ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
অবিনশ্বর বিজয় দিবস ২০২৫
নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর যেদিন বিজয়ের সূর্য হেসেছিল বাংলার আকাশে
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা
প্রহসন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, জনগণের রায় ছাড়াই ক্ষমতার বন্দোবস্ত মানবে না দেশ
ক্যু করে পদচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়ে ইউনুসের কাছে রাষ্ট্রপতি এখন অচ্ছুৎ!
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লুটপাট: জুলাইয়ের খুনিদের আসল চেহারা
ফেব্রুয়ারিতে ভোট, নাকি সংঘর্ষ—সংকটময় মোড়ে বাংলাদেশ
নিয়াজীর আত্মসমর্পণের চুক্তিনামা নিয়ে আসেন
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জ্যাকব দুপুর ১টার দিকে হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামেন। নিয়াজীর অফিসে আত্মসমর্পণের চুক্তিনামা নিয়ে আলোচনায় বসবেন। তার আগে জ্যাকব সকাল থেকে নিয়াজীর অফিসে উপস্থিত জেনারেল নাগরাকে আলাদাভাবে ডেকে নেন। নাগরাকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য ঢাকায় আনার নির্দেশ দেন এবং ঢাকার নিরাপত্তা, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি ব্যবস্থা করতে পাঠিয়ে দেন।
দুই পক্ষের মধ্যে আত্মসমর্পণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পিনপতন নীরবতার মধ্যে কর্ণেল খেরা আত্মসমর্পণের শর্তগুলো পড়ে শোনান। এরপর খসড়া কপিটি নিয়াজীকে দেন। রাও ফরমান আলী চুক্তিনামায় লেখা "ভারত ও বাংলাদেশের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ" অংশে জোর আপত্তি জানায়। রাও ফরমান শুধুমাত্র ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে রাজি; বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করার
কথা তার অহংবোধে আঘাত করে। কিন্তু জেনারেল জ্যাকবের জবাব – কিচ্ছু করার নেই! মেনে নাও। দিল্লী থেকে এভাবেই চুক্তির নির্দেশ এসেছে! দলিলে পাকিস্তানিদের পক্ষে বেশকিছু শর্ত ছিল। যেমন – পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে। এমনকি পাকিস্তানপন্থী সব বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ও উল্লেখ ছিল, যা আগে কখনো কোনো আত্মসমর্পণের দলিলে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পাকিস্তানিরা আরও কিছু সময় নেওয়ার পর আত্মসমর্পণের দলিলে সম্মতি দেয়। এরপর আত্মসমর্পণের পদ্ধতি নিয়ে আলাপ শুরু হয়। জেনারেল জ্যাকব জানান – আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে রমনার রেসকোর্স ময়দানে। সেখানে প্রথমে ভারত ও পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মিলিত দল জেনারেল আরোরাকে গার্ড অব অনার
প্রদান করবে। এরপর দলিল সই হবে। জেনারেল নিয়াজী তার অস্ত্র ও পদবির ব্যাজ খুলে জেনারেল আরোরার কাছে হস্তান্তর করবে। এখানেও কিছু বিষয়ে নিয়াজী গররাজি ছিল। নিয়াজী চেয়েছিল আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান তার অফিসেই হোক। কিন্তু জ্যাকবের অনড় অবস্থানের কারণে শেষমেশ সবই মেনে নেয়। সাধারণত বিজিত সেনাপতি বিজয়ী সেনাপতির সদর দফতরে গিয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে সই দেয় ও অস্ত্র সমর্পণ করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এর ব্যতিক্রম – এখানে বিজয়ী সেনাপতি বিজিত সেনাপতির এলাকায় গিয়ে জনসমক্ষে অত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। আত্মসমর্পণের পরও নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈনিকদের ব্যক্তিগত অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়। হেলিকপ্টারে করে পড়ন্ত বিকেলে জেনারেল আরোরাসহ মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এ, কে, খন্দকার
তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছান। তারা নেমেই দেখেন, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়াজী, জ্যাকবসহ আরও কিছু পাকিস্তানি ও মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তা তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর জীপে করে তারা রমনার রেসকোর্স ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সে সময় রমনার চারপাশে মানুষের উপচে পরা ভিড়। অনুষ্ঠানস্থলে মাত্র দু’টি চেয়ার আর একটি টেবিল। একটি চেয়ারে বসে নিয়াজী, অন্যটিতে আরোরা। আরোরার ঠিক পেছনে এ, কে, খন্দকার। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর শফিউল্লাহ, কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী, ২ নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক মেজর হায়দার। আত্মসমর্পণের দলিল নিয়ে আসার পর নিয়াজীকে কলম এগিয়ে দেন আরোরা। প্রথমে কলমটি দিয়ে লেখা যাচ্ছিল না। আরোরা কলমটি
