জাকিরের আলাদিনের চেরাগ ‘মন্ত্রিত্ব’ – ইউ এস বাংলা নিউজ




জাকিরের আলাদিনের চেরাগ ‘মন্ত্রিত্ব’

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৮:৫০ 10 ভিউ
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। গত ১৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ২ হাজার ৮০০ গুণ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। এরপর হু হু করে বাড়তে থাকে তার সম্পদ। ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পাওয়ার মতো জিরো থেকে হিরো বনে যান জাকির হোসেন। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাইবোন, শ্যালক-শ্যালিকা এমনকি অন্য আত্মীয়স্বজনদেরও কপাল খুলে যায়। বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, হাট-বাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, থানায় মামলা নিয়ন্ত্রণ, হামলা মামলা এবং সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ সবই হয় ‘মন্ত্রীর’ নামে। রাতের আঁধারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে জমি দখল করে গড়ে তোলেন

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ঢাকা, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে তার বাড়ি, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জামালপুরের বকশিগঞ্জে ৬০ বিঘা জমি দখল করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মায়ের মাজার’। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ও তার পরিবারের সব সদস্য এবং তার অনুসারীরা পলাতক থাকায় সরাসরি দেখা করেও এ বিষয়ে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, জাকির হোসেন একজন রাজনীতিবিদ হয়ে দেশের ইতিহাসে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন। রাজনীতিকে তিনি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে বিদেশেও টাকা পাচার করেছেন। এখন সময় এসেছে এসব বন্ধ করার। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মুনিরা খান বলেন,

সমাজে আগে কেউ অপরাধ করলে তাকে ঘৃণা করা হতো। অথচ এখন কারও বাসার গ্যারেজে ১০টি গাড়ি থাকলে সেখানে মানুষ বেশি ভিড় করে। লাখপতি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক : ২০০৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় জাকির হোসেনের বাৎসরিক আয় দেখানো হয় এক লাখ ৫৫ হাজার (স্ত্রীর আয় ৯০ হাজার টাকাসহ)। নগদ অর্থসহ মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের নির্বাচনি হলফনামায় আয় দেখানো হয় ১৪ লাখ ৪২ হাজার ২৯৫ টাকা। নগদ অর্থসহ সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৩ টাকা। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনি হলফনামায় আয় কমিয়ে দেখানো হয় ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। আর নগদ

অর্থসহ সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৫ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৬৩ টাকা। আর ওই সরকারের মেয়াদ শেষ হতে না হতে তার এবং পরিবারের নামে ও বেনামে গড়ে উঠেছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। রৌমারীর মন্ডলপাড়া রূপ নিয়েছে ‘মন্ত্রীপাড়ায়’। জাকিরের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও কমপক্ষে ১১ জনের রয়েছে বহুতল বাড়ি। তাদের নির্মিত বহুতল ভবনের কারণে পালটে গেছে পুরো গ্রামের চিত্র। একই গ্রামে এখন বহুতল বাড়ির ছড়াছড়ি। বাড়ি ও সুপার মার্কেটে সয়লাব : জাকির হেসেনের রৌমারী উপজেলা শহরের কাঁচাবাজারে ৪ তলা সুপার মার্কেট রয়েছে। কর্তিমারীতে নির্মাণাধীন রয়েছে আরেকটি ৪ তলা সুপার মার্কেট। রাজিবপুর উপজেলা শহরে চলছে আরও একটি সুপার মার্কেটের নির্মাণের কাজ। এ ছাড়া রৌমারী

পাড়ায় ৪০ শতাংশ জায়গায় একটি আলিশান বাড়ি, রাজিবপুর উপজেলার শহিদ মিনারসংলগ্ন ১০ শতাংশ জায়গায় একটি পাকা বাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলা সদরের কুমারপাড়ায় ২০ শতাংশ জায়গায় আরেকটি বাড়ি রয়েছে। রংপরের নজিরেরহাটে ৪০ শতাংশ জায়গা এবং একটি বাড়ি রয়েছে। ঢাকায় তার স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানার নামে রয়েছে ফ্ল্যাট। এছাড়া পূর্বাচলে ১০ শতাংশ জায়গায় আরেকটি বাড়ি রয়েছে। দখল ও বালু ব্যবসা : সহজ-সরল মানুষের জায়গা দখলে নিতে যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখাতেন জাকির হোসেন। নামকাওয়াস্তে মূল্য দিয়ে কিনে নেন বেশ কিছু জায়গা। পরে সেখানে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বেকারত্ব ঘোচাতে চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ নামক স্থানে প্রায় আড়াই একর জায়গায় সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা

ছিল। তবে সেখানে তা-না করে ওই জায়গায় প্রাচীর নির্মাণসহ ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ করেন তিনি। বর্তমানে ওই জায়গার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। ২০২২ সালের এপ্রিলে রৌমারী সদর ইউনিয়নের তুরা রোডে ৭০ শতাংশ সড়ক ও জনপদসহ (সওজ) অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। দখলের কয়েকদিন পর রাতের আঁধারে সেই সাইনবোর্ডটি উধাও হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে তার ছেলে সাফায়াত পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। একইভাবে তুরা রোডের গুচ্ছগ্রামে ১৫ শতাংশ, একস্থানে ২১ ও অন্য স্থানে ৫০ শতাংশসহ মোট ২ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন জাকির। এ

