ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
কারখানা বন্ধ, কর্মহীন নারী শ্রমিকরা বাধ্য হচ্ছেন পতিতাবৃত্তিতে
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০ ভাগ অর্ডার বাতিল, বন্ধের ঝুঁকিতে শতাধিক কারখানা
চিন্ময় কৃষ্ণের ঘটনায় বিএনপি নেতার মামলায় নিরীহরা আসামি, তীব্র সমালোচনা
ইউনূস সরকারের সমালোচনা করায় গণ অধিকার পরিষদ নেতাকে বেদম মারধর
অবশেষে খোঁজ মিলল ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জিয়ার
সচিবালয়ের আগুন লাগা সেই ভবন খুলে দেওয়া হলো ১১ দিন পর
‘এক রাউন্ডও গুলি করিনি কিন্তু নামের পাশে লিখেছে ১৭ রাউন্ড’
নির্বিচার আতশবাজি ফানুস, বিপন্ন প্রাণ-প্রকৃতি
নতুন বছরের চৌহদ্দি থেকে ঘড়ির কাঁটা তখনও কিছুটা দূরে। রাত ১২টার ঘর পেরোনোর আগেই পৌষের রাতের নীরবতা ভেঙে বেজে ওঠে উৎসবের বাদ্যি। আতশবাজি আর ফানুসের রোশনিতে ঢাকা নগরের নিকষ আকাশ হয়ে ওঠে জাঁকালো। উৎকট শব্দে আতশ ছিটকে পড়ছে চারপাশে, ফানুস দম ফুরিয়ে আছড়ে পড়ছে গাছে গাছে। ভয়ে-আতঙ্কে গাছের পাখিও দলছুট।
নতুন বছরকে সম্ভাষণ জানাতে গিয়ে শব্দ আর বায়ুদূষণের কথা এবারও মাথায় নেয়নি কেউ। শব্দের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাননি হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগী, বাসাবাড়িতে থাকা বয়োবৃদ্ধ কিংবা শিশুরাও। শব্দ থেকে নিস্তার পেতে স্থানীয় থানার পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেছেন হাজারো মানুষ। অথচ প্রতিবছরের মতো এবারও ছিল নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল। আতশবাজি আর
ফানুসে ছিল হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা। পুলিশ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা, অনুরোধ, প্রাণিপ্রেমী আর সংবেদনশীল মানুষের নানা প্রচারণা কেউ কানে তোলেননি। রাতের বর্ষবরণের আনন্দের বিপরীত পাশটা কতটা ভয়াবহ ছিল– সেই ক্ষত বেরিয়ে আসে নতুন বছরের প্রথম ভোরেই। পটকা-আতশবাজির আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে তিন শিশুসহ পাঁচজন। আতশবাজির জ্বলন্ত টুকরাতে কামরাঙ্গীরচরের আট বছরের ছোট্ট শিশু ফারহানের মুখ ও শরীর পুড়ে যায়। দগ্ধ আরেকজনের চোখে লেগেছে আগুনের হলকা। আতশবাজি কাছে থেকে দেখতে গিয়ে চোখ-মুখ পুড়েছে আরেকজনের। ফানুস থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর, কেরানীগঞ্জে তিনটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে দোকান-বাসা। মেট্রোরেলের লাইনের তারে আটকে ছিল ৯টি ফানুস। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতিবছর সরকার নিষেধাজ্ঞা
দিয়ে দায় সারতে চায়। তবে এমন বিপজ্জনক উদযাপন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশ্বের অনেক দেশেই আতশবাজির ব্যবহার আছে, তবে সেগুলো পরিবেশবান্ধব। বিদেশে নির্দিষ্ট স্থানে সরকার নিয়ন্ত্রিত উৎসবে আনন্দে মাতে মানুষ। তবে বারুদের স্তূপের ওপরে বসে থাকা ঢাকাবাসী আগুন নিয়ে খেলছে। যেগুলো পোড়ানো হচ্ছে, তা নিম্নমানের। আতশবাজিমুক্ত বিস্তৃত এলাকা প্রতিষ্ঠা কিংবা আতশবাজি ফাটালেও সেটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার তাগিদ পরিবেশবিদদের। আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি তাদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নতুন বছর উদযাপনে আলাদা জায়গা নির্ধারণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে
নির্দিষ্ট জায়গাতেই মানুষ উৎসব করবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, আগামী বছর নির্দিষ্ট স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ভয়ার্ত হাজারো মানুষের ফোন পটকা-আতশবাজি-ফানুস উৎসবের রং ছড়ালেও রাজধানীবাসীর অনেকের কাছে তা ছিল পীড়াদায়ক। পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর সময় রাজধানীতে দগ্ধ হয়েছেন পাঁচজন, তাদের তিনজনই শিশু। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বিভিন্ন সময়ে তারা ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে যায়। ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, আগুনে ফারহান নামে আট বছর বয়সী এক শিশুর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া শিফান মল্লিকের (১২) শরীরের ১ শতাংশ, সম্রাটের
(২০) শরীরের ১ শতাংশ, শান্তর (৪৩) শরীরের ২ শতাংশ ও তাফসিরের (৩) শরীরের ২ শতাংশ পুড়ে গেছে। মিরপুর ও ধানমন্ডি ল্যাবএইডের পেছনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে দোকান। এ ছাড়া ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া হিজলতলা বাজার এলাকায় আতশবাজির ফুলকি থেকে আগুন লেগে একটি ঘর পুড়ে যায়। বর্ষবরণের রাতে ঢাকার মেট্রোরেলের লাইনে এসে পড়ে ৯টি ফানুস, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত। গতকাল বুধবার মেট্রোরেল চলাচল শুরুর আগেই এসব ফানুস লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ৯৯৯-এর পুলিশ পরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) আনোয়ার সাত্তার জানান, বর্ষবরণে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় ও আতশবাজি ইত্যাদি শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করেন ১ হাজার ১৮৫ ভুক্তভোগী। এর
মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকে ৩৮৭টি কল এবং দেশের অন্য স্থান থেকে ৭৯৮টি কল আসে। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করা হয়। নাটোরের বড়াইগ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন করতে গিয়ে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ইশতিয়াক আহমেদ (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিপন্ন প্রাণিকুল প্রতিবারই থার্টিফার্স্ট নাইটে মানুষের কয়েক মুহূর্তের নিছক আনন্দের বলি হতে হয় প্রকৃতিকে। এর প্রমাণ আরেকবার মিলল রাজধানী ঢাকায়। মধ্যরাতে ফাটানো শব্দ আর উড়িয়ে দেওয়া আগুন থেকে বাঁচতে ঘুমন্ত পাখি নীড় ছেড়ে ছুটেছে। বর্ষবরণ উদযাপন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, আতশবাজির
শব্দে একদল পাখি ছোটাছুটি করছে। আর বাইরে যখনই আতশবাজির বিকট শব্দ হচ্ছে, পাখিগুলোর অস্থিরতাও বেড়ে যাচ্ছে। আতশবাজির মুহুর্মুহু শব্দে পাখিগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ ছাড়া গতকাল সকাল মৃত পাখির ছবি ফেসবুকে দিয়েছেন অনেকে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দাবি, শব্দবাজির কারণে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে অনেক পাখি। হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তিও। হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে কুকুর-বিড়াল। পাখি বিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, পাখির যোগাযোগের মাধ্যম শব্দ। অতিরিক্ত শব্দের কারণে পাখি চলাচলের রাস্তা ভুলে যায়। দেয়ালের সঙ্গে আঘাত খেয়ে অনেক পাখি মারা যায়। পাখি নগরে যুদ্ধাবস্থা মনে করে নগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে, তারা আর ফিরতে নাও পারে। তারা আর না ফিরলে প্রাণ-প্রকৃতির ভারসাম্য হারাবে। পাখিরা না থাকলে ফুল ও ফলের পরাগায়ন হবে না। এতে উৎপাদন কমে যাবে। শহরে নেমে আসে দুর্যোগপূর্ণ দূষণ এ বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকায় শব্দ ও বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বায়ু ও শব্দদূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করছে। এতে ডিসেম্বরের শেষ দিনের চেয়ে জানুয়ারির প্রথম দিনের বায়ুমান সূচকের বিশেষ পরিবর্তন পাওয়া গেছে। ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকে থেকে ১ জানুয়ারি বায়ুমান সূচক ৬ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। শব্দের মাত্রা ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ৯০-১১০ ডেসিবল পর্যন্ত ওঠানামা করে। এটা শব্দের স্বাভাবিক সহনীয় মাত্রার চেয়ে দিগুণ। বর্ষবরণের রাতে ঢাকার শব্দের মাত্রা ছিল ১০০-১১০ ডেসিবল। এ ব্যাপারে ক্যাপসের পরিচালক ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নাগরিকের মধ্যে যারা দূষণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বেশি থাকেন, অর্থাৎ বয়স্ক ও শিশুর স্বাস্থ্যের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেবে। গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষেত্রেও আতশবাজি ক্ষতি