ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
আদানির বিদ্যুৎ আমদানি কমিয়েছে বাংলাদেশ
এনআরবিসি ব্যাংকের ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্ট তলব
আদানির চুক্তি বাতিলের পথ খুঁজছে বাংলাদেশ
এস আলমের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলা
৪৪.৭% মানুষ মনে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো করছে না
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলা
চার মাসে রেমিট্যান্স এলো দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি
খেলাপির পথে ২৫ হাজার কোটি টাকা
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির নজিরবিহীন চিত্র ফাঁস হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রভাবে গ্রুপটি ব্যাংক দখল করে ইচ্ছামতো বেপরোয়া গতিতে ঋণ নিয়েছে।
এক্ষেত্রে আইনকানুনের কোনো বালাই ছিল না। কেবল দুটি ব্যাংকেই গ্রুপের নামে মোট ঋণের মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোনো বেআইনি সুবিধা না দিলে চলতি সেপ্টেম্বর বা আগামী ডিসেম্বর শেষে এসব ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রুপের নামে ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি ছিল। সরকার পতন হওয়ায় এ ঋণ নবায়ন করার প্রক্রিয়া এখন ভেস্তে গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়,
১৪ আগস্ট নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে গিয়ে পরিদর্শকরা অবিশ্বাস্য সব তথ্য পাচ্ছেন। হিসাব খোলা হয়নি, অথচ গ্রাহকের নামে ঋণ বিতরণ হয়ে গেছে। কোম্পানির অস্তিত্ব নেই ঋণ দেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, কিন্তু গ্রাহক কোনো টাকা দেয়নি। সব টাকা ব্যাংক দিয়েছে। পণ্য দেশে আসার পর গ্রাহক তা নিয়ে বিক্রি করেছে। তারপরও টাকা শোধ করা হয়নি। ফলে এলসির টাকা ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্সলোন সৃষ্টি করে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছে। ব্যাংকের ঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া বড় অঙ্কের
ঋণ সীমাও এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণের ক্ষেত্রে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই বিরামহীন গতিতে অনুমোদন দিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি ৯ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে। বাকি ৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা নিয়মিত ছিল। মোট ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা রয়েছে পরোক্ষ ঋণ যা এলসির বিপরীতে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খাদ্য
পণ্য ও খাদ্য পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এসব এলসির বিপরীতে ব্যাংক ৫ বা ১০ শতাংশ মার্জিন নিয়ে বাকি ৯০ বা ৯৫ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। এসব এলসির বিপরীতে দেশে পণ্য এলেও তা বিক্রি করে নগদ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়নি। শর্ত ছিল পণ্য বিক্রির টাকায় ঋণ শোধ করবে। কিন্তু গ্রুপ ঋণ শোধ না করে বকেয়া রেখেছে। ঋণ শোধের জন্য গ্রুপের কোনো পক্ষকে ব্যাংক থেকে কোনো তাগাদা দেওয়ার নজিরও পাওয়া যায়নি। এদিকে ঋণের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিদেশি ব্যাংক তাগাদা দিচ্ছিল দেনা শোধের জন্য। তখন জনতা ব্যাংক ফোর্সলোন তৈরি করে দায় শোধ করে দিয়েছে। এ ঋণও এস আলম গ্রুপ পরিশোধ করেনি।
ফলে ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এক বছর করে। এভাবে দফায় দফায় ঋণের মেয়াদ ও সীমা বাড়িয়ে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিয়েছে এবং ঋণকে খেলাপি মুক্ত রেখেছে। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় গত বছর গ্রাহককে ঋণ শোধের জন্য তাগাদা দেয়। কিন্তু কোনো ঋণ শোধ করেনি গ্রাহক। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাংক ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে। ঋণ খেলাপি হলে কোনো গ্রাহক নতুন ঋণ পায় না। কিন্তু এস আলম গ্রুপের নতুন ঋণ পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। গত জুনে গ্রাহকের ঋণের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয় জনতা ব্যাংকে।
কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও পদত্যাগ করেন। ১৪ আগস্ট নতুন গভর্নর যোগ দেন। তিনি আগের সব অপকর্ম বাতিল করে দিচ্ছেন। ফলে এস আলম গ্রুপের ঋণের সীমা ও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ব্যাংক ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের চিঠির নির্দেশনা ব্যাংক এখন আর বাস্তবায়ন করবে না। ঋণের মেয়াদ ও সীমা আর বাড়ানো না হলে চলতি সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শেষ দিকে বা আগামী ডিসেম্বর প্রান্তিকের শেষে পুরো ঋণটিই খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। ২০১৭ সালে এস
আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক নিজেদের দখলে নিয়ে বেপরোয়া লুটপাট করে। গ্রুপটি ঋণের নামে গ্রাহকদের আমানত লুট করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে বা দেশি ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত এনে বিদেশে বা দেশি উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ) থেকেও বেপরোয়া ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি। ২০১৭ সাল থেকেই এস আলম গ্রুপ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বৈদেশিক মুদ্রায় ১৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। সেগুলো বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮২ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা বেড়ে হয় ১১০ টাকা। এক্ষেত্রে ডলারের গড় দাম হচ্ছে ৯৬ টাকা। এ হিসাবে এস আলম গ্রুপের মূল ঋণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে তা ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এতদিন ঋণের সীমা ও মেয়াদ বাড়িয়ে খেলাপিমুক্ত রাখা হয়। এখন এই ঋণ পরিশোধ না করলে বা নবায়ন না করলে পুরো ঋণই খেলাপি হয়ে যাবে। সূত্রমতে, এসব ঋণের বিপরীতে যেসব এলসি খোলা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য দেশে আসেনি। কিন্তু দেনা শোধ করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হয়েছে। কিছু এলসির পণ্য দেশে এলেও সেগুলো বিক্রি করে গ্রাহক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ থেকে ঋণ শোধ করেছে। আর বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া ১৫০ কোটি ডলারের আমানত এখন ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে গ্রাহককে মুনাফা দিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক ওই বিনিয়োগ থেকে কোনো মুনাফাই পাচ্ছে না। উলটো আরও খেলাপি হলে প্রভিশন রাখতে হবে। এতে ব্যাংকের আটকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়েছে। বেআইনিভাবে প্রভাব খাটিয়ে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের টাকা ঘোষিত ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে নিয়মবহিভর্‚তভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, ওইসব অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের নাফ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আখতার ফারুককে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো অস্তিত্ব পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য ঋণ নিলেও কোনো পণ্য আনেনি। পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপের মুখে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
১৪ আগস্ট নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে গিয়ে পরিদর্শকরা অবিশ্বাস্য সব তথ্য পাচ্ছেন। হিসাব খোলা হয়নি, অথচ গ্রাহকের নামে ঋণ বিতরণ হয়ে গেছে। কোম্পানির অস্তিত্ব নেই ঋণ দেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, কিন্তু গ্রাহক কোনো টাকা দেয়নি। সব টাকা ব্যাংক দিয়েছে। পণ্য দেশে আসার পর গ্রাহক তা নিয়ে বিক্রি করেছে। তারপরও টাকা শোধ করা হয়নি। ফলে এলসির টাকা ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্সলোন সৃষ্টি করে বিদেশি ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছে। ব্যাংকের ঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া বড় অঙ্কের
ঋণ সীমাও এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এরপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণের ক্ষেত্রে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই বিরামহীন গতিতে অনুমোদন দিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি ৯ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে। বাকি ৮ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা নিয়মিত ছিল। মোট ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা রয়েছে পরোক্ষ ঋণ যা এলসির বিপরীতে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খাদ্য