জমির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের জন্তিরকান্দা নামক স্থানে সরকারি ১ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে জাকির হোসেন ‘শিরি অটোরাইস মিল’ একটি শিল্পকারখানা নির্মাণ করেন। যা এখনো চালু হয়নি। দখলকৃত জায়গার মূল্য ৩ কোটি টাকা। কর্তিমারী বাজারের সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন ১নং খতিয়ানের ৩২ শতক জায়গা নামকাওয়াস্তে লিখে নিয়ে বহুতল ভবনসহ মার্কেট নির্মাণ করছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। একই কায়দায় রাজিবপুর উপজেলা শহরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামসংলগ্ন উপজেলা পরিষদের সরকারি পুকুরের ২০ শতাংশ জায়গা অবৈধভাবে ভরাটসহ ভূমি শ্রেণি পরিবর্তন করে দোকানঘর নির্মাণ করন জাকির। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বন্দবেড় ইউনিয়নের কুটিরচরে ১ একর, দুইখাওয়া এলাকায় ৫ একর, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা বাজার এলাকায় ১ একর সরকারি জায়গা দখল ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে ভরাট করে ‘আরব আলী বাবার মাজার’ নির্মাণসহ দোকানঘর গড়ে তোলা হয়। এ জমির বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার নালিতাবাড়ি পাহাড় এলাকায় ৬০ বিঘা জমি দখল করে ‘মায়ের মাজার’ নামে ব্যক্তিগত একটি মাজার গড়ে তোলেন। যার বাজার মূল্য ২০ কোটি টাকা। রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইছাকুড়ি মহিলা মাদ্রাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ জায়গা দখল করেন জাকির হোসেন। সমালোচনা হলে সেখানে নিজের নামে একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যার নাম রাখেন জাকির হোসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তবে গত বছর মাধ্যমিক শাখা থেকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাশ করেনি। ‘পাগলা বাহিনী’সহ ৩ বাহিনী : কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল জাকির হোসেন। এলাকায় ‘পাগলা বাহিনী’ নামে তার ক্যাডার বাহিনী ছিল। এর সদস্য ছিল ১৫-২০ জন। ‘পাগলা বাহিনীর’ নেতৃত্ব ছিলেন তার চাচাতো ভাই মারুফ আহমেদ সিক্ত। এ ছাড়াও আরও ২টি বাহিনী ছিল জাকির হোসেনের। যার একটি নিয়ন্ত্রণ করত স্ত্রী সুরাইয়া, অন্যটি মামা গাউছল আজম। অস্ত্রের মুখে নিরীহ মানুষকে তুলে এনে আটকে রাখা, জোর করে জমি লিখে নেওয়া, মাদক কারবার, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন এসব বাহিনীর সদস্যরা। ২০২২ সালে স্থানীয় আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতার হাতে আটক ও গণধোলাইয়ের শিকার হয় ‘পাগলা বাহিনীর’ সাদেকুল আলম সেতু ও হাফিজুর রহমান। মাদকের পৃষ্ঠপোষক থেকে প্রতিমন্ত্রী : ২০০৮ সালের আগে মাদক ও গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন জাকির হোসেন। এরপর ওই বছর নির্বাচনে নৌকায় জোয়ারে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। মাদক কারবার ও পৃষ্ঠপোষকতা করে রাতারাতি বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ সাল) জেপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তালিকায় (গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টের ভিত্তিতে) ‘মাদকের পৃষ্ঠপোষক’ হিসাবে নাম আসে তার। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাকিরের পারিবারিক মাইক্রোবাসে ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াবাসহ গাড়িচালক রফিকুল ইসলামকে আটক করে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল। এর আগে কুড়িগ্রামের মোগলবাসা নৌঘাট থেকে জাকির হোসেনের সঙ্গী সেকেন্দার বাবলুকে আধা কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। ১৪ বছর কর্মস্থলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলেন স্ত্রী সুরাইয়া : দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে কর্মরত সুরাইয়া সুলতানা। জাকির প্রথম দফায় (২০০৮) এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সুরাইয়া কর্মস্থলে না গিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে আসছেন। ভোগ করেন সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা। বেপরোয়া পরিবারতন্ত্র : জাকির নিজে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন, তার স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছেলে সাফায়াত বিন জাকির, বোন শিউলী আক্তার, ভগ্নিপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মামা ওয়াজেদুল ইসলাম, চাচাতো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান রবিন, মশিউর রহমান, রাশেদ ও মাসুম রয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে, নানা অপকর্মে লিপ্ত হত্যা ও গুম মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জাকিরের কথিত বড় ভাই সুরুজ্জামাল মিয়াকে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
টানা বৃষ্টিতে তিন জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষের মিছিল পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি ‘ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ব্যবহার করেনি র‍্যাব’ ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে আবেদন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানে হামলার ঘোষণা দিলেন নেতানিয়াহু স্থগিত হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা? শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ৭ দিনের রিমান্ডে রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র? জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে কুপিয়ে হত্যা লেবাননে স্থল অভিযানে ত্রিশ কমান্ডারসহ ৪৪০ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত: ইসরায়েল রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে নতুন অনিশ্চয়তা সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় জামায়াত সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নেবে সরকার কেরানীগঞ্জে হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত ৩ নতুন ভারতের সঙ্গে পুরোনো বাংলাদেশ অন্যায় করে পার পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে শেরপুর, পানিতে ডুবে দু’দিনে ৫ মৃত্যু