বেশী। অনেকেই সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করে বলার চেষ্টা করছে - সেন্টমার্টিনেতো ক্যান্টনমেন্ট করার মতো জায়গা নাই, রণতরী রাখার মতো গভীরতা নাই! তাদের এসব যুক্তি হচ্ছে বাতুলতা। পাতানো বিপ্লবের নতুন দুই নম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই বিপ্লবী, যার যা খুশী বলে চলেছে। ওহে মদনের পাল, আমেরিকার এখানে ক্যান্টনমেন্ট করার দরকারও নাই। যাস্ট কিছু যুদ্ধ ড্রোন যদি রাখা যায় এবং সেসকল ড্রোন কন্ট্রোলের জন্য যদি ছোট একটি ইউনিট স্থাপন করা যায়, সেটাই আমেরিকার জন্য মোর দ্যান এনাফ! কারণ সেন্টমার্টিনের ভৌগোলিক অবস্থান আকিয়াবের (আইক্কাফ) খুবই কাছে এবং এটিই সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব, অন্যকিছু না। অপরদিকে সোনাদিয়ায় অবস্থান নিতে পারলে পুরো কক্সবাজার জেলার যতগুলো সমুদ্র চ্যানেল রয়েছে সবই তাদের দখলে চলে আসবে। কারণ যুদ্ধকালীন চীনের জ্বালানি সরবরাহের অন্যান্য পাইপলাইন কেটে দেওয়া সম্ভব হলেও মায়ানমার হয়ে চীনের কুইনমিং পর্যন্ত বিস্তৃত এই লাইন সহজে কাটতে বা হামলা করতে সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়া ছাড়া মহামতি আমেরিকার হাতে আর কোন উপায় বা অল্টারনেটিভ নাই! এর বিপরীতে যুদ্ধকালীন জ্বালানি সরবরাহ লাইন মেরামত বা ঠিক করা প্রায় অসাধ্য একটি কাজ। তখন বাধ্য হয়ে একপক্ষকে আত্মসমর্পণ করতে হবে! যুদ্ধ শুরু করাটা সহজ, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করাটা কঠিন। বুদ্ধিমান লোক মাত্রই যুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধ বন্ধ করার পথটা ঠিক করে রাখে। অন্যদিকে বেবুন শিম্পাঞ্জির মস্তিষ্কের বাঙালি ও শয়তান মস্তিষকের পাকিস্তানিরা খালি যুদ্ধ শুরুর তালে থাকে, যুদ্ধ কিভাবে বন্ধ করবে সে প্রতিষেধক তাদের কাছে নাই। কিন্তু আমেরিকা, চীন সহ অন্যান্য পরাশক্তিগুলো যুদ্ধ শুরুর আগে যুদ্ধ শেষ করার পথগুলো তৈরি করে নেয়। আর যুদ্ধ শেষ করতে গেলে আমেরিকা ও চীন উভয় দেশের কাছে সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমেরিকা সেন্টমার্টিনে বসতে চেয়েছে, অল্টারনেটিভ হিসেবে সোনাদিয়া দ্বীপ। এর বিপরীতে চীন চেয়েছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি নিবেদিত সরকারের মাধ্যমে আমেরিকাকে সেন্টমার্টিন বা সোনাদিয়ায় বসতে না দেওয়া। এবং মহামতি আমেরিকা সিস্টেমে সেই সরকারকেই উৎখাত করে দিয়েছে বাংলাদেশে এবং নিজেদের নাম্বার ওয়ান এজেন্টকে প্রধান করে তাদের অন্যান্য তাবেদারদের নিয়ে নতুন একটি বে-আইনি সরকার স্থাপন করেছে। হেনরি কিসিঞ্জারের আবিস্কৃত 'মানবাধিকার' নামক অস্ত্রের মতো 'পরিবেশ রক্ষা' নামক অস্ত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের জনগণকে সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া থেকে দূরে রাখতে পারলে আমেরিকার জন্য কাজটা আরেকটু এগিয়ে যাবে। যদিও বাংলাদেশের মিডিয়ায় (ntv-তে প্রচারিত প্রতিবেদন) প্রপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে 'বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় রেয়ার-আর্থ উপাদানের বিশাল মজুদ পাওয়া গিয়েছে এবং সেসব মজুদকে ভারত থেকে রক্ষায় পাকিস্তান নৌবাহিনী, মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক কমাণ্ডের বাহিনী ও তুরস্কের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করতে দেওয়া প্রয়োজন! এবং এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সোনাদিয়া দ্বীপ ও এর আশেপাশের এলাকায় বিশাল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। লেখক: পিএইচডি ফেলো, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এণ্ড জিওপলিটিক্স, হুনান ইউনিভার্সিটি।



