
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারও দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

উমামার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা

এনবিআর বিলুপ্ত করে ২ বিভাগ, অধ্যাদেশ পাশ

৮ হাজার কোটি টাকা হাতিয়েছে স্বপনচক্র

এক বছরেও গ্রেফতার হয়নি পালানো ৭২৪ বন্দি
এখনো অধরা সুউচ্চ ভবন ঠাঁই জীর্ণ কুটিরেই

গাজীপুরে দুস্থ শিশুদের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ডরমিটরি ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলেও সেখানে ঠাঁই হয়নি তাদের। জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। সেখানেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে শিশুদের। অথচ তাদের জন্য নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ ভবন পড়ে আছে অব্যবহৃত। এমন একাধিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রকাশ পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে।
২০১৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ‘দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। উদ্দেশ্য ছিল সেখানকার দুস্থ শিশুদের পুনর্বাসনসহ শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসা। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৮১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭
হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবায়নে ধীরগতি ও জটিলতার কারণে মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সবশেষ এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির (জুন ২০২৬ পর্যন্ত) প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি প্রকল্পের ওপর সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় একটি ডরমিটরি ভবন, তিনটি আবাসিক ভবন এবং একটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ভবন নির্মাণের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। ৩৩ কোটি টাকা
ব্যয়ে নির্মিত ডরমিটরি ভবনটি এক বছর ধরে পড়ে আছে। দরজা-জানালা, টাইলস, ফিটিংসসহ সব কাজ শেষ হলেও ভবনটি হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে শিশুদের থাকতে হচ্ছে পুরোনো জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অনিয়ম ধরা পড়েছে লিফট কেনায়। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী পাঁচটি লিফট স্থাপনের জন্য নির্ধারিত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। দরপত্রে সর্বনিম্ন দর ছিল প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কাজ দেওয়া হয় চতুর্থ দরদাতাকে, যার দর সর্বনিম্নের চেয়ে ৭০ লাখ টাকা বেশি। লিফট বসানোর আগেই ঠিকাদারের প্রায় ৯১ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাঁচটি ভবনে লিফট
স্থাপনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও বসানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, লিফট স্থাপন ও পরীক্ষামূলক চালু করার পর বিল পরিশোধের কথা। সেটাও মানা হয়নি। আইএমইডি বলছে, লিফট স্থাপন ছাড়া বিল প্রদান আর্থিক অনিয়মের শামিল। দুস্থ শিশুদের প্রকল্পে অগ্রাধিকার কর্মকর্তাদের: প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ৪০০ শিশুর নিরাপদ আবাসন। বাস্তবে শিশুদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে কর্মকর্তাদের আবাসন। প্রকল্পের আওতায় ৪০০ দুস্থ শিশুদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ডরমিটরি ভবন। অথচ তাদের দেখভালেরর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছয়তলা বিশিষ্ট তিনটি আবাসিক ভবন। এসব ভবনে রয়েছে দুই স্তরের ৬০টি ফ্ল্যাট। অথচ তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তুলনায় ৪১টি ফ্ল্যাট
বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলো কী কাজে ব্যবহার হবে, তার কোনো যৌক্তিক উত্তর নেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা বলছেন, সেখানে তাদের ৩৪ জন জনবল লাগবে, আছে মাত্র ১৯ জন। আরও ১৫ জন নিয়োগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বাড়ছে ব্যয়, গতি নেই কাজে: ২০১৯ সালে ৮১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেলেও সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ৯২ কোটি টাকায়। কাজ তো শেষ হয়নি, উল্টো মেয়াদ বাড়ছে একের পর এক। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দই রাখা হয়নি। মার্চ পর্যন্ত এক টাকাও খরচ হয়নি। পরে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার শর্তে আরএডিপির বরাদ্দ আসে। জুন পেরিয়ে আগস্ট যায় যায় হলেও কাজ শেষ
