কালজয়ী সিনেমা ‘অবুঝ মন’ একটি সময়ের দলিল – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৮ জুলাই, ২০২৫
     ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

কালজয়ী সিনেমা ‘অবুঝ মন’ একটি সময়ের দলিল

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৮ জুলাই, ২০২৫ | ৫:০৬ 64 ভিউ
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সিনেমা জগৎ ছিল নতুন করে শুরুর পর্যায়ে। বিধ্বস্ত অবকাঠামো, অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সিনেমা সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করছিলেন দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে ফেরাতে। ঠিক এমন সময়ে মুক্তি পায় ‘অবুঝ মন’। এটি এমন এক প্রেমকাহিনি, যা শুধু বাণিজ্যিক সফলতাই পায়নি বরং সামাজিক বার্তা আর মানবিকতার গল্প দিয়ে হয়ে উঠেছিল একটি সময়ের দলিল। যা স্বাধীনতার পর দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টেনে আনে, প্রেমের গল্পের আড়ালে সমাজের ধর্মীয় বিভাজন নিয়ে কথা বলে এবং শেষ পর্যন্ত এক মানবিক মূল্যবোধের জয়গাথা রচনা করে। ১৯৭২ সালের ৮ নভেম্বর মুক্তি পায় সিনেমাটি। রাজ্জাক-শাবানা-সুজাতাসহ তারকানির্ভর এ সিনেমা পরিচালনা করেন তখনকার অন্যতম প্রভাবশালী প্রযোজক-পরিচালক কাজী জহির।

এটি ছিল তার একটি বড় বাজেটের আন্তরিক প্রয়াস। রাজ্জাক-শাবানা জুটি এর আগে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছিল, কিন্তু এই সিনেমায় তাদের রসায়ন আলাদা মাত্রা পায়। হিন্দু-মুসলিম মেলবন্ধনের প্রেম-প্রীতি-বন্ধুত্বের সুন্দর একটি সিনেমা ‘অবুঝ মন’। এর কাহিনি লিখেছেন চিত্রা সিনহা। তিনি বনেদি বাঙালি হিন্দু পরিবারের কন্যা। ভালোবেসে কাজী জহিরকে বিয়ে করে চিত্রা জহির হন। সিনেমার কাহিনীতেও দেখা গেছে, বনেদি হিন্দু জমিদার পরিবারের কন্যা মাধবী বন্দ্যোপাধ্যায়, মানে শাবানার সঙ্গে সদ্য ডাক্তারি পাস করা মুসলিম যুবক মাসুম, মানে রাজ্জাকের পরিচয় হয়। একপ্রকার প্রথম দর্শনেই প্রেম এবং পরবর্তী সময়ে তা তীব্র বিরহের আকার ধারণ করে। প্রথম দর্শনের খুনসুটি-দুষ্টুমিতে অভিজাত পরিবারের নারীর আভিজাত্য আর এলেবেলে ডাক্তারের তীব্র মান-অভিমানবোধ। একে

অন্যের জিনিস ট্রেনের জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। সেই ট্রেন হঠাৎ অচল হয়ে থেমে গেলে রাতের অন্ধকারে অজানা-অচেনা জায়গায় মাসুম আবার মাধবীর আশ্রয় হয়ে ওঠে। মাসুমের অনুরোধে মাধবী গান ধরে, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়/ চলার পথে ক্ষণিক দেখা/ একি শুধু অভিনয়...।’ একরাশ মুগ্ধ আবেশ ছড়ানো কালজয়ী এ গানটি পদে পদে আক্ষরিক অর্থে এই সিনেমার অমূল্য চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। এত সুন্দর কাহিনির বুনন পরিচালকের দক্ষ পরিচালনায় বাংলা সিনেমার স্বর্ণালি যুগের স্বাক্ষর রেখে যায়। এক চিরন্তন অমর প্রেমকাহিনির আসনে সিনেমাটিকে ইতিহাসের পথে এগিয়ে দিয়ে যায়। এ সিনেমার প্রত্যেকটি গান জনপ্রিয় ছিল। এগুলো রচনা করেছেন মনিরুজ্জামান ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার। কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন,

আবদুল জব্বার ও ফেরদৌসী রহমান। সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখেছেন আহমদ জামান চৌধুরী, সংলাপ রচনায় ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, সংগীত পরিচালক ও সুরকার ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ভারতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য নির্বাচিত প্রথম সিনেমা ছিল এটি। মুক্তির পর ‘অবুঝ মন’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ঢল নেমেছিল। এটি টানা ১০০ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রদর্শিত হয়ে প্লাটিনাম জুবলী পালন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’ এর পাশাপাশি জনপ্রিয়, আলোচিত ও বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমা হিসাবে ‘অবুঝ মন’কেই ধরা হয়। সিনেমাটির আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য জানা না গেলেও এটিকে তৎকালিন সময়ের সুপারহিট সিনেমা হিসাবেই বলা হয়েছিল। এটি যে শুধুই হিট সিনেমা