পণ্য ও খাদ্য পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এসব এলসির বিপরীতে ব্যাংক ৫ বা ১০ শতাংশ মার্জিন নিয়ে বাকি ৯০ বা ৯৫ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। এসব এলসির বিপরীতে দেশে পণ্য এলেও তা বিক্রি করে নগদ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়নি। শর্ত ছিল পণ্য বিক্রির টাকায় ঋণ শোধ করবে। কিন্তু গ্রুপ ঋণ শোধ না করে বকেয়া রেখেছে। ঋণ শোধের জন্য গ্রুপের কোনো পক্ষকে ব্যাংক থেকে কোনো তাগাদা দেওয়ার নজিরও পাওয়া যায়নি। এদিকে ঋণের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিদেশি ব্যাংক তাগাদা দিচ্ছিল দেনা শোধের জন্য। তখন জনতা ব্যাংক ফোর্সলোন তৈরি করে দায় শোধ করে দিয়েছে। এ ঋণও এস আলম গ্রুপ পরিশোধ করেনি।
ফলে ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এক বছর করে। এভাবে দফায় দফায় ঋণের মেয়াদ ও সীমা বাড়িয়ে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিয়েছে এবং ঋণকে খেলাপি মুক্ত রেখেছে। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় গত বছর গ্রাহককে ঋণ শোধের জন্য তাগাদা দেয়। কিন্তু কোনো ঋণ শোধ করেনি গ্রাহক। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাংক ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে। ঋণ খেলাপি হলে কোনো গ্রাহক নতুন ঋণ পায় না। কিন্তু এস আলম গ্রুপের নতুন ঋণ পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। গত জুনে গ্রাহকের ঋণের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয় জনতা ব্যাংকে।
কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও পদত্যাগ করেন। ১৪ আগস্ট নতুন গভর্নর যোগ দেন। তিনি আগের সব অপকর্ম বাতিল করে দিচ্ছেন। ফলে এস আলম গ্রুপের ঋণের সীমা ও মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ব্যাংক ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের চিঠির নির্দেশনা ব্যাংক এখন আর বাস্তবায়ন করবে না। ঋণের মেয়াদ ও সীমা আর বাড়ানো না হলে চলতি সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শেষ দিকে বা আগামী ডিসেম্বর প্রান্তিকের শেষে পুরো ঋণটিই খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। ২০১৭ সালে এস
আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক নিজেদের দখলে নিয়ে বেপরোয়া লুটপাট করে। গ্রুপটি ঋণের নামে গ্রাহকদের আমানত লুট করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে বা দেশি ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত এনে বিদেশে বা দেশি উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ) থেকেও বেপরোয়া ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি। ২০১৭ সাল থেকেই এস আলম গ্রুপ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বৈদেশিক মুদ্রায় ১৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। সেগুলো বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮২ টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা বেড়ে হয় ১১০ টাকা। এক্ষেত্রে ডলারের গড় দাম হচ্ছে ৯৬ টাকা। এ হিসাবে এস আলম গ্রুপের মূল ঋণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে তা ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এতদিন ঋণের সীমা ও মেয়াদ বাড়িয়ে খেলাপিমুক্ত রাখা হয়। এখন এই ঋণ পরিশোধ না করলে বা নবায়ন না করলে পুরো ঋণই খেলাপি হয়ে যাবে। সূত্রমতে, এসব ঋণের বিপরীতে যেসব এলসি খোলা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য দেশে আসেনি। কিন্তু দেনা শোধ করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা হয়েছে। কিছু এলসির পণ্য দেশে এলেও সেগুলো বিক্রি করে গ্রাহক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ থেকে ঋণ শোধ করেছে। আর বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া ১৫০ কোটি ডলারের আমানত এখন ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে গ্রাহককে মুনাফা দিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক ওই বিনিয়োগ থেকে কোনো মুনাফাই পাচ্ছে না। উলটো আরও খেলাপি হলে প্রভিশন রাখতে হবে। এতে ব্যাংকের আটকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়েছে। বেআইনিভাবে প্রভাব খাটিয়ে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। ঋণের টাকা ঘোষিত ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে নিয়মবহিভর্‚তভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, ওইসব অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের নাফ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আখতার ফারুককে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো অস্তিত্ব পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য ঋণ নিলেও কোনো পণ্য আনেনি। পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপের মুখে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।