ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
শাড়ি নিয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার হতে পারেন তানজিন তিশা
দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করেও ক্লান্তি নেই রাশমিকার!
ঋত্বিক ঘটকের ভাঙা বাড়িতে জন্মশতবর্ষ উদযাপন
আজ প্রিয়দর্শিনী মৌসুমীর জন্মদিন, যা বললেন ওমর সানী
হলিউডে নতুন প্রেমের গুঞ্জন
সালমান শাহ হত্যাকাণ্ড : সামীরার মা লুসির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এখানে মনে হয় আমিই সবচেয়ে বয়স্ক, নিশোকে খোঁচা পূজা চেরীর
গণহত্যার ছায়ায় শাহরুখ খানের বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠার গল্প
রোববার যখন শাহরুখ খান ৬০ বছরে পা দেন, দিনটি কেবল তার জন্মদিন হিসেবেই নয়—বরং এক নতুন পরিচয়ের প্রতীক হিসেবেও চিহ্নিত হবে। বলিউডের ‘বাদশা’ এবার ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী অভিনেতা হিসেবে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।
হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট অনুসারে, অক্টোবরে শাহরুখ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলিয়নিয়ার ক্লাবে যোগ দিয়েছেন—বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ০.০০০০৪ শতাংশের অন্তর্ভুক্ত এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে।
ভারতের ৩৫৮ বিলিয়নিয়ারের একজন হিসেবে, তার অবস্থান এখন যেন দেবতার মতোই। ভারতীয় গণমাধ্যমও ব্যাপকভাবে এই অর্জন উদযাপন করেছে—তার কঠোর পরিশ্রম, ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা ও ক্যারিশমার প্রশংসা করে।
শাহরুখ খানের ৬০তম জন্মদিন ও তার বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে মিডল ইস্ট আইয়ে বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ লিখেছেন আজাদ ইসা। সেখান থেকে সারাংশ নিয়ে এই প্রতিবেদন।
ভারতীয়
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ‘এটি এক নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি—যা শাহরুখের ব্র্যান্ডকে এক বিশাল সম্পদ–যন্ত্রে পরিণত করেছে।’ অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমস মন্তব্য করেছে, ‘শাহরুখের বিলিয়নিয়ার হওয়া হৃদয় ও মস্তিষ্ক—দুয়েরই কাছে যৌক্তিক।’ তবে খুব কম মানুষই প্রশ্ন তুলেছে—২০২৫ সালে, এই অসমতাপূর্ণ ভারতে, যেখানে মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের জন্য পরিবেশ স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, সেখানে শাহরুখ খানের বিলিয়নিয়ার হওয়া আসলে কী অর্থ বহন করে? আর সেই প্রশ্নের সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয়—এই সময়ের ভয়াবহ সামাজিক–রাজনৈতিক সংকট, কাশ্মীর বা গাজায় গণহত্যার মুখেও তার নীরবতা কি তার সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান নয়? সাফল্যের পথ ও ভারতের গল্প শাহরুখের উত্থান বুঝতে হলে, শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তরের গল্প জানা
জরুরি। যখন দেশটি মুক্তবাজারে প্রবেশ করল, তখনই হিন্দু জাতীয়তাবাদও নতুন করে জেগে উঠল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় ভারতীয় সিনেমা বহুজাতিক ব্র্যান্ডের হাত ধরে ‘নতুন ভারতের স্বপ্ন’ বিক্রি করছিল। এই সময়ে শাহরুখ খান হয়ে উঠলেন সেতুবন্ধন—রক্ষণশীল অতীত ও মুক্তবাজারের ভবিষ্যতের মধ্যে। তার সাফল্য, যেখানে বলিউডে পরিবারতন্ত্র প্রাধান্য পায়, সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য এক আশার গল্প ছিল। ‘রাজ’, ‘রাহুল’ বা ‘বীর’-এর মতো চরিত্রের মাধ্যমে তিনি শুধু প্রেম নয়—বরং এক ধরণের ‘ভারতীয় ঐক্যের’ মায়া তৈরি করেছিলেন, যা জাতি ও ধর্মের বিভাজনকে ঢেকে রাখে। একজন বিনয়ী মুসলিম নায়ক হিসেবে শাহরুখ ছিলেন এমন এক প্রতীক—যিনি সংখ্যাগুরু হিন্দু জাতিকে আশ্বস্ত করেন যে, মুসলমানও ‘ভারতীয়’ হতে পারে—যদি সে ভদ্র, দেশপ্রেমিক