ছিল তা নয়; যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে সিনেমার বাজার পুনরুজ্জীবিত করা, তারকাকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক সিনেমার ধারা মজবুত করা, মুসলিম-হিন্দু প্রেমের গল্পের মাধ্যমে সমাজে সহনশীলতার বার্তা দেওয়ার মতো গুরুত্ব বিষয় ছিল এতে। যা সিনেমাটিকে অনবদ্য এক রুপ দিয়েছে। এতে রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন নারায়ণ চক্রবর্তী, এটিএম শামসুজ্জামান, চাষী নজরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন, খান জয়নুল, হাসমত, জাভেদ রহিম, ওয়াহিদা, দীন মোহাম্মদ, তেজেন চক্রবর্তী, শেখ ফজলু, মজিদ প্রমুখ। সিনেমাটি নিয়ে স্মৃতিচারণ করে শাবানা এক সাক্ষাৎকার বলেছিলেন, ‘সেই সময়ে হিন্দু-মুসলমানের প্রেম কাহিনি নিয়ে একটি সাহসী সিনেমা নির্মাণ করেন দক্ষ নির্মাতা কাজী জহির। বেশ উৎসবমুখর আয়োজনে এর কাজ করেছিলাম আমরা। এটি যে এমন সাড়া জাগাবে তা প্রথমে

বুঝতে পারিনি। তারপর তো বলতে গেলে সিনেমাটি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। এ সিনেমার কথা শুধু আমি নই, কেউই কোনো দিন ভুলতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।’ স্বাধীনতা পরবর্তী কাজী জহিরের প্রথম সিনেমা ছিল ‘অবুঝ মন’। এরপর আরও হাফ ডজন সিনেমা তিনি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু অবুঝ মন আজও দর্শকের মনে রয়ে গেছে। এ নির্মাতার নাম পাঁচ অক্ষরের, তাই যতগুলো বাংলা সিনেমা তিনি বানিয়েছেন সবগুলোর নাম রেখেছেন পাঁচ অক্ষরে। কীর্তিমান এ নির্মাতা ১৯৯২ সালের ২০শে অক্টোবর মারা যান। ১৯৬২ সালে উর্দু সিনেমা ‘বন্ধন’ দিয়ে নাম তোলেন পরিচালকের খাতায়। এরপর ‘ময়নামতি’ সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করেন। রাজ্জাক-কবরীর জুটির সাফল্য মুলত এই

সিনেমাকে ঘিরেই। শীর্ষ তারকাদের একই সিনেমায় অভিনয় করানোয় সুনাম ছিল তার। ‘বধূবিদায়’ সিনেমায় কবরী আর শাবানাকেও এক ফ্রেমে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। সিনেমার সোনালী যুগে কাজী জহিরকে বলা হতো রোমান্টিক পরিচালক। তার সিনেমা মানেই রোমান্সের নতুনত্ব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সংকটে দীপিকার স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনে প্রার্থী যারা বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’ , সমুদ্রবন্দরে হুঁশিয়ারি সংকেত আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে স্থায়ীভাবে অভিবাসন বন্ধের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ বাড়লেও কমছে না সবজির দাম সমুদ্রের নিচের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে সুনামির ঝুঁকি কতটা? শক্তি বাড়িয়ে ৮৮ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’ টঙ্গীতে ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শুরু মাটি খননের সময় বেরিয়ে এলো মর্টার শেল ফের ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের দাম, শুক্রবার কততে বিক্রি হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে স্থায়ীভাবে অভিবাসন বন্ধের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ামির বিস্ফোরক মন্তব্য রিয়ার সহজ স্বীকারোক্তি কারাগারে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না দুই হত্যা, দুই বিশ্ববিদ্যালয়, এক নিস্ক্রিয় সরকার : বিচার পাবে কবে? গম থেকে চাল, সবই সিঙ্গাপুর দিয়ে : ইউনুস সরকারের ক্রয়ে কার স্বার্থ? প্রতারণাপূর্ণ অপকৌশলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা ও নিষ্ঠা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না মর্মে আওয়ামী লীগের বিবৃতি Mobocracy in robes: How Yunus regime’s farcical tribunal ordered Sheikh Hasina’s judicial assassination সাম্প্রতিক ভিত্তিহীন ও মিথ্যা দুর্নীতির মামলা সাজিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সম্মানহানির অপচেষ্টা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