ইউক্রেন হওয়ার পথে বাংলাদেশ, আতঙ্কিত জনগণ – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
     ৯:২০ অপরাহ্ণ

ইউক্রেন হওয়ার পথে বাংলাদেশ, আতঙ্কিত জনগণ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৯:২০ 11 ভিউ
রাজধানী ঢাকায় একটি সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রভাবশালী নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্য চারদিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—যাকে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়—কে ‘ভারত থেকে আলাদা’ বা ‘বিচ্ছিন্ন’ করার হুমকি দিয়েছেন। এই বক্তব্যে তিনি আরও বলেছেন, যদি ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তাহলে বাংলাদেশ ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় দিতে পারে এবং সেভেন সিস্টার্সকে মূল ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। এই হুমকি দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং অনেকে আশঙ্কা করছেন যে এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল—সর্বত্রই চলছে ‘বাংলাদেশ কি ইউক্রেনের

পথে?’ এমন প্রশ্ন। ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি প্রতিবাদী সমাবেশে। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সেখানে বক্তব্য দেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জবাবে তিনি বলেন, “যদি বাংলাদেশকে অস্থির করা হয়, তাহলে প্রতিরোধের আগুন সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে। আপনারা যেমন আমাদের অস্থির করার লোকদের আশ্রয় দিচ্ছেন, আমরাও সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেব এবং সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেব।” এই বক্তব্য সমাবেশে উপস্থিত অনেকের করতালিতে স্বাগত জানানো হয়, কিন্তু এটি ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এসেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত

বিশ্ব শর্মা এই বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিপজ্জনক’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এমন হুমকি ভারত চুপচাপ মেনে নেবে না। এছাড়া, ভারত সরকার বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলব করে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এই বক্তব্যকে ‘অবান্তর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং স্পষ্ট করেছেন যে, এটি সরকারের অবস্থান নয়। তবু, এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। দেশের সচেতন মহল এবং বিশ্লেষকরা জনগণকে এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের ফাঁদে না পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিয়ে আবেগপ্রবণ বক্তৃতা দেওয়া সহজ, কিন্তু বাস্তবতা অনেক

নির্মম। বাংলাদেশের ভূগোল এমন যে, ভারত চারদিক থেকে ঘিরে আছে। ট্রানজিট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, নদীর পানি, বাণিজ্য—সবকিছুতেই ভারতের সঙ্গে গভীর নির্ভরশীলতা রয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে, একটি শক্তিশালী প্রতিবেশীকে চ্যালেঞ্জ করে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটে পড়ার ঝুঁকি কতটা। একটি সহজ প্রশ্নই সবকিছু পরিষ্কার করে: যদি ভারত হঠাৎ ট্রানজিট বন্ধ করে, বিদ্যুৎ সরবরাহ কমায় বা আকাশপথে বাধা দেয়, বাংলাদেশ কতদিন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে? অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত বাংলাদেশের জন্য একটি অবকাঠামোগত লাইফলাইন। ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়ে, ট্রানজিট ব্যাহত হলে রপ্তানি খরচ বেড়ে যায়, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা-শিক্ষা নির্ভর করে ভারতের ওপর। বিপরীতে, বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটি

বড় বাজার। নিরাপত্তার দিক থেকেও সহযোগিতা অপরিহার্য—সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, রোহিঙ্গা সংকট সবকিছুতে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলগত অংশীদার; তাকে বিরোধিতা করলে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা হলো সামরিক শক্তির বিশাল পার্থক্য। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স ২০২৫-এ ভারত বিশ্বের ৪র্থ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী (নিউক্লিয়ার অস্ত্রসম্পন্ন মহাশক্তি), যেখানে বাংলাদেশ ৩৫তম স্থানে। সক্রিয় সৈন্য: ভারত প্রায় ১.৪৫ মিলিয়ন; বাংলাদেশ প্রায় ১.৬৩ লক্ষ (ভারতের প্রায় ৯ গুণ বেশি)। প্রতিরক্ষা বাজেট: ভারত ৭৫-৮১ বিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশ প্রায় ৪ বিলিয়ন (ভারতের ২০ গুণের বেশি)। স্থলবাহিনী: ভারতে হাজারো আধুনিক ট্যাঙ্ক (T-90, Arjun); বাংলাদেশে মাত্র ৩০০+। বিমানবাহিনী: ভারতে ২,০০০+ যুদ্ধবিমান (Rafale, Su-30); বাংলাদেশে মাত্র ৪০টি ফাইটার। নৌবাহিনী: ভারতে

২টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও নিউক্লিয়ার সাবমেরিন; বাংলাদেশে ২টি সাবমেরিন, কোনো ক্যারিয়ার নেই। ভারত একটি ব্লু-ওয়াটার নেভি এবং আঞ্চলিক মহাশক্তি, যেখানে বাংলাদেশের সামরিক শক্তি মূলত প্রতিরক্ষামূলক এবং উপকূলীয়। এই বাস্তবতায় আবেগপ্রবণ হুমকি-ধমকি শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জ্বালানি হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা আত্মসমর্পণ নয়—বরং স্বার্থ রক্ষার জন্য সেতু বজায় রাখা। ভূগোল বদলানো যায় না, কিন্তু তাকে বুদ্ধিমত্তা, ক্যালকুলেশন এবং সংযম দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। এনসিপির মতো দলের এমন বক্তব্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য হতে পারে, কিন্তু জনগণের উচিত বাস্তবতা মেনে সচেতন থাকা। যুদ্ধের আশঙ্কা করে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে কৌশলগত কূটনীতি এবং ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে দাঁড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। এই

উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে মিটে যাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কারণ দুই দেশেরই স্থিতিশীলতা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
অবৈধ দখলদার সরকারের শাসনে জনরোষ, ঘরে ঘরে অসন্তোষ জামাতি ষড়যন্ত্রে নির্বাচন অনিশ্চিত, দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষমতায় থাকছেন ডঃ ইউনুস! ইউক্রেন হওয়ার পথে বাংলাদেশ, আতঙ্কিত জনগণ ড. ইউনুসের কূটনীতি সেভেন সিস্টার্সের জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১—অস্ত্রহীন এক ভারতীয় সেনা আর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী উদ্ধার ধর্মান্ধতার নৃশংস উন্মাদনা—ভালুকায় হিন্দু শ্রমিককে হত্যা করে মরদেহে আগুন আইন-শৃঙ্খলা সংকটে বাংলাদেশ,হাদীর মৃত্যুর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার বিজয় দিবসে ফুল দেওয়াই অপরাধ—এই রাষ্ট্র এখন কার দখলে? লুটপাটের মহোৎসবে ঢাকার পানি প্রকল্প বিজয় দিবসের ডিসপ্লেতে একাত্তরের সত্য—সহ্য করতে না পেরে শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল জামায়াত–শিবির বাংলাদেশের গর্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক ছায়ানট— অ/গ্নি/সন্ত্রা/সে ভস্মীভূত প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়, ধ্বং/স/স্তূপে পরিণত সংবাদকেন্দ্র সংবাদমাধ্যমে স/ন্ত্রা/স: উ/গ্র/বাদী/দের হামলায় স্তব্ধ “প্রথম আলো” ও “ডেইলি স্টার” ছাপা ও অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ। গণমাধ্যমে হামলাকারীদের ‘বি/চ্ছি/ন্নতাবাদী উগ্রগোষ্ঠী’ বলে আখ্যায়িত করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে জামাতময় বিজয় উৎসব! তারেকের দেশে ফেরার আগে লন্ডনে জামায়াত আমির: সমঝোতা নাকি গোপন ষড়যন্ত্রের ছক? ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ধ্বংসের মুখে, ইউনূস শাসনে অর্থনীতি ধ্বস! শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইসিটির রায় ‘আইনগতভাবে অবৈধ’: মোহাম্মদ আলী আরাফাত একজন বিদেশি বীরপ্রতীকের গল্প Bangladesh’s Export Downturn: Four Months of Decline