করতে পারেনি ঠিকাদার। এ অবস্থায় নতুন করে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন কাজ শুরুই হয়নি: পরিদর্শনে কিছু ভবনের দরজার কাঠ বাঁকা ও ফাটল ধরা পড়েছে। তাৎক্ষণিক এটি ঠিকাদারকে মেরামতের নির্দেশ দিয়েছে আইএমইডি। এ ছাড়া সংশোধিত প্রকল্পে বহিরাগত বিদ্যুতায়ন কাজও শুরু হয়নি। প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার এই কাজের চুক্তি হলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে নতুন ভবনগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। আইএমইডির পরিদর্শন কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমি গত বছরের জুনেও প্রকল্পটি ভিজিট করেছিলাম। তখন কাজের অবস্থা যেমন দেখেছিলাম, এবারও তাই দেখেছি। আমরা দ্রুত দুস্থ শিশুদের জরাজীর্ণ ভবন থেকে নতুন
ভবনে শিফট করার জন্য বলেছি।’ ঠিকাদারদের অভিযোগ, ভবন হস্তান্তরের পর অবশিষ্ট বিল প্রদানে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এতে নির্মিত ভবনগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে শিশুরা নতুন ভবনে উঠতে পারছে না। আলোচ্য প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে রয়েছেন ২৪ বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি। তাকে প্রেষণে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পালন করেছেন। সে হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নে তার অভিজ্ঞতা অনেক। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন বেহালদশা কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি বলেন, ‘প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ঠিকাদারদের কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।’ লিফটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লিফট পাওয়ার আগে বিল পরিশোধ করা হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিল দেওয়া হয়েছে।’ শিশুরা কেন এখনো টিনশেডে থাকছে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য যে ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেখানে তোলা হয়নি।’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কেন অতিরিক্ত তিনটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে—এমন প্রশ্নে উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি বলেন, ‘এই প্রশ্ন আমারও। এটির বিষয়ে আমি বলতে পারব না। কারণ, আমি তো ডিপিপি তৈরির সময় ছিলাম না। ডিপিপিতে যেভাবে ছিল সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।’ আইএমইডির সুপারিশ: প্রতিবেদনে আইএমইডি কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—লিফট স্থাপন ছাড়াই বিল প্রদান কেন হলো, তা খতিয়ে দেখা; ডরমিটরি ভবনে শিশুদের অবিলম্বে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া; বিদ্যুতায়ন কাজ দ্রুত শেষ করা; ত্রুটিপূর্ণ দরজা-জানালা ঠিকাদার দিয়ে পরিবর্তন করা এবং প্রকল্পের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করা। এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের অনিয়মগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আমাদের পর্যবেক্ষণের ওপর তারা কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা আমরা জানাতে বলেছি। তারপরই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।’
হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবায়নে ধীরগতি ও জটিলতার কারণে মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সবশেষ এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির (জুন ২০২৬ পর্যন্ত) প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি প্রকল্পের ওপর সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় একটি ডরমিটরি ভবন, তিনটি আবাসিক ভবন এবং একটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ভবন নির্মাণের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। ৩৩ কোটি টাকা
ব্যয়ে নির্মিত ডরমিটরি ভবনটি এক বছর ধরে পড়ে আছে। দরজা-জানালা, টাইলস, ফিটিংসসহ সব কাজ শেষ হলেও ভবনটি হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে শিশুদের থাকতে হচ্ছে পুরোনো জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অনিয়ম ধরা পড়েছে লিফট কেনায়। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী পাঁচটি লিফট স্থাপনের জন্য নির্ধারিত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। দরপত্রে সর্বনিম্ন দর ছিল প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কাজ দেওয়া হয় চতুর্থ দরদাতাকে, যার দর সর্বনিম্নের চেয়ে ৭০ লাখ টাকা বেশি। লিফট বসানোর আগেই ঠিকাদারের প্রায় ৯১ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাঁচটি ভবনে লিফট
স্থাপনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও বসানো হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, লিফট স্থাপন ও পরীক্ষামূলক চালু করার পর বিল পরিশোধের কথা। সেটাও মানা হয়নি। আইএমইডি বলছে, লিফট স্থাপন ছাড়া বিল প্রদান আর্থিক অনিয়মের শামিল। দুস্থ শিশুদের প্রকল্পে অগ্রাধিকার কর্মকর্তাদের: প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ৪০০ শিশুর নিরাপদ আবাসন। বাস্তবে শিশুদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে কর্মকর্তাদের আবাসন। প্রকল্পের আওতায় ৪০০ দুস্থ শিশুদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ডরমিটরি ভবন। অথচ তাদের দেখভালেরর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছয়তলা বিশিষ্ট তিনটি আবাসিক ভবন। এসব ভবনে রয়েছে দুই স্তরের ৬০টি ফ্ল্যাট। অথচ তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তুলনায় ৪১টি ফ্ল্যাট
বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলো কী কাজে ব্যবহার হবে, তার কোনো যৌক্তিক উত্তর নেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা বলছেন, সেখানে তাদের ৩৪ জন জনবল লাগবে, আছে মাত্র ১৯ জন। আরও ১৫ জন নিয়োগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বাড়ছে ব্যয়, গতি নেই কাজে: ২০১৯ সালে ৮১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেলেও সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ৯২ কোটি টাকায়। কাজ তো শেষ হয়নি, উল্টো মেয়াদ বাড়ছে একের পর এক। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য কোনো বরাদ্দই রাখা হয়নি। মার্চ পর্যন্ত এক টাকাও খরচ হয়নি। পরে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার শর্তে আরএডিপির বরাদ্দ আসে। জুন পেরিয়ে আগস্ট যায় যায় হলেও কাজ শেষ
করতে পারেনি ঠিকাদার। এ অবস্থায় নতুন করে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন কাজ শুরুই হয়নি: পরিদর্শনে কিছু ভবনের দরজার কাঠ বাঁকা ও ফাটল ধরা পড়েছে। তাৎক্ষণিক এটি ঠিকাদারকে মেরামতের নির্দেশ দিয়েছে আইএমইডি। এ ছাড়া সংশোধিত প্রকল্পে বহিরাগত বিদ্যুতায়ন কাজও শুরু হয়নি। প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার এই কাজের চুক্তি হলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে নতুন ভবনগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। আইএমইডির পরিদর্শন কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, ‘আমি গত বছরের জুনেও প্রকল্পটি ভিজিট করেছিলাম। তখন কাজের অবস্থা যেমন দেখেছিলাম, এবারও তাই দেখেছি। আমরা দ্রুত দুস্থ শিশুদের জরাজীর্ণ ভবন থেকে নতুন
ভবনে শিফট করার জন্য বলেছি।’ ঠিকাদারদের অভিযোগ, ভবন হস্তান্তরের পর অবশিষ্ট বিল প্রদানে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এতে নির্মিত ভবনগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে শিশুরা নতুন ভবনে উঠতে পারছে না। আলোচ্য প্রকল্পের পিডির দায়িত্বে রয়েছেন ২৪ বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি। তাকে প্রেষণে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হলেও চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পালন করেছেন। সে হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নে তার অভিজ্ঞতা অনেক। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন বেহালদশা কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি বলেন, ‘প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ঠিকাদারদের কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।’ লিফটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লিফট পাওয়ার আগে বিল পরিশোধ করা হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিল দেওয়া হয়েছে।’ শিশুরা কেন এখনো টিনশেডে থাকছে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য যে ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের সেখানে তোলা হয়নি।’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কেন অতিরিক্ত তিনটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে—এমন প্রশ্নে উম্মুল খায়ের সিদ্দিকি বলেন, ‘এই প্রশ্ন আমারও। এটির বিষয়ে আমি বলতে পারব না। কারণ, আমি তো ডিপিপি তৈরির সময় ছিলাম না। ডিপিপিতে যেভাবে ছিল সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।’ আইএমইডির সুপারিশ: প্রতিবেদনে আইএমইডি কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—লিফট স্থাপন ছাড়াই বিল প্রদান কেন হলো, তা খতিয়ে দেখা; ডরমিটরি ভবনে শিশুদের অবিলম্বে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া; বিদ্যুতায়ন কাজ দ্রুত শেষ করা; ত্রুটিপূর্ণ দরজা-জানালা ঠিকাদার দিয়ে পরিবর্তন করা এবং প্রকল্পের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করা। এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের অনিয়মগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আমাদের পর্যবেক্ষণের ওপর তারা কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা আমরা জানাতে বলেছি। তারপরই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।’