ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরের, দুর্বল বাংলাদেশের
সেদিন রংপুরে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করেন এসপি শাহজাহান
সমন্বয়ক রাফির বিরুদ্ধে কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ
নতুন মামলায় কামরুল-পলকসহ গ্রেপ্তার ৫
অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাচ্ছে ভারত?
সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে আটকা ২২০ বাংলাদেশি
ঘুম থেকে উঠে দেখি, রাতারাতি মেজর ডালিম হয়ে গেছি
গাড়ি চলে দেশে টাকা যায় বিদেশে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর আগেই সপরিবারে দেশ ছাড়েন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি এখন সিঙ্গাপুরে। বিদেশে বসেই ১৫০টি থেকে ২০০টি গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তার প্রায় ৩০০ গাড়ি এখনো দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকে তার দৈনিক আয় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। গাড়ি থেকে যে আয় হয় তার বেশির ভাগ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়। যেসব গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে তার টাকাও পাচার করা হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জোর
করে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেন বলেও অভিযোগ আছে। টানা ১৫ বছর সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে ছিল। বাস চলাচলের অনুমোদন দিতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি। সড়কে চলাচলকারী সব বাস থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ও করতেন তিনি। প্রতিদিন সড়ক থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলত তার সিন্ডিকেট। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ কয়েক শত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। পাকিস্তানে ৪০৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ, ক্ষতি ২০ হাজার
কোটিপাকিস্তানে ৪০৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ, ক্ষতি ২০ হাজার কোটি গত সেপ্টেম্বরে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে পরিবহন সেক্টর থেকে দিনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এনায়েত উল্লাহ স্ত্রী ও সন্তানদের পালিয়ে গেলেও তার গাড়ির চলাচল থেমে নেই। প্রতিদিন বিভিন্ন সড়কে তার এসি ও নন-এসি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ গাড়ি চলাচল করে। গাড়ি থেকে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়, যার বেশির ভাগ পাচার হচ্ছে। দুদকের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন
উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। এনায়েত উল্লাহ ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লোক। তিনি প্রভাব খাটিয়ে অনুসন্ধান থামিয়ে দেন। পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগটির বিষয়ে অনুসন্ধান টিম যে কোনো সময় গঠন করা হবে। এনায়েতের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঢাকা সড়ক পরিবহনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পরই এনায়েত উল্লাহ পরিবহন খাত দখলে নেন। তিনি বিএনপির একজন মন্ত্রীসহ কয়েকজন পরিবহন নেতার গাড়ি ভাঙচুর ও সেগুলোতে আগুন দেন। অনেকের গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করেন। হুকুম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তার পেটুয়া বাহিনী লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে যেত।
ঢাকার চারটি টার্মিনাল থেকে অনেক পরিবহন নেতার গাড়ি বেরই হতো না। তারা গাড়ি বিক্রি করে দিতে অথবা গাড়ির রং ও নাম বদলে অন্যের কাছে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতারা বলেছেন, ঢাকার চারটি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে। গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে ১৮০০ গাড়ি, সায়দাবাদ থেকে ১৫০০ গাড়ি, মহাখালী থেকে ১০০০ গাড়ি এবং গাবতলী থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি চলাচল করে। ঢাকার বিভিন্ন স্পট থেকে আরও কয়েকশ গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করত এনায়েত উল্লার সিন্ডিকেট। তিনি নিজেও শত শত গাড়ির মালিক। পরিবহন সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এনায়েত উল্লাহর পরিবহন
কোম্পানি এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এসি ও নন-এসি মিলিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ গাড়ি ছিল। আরও কয়েকটি কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে। নিজের, স্ত্রীর ও সন্তানের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট রয়েছে, প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে। তিনি পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা। তারা বলেন, এনায়েত উল্লাহ নেতা হিসেবে একটি সড়কে তার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ গাড়ি দিতে পারেন। অন্যদের ৫০ শতাংশ গাড়ি চলাচল করবে। কিন্তু তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পুরোটাই দখলে নেন। একই অবস্থা ছিল ঢাকা-সিলেট সড়কেও। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। দুদকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে শত
শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশনের উপপরিচালক নূরুল হুদা অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে নোটিশ জারি করেছিল দুদক। নোটিশের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দেওয়া হয়। এনায়েত উল্লাহ ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। বিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসেবে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন। তানজিল ও বসুমতি পরিবহনে শেয়ার থাকার তথ্যও উল্লেখ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সম্পদের যে দাম দেখিয়েছেন তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সমাপ্তি ঘটে। এনায়েত উল্লাহর সম্পদ: স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ও অস্থাবর সম্পত্তি ১৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকার। রাজধানীর মিরপুরে ৮.২৫ বিঘা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, মিরপুরের মনিপুরপাড়ায় ৮ শতাংশ জমিতে ছয়তলা বাড়ি, ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে ৬২ নম্বর বাড়ির ৪/এ নম্বরে ৩ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা সিটিতে ১৫১ বর্গফুটের একটি দোকান, দক্ষিণখানে দুই জায়গায় যথাক্রমে ৭৮ শতাংশ ও ১০ শতাংশ জমি, কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমি ও রূপগঞ্জে ১০ কাঠা জমি। গাজীপুরের দনুয়ায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার জমি ও ফেনীতে ১২ শতাংশ জমি। অস্থাবর সম্পদ: এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেডের নামে ৮০টি বাস। ঢাকা মহানগর ও আশপাশে চলাচলকারী তানজিল পরিবহনে ১ লাখ টাকার শেয়ার ও বসুমতি পরিবহনে ৫ লাখ টাকার শেয়ার। সোলার এন্টারপ্রাইজে আড়াই লাখ, এনা শিপিংয়ে ২০ লাখ ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে ৮ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকার এফডিআর ও নগদ ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তিনি বিয়ের সময় ২৫ ভরি সোনা উপহার পান। স্কুল ড্রেস না পরায় ব্যাডমিন্টন র্যাকেট দিয়ে ছাত্রকে মারলেন শিক্ষকস্কুল ড্রেস না পরায় ব্যাডমিন্টন র্যাকেট দিয়ে ছাত্রকে মারলেন শিক্ষক স্ত্রী নার্গিস সামসাদের সম্পদ: বিবরণী অনুযায়ী নার্গিসের ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় ৩ কাঠার প্লট, ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, সোলার এন্টারপ্রাইজে দেড় লাখ টাকার শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও এনাফুড অ্যান্ড বেভারেজে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা ও এনা ট্রান্সপোর্টে ৬০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে নগদ ১ কোটি ১৭ লাখ এবং ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। এছাড়া তার ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে ৫০ শতাংশ ও মিরপুরের মনিপুরের বাড়িতে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ছেলে রিদওয়ানুল আশিকের সম্পদ: তার স্থাবর-অস্থাবর মিলে মোট সম্পদ রয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও রাজধানীর গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কোটি টাকার ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৪/এ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থানে ১০৯ শতাংশ জমি, উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট। তার নামে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। মেয়ে চাশমে জাহানের সম্পদ: তার ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ায় ৫ কাঠা ভিটি জমি, এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। তার নামে ৪২ লাখ টাকার একটি গাড়ি রয়েছে।
করে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেন বলেও অভিযোগ আছে। টানা ১৫ বছর সড়ক-মহাসড়ক তার দখলে ছিল। বাস চলাচলের অনুমোদন দিতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি। সড়কে চলাচলকারী সব বাস থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ও করতেন তিনি। প্রতিদিন সড়ক থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলত তার সিন্ডিকেট। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাসহ কয়েক শত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। পাকিস্তানে ৪০৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ, ক্ষতি ২০ হাজার
কোটিপাকিস্তানে ৪০৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ, ক্ষতি ২০ হাজার কোটি গত সেপ্টেম্বরে খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে পরিবহন সেক্টর থেকে দিনে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এনায়েত উল্লাহ স্ত্রী ও সন্তানদের পালিয়ে গেলেও তার গাড়ির চলাচল থেমে নেই। প্রতিদিন বিভিন্ন সড়কে তার এসি ও নন-এসি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ গাড়ি চলাচল করে। গাড়ি থেকে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়, যার বেশির ভাগ পাচার হচ্ছে। দুদকের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন
উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। এনায়েত উল্লাহ ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লোক। তিনি প্রভাব খাটিয়ে অনুসন্ধান থামিয়ে দেন। পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগটির বিষয়ে অনুসন্ধান টিম যে কোনো সময় গঠন করা হবে। এনায়েতের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঢাকা সড়ক পরিবহনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পরই এনায়েত উল্লাহ পরিবহন খাত দখলে নেন। তিনি বিএনপির একজন মন্ত্রীসহ কয়েকজন পরিবহন নেতার গাড়ি ভাঙচুর ও সেগুলোতে আগুন দেন। অনেকের গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করেন। হুকুম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তার পেটুয়া বাহিনী লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে যেত।
