‘আমি হিন্দু, শিবির নই’ বলার পরও ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে পুলিশ – ইউ এস বাংলা নিউজ




‘আমি হিন্দু, শিবির নই’ বলার পরও ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে পুলিশ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ মার্চ, ২০২৫ | ৫:৪৭ 4 ভিউ
এক দশক আগে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নয়ন বাছারের পায়ে গুলি করার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুবের আদালতে গতকাল মঙ্গলবার মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখেন। পরে আজ বুধবার মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য সূত্রাপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার আসামিরা হলেন, সূত্রাপুর থানা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. আমানুল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. এরশাদ হোসেন এবং কনস্টেবল কামাল হোসেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী নয়ন বাছার বাগেরহাট জেলার

মোড়লগঞ্জ থানার গোবিন্দপুর গ্রামের প্রভাষ বাছারের ছেলে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়ার সময় ছাত্রদলের কর্মী হলেও পরবর্তীতে লাভ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদকের পদ। নয়নের করা এ মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে ডাকা অবরোধের সমর্থনে মিছিলে যোগ দিতে রওনা হন নয়ন বাছার। পথিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা থেকে এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ৪০-৪৫ জন নয়নকে ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তর পাশে ধরে আনে। তখন শাখারীবাজার মোড়ে কে বা কারা সুপ্রভাত পরিবহনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর জের ধরে আসামি সূত্রাপুর থানার সাবেক উপপরিদর্শক মো. আমানুল্লাহ নয়নের নিকট

পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে যে, ‘তোর পরিবার হতে এখনই টাকা এনে দে। তা- নাহলে তোকে গুলি করে মেরে ফেলব।’ বাদী চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসআই রফিকুল ও আসামি এসআই এরশাদ হোসেন বাদীকে ধরে রাখে এবং আসামি এসআই আমানুল্লাহ মুঠোফোনে কারো সাথে কথা বলে। প্রায় ৪-৫ মিনিট পরে আসামি এসআই আমানুল্লাহ আসামি কনস্টেবল কামালকে হুকুম করে যে, ওর (নয়ন) হাতে হ্যান্ডকাপ লাগাও। তখন আসামি কামাল বাদীর হাত পিছনে নিয়ে বাদীর হাতে হ্যান্ডকাপ লাগায়। তখন এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদ বলে যে, ‘তুই শিবির, তুই গাড়িতে আগুন দিয়েছিস।’ তখন বাদী বলে ‘আমি হিন্দু, আমি শিবির না।’ এ কথা বলার

সাথে সাথে এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদের নির্দেশে কনস্টেবল কামাল হোসেন ভুক্তভোগী নয়নকে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং বাম পায়ের হাঁটুর উপরের অংশে দুই রাউন্ড গুলি করে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নয়নকে গাড়িতে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে মামলার আসামি চার পুলিশ সদস্য। পরবর্তীতে মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত হলে তারা গুলিবিদ্ধ নয়নকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মামলার এজাহারে বাদী আরও অভিযোগ করেন, গুলি করার পর হাসপাতালে নিয়ে এসআই রফিকুল ও এরশাদ নয়নকে বলেন যে, "তুই আগুন সন্ত্রাস করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিস এই মর্মে বিবৃতি দে। নইলে চিকিৎসাহীনভাবে মারা যাবি।’ পরবর্তীতে গুলি করার একদিন পর বাদীকে ঢাকার পঙ্গু

হাসপাতালে ভর্তি করে এবং বাদীকে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় ওই বছরের ১৭ মে জামিন পান ভুক্তভোগী বাদী। এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, এ মামলার আসামি এসআই আমানুল্লাহ, রফিকুল ও এরশাদ নয়নকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে বলেন যে, এ বিষয়ে যদি কোনো মামলা করিস, তাহলে তোকে জানে মেরে ফেলবো। পরবর্তীতে বাদী উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত যান এবং দীর্ঘদিন পরে দেশে ফিরে এসে পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এখনও ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১৪৩/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩৬৪/৩০৭/৩৮৫/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করে মামলার বাদী নয়ন বাছার বলেন, এক দশক আগে তিন পুলিশ

সদস্য আমাকে বেআইনিভাবে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। এখনও পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করছি। আমার পায়ে আরও একাধিক অপারেশন করা লাগবে। সেদিন পুলিশ গুলি করার পর সূত্রাপুর থানায় তিনটি মামলা করা হয়। এসময় আমার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমার পাশে ছিলেন। যারা আমার জীবনকে শেষ করে দিয়েছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ সাজা চাই। তিনি আরও বলেন, গুলি করার পর আমাকে প্রায় আধাঘণ্টা পুলিশের গাড়িতে আটকে রাখে। ওসময় রক্তে রাস্তা ভেসে যায়। তখন তারা আমাকে পুরান ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে ডাক্তারদের সরিয়ে বন্দুক ঠেকিয়ে আমার নিকট থেকে ভিডিও করে জবানবন্দি নেওয়ার

চেষ্টা করে যে, আমি শিবিরকর্মী এবং আমি আন্দোলনে অংশ করি নাই। তবে আমি বলি যে, আমি শিবিরকর্মী নই, আমি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আদর্শিক কর্মী। সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান রুমি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভোটচোর অবৈধ সরকার পতনের দাবিতে অবরোধ চলছিল। তখন পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার মোড়ে নয়নসহ আমরা কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগ অতর্কিতভাবে হামলা করে। তখন আমার সহযোদ্ধা নয়ন বাছারকে ধরে ফেলে এবং পায়ে শর্টগান ঠেকিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে। সেসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলামসহ আমরা নয়নের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম। সেদিনের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলে শরীর শিউরে ওঠে। আমরা পুলিশের পোশাকধারী সেসব আওয়ামী নরপিশাচদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। তিনি আরও বলেন, সেসময় আন্দোলন চালাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকে নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র চলছিল। আমাদের কাছে এরকম তথ্য ছিল যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কাউকে ধরতে পারলে গুলি করে মেরে ফেলবে। নয়নের আইনজীবী এম এ মজিদ মানিক বলেন, আমরা নয়নকে গুলি করার ঘটনায় আদালতে মামলার আবেদন করি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। আমরা ন্যায়বিচারের ব্যাপারী আশাবাদী।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই ‘গাজা থেকে কাউকে উৎখাত করা হচ্ছে না’ – প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বগুড়ায় ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধু নিহত ৫০ দিনে যেভাবে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিলেন ট্রাম্প রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দিতে বাংলাদেশের প্রতি ফোর্টিফাই রাইটসের আহ্বান জল্লাদের ভূমিকায় ‘অ্যাকশন গ্রুপ’ কারসাজি ও লুণ্ঠনকারীদের রক্ষা করতেই হামলা ‘শাহবাগ কোর্টের’ রায়কে ভুয়া বলেছিল ব্রিটিশ সুপ্রিমকোর্ট চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার, চলবে ক্লাস বর্জন যৌন নির্যাতনে বেশি জড়িত আপন ও পরিচিতজনরা নানকের অন্যতম সহযোগীকে ধরার পর ছিনিয়ে নিলো দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশিদের ওমরাহ্‌ ভিসা কমালো সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ ‘আমি হিন্দু, শিবির নই’ বলার পরও ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে পুলিশ মোবাইলে জাকাত পাঠালে খরচ কার দিতে হবে? চারবার হার্টবিট বন্ধ হয়েছে নির্যাতিত শিশুটির, অবস্থা সংকটাপন্ন জার্মানির ভিসার অপেক্ষায় দেশের ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রোজার ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা আরও তিন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক দাম্পত্য যেমন সন্তান কি তেমন?