ইলন মাস্ক কেন ট্রাম্পের পেছনে এতো টাকা ঢালছেন? – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইলন মাস্ক কেন ট্রাম্পের পেছনে এতো টাকা ঢালছেন?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:০৫ 34 ভিউ
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। যিনি রাজনীতির একেবারে ভেতরে না ঢুকে পাশাপাশি থেকেছেন, তিনি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মাস্ক বলেন, শুধুমাত্র ট্রাম্পই আমেরিকার গণতন্ত্রকে ‘বাঁচাতে’ পারেন। ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলারে হত্যা প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে প্রথম সমর্থন দেওয়ার পর থেকে ইলন মাস্ক ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের একটি অংশ হয়ে উঠেছেন। অলাভজনক ট্র্যাকার প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন সিক্রেটস’ জানায়, মাস্কের ট্রাম্প-সমর্থিত রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি- আমেরিকা প্যাক ইতোমধ্যেই এই নির্বাচনের জন্য ১১৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে মাস্কের এ ব্যক্তিগত বিনিয়োগ

ভোটারদের কাছে লক্ষ্যণীয়; কারণ ভোটারদের প্রভাবিত করতে এত বেশি সময় আর অর্থ ব্যয়ের পেছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে বলেই মনে করেন তারা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার দান কার্যক্রমের ‘বৈধতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমেরিকার জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিতে, ৫৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তি রিপাবলিকানদের নির্বাচিত করতে চেষ্টা করছেন তার সময়, জ্ঞান আর যথেষ্ট বিনিয়োগের মাধ্যমে। যা দেশের অভিজাত ব্যবসায়ীদের মধ্যে এটা সত্যিই বিরল। কারণ তারা ঐতিহ্যগতভাবেই পিছনে থেকে রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পছন্দ করেন। এটি ঐতিহ্যবাহী বড় বড় ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব বা সিইওদের প্রচলিত আচরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে স্বভাবতই ইলন মাস্কের ব্যতিক্রমী হওয়ার পেছনে তার অনুপ্রেরণা বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা। মিশিগান ইউনিভার্সিটির রস স্কুল অব

বিজনেসের উদ্যোক্তা বিভাগের চেয়ারম্যান এরিক গর্ডন ব্যাখ্যা করেন, সিইওদের ঐতিহ্যগত কার্যক্রম ‘জনসাধারণের সম্মুখে হয় না’। কিন্তু ‘মাস্ক এটি বেশ জোরেশোরে, প্রকাশ্যে এবং গর্ব করে করেন, যা সম্ভবত নিজেকে আলোকিত করে তুলতেই করা’। উপরন্তু, মাস্কের নিজস্ব অবদান তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে বড় দাতাদের একজন করে তুলেছে। কথিত আছে যে সুইং স্টেটগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এই প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য ইলন মাস্কের একজন প্রধান লেফটেন্যান্ট স্টিভ ডেভিসকে নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি স্পেসএক্স, এক্স ও বোরিং কোম্পানিসহ মাস্কের অন্যান্য কোম্পানিগুলোর জন্যও কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ফোলসম শহরের কাছাকাছি একটি স্কুলে বক্তব্য দেন ইলন মাস্ক। সেই সময় খবর শুনছিলেন ২১

বছর বয়সি জ্যান্ডার মুন্ডি। একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের প্রতিনিধি মুন্ডি বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা নেই তার, তবে ইলন মাস্কের কথা শুনতে ভিড় হতে দেখে উত্তেজনা অনুভব করছেন মুন্ডি। তিনি বলেন, ইলন মাস্ক স্কুল থেকে ফেরার সময় কমলা হ্যারিসের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকেই বেশি ঝুঁকে গিয়েছিলেন। বিবিসিকে মুন্ডি বলেন, যদি এ রকম কেউ আপনাকে বলে যে এই নির্বাচনই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চলেছে, কেবল আগামী চার বছরের জন্য কে রাষ্ট্রপতি হবেন তা নয়, বরং বিশ্ব কেমন হতে চলেছে, আমি মনে করি- এটি একটি বিশাল ব্যাপার। এটা গুরুত্বপূর্ণ, খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচারাভিযানে মাস্কের ব্যক্তিগত বিনিয়োগ মুন্ডির কাছে লক্ষ্যনীয় মনে হয়েছে। তিনি বলেন, এটিই আমাকে

হতবাক করার মত ব্যাপার ছিল। কেউ ভোটারদের প্রভাবিত করতে এত বেশি সময় আর অর্থ ব্যয় করবে! তার মানে সে এটি কোনো বিশেষ কারণে করছে। পেনসিলভানিয়ার সিনেটর জন ফেটারম্যানের মত কিছু ডেমোক্র্যাট তাদের দলকে নির্বাচনের আগে মাস্কের তরফ থেকে আসা সম্ভাব্য ঝুঁকি উপেক্ষা না করতে অনুরোধ করেছেন। ফেটারম্যান বিশ্বাস করেন, ইলন মাস্ক এমন একটি জনসংখ্যার কাছে আবেদন তৈরি করেছেন, যারা তাকে ‘নিঃসন্দেহে প্রতিভাবান’ মনে করেন। যাদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবেই গণতান্ত্রিক প্রচার-প্রচেষ্টা চালানোটা কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রচারণার শেষ দিনগুলোতে, মাস্ক পেনসিলভানিয়া রাজ্যে বেশ সক্রিয় হয়েছেন, যেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস, উভয়ের জন্যই সমান মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমেরিকা প্যাক নির্বাচনের দিন

পর্যন্ত একজন ভোটারকে প্রতিদিন এক মিলিয়ন ডলার দান কার্যক্রম চালাচ্ছে, এই ভোটার যে দল সংশ্লিষ্টই হোক না কেন, যদি তারা ভোট দিতে এবং একটি পিটিশনে স্বাক্ষরের জন্য নিবন্ধিত হয়। এর অংশ হিসেবে হ্যারিসবার্গ ও পিটসবার্গের ‘টাউন হল’ আয়োজনে, ইলন মাস্ক বিজয়ীদের কাছে বিশাল লটারি স্টাইলের চেক উপস্থাপন করেন। সেখানে উৎসুক জনতা ‘ইলন’ স্লোগান দিচ্ছিল আর তাদের উদ্দেশ্যে মাস্ক বলেন যে, এ জনতার শক্তিই তার আত্মাকে প্রজ্বলিত করে। সম্প্রতি ফিলাডেলফিয়ায় এক সমাবেশে, কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ বলেন, আমাদের যারা জীবনের প্রয়োজন মেটাতে সংগ্রাম করছেন, তাদের সামনে ইলন মাস্ক এক মিলিয়ন ডলার ঝুলিয়ে লোভ দেখাচ্ছেন, যেন এই মানুষগুলো তার জন্য নাচেন। তিনি বলেন, ইলন মাস্ক মনে

