গুলিবিদ্ধ স্বামীর চিকিৎসায় ৩ দিনের শিশুকে বিক্রি করলেন রোকেয়া – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
     ৬:৩১ অপরাহ্ণ

গুলিবিদ্ধ স্বামীর চিকিৎসায় ৩ দিনের শিশুকে বিক্রি করলেন রোকেয়া

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:৩১ 194 ভিউ
গত ৪ আগস্ট দুপুরে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন দিনাজপুরের কাটাপাড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রশিদ। স্ত্রীকে গাইনি ওয়ার্ডে রেখে নিচে এসে টিকিট কাটছিলেন। এমন সময় হাসপাতালের ভিতরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুর রশিদ। তার পেটে, নাভিতে, পায়ে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় গুলি লাগে। পরে ওই হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করা হয়, নেন চিকিৎসাও। কিন্তু হামলা-মামলার ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি চলে যান আব্দুর রশিদ। ৩ দিন পর তার পেটে গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলে ও ব্যাথা শুরু হলে ৮ আগস্ট তিনি দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতেই

হয় অস্ত্রোপচার, এরপর আইসিইউতে। পরের দিন বাড়িতেই ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আব্দুর রশিদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও অনেক ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামাদিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আব্দুর রশিদের খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। যা একজন দিনমজুর পরিবারের জন্য অনেক বেশি। কারণ আব্দুর রশিদ এমন একজন মানুষ, যার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। থাকেন অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। এই অবস্থায় উপায় না পেয়ে নিজের ৩ দিনের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেন মা রোকেয়া বেগম। আব্দুর রশিদের অবস্থা এখনও পুরোপুরি ভালো নয়, তার শরীরে আরও গুলি রয়েছে। একটি পিলেট বা গুলি রয়েছে তার প্রস্রাবের রাস্তায়। ডান পায়ের উরুর উপরে রয়েছে আরও ৩টি গুলি।

এছাড়াও হাতে ও পেটে আরও পিলেট বা গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আব্দুর রশিদ। প্রতিদিন ওষুধ লাগছে, প্রস্রাবের জন্য ড্রেন করে দেওয়া হয়েছে নাভি দিয়ে। সেই থলিও বদলাতে হয় কয়েকদিন পর পর। এরপর রয়েছে তার বড় সন্তান, তার দাদা-দাদি ও তার স্ত্রীর খাবার। সবমিলিয়ে এক অসহায় পরিবার। চিকিৎসক তাকে জানিয়েছে, তার শরীরে আরও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। ফলে সন্তানকে বিক্রি করেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়েনি তার। নবজাতকের মা রোকেয়া বেগম বলেন, আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আমার স্বামীর শরীরে গুলি লাগে। পরে ওই হাসপাতালে আমার স্বামীর চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা শেষে স্বামীসহ আমি বাড়িতে চলে আসি। এরপর ৮ তারিখে আমার স্বামীর অবস্থা খারাপ হলে তাকে মেডিকেল

হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অপারেশন হয় আর পরদিন আমার মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। আমার আরেকটি সন্তান রয়েছে, সেটিও মেয়ে। আমার স্বামীর অপারেশনের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও জিনিসপত্র কিনতে হয়। ৩ দিনে হাসপাতাল থেকে যেসব ওষুধ ও জিনিসপত্র দিয়েছে তা ছাড়াও আমাদের খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার টাকা। এজন্য আমি ২৫ হাজার টাকায় আমার সদ্য সন্তানকে এক দম্পতির হাতে তুলে দেই। চিকিৎসক জানিয়েছে, আমার স্বামীর আরও অপারেশন করতে হবে। কিন্তু তিনি পুরোপুরি সুস্থও হতে পারবেন না। নবজাতকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তো খারাপ লাগছেই। কিন্তু স্বামীকেও বাঁচাতে হবে। চিকিৎসক জানিয়েছে, আমার স্বামী আর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন না। এখন