ও অনুগত হয়। এই নীরব আত্মসমর্পণ তাকে ডানপন্থিদের কাছে সন্দেহভাজন এবং উদারপন্থিদের কাছে ‘সহনশীলতার প্রতীক’ বানিয়েছে—দু’পক্ষই তাকে তাদের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করেছে। নীরবতা ও আপসের দাম ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর শাহরুখ খান একবার ‘অসহিষ্ণুতার’ বিষয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। তার ফলেই তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়—তিনি একজন মুসলমান। এর পর থেকে তার নীরবতা প্রমাণ করে দেয়, সম্পদের মূল্য অনেক সময় আত্মসম্মানের চেয়েও বেশি। তার প্রযোজনা সংস্থা ‘রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট’ ও ক্রিকেট দল ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ ক্রমে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়। তিনি একের পর এক নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন—‘কিডজানিয়া’, ‘মিররএআর’, ‘মিরক্যাট’–এর মতো প্রতিষ্ঠানে। তার স্ত্রী গৌরী খানেরও বিনিয়োগ আছে ওয়াইও, সাবকো কফি,
চুপস ফুটওয়্যারসহ বহু কোম্পানিতে। এছাড়া তিনি ভারতের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। কিন্তু তার প্রচারিত অনেক ব্র্যান্ড—যেমন টাটা, রিলায়েন্স, হুন্দাই বা কাস্ট্রল—ইসরাইল বা দখলদার ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত। তার বিজ্ঞাপনের এক স্লোগানই ছিল: ‘Be the better guy.’ কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—‘কাদের চেয়ে ভালো?’ গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার আজ ভারতের মুসলমানরা নাগরিকত্ব সংকট, লিঞ্চিং, প্রশাসনিক বৈষম্য ও ভয়াবহ দমননীতির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাশ্মীরে চলছে ইসরাইলি মডেলে দমননীতি ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতায় শাহরুখ খানের নীরবতা আরও বেদনাদায়ক। যখন গাজায় গণহত্যা চলছে, তখন ভারতের মুসলমান ও সমাজকর্মীরা প্রতিবাদের কারণে গ্রেফতার হচ্ছেন—কিন্তু শাহরুখ নীরব। বরং মে মাসে, যখন বিশ্বজুড়ে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুঙ্গে, তিনি উপস্থিত হন নিউ ইয়র্কের ‘মেট গালা’-য়, সোনালি গয়নায়
মোড়া কালো কোট পরে। আর অক্টোবরেই সৌদি আরবের ‘জয় ফেস্টিভ্যাল’-এ দেখা যায় শাহরুখ, সালমান ও আমির খানকে—রাজপরিবার ও ধনীদের সামনে নিজেদের প্রশংসায় মগ্ন। এ এক গভীর প্রতীক—বিশ্ব যখন ভেঙে পড়ছে, তারা কেবল নিজেদের সাম্রাজ্যকে আরও ঝলমলে করে তুলছেন।
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ‘এটি এক নিরলস পরিশ্রমের স্বীকৃতি—যা শাহরুখের ব্র্যান্ডকে এক বিশাল সম্পদ–যন্ত্রে পরিণত করেছে।’ অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমস মন্তব্য করেছে, ‘শাহরুখের বিলিয়নিয়ার হওয়া হৃদয় ও মস্তিষ্ক—দুয়েরই কাছে যৌক্তিক।’ তবে খুব কম মানুষই প্রশ্ন তুলেছে—২০২৫ সালে, এই অসমতাপূর্ণ ভারতে, যেখানে মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের জন্য পরিবেশ স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, সেখানে শাহরুখ খানের বিলিয়নিয়ার হওয়া আসলে কী অর্থ বহন করে? আর সেই প্রশ্নের সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয়—এই সময়ের ভয়াবহ সামাজিক–রাজনৈতিক সংকট, কাশ্মীর বা গাজায় গণহত্যার মুখেও তার নীরবতা কি তার সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান নয়? সাফল্যের পথ ও ভারতের গল্প শাহরুখের উত্থান বুঝতে হলে, শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তরের গল্প জানা
