দেখ আমিনা মায়ের কোলে দোলে শিশু ইসলাম দোলে – ইউ এস বাংলা নিউজ




দেখ আমিনা মায়ের কোলে দোলে শিশু ইসলাম দোলে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৪০ 17 ভিউ
আগামীকাল শনিবার পালিত হবে পবিত্র মিলাদুন্নবি (সা.)। এ দিনটি সমগ্র মুসলিম জাহানের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক অনন্য উৎসব। মানবতার মুক্তির দূত, তাওহিদের মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ইন্তেকালের দিন হিসেবেই এ দিনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহিলিয়াতের যুগে তিনি উদিত হয়েছিলেন আলোর প্রদীপ হয়ে। এনেছিলেন সত্য, শান্তি, ন্যায় ও সৌন্দর্যের বার্তা। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও মানবাধিকারের যে চিরন্তন শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন, তা যুগে যুগে সব মানুষের জন্য কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি হয়ে আছে। তার আলোকিত জীবনের নানা দিক নিয়ে লিখেছেন-তোফায়েল গাজালি বংশধারা বাবার নাম আব্দুল্লাহ, দাদা আব্দুল মুত্তালিব। প্রপিতামহ হাশেম। হাশেমের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে নবিজির বংশ হাশেমি

বংশ হিসাবে পরিচিত যা আদনান হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে হজরত ইসমাইল (আ.) পর্যন্ত পৌঁছে। এতে সন্দেহ নেই যে, রাসূল (সা.) হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধর। মরুর বুকে ভোরের আলো ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল। আরবের মক্কা নগরীতে মা আমেনার কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসেন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। আরবের প্রচলন অনুযায়ী তাকে শহরের বাইরে বনি সাদ গোত্রে দুধপান ও লালন-পালনের জন্য পাঠানো হয়। পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি সেখানে হালিমাতুস সাদিয়া (রা.)-এর স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। চোখের জলে শোকের শৈশব নবীজির জন্মের ৬ মাস আগে বাবা আব্দুল্লাহ মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। বয়স ছয় বছর হলে মা আমেনা ছোট্ট মুহাম্মাদকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদিনায় যান। মদিনা থেকে ফেরার

পথে মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত আবওয়া নামক স্থানে তিনি ইন্তেকাল করেন। বাবা-মার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তার লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আট বছর বয়সে দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তার দায়িত্ব নেন। তিনি চাচার বকরি দেখাশোনা ও ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। পবিত্র দাম্পত্য পঁচিশ বছর বয়সে খাদিজা (রা.)কে বিয়ে করেন। বনু হাশেম ও কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশটি উট মহর ধার্য করে তাদের বিয়ে হয়। খাদিজাই নবীজির প্রথম স্ত্রী। তার জীবদ্দশায় নবীজি অন্য কাউকে বিয়ে করেননি। আলোর ঘরে ফুলের হাসি একমাত্র ইবরাহিম ছাড়া নবীজির সব সন্তান খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। কাসেম প্রথম সন্তান। পরে যয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতেমা ও

আব্দুল্লাহ (রা.)-এর জন্ম হয়। তার ছেলেরা শৈশবে মারা যান। ফাতেমা (রা.) ছাড়া সবাই নবীজির জীবদ্দশায় মারা যান। নবীজির ইন্তেকালের ছয় মাস পর ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন। মানবতার মুক্তির প্রথম বার্তা হেরা গুহায় সাধনার তৃতীয় বছর রমজান মাসে যখন তার বয়স চল্লিশ পেরিয়ে একচল্লিশ চলছিল-তিনি গুহার ভেতরে আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন। জিবরাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে তাকে নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। প্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত তার প্রতি নাজিল হয়। জিবরাইল (আ.) এসে বলেন,পড়। তিনি জবাব দেন-আমি পড়তে জানি না। রাসূল (সা.) বলেন, আমার এ কথার জবাবে ফেরেশতা আমাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরেন। এত জোরে জড়িয়ে ধরেন যে, আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার

উপক্রম হয়। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার বলেন পড়। আগের মতোই উত্তর দিলাম-আমি তো পড়তে জানি না। ফেরেশতা আমাকে দ্বিতীয়বার শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলেন। এবারও আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। আমাকে আবার বললেন, পড়। আমি বললাম আমি পড়তে জানি না। ফেরেশতা আমাকে তৃতীয়বার কঠিনভাবে জাপটে ধরলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহাদয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক ১-৫।) শুরু হলো পথচলা খোদায়ী প্রত্যাদেশ তথা ওহি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.) গোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

প্রথমে আপন পরিবারের লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেন। প্রথম খাদিজা (রা.) তার দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে প্রথম আবু বকর (রা.), ছোটদের মধ্যে আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) এবং ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। আবিসিনিয়ায় আশ্রয় কালেমার দাওয়াতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইমানদার সাহাবিদের প্রতি অবিশ্বাসীদের নির্যাতন ও নিষ্পেষণ ক্রমেই বেড়ে চলছে। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) সাহাবিদের আবিসিনিয়ায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশী ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু ছিলেন। এজন্য আবিসিনিয়াকে হিজরতের জন্য মনোনীত করা হয়। বাদশা নাজ্জাশী ঈসা (আ.)-এর অনুসারী ছিলেন। নবুওয়াতের পঞ্চম বছর প্রথম হিজরতকারী মুসলমানদের কাফেলার সদস্য ছিলেন দশজন পুরুষ ও চারজন মহিলা। কিছুদিন পর আরও একটি

দল তাদের সঙ্গে মিলিত হয়। তারা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ছিলেন প্রায় একশ। আবিসিনিয়ায় বাদশা নাজ্জাশী তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং নিরাপদে বসবাসের অনুমতি দেন। প্রকাশ্যে ইসলামের আহ্বান আল্লাহ প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের আদেশ দিলে নবীজি (সা.) তাঁর পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনকে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে একত্রিত করেন। এরপর তাদের মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান জানান। এ কথা শুনে তার চাচা আবু লাহাব বলে-‘তোমার ধ্বংস হোক, এজন্যই কি আমাদের একত্রিত করেছ?’ এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা সূরা লাহাব অবতীর্ণ করেন-‘আবু লাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে। কোনো কাজে আসেনি তার ধনসম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে। সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।’ (সূরা লাহাব : ১-৫।) তায়েফের পথে নবুওয়াতের দশম বছর রাসূল (সা.)-এর চাচা আবু তালিব ও আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর মৃত্যুকে কুরাইশরা সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করল। তার ওপর নানা রকমের নির্যাতনের মাত্রা আগের চেয়ে বহুগুণে বাড়িয়ে দিল। এ কঠিন পরিস্থিতিতে সহযোগিতা ও নিরাপত্তার আশায় তিনি তায়েফ চলে যান। সেখানে উপহাস, দুর্ব্যবহার ও দুঃসহ নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই পেলেন না। তায়েফের লোকদের পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত নবীজি (সা.) বিমর্ষ হয়ে মক্কায় ফিরে এলেন। মক্কা ছেড়ে মদিনায় মক্কার কাফেররা রাসূল (সা.)কে আমানসিক নির্যাতনের পরও যখন ইসলাম প্রচার থেকে নিবৃত্ত করতে পারছিল না, তখন তারা একদিন সর্বশেষ নীতিনির্ধারণের উদ্দেশ্যে ‘নদওয়া’ গৃহে সব গোত্রপতির বৈঠক আহ্বান করে। বৈঠকে কেউ পরামর্শ দিল, ‘মুহাম্মাদ (সা.)কে শৃঙ্খলিত করে কোনো ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা উচিত।’ কেউ বলল, ‘তাকে নির্বাসিত করা হোক।’ সবশেষে আবু জাহেল ভিন্ন রকম পরামর্শ দিল, সে বলল, ‘নানা কৌশল করে আমরা মুহাম্মাদকে আটকাতে চেয়েছি। কিন্তু সম্ভব হলো না। বরং তার কাজ বেড়েই চলছে। তাই মুহাম্মাদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়াই সবচেয়ে উচিত হবে।’ সমবেত সবাই এ সিদ্ধান্তের ওপর সমর্থন ব্যক্ত করে। তারা জঘন্যতম কাজটি সম্পন্ন করতে প্রত্যেক গোত্রের শক্তিশালী যুবকদের নির্বাচন করে। এরপর ঘোষণা করে, মুহাম্মাদকে যে জীবিত অথবা মৃত ‘নদওয়া’ গৃহে হাজির করতে পারবে, তাকে ১০০ উট পুরস্কার দেওয়া হবে। মক্কার সব গোত্রের শক্তিশালী যুবক একত্রিত হয়ে শপথ নেয়, সেদিন রাতেই মুহাম্মাদ (সা.)-এর বাড়ি ঘেরাও করা হবে। সেদিনই তাকে চিরতরে শেষ করে দেওয়া হবে। রাতেই আল্লাহতায়ালা ওহির মাধ্যমে এ চক্রান্তের কথা তার রাসূলকে জানিয়ে দেন। প্রিয় নবী (সা.)কে তিনি হিজরতের আদেশ দিয়ে বলেন, ‘হে নবী! মক্কার মানুষ আপনাকে চায় না। অন্যদিকে মদিনার মানুষ আপনার জন্য সীমাহীন আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন। আপনি হিজরত করে মদিনায় চলে যান।’ হিজরতের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই প্রিয়নবী (সা.) নিজের ঘরে আপন চাচাতো ভাই হজরত আলী (রা.)কে রাখেন। এরপর প্রিয়সঙ্গী আবু বকর (রা.)কে নিয়ে মহানবী (সা.) মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা হন। রওয়ানা হওয়ার মুহূর্তে বাইতুল্লাহর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নবীজি বলেন, ‘হে মক্কা! খোদার কসম, তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় শহর, আমার প্রতিপালকের কাছেও বেশি পছন্দের শহর তুমি। যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বের করে না দিত, আমি কখনো বের হতাম না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৫।) মহানবী (সা.) আল্লাহতায়ালার আদেশে ২৭ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল মদিনা মুনাওয়ারায় পৌঁছান। তিনি মদিনায় পৌঁছে ইসলামের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদে কুবা’ নির্মাণ করেন। খন্দকের যুদ্ধ প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পঞ্চম হিজরিতে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ১০ হাজারেরও বেশি কাফের যোদ্ধা মদিনাভিমুখে রওয়ানা হয়। রাসূল (সা.) কুরাইশদের আগমনের সংবাদ ও উদ্দেশ্য অবগত হওয়ার পর করণীয় নির্ধারণের জন্য সাহাবাদের নিয়ে বসেন। মুসলমানরা প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মদিনার উত্তর পাশের সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সালমান ফারসি (রা.)-এর পরামর্শে পরিখা খননের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। সাহাবিদের সঙ্গে রাসূল (সা.) নিজেও খনন কাজে অংশগ্রহণ করেন। মোট পনেরো দিনে পরিখা খনন সম্পন্ন হয়। রাসূল (সা.) মহিলা ও শিশুদের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। এক হাজারেরও বেশি মুসলিম যোদ্ধা মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন এবং মদিনা প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হন। মুশরিক সৈন্যরা পরিখার অদূরে মদিনার বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হয়। কেননা তাদের বাহনগুলো পরিখা অতিক্রম করতে পারেনি। অতঃপর তাদের অশ্বারোহীরা নিহত হলে অন্যরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। একমাস পর্যন্ত মদিনা অবরুদ্ধ ছিল। প্রচণ্ড শীতের গভীর অন্ধকার রাতে প্রবল বাতাস ও তুফান প্রবাহিত হলে মুশরিকদের তাঁবু ছিন্ন-বিচ্ছিন্নসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। আবু সুফিয়ান তার উটে আরোহণ করে পলায়ন করে। অন্য সৈন্যরাও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। এভাবে মুশরিকদের ব্যর্থতা ও রণক্ষেত্র থেকে পলায়নের মাধ্যমে খন্দক বা আহজাবের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। বদর যুদ্ধে প্রথম বিজয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহ রাসূল (সা.)কে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন, যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তোমরা আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। অবশ্য কারও প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা বাকারাহ-১৯০।) প্রিয় নবী (সা.) পরামর্শ করে মুহাজির ও আনসারদের দ্বারা গঠিত প্রায় ৩১৩ জনের একটি সেনাদল নিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে বের হন। হিজরির দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান বদর নামক স্থানে উভয় দল মুখোমুখি হয় এবং সেখানেই বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানদের মহাবিজয় অর্জিত হয় এবং অনেক গনিমতের সম্পদ লাভ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের মাঝে সেগুলো বণ্টন করে দেন। এ যুদ্ধে মোট ৭০ জন মুশরিক নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দি হয় আর ১৪ জন মুসলমান শাহাদতবরণ করেন। উহুদ যুদ্ধ সাহসের প্রতীক বদর যুদ্ধে মুসলমানদের মহাবিজয়ের পর কাফেররা পূর্ণ এক বছরব্যাপী সৈন্য ও সম্পদ সঞ্চয় এবং প্রতিবেশী গোত্রীয় মিত্রদের সহায়তা প্রদানের আহ্বানসহ জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজারের অধিক সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী গঠন করে মুসলমানদের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। নবীজির কাছে কুরাইশদের আক্রমণের খবর পৌঁছলে তিনি মুহাজির ও আনসার নিয়ে গঠিত এক হাজার যোদ্ধার একটি সেনাদল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য বের হন এবং উহুদ পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে প্রথমদিকে মুসলমানদের বিজয় হলেও পরে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাফেররা পেছন দিক থেকে তীর নিক্ষেপ করে। ফলে মুসলমানদের কাতার ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এতে অনেক মুসলমান শাহাদতবরণ করেন। তাদের মধ্যে শহীদদের সরদার হামজা (রা.)ও ছিলেন। এ যুদ্ধে রাসূল (সা.)-এর মুখমণ্ডল এবং দন্ত মুবারক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। শান্তির জন্য হুদাইবিয়ার সন্ধি চৌদ্দশ আনুসারী ও মুহাজির সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ হিজরিতে রাসূল (সা.) ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তারা হুদাইবিয়া নামক স্থানে যাওয়ার পর কুরাইশদের কাছে তাদের আগমন সংবাদ পৌঁছে। কুরাইশরা শপথ করে যে, নবী করিম (সা.) ও তার সাথিদের মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না। নবীজি (সা.) উসমান (রা.)কে কুরাইশদের কাছে এ খবর দিয়ে প্রেরণ করেন যে, তারা যুদ্ধের জন্য এখানে আসেননি। বরং তারা শুধু ওমরাহর উদ্দেশ্যেই মক্কায় প্রবেশ করতে চান। তারপর তারা আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হয়। আলোচনা আরম্ভ হলে তা সন্ধির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এ সন্ধিকেই হুদাইবিয়ার সন্ধি বলা হয়। সিদ্ধান্ত হয় রাসূল (সা.) তার ওমরাহ পালনকে এক বছর পিছিয়ে দেবেন এবং দশ বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। আর যে কোনো গোত্র তাদের ইচ্ছানুসারে যে কোনো দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। এ চুক্তির ফলে খোযাআ গোত্র মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং বনু বকর গোত্র কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হয়। সন্ধি চুক্তিসম্পন্ন হওয়ার পর রাসূল (সা.) পশু জবাই করেন এবং মাথা মুড়িয়ে ফেলেন। মুসলমানরা তার অনুকরণ করেন। শেষ বিদায় বিদায় হজের পরের বছর ৬৩ বছর বয়সে প্রিয় নবী (সা.) চিরদিনের জন্য পরম প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান। তার চলে যাওয়ার দিনটি ছিল ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার। তার প্রতি ও তার পরিবার-পরিজনের প্রতি বর্ষিত হোক অজুত কোটি সালাত আর সালাম। মানবতার চূড়ান্ত বিজয় হুদাইবিয়ার সন্ধির পর ইসলাম সবচেয়ে দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে। নবীয়ে কারিম (সা.) বিভিন্ন গোত্রে তার দাওয়াতি কর্মসূচি পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে এক বছরের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি পায়। এরই মাঝে কুরাইশদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ বনু বকর মুসলমানদের মিত্র কবিলায়ে খুযাআর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করে। নবী (সা.) এ সংবাদ পেয়ে খুবই কষ্ট পান এবং মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে ১০ হাজার যোদ্ধার একটি বিশাল সেনাদল নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা করেন। এ বিশাল সৈন্যবাহিনী মক্কার কাছাকাছি এলে মক্কাবাসী তাদের দেখে আত্মসমর্পণ করে। নবীজি (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন। কাবার দরজার উভয় পাশের কপাটে হাত রেখে নবীজি (সা.) এক নাতিদীর্ঘ হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফির নেতা আবু সুফিয়ানের গৃহে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ বিদায় হজের ভাষণ বিদায় হজে প্রিয় নবীজি (সা.) সোয়া লাখ সাহাবির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বিদায় হজের ভাষণ নামে পরিচিত। নবীজি (সা.) তাঁর ভাষণে বলেন : হে লোক সকল! আল্লাহুতায়ালা বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার, নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক পরহেজগার।’ (সূরা ৪৯, হুজুরাত, আয়াত ১৩।) কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের; কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের, এমনিভাবে শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই; তবে তাকওয়ার ভিত্তিতে। সব মানুষ আদম (আ.)-এর সন্তান আর আদম (আ.) মাটি দ্বারা সৃষ্টি। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, সব মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই; তোমাদের অধীনদের (দাস-দাসীদের) প্রতি খেয়াল রাখবে, তোমরা যা খাবে, তাদেরকে তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরকেও তা পরাবে। সাবধান! ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না; কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে ধ্বংস হয়েছে। তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করবে; পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজান মাসে রোজা রাখবে, সন্তুষ্টচিত্তে সম্পদের জাকাত প্রদান করবে, স্বীয় প্রভুর ঘরে এসে হজ পালন করবে; তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। হয়তো আমি এ বছরের পর এখানে আর কখনো তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব না। অচিরেই তোমরা তোমাদের মহান প্রভুর সাক্ষাতে উপণীত হবে। তখন তিনি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। তোমাদের কারও কাছে যদি কোনো আমানত গচ্ছিত থাকে, তা তার প্রাপকের নিকট অবশ্যই পৌঁছে দেবে। নিশ্চয়ই সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। তবে তোমাদের মূলধন বহাল থাকবে। মহান আল্লাহ ফয়সালা দিয়েছেন যে আর কোনো সুদ নয়। আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সব সুদ রহিত করা হলো। তোমরা কোনো জুলুম করবে না, বরং তোমাদের প্রতিও কোনো জুলুম করা হবে না। জাহিলি যুগের যত রক্তের দাবি, তা সব রহিত করা হলো। প্রথম আমি রবিয়া ইবনে হারিস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের শিশুপুত্রের রক্তের দাবি রহিত করলাম। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির (র.), খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯৮ ও ৩২০-৩৪২, ই. ফা. বা.)।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
রাজধানীর ধানমন্ডি-তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাপক শোডাউন-মিছিল মালয়েশিয়ায় অভিযানে ৩৪ বাংলাদেশিসহ আটক ৯৪ অস্থির নিত্যপণ্যের দাম, স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও নিখোঁজের তিন দিন পর মিলল সেই জমিয়ত নেতার লাশ ইউক্রেনে স্থল নৌ ও আকাশপথে সেনা পাঠাতে প্রস্তত ২৬ দেশ চীনের সঙ্গে ‘বিশাল অঙ্কের’ চুক্তি স্বাক্ষর পাকিস্তানের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিপুল অঙ্কের অর্থপাচারের রুট উন্মোচন করল সিআইডি শবনম ফারিয়ার পোস্ট, কমেন্টে যা বললেন সারজিস মিথ্যা-ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জর্জরিত সাংবাদিক নাজমুশ সাহাদাতের পরিবার গণপূর্তের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নাগরিকত্বের আগেই ভোটার সোনিয়া গান্ধী, আদালতে মামলা ৫০ বছরে অর্ধেক কমেছে ভারতের জন্ম ও মৃত্যু হার নতুন পরিচয়ে হাজির হচ্ছেন সাদিয়া আয়মান মাত্র ২ ঘণ্টায় মালয়েশিয়ায় ৩৯৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, ফেরত পাঠানো হবে শীঘ্রই বিএনপির বালুখেকো ও ভূমিদস্যু নেতাদের বিরুদ্ধে ভূমি কর্মকর্তার মামলা নিরাপদ নন সাধারণ মানুষ ট্রাম্পের ইচ্ছায় বদলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম দেখ আমিনা মায়ের কোলে দোলে শিশু ইসলাম দোলে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে আবারও ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প ডিম-পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ আমদানির বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত