ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
আমাদের পাকঘরে উঁকি মারবেন না: ভারতকে ডা. শফিকুর রহমান
‘আওয়ামী লীগ দালাল না, ভারতেরই সরকার ছিল’
সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপি
খুলনায় ‘অনুকূল’ পরিবেশে দল গোছাচ্ছে জামায়াত
বিএনপির একঝাঁক তরুণের হাতে পূর্বসূরির ঝাণ্ডা
সিলেটে আদালতে তোলার সময় আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর
অস্বস্তি কাটলেও আশ্বস্ত নয় অনেক রাজনৈতিক দল
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন, একে স্বাগত জানিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তায় যে অস্বস্তি ছিল তা কাটলেও ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে আশ্বস্ত নয় একাধিক দল। বিএনপির চাওয়া, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ।
সংস্কারে জোর দেওয়া জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও বলছে, নির্বাচন নিরপেক্ষ করার যতটুকু সময় প্রয়োজন, ততটুকুই সময় নেওয়া উচিত। উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচন দিনক্ষণ ঘোষণা ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক হবে।
দলগুলোর সূত্র বলছে, সংস্কার এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট ধাপগুলো কবে কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে, এমন স্পষ্ট পথনকশা ঘোষণা না পর্যন্ত আশ্বস্ত হওয়ার উপায় নেই। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না
হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচনে জোর না দেওয়ায় এ আশঙ্কা বাড়ছে। তাদের গঠিত রাজনৈতিক দল ভোটের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। সরকারের সমর্থক আরও একটি শক্তিও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে নয় বলে ধারণা বিএনপি এবং দল সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস জানান, সংস্কার সাপেক্ষে আগামী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বার বার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি, আবার বলছি ‘যদি’ অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। আগের দিনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক
রহমান বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। রোডম্যাপের কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, তা অবশ্যই গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী। এ বক্তব্যের ১৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের
পর জনগণের চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। তাই অতি দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ধারণা দিয়েছেন, তা সাধুবাদ জানানোর মতো। এতে অনিশ্চয়তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটেছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াত সংস্কারে জোর দিচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতির প্রত্যাশা ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে এ ঘোষণা নির্বাচনের দিকে যাত্রার আলামত। অন্তর্বর্তী সরকারকে যাত্রাপথে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তা না
হলে হয়তো আগেই রোডম্যাপ দিতে পারত। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা মতো জামায়াত ‘অল্প নাকি প্রত্যাশিত’ সংস্কার চায়– প্রশ্নে গোলাম পরওয়ার বলেছেন, কিছু বিলম্ব জাতি মেনে নেবে, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়। সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। প্রত্যাশিত সংস্কারের ব্যাখ্যা আলাদা। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়েছে। তা ঠিক করার দায়িত্ব নিলে সরকারকে লম্বা সময় দিতে হবে। তাই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার এই সরকার করুক। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিলেও, তারা পারবে না। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে পথনির্দেশিকা আখ্যা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই অর্থে ভালো। সংস্কারের কাজের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সময় নির্ধারণ করছেন,
তা ইতিবাচক। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্যের জন্য যে কমিটি গঠনের কথা বলছেন, তা ভালো ধারণা। কথাবার্তা বলবেন। কিন্তু কতদিন সময় লাগবে, কে জানে। আলোচনায় সময় নির্ধারিত হবে। নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত কিনা– প্রশ্নে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আশ্বস্ত হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। প্রধান উপদেষ্টা যা বলছেন তা কী করতে পারবেন? কতটুকু করতে পারবেন? চার মাসে সরকার যে খুব দক্ষতা দেখিয়েছে, তা তো নয়। একই অভিমত এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ইতিবাচক। কিন্তু সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দিনক্ষণ রক্ষা কঠিন হবে। চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন অবশ্য ভোটের চেয়ে সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটির মহাসচিব ইউনূস আহমাদ বলেন, সরকার চেষ্টা করলে এক বছরের মধ্যে সংস্কার সম্ভব। অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে বলছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এতে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের সংস্কারসহ অন্য যে কাজগুলো আছে, তা আরও ভালোভাবে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্নের চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী দেড় বছরের মধ্যে সংস্কারের স্থায়িত্বসহ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করতে নতুন উদ্যম এবং তাগিদ সামনে চলে এসেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে থাকা সাধারণ মানুষও এ ঘোষণার ফলে একটি ধারণা পেল। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়ায় বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া খুব বেশি সময় না থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতেও শক্তভাবে হাত দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সবই মানুষের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং টেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের প্রয়োজন। ব্যবসায়ী সমাজের কাছে ব্যবসা-বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশও জরুরি। এ জন্য পূর্ণ মেয়াদের নির্বাচিত সরকারই শেষ কথা। এ দিক থেকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ব্যবসায়ীরা মোটামুটি আশ্বস্ত। নির্বাচিত সরকার এলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে মনোযোগী হবেন। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ-এফডিআইয়ের ক্ষেত্রেও এবার বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রমের ফলে ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা ভাবতে শুরু করবেন অনেক উদ্যোক্তা।
হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচনে জোর না দেওয়ায় এ আশঙ্কা বাড়ছে। তাদের গঠিত রাজনৈতিক দল ভোটের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। সরকারের সমর্থক আরও একটি শক্তিও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে নয় বলে ধারণা বিএনপি এবং দল সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস জানান, সংস্কার সাপেক্ষে আগামী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বার বার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি, আবার বলছি ‘যদি’ অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। আগের দিনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক
রহমান বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। রোডম্যাপের কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, তা অবশ্যই গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী। এ বক্তব্যের ১৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের
পর জনগণের চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। তাই অতি দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উপহার দিতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ধারণা দিয়েছেন, তা সাধুবাদ জানানোর মতো। এতে অনিশ্চয়তার কিছুটা হলেও অবসান ঘটেছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াত সংস্কারে জোর দিচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতির প্রত্যাশা ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে এ ঘোষণা নির্বাচনের দিকে যাত্রার আলামত। অন্তর্বর্তী সরকারকে যাত্রাপথে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তা না
হলে হয়তো আগেই রোডম্যাপ দিতে পারত। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা মতো জামায়াত ‘অল্প নাকি প্রত্যাশিত’ সংস্কার চায়– প্রশ্নে গোলাম পরওয়ার বলেছেন, কিছু বিলম্ব জাতি মেনে নেবে, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়। সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। প্রত্যাশিত সংস্কারের ব্যাখ্যা আলাদা। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়েছে। তা ঠিক করার দায়িত্ব নিলে সরকারকে লম্বা সময় দিতে হবে। তাই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার এই সরকার করুক। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিলেও, তারা পারবে না। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে পথনির্দেশিকা আখ্যা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই অর্থে ভালো। সংস্কারের কাজের জন্য প্রধান উপদেষ্টা সময় নির্ধারণ করছেন,
তা ইতিবাচক। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্যের জন্য যে কমিটি গঠনের কথা বলছেন, তা ভালো ধারণা। কথাবার্তা বলবেন। কিন্তু কতদিন সময় লাগবে, কে জানে। আলোচনায় সময় নির্ধারিত হবে। নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত কিনা– প্রশ্নে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আশ্বস্ত হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। প্রধান উপদেষ্টা যা বলছেন তা কী করতে পারবেন? কতটুকু করতে পারবেন? চার মাসে সরকার যে খুব দক্ষতা দেখিয়েছে, তা তো নয়। একই অভিমত এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ইতিবাচক। কিন্তু সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দিনক্ষণ রক্ষা কঠিন হবে। চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন অবশ্য ভোটের চেয়ে সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটির মহাসচিব ইউনূস আহমাদ বলেন, সরকার চেষ্টা করলে এক বছরের মধ্যে সংস্কার সম্ভব। অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে বলছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এতে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের সংস্কারসহ অন্য যে কাজগুলো আছে, তা আরও ভালোভাবে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্নের চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী দেড় বছরের মধ্যে সংস্কারের স্থায়িত্বসহ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করতে নতুন উদ্যম এবং তাগিদ সামনে চলে এসেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে থাকা সাধারণ মানুষও এ ঘোষণার ফলে একটি ধারণা পেল। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়ায় বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া খুব বেশি সময় না থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতেও শক্তভাবে হাত দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সবই মানুষের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে। নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং টেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের প্রয়োজন। ব্যবসায়ী সমাজের কাছে ব্যবসা-বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশও জরুরি। এ জন্য পূর্ণ মেয়াদের নির্বাচিত সরকারই শেষ কথা। এ দিক থেকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ব্যবসায়ীরা মোটামুটি আশ্বস্ত। নির্বাচিত সরকার এলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে মনোযোগী হবেন। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ-এফডিআইয়ের ক্ষেত্রেও এবার বড় ধরনের উল্লম্ফন হতে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রমের ফলে ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা ভাবতে শুরু করবেন অনেক উদ্যোক্তা।