দুটি মেয়েকে নিয়েও চিন্তা রয়েছে। একটি মেয়ে আমার কাছে আছে, আরেকটি মেয়ে অন্যের কাছে। তারা নাকি আমার মেয়েকে মানুষ করবে, বড় করবে, পড়ালেখা শেখাবে। গুলিবিদ্ধ আহত আব্দুর রশিদ বলেন, আমার তো দিনাজপুরে মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। অন্যের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানসহ থাকি। আমার বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুরে। সেখানে আমার সৎ মা ও দুই ভাই রয়েছে। বাবার জমিও নেই। গুলিবিদ্ধের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো অপরাধ ছিল না, স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আমার শরীরে গুলি লাগে। কিন্তু এখন আমাকে যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। আমার অসুস্থ স্ত্রী আমার সেবাযত্ন করছে। আমাকে বলেছে, ‘যদি বাচ্চাটাকে নিয়ে আসি তাহলে তোমার সেবাযত্ন

ঠিকভাবে করতে পারব না।’ আমার প্রতিনিয়তই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, যেসব ওষুধ পাচ্ছি সেগুলো ছাড়াও বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অনেকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু আমার আরও অপারেশন করা লাগবে, আমি আমার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাঁচতে চাই, সুস্থ হতে চাই। দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুস সালাম বলেন, যেসব রোগী হাসপাতালে এসেছে তাদেরকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের দেওয়া যেসব ওষুধ ও সরঞ্জামাদি সাপ্লাই রয়েছে সেসব আমরা দিচ্ছি। আর যেসব নেই সেগুলো লিখে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ১৮২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এখনও ভর্তি রয়েছেন, বেশিরভাগই

সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। যে কোনো ধরনের সমস্যায় আমরা পরামর্শ দিয়েছি। দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, আমরা বাচ্চাটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
নিউ-জার্সিতে হাসপাতালের পানিতে মরণঘাতী ব্যাকটেরিয়া, মৃত ২ প্রেমের প্রস্তাবে ‘না’, অতঃপর বন্দুক হামলা ইউনুস সরকারের অধীনে সংখ্যালঘু হওয়া মানেই মৃত্যুর অপেক্ষা। গুম কমিশনে সাক্ষ্যদাতা জঙ্গিরাই আবার বোমা বানাচ্ছে, যাদের সাক্ষ্যে জঙ্গিবিরোধী পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার বাঙালী নারীদের উপর পাক হানাদারদের বর্বরতার ইতিহাস ও পরবর্তীতে হানাদারদের ক্যাম্প উড়িয়ে দেবার বিরত্ব গাঁথা শোনালেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শিশু মিয়া যে দুইদিনই বাঁচি দেশটাত যেনো শান্তিতে থাকতে পারি” – বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজা বেগম — “যুদ্ধের আগেই বাঙালি সৈনিকদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা ছড়ায় গেছে, বঞ্চনাটা এত বেশি হয়েছে যে কোন বাঙালি সৈনিক এর (মুক্তিযুদ্ধের) বাইরে থাকেনি” –বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান চৌধুরী ডেভিল হান্টের নামে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক মব সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে মিছিলে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ও শেখ হাসিনার ওপর প্রাণঘাতী হামলা রাজনীতির বাঁকবদল: শেখ হাসিনার মানবিকতা বনাম ঐতিহাসিক তিক্ততা—একটি বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনা রাজনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগঃ বাংলাদেশে গুরুতর মানবিক সংকটের শঙ্কা মার্কিন থিংকট্যাংক সিএফআর-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী তাসনিম জারার মনোনয়ন জমায় বাধা: সার্ভার ডাউন দেখিয়ে জামাতী প্রসাশনের ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি! একুশে ফেব্রুয়ারি-সরস্বতী পূজার ছুটি বাতিল, সরকারের সিদ্ধান্তে তীব্র বিতর্ক অপ্রতিরোধ্য এক দেয়ালের অবসান ঘটল খালেদা জিয়ার মৃত্যুর দিন রুমিনসহ ৯ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি জমি বিরোধে সন্ত্রাসী হামলা, কক্সবাজারে যুবদল নেতা খুন বরগুনায় এয়ারগান দিয়ে কারারক্ষীর পাখি শিকার ইউনুস সরকারের অধীনে সংখ্যালঘু হওয়া মানেই মৃত্যুর অপেক্ষা। কমিউনিটি ক্লিনিক ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন,জবাবদিহি কোথায়? হাদী হত্যা: দুবাই থেকে ভিডিও বার্তায় নিজেকে নির্দোষ দাবি মাসুদের, দায় চাপালেন জামায়াতের ওপর