ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
শিশু বলাৎকারের জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি ইসকন
স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন
ইসকনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াত নেতাদের পিটিয়ে হত্যা: ১৮ বছর পর হাসিনার নামে মামলা
চিন্ময় কৃষ্ণসহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আজ গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
‘চার মাসে সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত’
বিচারে সরকারের উদ্যোগ নেই
আসামির তালিকায় রয়েছে শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, তৎকালীন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা তথা ডিজিএফআই কর্মকর্তা এবং তখনকার সময় ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করা কিছু সাংবাদিক
২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। ওই হত্যাকান্ডের ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ভারতের ইন্ধনে সংঘটিত বর্বরোচিত ওই হত্যাকান্ডের পর সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুকৌশলে হত্যাকারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। ওই হত্যাকান্ডের বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে দাবি করে শহীদ পরিবারগুলো কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে পুনরায় বিচার প্রক্রিয়া শুরুর কোনো
উদ্যোগই নিচ্ছে না। বর্বরোচিত ওই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। অথচ ওই হত্যাকান্ডের পুনরায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ‘থলের বিড়াল’ এতোদিনে বের হয়ে আসতো। দেশবাসীর সামনে খুলে যেতো অনেকের মুখোশ। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাড়ে তিন মাস অতিক্রম করলেও বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করেনি। তবে গতকাল শহীদ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তারা পিলখানা হত্যাকাÐের বিচারের লক্ষ্যে ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করবেন। বিশ্বের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকান্ড। যা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগ সরকারকে দোষারোপ করা হয়েছে আগেও। আওয়ামীলীগ শাসনামলে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার পর্যন্ত মুখ
খুলতে সাহস পাননি। তবে বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে গত ৫ আগষ্ট হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া ও আ’লীগ সরকারের পতনের পর বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে নানা ধরনের অভিযোগ আর ষড়যন্ত্রের আলোচনা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত ‘অবশ্যই হবে’। এ উপদেষ্টা যিনি তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির দায়িত্বেও ছিলেন। একইভাবে ওই সময়কার সেনা প্রধান মইন-উ-আহমেদর এক ভিডিও বার্তায় বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা না করারও অভিযোগ এনেছেন। এরই মধ্যে পিলখানা হত্যাকান্ডে ষড়যন্ত্রের অভিযোগসহ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বাবার মৃত্যুর অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সাবেক
কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে নতুন করে আবার হত্যা মামলা করেছেন সাবেক বিডিআর কর্মকর্তা আবদুর রহিমের পুত্র আইনজীবী আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, তার বাবা বিডিআর সিগন্যাল সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। বিডিআর এর ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়। বন্দী অবস্থায় তাকে রাজসাক্ষী করার চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে তিনি রাজী না হলে পেটের ব্যথায় অসুস্থ অবস্থায় তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এর ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান। নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের তরফ থেকেও ইতিমধ্যে বেশকিছু অভিযোগ ও দাবি সামনে আনা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আগের সব তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রকাশ করা। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মহাখালী রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪
জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। গত প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বজনদের জানা নেই দাবি করে তারা বলেন, “মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী, তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?” সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিডিআর হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারী বিগত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। এ ব্যাপারে ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করারও ঘোষণা দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। পিলখানা হত্যাকান্ডে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, “শেখ ফজলে নূর তাপস,
শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব।” এছাড়া তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান সরকারের এতোদিনেও আমাদের জন্য ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব, সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তারা গত সরকারের ক্ষমতায়
ছিল”। সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভ‚ঁইয়া বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগ চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।” পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সকল মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।” নিহতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন নিহত কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, নিহত ৫৭ কর্মকর্তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, গেজেটের মাধ্যমে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সেদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুন করে তদন্ত, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতিসহ ইতোপূর্বের সকল তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা, পিলখানা ট্র্যাজেডিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি এবং দ্রুত বিচার শেষ করে নির্দোষদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এসময় বক্তব্য দেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, নিহত কর্নেল এরশাদের ভাই মামুন, নিহত মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, নিহত কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। তখন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদস্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
উদ্যোগই নিচ্ছে না। বর্বরোচিত ওই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। অথচ ওই হত্যাকান্ডের পুনরায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ‘থলের বিড়াল’ এতোদিনে বের হয়ে আসতো। দেশবাসীর সামনে খুলে যেতো অনেকের মুখোশ। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাড়ে তিন মাস অতিক্রম করলেও বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করেনি। তবে গতকাল শহীদ পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তারা পিলখানা হত্যাকাÐের বিচারের লক্ষ্যে ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করবেন। বিশ্বের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকান্ড। যা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগ সরকারকে দোষারোপ করা হয়েছে আগেও। আওয়ামীলীগ শাসনামলে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার পর্যন্ত মুখ
খুলতে সাহস পাননি। তবে বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে গত ৫ আগষ্ট হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া ও আ’লীগ সরকারের পতনের পর বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে নানা ধরনের অভিযোগ আর ষড়যন্ত্রের আলোচনা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত ‘অবশ্যই হবে’। এ উপদেষ্টা যিনি তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির দায়িত্বেও ছিলেন। একইভাবে ওই সময়কার সেনা প্রধান মইন-উ-আহমেদর এক ভিডিও বার্তায় বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা না করারও অভিযোগ এনেছেন। এরই মধ্যে পিলখানা হত্যাকান্ডে ষড়যন্ত্রের অভিযোগসহ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে বাবার মৃত্যুর অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সাবেক
কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে নতুন করে আবার হত্যা মামলা করেছেন সাবেক বিডিআর কর্মকর্তা আবদুর রহিমের পুত্র আইনজীবী আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, তার বাবা বিডিআর সিগন্যাল সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। বিডিআর এর ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়। বন্দী অবস্থায় তাকে রাজসাক্ষী করার চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে তিনি রাজী না হলে পেটের ব্যথায় অসুস্থ অবস্থায় তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এর ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান। নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের তরফ থেকেও ইতিমধ্যে বেশকিছু অভিযোগ ও দাবি সামনে আনা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আগের সব তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রকাশ করা। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মহাখালী রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪
জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। গত প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বজনদের জানা নেই দাবি করে তারা বলেন, “মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী, তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?” সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বিডিআর হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারী বিগত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। এ ব্যাপারে ২ সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করারও ঘোষণা দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। পিলখানা হত্যাকান্ডে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, “শেখ ফজলে নূর তাপস,
শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব।” এছাড়া তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান সরকারের এতোদিনেও আমাদের জন্য ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব, সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তারা গত সরকারের ক্ষমতায়
ছিল”। সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভ‚ঁইয়া বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগ চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।” পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সকল মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।” নিহতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন নিহত কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, নিহত ৫৭ কর্মকর্তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, গেজেটের মাধ্যমে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সেদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুন করে তদন্ত, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতিসহ ইতোপূর্বের সকল তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা, পিলখানা ট্র্যাজেডিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি এবং দ্রুত বিচার শেষ করে নির্দোষদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এসময় বক্তব্য দেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, নিহত কর্নেল এরশাদের ভাই মামুন, নিহত মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, নিহত কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। তখন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদস্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।