করতে পারে। তিনি বলেন, অধিকাংশ দেশে খোলা মাঠ কিংবা সমুদ্রের তীরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয়। সেখানে বায়ুর প্রবাহ ভালো থাকায় পরিবেশের তেমন ক্ষতি হয় না। ডিসেম্বরে এমনিতেই বায়ুর মান খারাপ থাকে। আতশবাজি যোগ হয়ে তা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। লেজার শো কিংবা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আলো উৎসব করার পরামর্শ দেন এই পরিবেশবিজ্ঞানী। নিম্নমানের আতশবাজি-ফানুস দেশে যেসব আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আতশবাজি ভারত থেকে চোরাইপথে আসা। নিষিদ্ধ এসব আতশবাজি পাড়া-মহল্লার দোকানেও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। পুরান ঢাকায় মনস্টার, ফায়ার ওয়ার্কস, ড্রিম নাইট, আতশবাজি ও ফানুস নামে ফেসবুক পেজ ওপেন করে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মালিকের দেওয়া তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার এক দিনেই অনলাইনের মাধ্যমে আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি করেছেন ৪৪ লাখ টাকার ওপরে। এক সপ্তাহে বিক্রি করেছেন অন্তত ৩ কোটি টাকা। প্রতিবছর ১৪ জানুয়ারি সাকরাইন উৎসবে থার্টিফার্স্টের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু পুরান ঢাকাতেই ৩০ হাজার বাড়ি আছে। প্রতিটি বাড়িতে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে বাজেট রাখলেও প্রায় ৩০ কোটি টাকা আতশবাজিতে খরচ হয়। সারাদেশে আতশবাজির হিসাব ধরলে শতকোটি টাকার বাজার ধরা যায়। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোর জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আতশবাজি আমদানি করতে পারবে। এর বাইরে আতশবাজি আমদানি, ব্যবহার ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে এর মধ্যেও যারা আতশবাজি বিক্রি করছেন, তারা চোরাই পথে অথবা অবৈধভাবে আনছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ফানুস অধিকাংশই পলিথিনে মোড়ানো। ফলে আগুন অনেকক্ষণ জ্বলে এবং তা জ্বলন্ত অবস্থায় নিচে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন যারা আতশবাজি আর ফানুসে নববর্ষ উদযাপন করেন তাদের ভাষ্য, ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি আলো আর শব্দের উৎসব চলে দুনিয়ার অন্যান্য মহানগরে। তারা করতে পারলে ঢাকার মানুষের কী দোষ– এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখপাত্র ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, বিদেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য বিশেষ জোন করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এই ধরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরিবেশ-প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটার দিকে মনোযোগ থাকা জরুরি। লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, শুধু আইন করে কিংবা প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে এসব ঠেকানো যাবে না। আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা করতে পারি। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার বছরব্যাপী এ নিয়ে প্রচারণা ও ক্যাম্পেইন করতে পারে। ডিসেম্বরের শুরুতেই পাড়া-মহল্লায় সভা করে সবাইকে অবহিত করা যায়। প্রতিটি এলাকার সবুজবলয়, পাখি ও বন্যপ্রাণী অঞ্চলকে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ প্রতিটি শহরে কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে এক ঘণ্টার জন্য যেখানে এসব আয়োজন হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহিদুল ইসলাম বলেন, আতশবাজি পোড়ানোর কারণে মানুষের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়, শারীরিক বিপর্যয় এবং জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় ঘটছে। বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একটি এলাকার বায়ুদূষণ অথবা শব্দ দূষণের কারণে ওই এলাকার ইকো সিস্টেমে যত পোকামাকড় থাকে, সেগুলো নিজেদের বাঁচানোর জন্য অন্যত্র চলে যায়। যার কারণে উদ্ভিদের প্রজননের ক্ষেত্রেও একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এবার