করেন যে আমাদের নির্বাচনের আগে একজন কর্মজীবী ব্যক্তির সামনে এভাবে অর্থ ঝুলানো একটি মজার ব্যাপার, কারণ ধনীরা এসবই করেন। অবশ্য তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সেটা হতে পারে, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ইলন মাস্ক এবং তার ব্যবসা উপকৃত হবে। এই পর্যবেক্ষকদের একজন বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং প্ল্যাটফর্ম চার্জওয়ের সিইও ম্যাট টেস্ক। ম্যাট টেস্কের মতে, ইলন মাস্কের এমন রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারটা বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্প জগতে অনেকের জন্যই কঠিন। তবে রাজনীতিতে তার ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তার কারণে এটি মোটেও অবাক হওয়ার মত বিষয় নয়। টেস্ক বলেন, আমি মনে করি মাস্কের আগ্রহ মূলত তার ব্যবসার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গর্ডনও এতে একমত। তারমতে, ইলন মাস্ক নিজেকে এমন একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখেন, যাকে নিয়ন্ত্রক দ্বারা আটকে রাখা হয়েছে এবং তিনি মনে করেন যে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রযুক্তির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অধ্যাপক গর্ডন বলেন, তিনি সীমান্তে একজন বন্য আর অদম্য উদ্যোক্তা হতে চান যিনি নতুন পথে যেতে চান, এমন কোনো নিয়মের মধ্যে আটকা পড়তে চান না, যাতে প্রযুক্তির অগ্রগতি ৫, ১০, ২০ বছর পিছিয়ে যায়। অধ্যাপক গর্ডন বলেন, মাস্ক অন্যপথে যেতে চান, তিনি মঙ্গল গ্রহে যেতে চান। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি নভেম্বরে জয়ী হলে মার্কিন সরকারের ‘খরচ কমানো’র ব্যাপারটা তদারকি করতে পারেন ইলন মাস্ক। এমনকি যদি তিনি সেই দায়িত্ব পালন না করেন, তবুও ইলন মাস্কের সমর্থনের জন্য ট্রাম্প তার কথা শুনবেন এবং মাস্ক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারেন বলে পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন। ইলন মাস্ক বলেছেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ‘শ্বাসরোধ’ করা ঠেকাতে একটি ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ করা হলে সেটার নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী থাকবেন। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য বলছেন, স্পেসএক্স ও টেসলার জন্য মাস্কের বিলিয়ন, বিলিয়ন সরকারি চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে মাস্কের এমন অবস্থান স্বার্থের জটিল দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক উপদেষ্টা লেনি মেন্ডনকা বলেছেন, এটি একইসঙ্গে গভীরভাবে অনৈতিক এবং অবৈধ। তিনি বিশ্বাস করেন যে, যারা এভাবে সরকার এবং নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্কিত, তারা ‘কথা বলতে পারে’ কিন্তু স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্তৃত্বের অবস্থানে তাদের থাকা উচিত নয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইলন মাস্কের দান কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের একজন সাবেক জেনারেল কাউন্সেল লরেন্স নোবেল। তার বিশ্বাস, এই ধরনের প্রচারণায় সেই আমেরিকানদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, যারা নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং ভোক্তা সুরক্ষাকে গুরুত্ব দেয়। লরেন্স নোবেল বিবিসিকে বলেন, আমরা জানি কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ডিভাইসের মাধ্যমে কি করে। তারা তাদের মুনাফা, স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের লাভ আর সিইও ক্ষতিপূরণকে নিরাপদ রাখে এবং ব্যবসা করার খরচ হিসেবে নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ব্যবসাকে এভাবে দেখে, সরকারকে এভাবে দেখে, তাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখাটা বিপজ্জনক। তবে ইলন মাস্কের জন্য– যিনি একজন ‘বিঘ্ন সৃষ্টিকারী’ হতে পছন্দ করেন- নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার লাভজনক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ঘরে ফিরে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হামজা মার্কেট এলাকায় যানজট কমাতে ডিএমপির নির্দেশনা মাইক্রোবাস চাপায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু, প্রতিবাদে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ২০ গণঅভ্যুত্থানে হামলায় অভিযুক্ত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার সংস্কার কমিশনের ৯ সুপারিশে আপত্তি নির্বাচন কমিশনের ফিল্মফেয়ার সব সময় আমাকে বিশেষ অনুভূতি দিয়েছে: জয়া রাজধানীতে বৃষ্টিতে স্বস্তি, বৃহস্পতিবার থেকে ফের তাপপ্রবাহ সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে প্রেম করায় তাজকীরকে হত্যা করেন অভি: পুলিশ কাজে ফিরেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা, একক যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু থানার লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রির অভিযোগ, হেফাজতে কনস্টেবল কেউ ৩৫, কেউ ১৫ বছর ধরে করছে ছিনতাই-ডাকাতি বিদেশি লিগে খেলতে দেওয়ার পক্ষে শান্ত ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া দুই নভোচারী বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সাক্ষাৎকার সীমান্তে বিজিবির বাধায় ফিরে গেল বিএসএফ ইউজিসিতে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি! জুলাই-আগস্টে ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলা, ১২৮ জন বহিষ্কার ইরানকে পাশ কাটিয়ে চলা কি সম্ভব? নিয়োগে সুপারিশ, নাহিদ ও নুসরাতকে নিয়ে মুখ খুললেন মাসুদ লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরীতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা