নতুন নামে পুরানো মাফিয়া – ইউ এস বাংলা নিউজ




নতুন নামে পুরানো মাফিয়া

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১১:২৫ 11 ভিউ
রাজধানীর পরিবহন সেক্টর এখনো পুরানো মাফিয়াদেরই নিয়ন্ত্রণে। আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি, মস্তানি ও টাকা পাচারের মতো অপরাধ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- বিগত সরকারের টানা পনেরো বছর পরিবহন সেক্টরে যেভাবে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর রাজত্ব ছিল, এখনো সেভাবেই চলছে। পরিবহনের একক গডফাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী খন্দকার এনায়েতের বিরুদ্ধে একাধিকবার দুদক তদন্ত শুরু করলেও সেটা থামিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ বিষয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। দুদক সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার হওয়া বিএফআইইউএর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও পরিবহন খাতের গডফাদারদের কিভাবে তদন্ত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল- সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়েছে। সে সময় এনায়েত পরিবহন সেক্টরের লাগামহীন চাঁদাবাজির মাধ্যমে

হাজার হাজার কোটি টাকা কিভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন, তার চাঞ্চল্যকর তথ্য দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের লক্ষণ বুঝতে পেরে এনায়েত আগেভাগে সপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কিছুদিন পর অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে আসেন সিঙ্গাপুর। মহাখালী টার্মিনালে তার গাড়ির ব্যবসার তত্ত্বাবধানকারীরা জানিয়েছেন, দেশ ছাড়ার পর এনায়েত পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় আসা-যাওয়ার মাঝে থাকেন। ঢাকায় তার পরিবহন সা¤্রাজ্য থেকে অর্জিত টাকা এখন নানা উপায়ে তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই এ টাকা পাঠানো হয় তার কাছে। কিভাবে এটাকা পাঠানো হচ্ছে সে সম্পর্কে

কোনো ধারণা দিতে পারেননি তারা। তবে কক্সবাজার ও সিলেট রুটে চলাচলকারী বাসের দুজন চালক জানিয়েছেন, এনায়েত বিদেশে বসে থাকলেও তিনি নিয়মিত ব্যবসায়িক কর্মকা- মনিটর করছেন। নিজের মোবাইল থেকে হোয়টসঅ্যাপে প্রতি মুহূর্তে গাইড দিচ্ছেন, হিসাব নিচ্ছেন, কোথায় কার মাধ্যমে সে টাকা তার কাছে পাঠাতে হবে সেটাও জানিয়ে দিচ্ছেন। তার কথার বাইরে কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। গত মাসে এক দিনের টাকার হিসাবের গরমিল দেখা দেওয়ায় তিনি ভিডিও কলে খুব ধমকা ধমকি করেন। এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক মালিক সমিতির অভিযোগ, এনায়েত পালিয়ে গেলেও ঢাকায় এখনো তার ব্যক্তিগত প্রায় দুই শ’ বিলাসবহুল গাড়ি চলছে দাপটের সঙ্গে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে ম্যাজিকের মতোই তার

ব্যবসায়েরও নাম-ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার নামে গড়ে ওঠা এনা পরিবহন রাতারাতি নাম পাল্টে হয়ে গেছে ইউনাইটেড। এখন এই নামে মহাখালী থেকে চলছে তার বাসগুলো। এ টার্মিনাল থেকেই উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা, ময়মনসিংহ ,সিলেট ও কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকায় চলাচল করছে। তবে তিনি দেশ ছাড়ার পর অর্ধেক গাড়িই বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছেন। বাকি দেড় শতাধিক গাড়ি এখনোর রাজপথে চলছে। এসব গাড়ি থেকে তার দৈনিক আয় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে এনায়েত পরিবারের অনুপস্থিতিতে কারা এসব গাড়ির টাকা প্রতিদিন গ্রহণ করছে? কোথায় কিভাবে জমানো হচ্ছে- নাকি বিদেশে পাচার করা হচ্ছে? দুদক এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে, গাড়ি থেকে

যে আয় হয় তার বেশিরভাগ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। যেসব গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে তার টাকাও পাচার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দুদকের গোয়েন্দা টিম মহাখালী গিয়ে এনায়েতের গাড়ি থেকে কি পরিমাণ টাকা প্রতিদিন তোলা হচ্ছে, কারা সে টাকা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে- সেটার খোঁজখবর নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন সেক্টরের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেনÑ বিগত সরকারের আমলে টানা পনেরো বছর মহাখালী টার্মিনালে তার ব্যক্তিগত শত শত গাড়ি চলাচল করলেও তিনি কখনো একটি টাকাও চাঁদা দেননি। সব গাড়ি থেকে চাঁদা নিলেও, নিজে কখনো চাঁদা দিতে রাজি হননি। মহাখালীর মালিক শ্রমিকরা তার ভয়ে টু শব্দটি উচ্চারণ করতে পারত না। নীরবে সব

সহ্য করে গেছেন। তার স্বেচ্ছাচরিতার প্রতিবাদ করায় মালিক সমিতির আবুল কালামসহ বেশ ক’জনকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। এ নিয়ে তখনো তার বিরুদ্ধে মালিকরা ভয়ানক ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ তিনি শুধু চাঁদা নিয়েছেন, কখনো দেননি। সে ধারা এখনো চলছে। মহাখালী টার্মিনালে এনায়েতের আত্মীয়স্বজনের দাপটে সাধারণ মালিকরা ভীতসন্ত্রস্ত। এ সম্পর্কে ঢাকা সড়ক মালিক সমিতির অভিযোগ, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খন্দকার এনায়েত বাহিনী জোর করে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেন। তারপর টানা ১৫ বছর সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে ছিল। বাস চলাচলের অনুমোদন দিতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি। সড়কে চলাচলকারী সব বাস থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ও

করতেন। প্রতিদিন সড়ক থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলত তার সিন্ডিকেট। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে পরিবহন সেক্টর থেকে দিনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। তারপর কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এনায়েত সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যান। এখনো কিভাবে তার দাপট চলছে জানতে চাইলে দুদকের একজন কর্মকর্ত বলেছেন, এনা পরিবারের বিরুদ্বে দুদকের অনুসন্ধান করার জন্য দায়িত্বে ছিলেন উপপরিচালক নূরুল হুদা। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তিনি অনুসন্ধান থামিয়ে দেন। তবে দুদকের নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সম্পদের হিসাব জমা দেন তিনি। তাতে দেখা যায়, তিনি ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। বিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসেবে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উলেখ করেন। তানজিল ও বসুমতি পরিবহনে শেয়ার থাকার তথ্যও উলেখ করেন। দুদক বলছে- তিনি সম্পদের যে দাম দেখিয়েছেন, তা বাজারমূল্যের চেয়ে কমপক্ষে দশ গুণ কম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সমাপ্তি ঘটে। এ ছাড়া স্ত্রী নার্গিস সামসাদ ও ছেলে রিদওয়ানুল আশিকের নামেও হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া হয়। এ হিসাব বিবরণীতে তিনি দেশে বিদেশে থাকা বাড়ি-গাড়ি, জমিজমা ও মিল-কারখানা থাকার কথা উল্লেখ করেন। দুদকের হিসাব বিবরণীতে যে সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তার পরিমাণ অনেক বেশি। এমনটি দাবি করে মালিক সমিতির বেশ কয়েক সদস্য জানিয়েছেন, শুধু মালিক সমিতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার হিসাব তো মহাখালী টার্মিনালের লগ বইয়ে রাখা আছে। এ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে, সেটা হাজার কোটিরও ওপরে। কেননা, শুধু একটিই টার্মিনালই নয়, সারাদেশে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছিলেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত। অভিযোগ এসেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খন্দকার এনায়েত এই দুই সংগঠনের মহাসচিব ছিলেন। এই সময়ে পুরো দেশের পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির প্রধান নিয়ন্ত্রকই ছিলেন তিনি। তিনি কিভাবে চাঁদা আদায় করতেন তার একটি বিবরণ দিয়েছেন দুই পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো চিঠির সূত্র ধরেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগরী ও আন্তঃজেলা পর্যায়ে ১৫ হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। ২০০৯ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এসব পরিবহন থেকে দিনে এক হাজার ২০০ টাকা করে সমিতির পক্ষ থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। টাকার অঙ্কে দিনে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা চাঁদা উঠত। মোট চার হাজার ৪১ দিনে চাঁদা উঠেছে সাত হাজার ২৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, অটোটেম্পো হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলাচলের জন্য প্রতি মাসে এনায়েতকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হতো। এই খাত থেকে দিনে ৬৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন। ফলে মোট পাঁচ হাজার ৪৬২ দিনে চাঁদা নিয়েছেন তিন হাজার ৪৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত ১৬ বছরে ১০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা চাঁদা তোলেন তিনি। তার চাঁদাবাজির অন্যতম দোসর আতিক, স্বপন জসিম, খোকন, তপন, মহারাজ, মাহাবুব ও সেলিম নামের ব্যক্তিরা। তারা পরিবহন কম্পানিগুলোকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এনায়েত দেশ ছাড়লেও তারা এখনো তার সাম্রাজ্যের দেখভাল করছেন। সর্বশেষ জানা গেছে, এনায়েত দেশ ছেড়ে গেলেও বিদেশে বসেই তার বিলাসবহুল প্রায় একশ’ বাস বিক্রি করেছেন। গাবতলী গোল্ডেন লাইন এসব গাড়ি কিনে নেয়। ঢাকা সড়কের মালিকরা এখন সেই গাড়ি বিক্রয়ের টাকা কিভাবে কার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সেটার সুষ্ঠুু তদন্তের দাবি করছেন। তাদের অভিযোগ- পাঁচ আগস্টের পর ঢাকায় এনায়েতের কোনো অ্যাকাউন্টেই জমা রাখার কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে। তাহলে এনায়েত কিভাবে এ টাকা বিদেশে নিয়ে গেলেন? গাড়ি বিক্রির টাকা গোল্ডেন লাইন কিভাবে কার কাছে পরিশোধ করেছে, সেটাও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মালিক-শ্রমিকরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কী কী ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির? ফিরতে পারছে না হাজারো ফিলিস্তিনি ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ ফের ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত অবরোধ সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরীকে নিয়ে কী অভিযোগ করলেন প্রেস সেক্রেটারি? ট্রাম্পকে ভয় দেখানো শুরু করলেন কিম ! যে কারণে আগামী ৩ মাস গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলবেন ভারতকে ডোবাচ্ছে চীন,বাংলাদেশকে ডোবাবে ভারত! পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে হামলা, দায়ী কারা? যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আরো ৪ নারী বন্দির মুক্তি দেবে হামাস পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যা বললেন ইসি সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি: তারেক রহমান রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত ২ কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ শান্তিরক্ষী নিহত মেস থেকে জবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা জামিন পেলেন বরখাস্ত হওয়া সেই ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে মোবাইল ফোনের চালান আটক কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে ১৩ শান্তিরক্ষী নিহত