জরুরি। যখন দেশটি মুক্তবাজারে প্রবেশ করল, তখনই হিন্দু জাতীয়তাবাদও নতুন করে জেগে উঠল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় ভারতীয় সিনেমা বহুজাতিক ব্র্যান্ডের হাত ধরে ‘নতুন ভারতের স্বপ্ন’ বিক্রি করছিল। এই সময়ে শাহরুখ খান হয়ে উঠলেন সেতুবন্ধন—রক্ষণশীল অতীত ও মুক্তবাজারের ভবিষ্যতের মধ্যে। তার সাফল্য, যেখানে বলিউডে পরিবারতন্ত্র প্রাধান্য পায়, সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য এক আশার গল্প ছিল। ‘রাজ’, ‘রাহুল’ বা ‘বীর’-এর মতো চরিত্রের মাধ্যমে তিনি শুধু প্রেম নয়—বরং এক ধরণের ‘ভারতীয় ঐক্যের’ মায়া তৈরি করেছিলেন, যা জাতি ও ধর্মের বিভাজনকে ঢেকে রাখে। একজন বিনয়ী মুসলিম নায়ক হিসেবে শাহরুখ ছিলেন এমন এক প্রতীক—যিনি সংখ্যাগুরু হিন্দু জাতিকে আশ্বস্ত করেন যে, মুসলমানও ‘ভারতীয়’ হতে পারে—যদি সে ভদ্র, দেশপ্রেমিক
ও অনুগত হয়। এই নীরব আত্মসমর্পণ তাকে ডানপন্থিদের কাছে সন্দেহভাজন এবং উদারপন্থিদের কাছে ‘সহনশীলতার প্রতীক’ বানিয়েছে—দু’পক্ষই তাকে তাদের নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করেছে। নীরবতা ও আপসের দাম ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর শাহরুখ খান একবার ‘অসহিষ্ণুতার’ বিষয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। তার ফলেই তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়—তিনি একজন মুসলমান। এর পর থেকে তার নীরবতা প্রমাণ করে দেয়, সম্পদের মূল্য অনেক সময় আত্মসম্মানের চেয়েও বেশি। তার প্রযোজনা সংস্থা ‘রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট’ ও ক্রিকেট দল ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ ক্রমে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়। তিনি একের পর এক নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন—‘কিডজানিয়া’, ‘মিররএআর’, ‘মিরক্যাট’–এর মতো প্রতিষ্ঠানে। তার স্ত্রী গৌরী খানেরও বিনিয়োগ আছে ওয়াইও, সাবকো কফি,
চুপস ফুটওয়্যারসহ বহু কোম্পানিতে। এছাড়া তিনি ভারতের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। কিন্তু তার প্রচারিত অনেক ব্র্যান্ড—যেমন টাটা, রিলায়েন্স, হুন্দাই বা কাস্ট্রল—ইসরাইল বা দখলদার ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত। তার বিজ্ঞাপনের এক স্লোগানই ছিল: ‘Be the better guy.’ কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—‘কাদের চেয়ে ভালো?’ গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার আজ ভারতের মুসলমানরা নাগরিকত্ব সংকট, লিঞ্চিং, প্রশাসনিক বৈষম্য ও ভয়াবহ দমননীতির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাশ্মীরে চলছে ইসরাইলি মডেলে দমননীতি ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতায় শাহরুখ খানের নীরবতা আরও বেদনাদায়ক। যখন গাজায় গণহত্যা চলছে, তখন ভারতের মুসলমান ও সমাজকর্মীরা প্রতিবাদের কারণে গ্রেফতার হচ্ছেন—কিন্তু শাহরুখ নীরব। বরং মে মাসে, যখন বিশ্বজুড়ে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুঙ্গে, তিনি উপস্থিত হন নিউ ইয়র্কের ‘মেট গালা’-য়, সোনালি গয়নায়
মোড়া কালো কোট পরে। আর অক্টোবরেই সৌদি আরবের ‘জয় ফেস্টিভ্যাল’-এ দেখা যায় শাহরুখ, সালমান ও আমির খানকে—রাজপরিবার ও ধনীদের সামনে নিজেদের প্রশংসায় মগ্ন। এ এক গভীর প্রতীক—বিশ্ব যখন ভেঙে পড়ছে, তারা কেবল নিজেদের সাম্রাজ্যকে আরও ঝলমলে করে তুলছেন।