নিয়ে ঝাড়াঝাড়ি করে আবার নিয়াজীকে দেন। এ দফায় আর ঝামেলা করেনি। সই শেষ হলে উভয়েই উঠে দাঁড়ান। আত্মসমর্পণের রীতি অনুযায়ী নিয়াজী তার রিভালবারটি কাঁপা কাঁপা হাতে অত্যন্ত বিষণ্ণতার সঙ্গে আরোরার কাছে হস্তান্তর করে। ঢাকার ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল চারটা বেজে একত্রিশ মিনিট। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সৈন্য ও কর্মকর্তাদের কর্ডন করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। পরাজিত জেনারেল নিয়াজীকে কর্ডন করে নিয়ে যান মেজর হায়দার। শেষ হয় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। বিজয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বাঙালি জাতি। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র '৭১ এর দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী উইটনেস টু সারেন্ডার
– সিদ্দিক সালিক (অধ্যায় ২৩, ঢাকাঃ আত্মসমর্পণ) ১৯৭১ঃ ভেতরে বাইরে – এ কে খন্দকার
কথা তার অহংবোধে আঘাত করে। কিন্তু জেনারেল জ্যাকবের জবাব – কিচ্ছু করার নেই! মেনে নাও। দিল্লী থেকে এভাবেই চুক্তির নির্দেশ এসেছে! দলিলে পাকিস্তানিদের পক্ষে বেশকিছু শর্ত ছিল। যেমন – পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করা হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে। এমনকি পাকিস্তানপন্থী সব বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ও উল্লেখ ছিল, যা আগে কখনো কোনো আত্মসমর্পণের দলিলে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পাকিস্তানিরা আরও কিছু সময় নেওয়ার পর আত্মসমর্পণের দলিলে সম্মতি দেয়। এরপর আত্মসমর্পণের পদ্ধতি নিয়ে আলাপ শুরু হয়। জেনারেল জ্যাকব জানান – আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে রমনার রেসকোর্স ময়দানে। সেখানে প্রথমে ভারত ও পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মিলিত দল জেনারেল আরোরাকে গার্ড অব অনার
প্রদান করবে। এরপর দলিল সই হবে। জেনারেল নিয়াজী তার অস্ত্র ও পদবির ব্যাজ খুলে জেনারেল আরোরার কাছে হস্তান্তর করবে। এখানেও কিছু বিষয়ে নিয়াজী গররাজি ছিল। নিয়াজী চেয়েছিল আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান তার অফিসেই হোক। কিন্তু জ্যাকবের অনড় অবস্থানের কারণে শেষমেশ সবই মেনে নেয়। সাধারণত বিজিত সেনাপতি বিজয়ী সেনাপতির সদর দফতরে গিয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে সই দেয় ও অস্ত্র সমর্পণ করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এর ব্যতিক্রম – এখানে বিজয়ী সেনাপতি বিজিত সেনাপতির এলাকায় গিয়ে জনসমক্ষে অত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। আত্মসমর্পণের পরও নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈনিকদের ব্যক্তিগত অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়। হেলিকপ্টারে করে পড়ন্ত বিকেলে জেনারেল আরোরাসহ মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এ, কে, খন্দকার
তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছান। তারা নেমেই দেখেন, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়াজী, জ্যাকবসহ আরও কিছু পাকিস্তানি ও মিত্রবাহিনীর কর্মকর্তা তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর জীপে করে তারা রমনার রেসকোর্স ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সে সময় রমনার চারপাশে মানুষের উপচে পরা ভিড়। অনুষ্ঠানস্থলে মাত্র দু’টি চেয়ার আর একটি টেবিল। একটি চেয়ারে বসে নিয়াজী, অন্যটিতে আরোরা। আরোরার ঠিক পেছনে এ, কে, খন্দকার। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর শফিউল্লাহ, কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী, ২ নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক মেজর হায়দার। আত্মসমর্পণের দলিল নিয়ে আসার পর নিয়াজীকে কলম এগিয়ে দেন আরোরা। প্রথমে কলমটি দিয়ে লেখা যাচ্ছিল না। আরোরা কলমটি
নিয়ে ঝাড়াঝাড়ি করে আবার নিয়াজীকে দেন। এ দফায় আর ঝামেলা করেনি। সই শেষ হলে উভয়েই উঠে দাঁড়ান। আত্মসমর্পণের রীতি অনুযায়ী নিয়াজী তার রিভালবারটি কাঁপা কাঁপা হাতে অত্যন্ত বিষণ্ণতার সঙ্গে আরোরার কাছে হস্তান্তর করে। ঢাকার ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকাল চারটা বেজে একত্রিশ মিনিট। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সৈন্য ও কর্মকর্তাদের কর্ডন করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান। পরাজিত জেনারেল নিয়াজীকে কর্ডন করে নিয়ে যান মেজর হায়দার। শেষ হয় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। বিজয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বাঙালি জাতি। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র '৭১ এর দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী উইটনেস টু সারেন্ডার
– সিদ্দিক সালিক (অধ্যায় ২৩, ঢাকাঃ আত্মসমর্পণ) ১৯৭১ঃ ভেতরে বাইরে – এ কে খন্দকার