প্রচারমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন ঘিরে শব্দের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনেক সমর্থন এসেছে। তবে যারা এসব করে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাদের একটি বড় গোষ্ঠী আবার তরুণ ও কিশোর। ফলে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে। আমরা একটা আলাদা জায়গা নির্ধারণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলেছি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আতশবাজি শুধু সেই জায়গাতেই হবে। আর পটকার ক্ষেত্রে সারা বছর অভিযান চালাতে হবে। সহসাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
ফানুসে ছিল হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা। পুলিশ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা, অনুরোধ, প্রাণিপ্রেমী আর সংবেদনশীল মানুষের নানা প্রচারণা কেউ কানে তোলেননি। রাতের বর্ষবরণের আনন্দের বিপরীত পাশটা কতটা ভয়াবহ ছিল– সেই ক্ষত বেরিয়ে আসে নতুন বছরের প্রথম ভোরেই। পটকা-আতশবাজির আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে তিন শিশুসহ পাঁচজন। আতশবাজির জ্বলন্ত টুকরাতে কামরাঙ্গীরচরের আট বছরের ছোট্ট শিশু ফারহানের মুখ ও শরীর পুড়ে যায়। দগ্ধ আরেকজনের চোখে লেগেছে আগুনের হলকা। আতশবাজি কাছে থেকে দেখতে গিয়ে চোখ-মুখ পুড়েছে আরেকজনের। ফানুস থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর, কেরানীগঞ্জে তিনটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে দোকান-বাসা। মেট্রোরেলের লাইনের তারে আটকে ছিল ৯টি ফানুস। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতিবছর সরকার নিষেধাজ্ঞা
দিয়ে দায় সারতে চায়। তবে এমন বিপজ্জনক উদযাপন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশ্বের অনেক দেশেই আতশবাজির ব্যবহার আছে, তবে সেগুলো পরিবেশবান্ধব। বিদেশে নির্দিষ্ট স্থানে সরকার নিয়ন্ত্রিত উৎসবে আনন্দে মাতে মানুষ। তবে বারুদের স্তূপের ওপরে বসে থাকা ঢাকাবাসী আগুন নিয়ে খেলছে। যেগুলো পোড়ানো হচ্ছে, তা নিম্নমানের। আতশবাজিমুক্ত বিস্তৃত এলাকা প্রতিষ্ঠা কিংবা আতশবাজি ফাটালেও সেটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার তাগিদ পরিবেশবিদদের। আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি তাদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নতুন বছর উদযাপনে আলাদা জায়গা নির্ধারণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে
নির্দিষ্ট জায়গাতেই মানুষ উৎসব করবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, আগামী বছর নির্দিষ্ট স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ভয়ার্ত হাজারো মানুষের ফোন পটকা-আতশবাজি-ফানুস উৎসবের রং ছড়ালেও রাজধানীবাসীর অনেকের কাছে তা ছিল পীড়াদায়ক। পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর সময় রাজধানীতে দগ্ধ হয়েছেন পাঁচজন, তাদের তিনজনই শিশু। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বিভিন্ন সময়ে তারা ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে যায়। ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, আগুনে ফারহান নামে আট বছর বয়সী এক শিশুর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া শিফান মল্লিকের (১২) শরীরের ১ শতাংশ, সম্রাটের
(২০) শরীরের ১ শতাংশ, শান্তর (৪৩) শরীরের ২ শতাংশ ও তাফসিরের (৩) শরীরের ২ শতাংশ পুড়ে গেছে। মিরপুর ও ধানমন্ডি ল্যাবএইডের পেছনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে দোকান। এ ছাড়া ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া হিজলতলা বাজার এলাকায় আতশবাজির ফুলকি থেকে আগুন লেগে একটি ঘর পুড়ে যায়। বর্ষবরণের রাতে ঢাকার মেট্রোরেলের লাইনে এসে পড়ে ৯টি ফানুস, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত। গতকাল বুধবার মেট্রোরেল চলাচল শুরুর আগেই এসব ফানুস লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ৯৯৯-এর পুলিশ পরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) আনোয়ার সাত্তার জানান, বর্ষবরণে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় ও আতশবাজি ইত্যাদি শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করেন ১ হাজার ১৮৫ ভুক্তভোগী। এর
মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকে ৩৮৭টি কল এবং দেশের অন্য স্থান থেকে ৭৯৮টি কল আসে। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করা হয়। নাটোরের বড়াইগ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন করতে গিয়ে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে ইশতিয়াক আহমেদ (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিপন্ন প্রাণিকুল প্রতিবারই থার্টিফার্স্ট নাইটে মানুষের কয়েক মুহূর্তের নিছক আনন্দের বলি হতে হয় প্রকৃতিকে। এর প্রমাণ আরেকবার মিলল রাজধানী ঢাকায়। মধ্যরাতে ফাটানো শব্দ আর উড়িয়ে দেওয়া আগুন থেকে বাঁচতে ঘুমন্ত পাখি নীড় ছেড়ে ছুটেছে। বর্ষবরণ উদযাপন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, আতশবাজির
শব্দে একদল পাখি ছোটাছুটি করছে। আর বাইরে যখনই আতশবাজির বিকট শব্দ হচ্ছে, পাখিগুলোর অস্থিরতাও বেড়ে যাচ্ছে। আতশবাজির মুহুর্মুহু শব্দে পাখিগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ ছাড়া গতকাল সকাল মৃত পাখির ছবি ফেসবুকে দিয়েছেন অনেকে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দাবি, শব্দবাজির কারণে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে অনেক পাখি। হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তিও। হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে কুকুর-বিড়াল। পাখি বিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, পাখির যোগাযোগের মাধ্যম শব্দ। অতিরিক্ত শব্দের কারণে পাখি চলাচলের রাস্তা ভুলে যায়। দেয়ালের সঙ্গে আঘাত খেয়ে অনেক পাখি মারা যায়। পাখি নগরে যুদ্ধাবস্থা মনে করে নগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে, তারা আর ফিরতে নাও পারে। তারা আর না ফিরলে প্রাণ-প্রকৃতির ভারসাম্য হারাবে। পাখিরা না থাকলে ফুল ও ফলের পরাগায়ন হবে না। এতে উৎপাদন কমে যাবে। শহরে নেমে আসে দুর্যোগপূর্ণ দূষণ এ বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকায় শব্দ ও বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে গিয়েছিল। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) বায়ু ও শব্দদূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করছে। এতে ডিসেম্বরের শেষ দিনের চেয়ে জানুয়ারির প্রথম দিনের বায়ুমান সূচকের বিশেষ পরিবর্তন পাওয়া গেছে। ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকে থেকে ১ জানুয়ারি বায়ুমান সূচক ৬ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। শব্দের মাত্রা ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ৯০-১১০ ডেসিবল পর্যন্ত ওঠানামা করে। এটা শব্দের স্বাভাবিক সহনীয় মাত্রার চেয়ে দিগুণ। বর্ষবরণের রাতে ঢাকার শব্দের মাত্রা ছিল ১০০-১১০ ডেসিবল। এ ব্যাপারে ক্যাপসের পরিচালক ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নাগরিকের মধ্যে যারা দূষণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বেশি থাকেন, অর্থাৎ বয়স্ক ও শিশুর স্বাস্থ্যের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেবে। গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষেত্রেও আতশবাজি ক্ষতি করতে পারে। তিনি বলেন, অধিকাংশ দেশে খোলা মাঠ কিংবা সমুদ্রের তীরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয়। সেখানে বায়ুর প্রবাহ ভালো থাকায় পরিবেশের তেমন ক্ষতি হয় না। ডিসেম্বরে এমনিতেই বায়ুর মান খারাপ থাকে। আতশবাজি যোগ হয়ে তা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। লেজার শো কিংবা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আলো উৎসব করার পরামর্শ দেন এই পরিবেশবিজ্ঞানী। নিম্নমানের আতশবাজি-ফানুস দেশে যেসব আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ আতশবাজি ভারত থেকে চোরাইপথে আসা। নিষিদ্ধ এসব আতশবাজি পাড়া-মহল্লার দোকানেও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। পুরান ঢাকায় মনস্টার, ফায়ার ওয়ার্কস, ড্রিম নাইট, আতশবাজি ও ফানুস নামে ফেসবুক পেজ ওপেন করে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়। একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মালিকের দেওয়া তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার এক দিনেই অনলাইনের মাধ্যমে আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি করেছেন ৪৪ লাখ টাকার ওপরে। এক সপ্তাহে বিক্রি করেছেন অন্তত ৩ কোটি টাকা। প্রতিবছর ১৪ জানুয়ারি সাকরাইন উৎসবে থার্টিফার্স্টের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু পুরান ঢাকাতেই ৩০ হাজার বাড়ি আছে। প্রতিটি বাড়িতে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে বাজেট রাখলেও প্রায় ৩০ কোটি টাকা আতশবাজিতে খরচ হয়। সারাদেশে আতশবাজির হিসাব ধরলে শতকোটি টাকার বাজার ধরা যায়। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোর জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আতশবাজি আমদানি করতে পারবে। এর বাইরে আতশবাজি আমদানি, ব্যবহার ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে এর মধ্যেও যারা আতশবাজি বিক্রি করছেন, তারা চোরাই পথে অথবা অবৈধভাবে আনছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ফানুস অধিকাংশই পলিথিনে মোড়ানো। ফলে আগুন অনেকক্ষণ জ্বলে এবং তা জ্বলন্ত অবস্থায় নিচে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন যারা আতশবাজি আর ফানুসে নববর্ষ উদযাপন করেন তাদের ভাষ্য, ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি আলো আর শব্দের উৎসব চলে দুনিয়ার অন্যান্য মহানগরে। তারা করতে পারলে ঢাকার মানুষের কী দোষ– এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটির মুখপাত্র ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, বিদেশে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের জন্য বিশেষ জোন করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এই ধরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরিবেশ-প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটার দিকে মনোযোগ থাকা জরুরি। লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, শুধু আইন করে কিংবা প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে এসব ঠেকানো যাবে না। আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা করতে পারি। গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার বছরব্যাপী এ নিয়ে প্রচারণা ও ক্যাম্পেইন করতে পারে। ডিসেম্বরের শুরুতেই পাড়া-মহল্লায় সভা করে সবাইকে অবহিত করা যায়। প্রতিটি এলাকার সবুজবলয়, পাখি ও বন্যপ্রাণী অঞ্চলকে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ প্রতিটি শহরে কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে এক ঘণ্টার জন্য যেখানে এসব আয়োজন হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহিদুল ইসলাম বলেন, আতশবাজি পোড়ানোর কারণে মানুষের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়, শারীরিক বিপর্যয় এবং জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয় ঘটছে। বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একটি এলাকার বায়ুদূষণ অথবা শব্দ দূষণের কারণে ওই এলাকার ইকো সিস্টেমে যত পোকামাকড় থাকে, সেগুলো নিজেদের বাঁচানোর জন্য অন্যত্র চলে যায়। যার কারণে উদ্ভিদের প্রজননের ক্ষেত্রেও একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এবার প্রচারমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন ঘিরে শব্দের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনেক সমর্থন এসেছে। তবে যারা এসব করে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাদের একটি বড় গোষ্ঠী আবার তরুণ ও কিশোর। ফলে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা আছে। আমরা একটা আলাদা জায়গা নির্ধারণের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলেছি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আতশবাজি শুধু সেই জায়গাতেই হবে। আর পটকার ক্ষেত্রে সারা বছর অভিযান চালাতে হবে। সহসাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।