ঢাকার চারটি টার্মিনাল থেকে অনেক পরিবহন নেতার গাড়ি বেরই হতো না। তারা গাড়ি বিক্রি করে দিতে অথবা গাড়ির রং ও নাম বদলে অন্যের কাছে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতারা বলেছেন, ঢাকার চারটি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে। গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে ১৮০০ গাড়ি, সায়দাবাদ থেকে ১৫০০ গাড়ি, মহাখালী থেকে ১০০০ গাড়ি এবং গাবতলী থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি চলাচল করে। ঢাকার বিভিন্ন স্পট থেকে আরও কয়েকশ গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করত এনায়েত উল্লার সিন্ডিকেট। তিনি নিজেও শত শত গাড়ির মালিক। পরিবহন সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এনায়েত উল্লাহর পরিবহন
কোম্পানি এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এসি ও নন-এসি মিলিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ গাড়ি ছিল। আরও কয়েকটি কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে। নিজের, স্ত্রীর ও সন্তানের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট রয়েছে, প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে। তিনি পাচার করেছেন শত শত কোটি টাকা। তারা বলেন, এনায়েত উল্লাহ নেতা হিসেবে একটি সড়কে তার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ গাড়ি দিতে পারেন। অন্যদের ৫০ শতাংশ গাড়ি চলাচল করবে। কিন্তু তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পুরোটাই দখলে নেন। একই অবস্থা ছিল ঢাকা-সিলেট সড়কেও। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। দুদকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে শত
শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশনের উপপরিচালক নূরুল হুদা অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে নোটিশ জারি করেছিল দুদক। নোটিশের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সম্পদের হিসাব দুদকে জমা দেওয়া হয়। এনায়েত উল্লাহ ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। বিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসেবে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড, সোলার এন্টারপ্রাইজ, এনা শিপিং, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন। তানজিল ও বসুমতি পরিবহনে শেয়ার থাকার তথ্যও উল্লেখ করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সম্পদের যে দাম দেখিয়েছেন তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সমাপ্তি ঘটে। এনায়েত উল্লাহর সম্পদ: স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ১৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ও অস্থাবর সম্পত্তি ১৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকার। রাজধানীর মিরপুরে ৮.২৫ বিঘা জমিতে ছয়তলা বাড়ি, মিরপুরের মনিপুরপাড়ায় ৮ শতাংশ জমিতে ছয়তলা বাড়ি, ধানমন্ডির ১১ নম্বর রোডে ৬২ নম্বর বাড়ির ৪/এ নম্বরে ৩ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা সিটিতে ১৫১ বর্গফুটের একটি দোকান, দক্ষিণখানে দুই জায়গায় যথাক্রমে ৭৮ শতাংশ ও ১০ শতাংশ জমি, কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমি ও রূপগঞ্জে ১০ কাঠা জমি। গাজীপুরের দনুয়ায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার জমি ও ফেনীতে ১২ শতাংশ জমি। অস্থাবর সম্পদ: এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লিমিটেডের নামে ৮০টি বাস। ঢাকা মহানগর ও আশপাশে চলাচলকারী তানজিল পরিবহনে ১ লাখ টাকার শেয়ার ও বসুমতি পরিবহনে ৫ লাখ টাকার শেয়ার। সোলার এন্টারপ্রাইজে আড়াই লাখ, এনা শিপিংয়ে ২০ লাখ ও এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে ৮ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে রয়েছে ৫৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকার এফডিআর ও নগদ ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তিনি বিয়ের সময় ২৫ ভরি সোনা উপহার পান। স্কুল ড্রেস না পরায় ব্যাডমিন্টন র্যাকেট দিয়ে ছাত্রকে মারলেন শিক্ষকস্কুল ড্রেস না পরায় ব্যাডমিন্টন র্যাকেট দিয়ে ছাত্রকে মারলেন শিক্ষক স্ত্রী নার্গিস সামসাদের সম্পদ: বিবরণী অনুযায়ী নার্গিসের ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার অস্থাবরসহ মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় ৩ কাঠার প্লট, ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, সোলার এন্টারপ্রাইজে দেড় লাখ টাকার শেয়ার, প্রাইজবন্ড ও এনাফুড অ্যান্ড বেভারেজে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা ও এনা ট্রান্সপোর্টে ৬০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকে নগদ ১ কোটি ১৭ লাখ এবং ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। এছাড়া তার ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাটে ৫০ শতাংশ ও মিরপুরের মনিপুরের বাড়িতে ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ছেলে রিদওয়ানুল আশিকের সম্পদ: তার স্থাবর-অস্থাবর মিলে মোট সম্পদ রয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার, এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ও রাজধানীর গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কোটি টাকার ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৪/এ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থানে ১০৯ শতাংশ জমি, উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট। তার নামে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। মেয়ে চাশমে জাহানের সম্পদ: তার ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার স্থাবর ও ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। গুলশানের ১২৯ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ায় ৫ কাঠা ভিটি জমি, এনা ট্রান্সপোর্টে ২০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। তার নামে ৪২ লাখ টাকার একটি গাড়ি রয়েছে।