ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে নীতিমালা
২১ দিনে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কারকুমা’ ফাংশনাল ফুড
খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ
উদ্বৃত্ত ধানের এলাকা রংপুরে চালের দামে নাভিশ্বাস
অর্থনীতিতে অশনিসংকেত, প্রবৃদ্ধি নামবে ৩.৮ শতাংশে
দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে আবারও চট্টগ্রাম আসছে সেই পাকিস্তানি জাহাজ
অর্থনীতি চাঙ্গায় ইতিবাচক উদ্যোগ
স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশে নানামুখী জটিলতায় পড়েছেন আওয়ামী অনুসারী ব্যবসায়ীরা। সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের কারণে বেক্সিমকো, এস আলম, নাসা গ্রুপ, গাজী গ্রুপসহ অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ বিপাকে পড়েছে। এস আলমের ভোজ্যতেল ও চিনি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। এতে লাখ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসে এখনো সম্ভব হয়নি কর্মসংস্থান বাড়ানো। ব্যবসা-বাণিজ্য এক রকম অচল। বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তাদেরও ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা নেমেছে। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। মুদি দোকান-ফুটপাথে বেচাকেনা নেই। ব্যবসা না থাকায় মানুষের মধ্যে অর্থের প্রবাহও নেই। অনেকেই আবার সব কিছু বন্ধ করে
বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এখনো দেশে নতুন বিনিয়োগকারী আসেনি। ব্যবসায়ীদের এলসি নেই বললেই চলে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এলসি জটিলতা নেই বা ডলার সঙ্কট নেই বলে জানিয়েছে। তারপরও বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বর্তমান এই দুরবস্থার প্রভাব আগামী দুই-তিন মাস পর দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। এতে কারখানার যেমন-কাঁচামাল সঙ্কট দেখা দেবে, তেমনি এর সংকটে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে মালিকরা। সরকারের পতনের পর বেতন দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের অচলাবস্থা নেমেছে। দেশের অন্যতম বড় এই শিল্প গ্রুপ
তাই সরকারের কাছে গ্রুপ বাঁচাতে তিন প্রস্তাব দিয়েছে। বেক্সিমকোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রোফাইলিং তৈরি-বিষয়ক কমিটি’ কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান ও তাদের রফতানি আয় এবং বকেয়া ব্যাংক ঋণ আদায়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটিকে চালু রাখতে ‘ঋণসুবিধা’ দেয়ার সুপারিশ করেছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে কারখানা চালু রাখা অপরিহার্য। কারখানা বা ব্যবসা বন্ধ হওয়া মানে আরো বেশি বেকারত্ব সৃষ্টি, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যা বেশ উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে এতদিন যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ছিল সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ব্যক্তির অপকর্মের কারণে বর্তমানে বিপর্যস্ত। গত ১৬ বছরে এসব ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা
সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু এসব ব্যক্তির কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিপাকে পড়েছে। এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিতে আরো ঘনঘটা দেখছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। অথচ এ প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান পর্যায়ে আসতে লেগেছে ৩০ থেকে ৫০ বছর। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় এবং ব্যবসায়ীরা ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের উপর না ফেলার আহ্বান জানালেও বাস্তবে ভিন্ন। গত ৩০-৫০ বছর ধরে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অনেকটা বন্ধের পথে। অথচ ওই সব ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল না রাখলে আগামী দিনে এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এসব প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে এলসি করতে না পারে, আগামী
কয়েক মাস কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে কারখানা ও শিল্পের উৎপাদন। প্রশাসক বসিয়েও লাভ হবে না। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বসে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের অর্থপাচার, অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে অবশ্যই বর্তমান সরকারের দরকার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। অন্যথায় হাসিনা সরকারের চলা গভীর ষড়যন্ত্র দেশকে আবারো বিপাকে ফেলবে। আর তাই এই সরকারের সাফল্যের জন্য দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সব প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। রফতানির জন্য বায়ারদের কিভাবে দেশে আনা যায় সে জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের মতে, রাষ্ট্র কখনো
ব্যবসা করে না। করবে না। রাষ্ট্র শুধু বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করে দেবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, এস আলম প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে, যার বেশির ভাগ অর্থ হয়তো আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তবে তিনি গ্রুপের কারখানাগুলো চালু রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ এর সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এটি কীভাবে করা যায় তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. মইনুল ইসলাম বলেন, একটি সমাধান হতে পারে একজন রিসিভার নিয়োগ দিয়ে ব্যবসার কার্যক্রম চালু রাখা, যেমনটি বেক্সিমকো গ্রুপের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। তবে রিসিভার নিয়োগ হলেই
প্রতিষ্ঠানগুলো সুস্থ হয়ে যাবে কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না উল্লেখ করেন ড. মইনুল। আর্থিক খাতের এক বিশ্লেষক উদাহরণ দিয়ে বলেন, হুয়াওয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু তিন বছর জেলে ছিলেন। ২০১৮ সালে গ্রেফতারের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু এ কারণে প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম এক মিনিটের জন্য বন্ধ থাকেনি। আইন অনুযায়ী মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানও চলেছে স্বাভাবিক নিয়মে। এভাবে স্যামসাং ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখনো আগের মতোই স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার গতি আরো বেড়েছে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচাম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে যাদের ব্যাপারে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াতে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের যাতে ক্ষতি না হয় সেটি দেখতে হবে। তাদের প্রতিষ্ঠানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান আছে। কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বজায় রাখতে হবে। সূত্র মতে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগিতায় অর্থ পাচার, অনিয়ম-লুটপাটের রাজত্ব করে দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী গ্রুপে পরিণত হয় এস আলম গ্রুপ। অথচ পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন ব্যাংক কঠোর অবস্থান নেয়ায় এক সময়ের প্রভাবশালী কিন্তু বর্তমানে বিতর্কিত চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এখন তাদের কারখানাগুলো সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের এক সময়ের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ অতীতে আটটি ব্যাংকের ওপর প্রভাব রেখেছিলেন। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি প্রায় দুই ডজন কোম্পানির মালিক, যার মোট সম্পদের মূল্য আনুমানিক দেড় লাখ কোটি টাকা। গ্রুপটি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য কারখানা পরিচালনা করে। ব্যাংকিং খাতের এবং এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এখন ব্যাংকগুলো এস আলম গ্রুপের সঙ্গে নতুন ব্যবসায় জড়াতে আগ্রহী নয়। আর যেসব ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে রাজি হচ্ছে, সেগুলোও গ্রুপটির কুখ্যাতির কারণে শতভাগ মার্জিন দাবি করছে। গত ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার বিদায় নেয়ার পর থেকে মাসুদ এবং তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে গেছেন অথবা দেশত্যাগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের সমস্যা আরো গভীর হয়েছে। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে এস আলম গ্রুপ ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানা বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মীকেও ছাঁটাই করা হয়েছে। কোম্পানিটি তাদের পূর্বের উৎপাদনশীলতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে। এস আলম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার আশীষ কুমার নাথ জানিয়েছেন, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার নামক দুটি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য কারখানাও একই ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্গে আমরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলোও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এস আলম গ্রুপের এইচআর ও অ্যাডমিন ম্যানেজার এম হোসেন রানা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং ও বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও, গ্রুপের ১২টি আমদানি-নির্ভর কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন, যারা আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছেন। এদিকে বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষ থেকে বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে তিন প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গ্রুপ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। তাতে তিনটি প্রস্তাব করা হয়। প্রথম প্রস্তাবে বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকে থাকা ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে রাখার অনুরোধ জানায়। সেই সঙ্গে দায় পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় ও ঋণ পরিশোধে দুই বছরের ছাড় চেয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের অক্টোবর মাসের বেতন দিতে গত মঙ্গলবারের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল তারা। পাশাপাশি আরো ৭০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা চায় গ্রুপটি। এ জন্য বেক্সিমকো কারখানা কর্তৃপক্ষ নতুন করে ৬৮৩ কোটি টাকার সম্পত্তি (জমি ও শেয়ার) বন্ধক রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বেক্সিমকোর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থের সংস্থান, গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংস্থানের জোগান ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে বেসরকারিভাবে অর্থের জোগান নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় প্রস্তাবে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানি বন্ধ করতে হলে ২৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এতে শ্রমিকের পাওনা ৫৫৯ কোটি টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে কোম্পানি বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই। পাশাপাশি বেক্সিমকো এ-ও জানিয়েছে, তাদের গ্রুপে ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। তাই তারা কারখানা বিক্রি বা বন্ধ করার পক্ষে না। অপরদিকে বেক্সিমকোর প্রস্তাবের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরও তাদের সুপারিশ জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছেÑ জনতা ব্যাংকের দেয়া ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে কোম্পানি চালু রেখে বেক্সিমকোর ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়। বেক্সিমকোর প্রায় ৬৮৩ কোটি টাকা বাজার মূল্যের সম্পত্তি বন্ধক রাখার প্রস্তাবের বিপরীতে কোম্পানিকে ৬০০ কোটি টাকা ফান্ডেড ও ৪০০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড নতুন রফতানি ঋণ দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে কমিটি। এই ঋণ দেয়া হলে নতুন রফতানি করা ঋণ সুবিধার ৬০০ কোটি টাকা থেকে শুধু শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন ও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় হিসেবে নির্বাহ করার শর্ত দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানিটি চালু থাকা অবস্থায় প্রাপ্ত মুনাফা থেকে জনতা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ আগের ঋণের দায় পরিশোধ করা যেতে পারে। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব অনেক। এই সরকারকেই ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্যক্তির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বিপাকে আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারকে বসতে হবে, কথা বলতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই যাতে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে না যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে অর্থনীতির প্রাণ এ সব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এখনো দেশে নতুন বিনিয়োগকারী আসেনি। ব্যবসায়ীদের এলসি নেই বললেই চলে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এলসি জটিলতা নেই বা ডলার সঙ্কট নেই বলে জানিয়েছে। তারপরও বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বর্তমান এই দুরবস্থার প্রভাব আগামী দুই-তিন মাস পর দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। এতে কারখানার যেমন-কাঁচামাল সঙ্কট দেখা দেবে, তেমনি এর সংকটে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে মালিকরা। সরকারের পতনের পর বেতন দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের অচলাবস্থা নেমেছে। দেশের অন্যতম বড় এই শিল্প গ্রুপ
তাই সরকারের কাছে গ্রুপ বাঁচাতে তিন প্রস্তাব দিয়েছে। বেক্সিমকোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠান প্রোফাইলিং তৈরি-বিষয়ক কমিটি’ কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান ও তাদের রফতানি আয় এবং বকেয়া ব্যাংক ঋণ আদায়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটিকে চালু রাখতে ‘ঋণসুবিধা’ দেয়ার সুপারিশ করেছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে কারখানা চালু রাখা অপরিহার্য। কারখানা বা ব্যবসা বন্ধ হওয়া মানে আরো বেশি বেকারত্ব সৃষ্টি, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যা বেশ উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে এতদিন যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ছিল সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ব্যক্তির অপকর্মের কারণে বর্তমানে বিপর্যস্ত। গত ১৬ বছরে এসব ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা
সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু এসব ব্যক্তির কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিপাকে পড়েছে। এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিতে আরো ঘনঘটা দেখছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা। অথচ এ প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান পর্যায়ে আসতে লেগেছে ৩০ থেকে ৫০ বছর। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় এবং ব্যবসায়ীরা ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের উপর না ফেলার আহ্বান জানালেও বাস্তবে ভিন্ন। গত ৩০-৫০ বছর ধরে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অনেকটা বন্ধের পথে। অথচ ওই সব ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল না রাখলে আগামী দিনে এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এসব প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে এলসি করতে না পারে, আগামী
কয়েক মাস কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে কারখানা ও শিল্পের উৎপাদন। প্রশাসক বসিয়েও লাভ হবে না। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বসে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের অর্থপাচার, অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে অবশ্যই বর্তমান সরকারের দরকার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। অন্যথায় হাসিনা সরকারের চলা গভীর ষড়যন্ত্র দেশকে আবারো বিপাকে ফেলবে। আর তাই এই সরকারের সাফল্যের জন্য দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সব প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। রফতানির জন্য বায়ারদের কিভাবে দেশে আনা যায় সে জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের মতে, রাষ্ট্র কখনো
ব্যবসা করে না। করবে না। রাষ্ট্র শুধু বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করে দেবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, এস আলম প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে, যার বেশির ভাগ অর্থ হয়তো আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তবে তিনি গ্রুপের কারখানাগুলো চালু রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ এর সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এটি কীভাবে করা যায় তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ড. মইনুল ইসলাম বলেন, একটি সমাধান হতে পারে একজন রিসিভার নিয়োগ দিয়ে ব্যবসার কার্যক্রম চালু রাখা, যেমনটি বেক্সিমকো গ্রুপের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। তবে রিসিভার নিয়োগ হলেই
প্রতিষ্ঠানগুলো সুস্থ হয়ে যাবে কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না উল্লেখ করেন ড. মইনুল। আর্থিক খাতের এক বিশ্লেষক উদাহরণ দিয়ে বলেন, হুয়াওয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু তিন বছর জেলে ছিলেন। ২০১৮ সালে গ্রেফতারের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু এ কারণে প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম এক মিনিটের জন্য বন্ধ থাকেনি। আইন অনুযায়ী মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানও চলেছে স্বাভাবিক নিয়মে। এভাবে স্যামসাং ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এখনো আগের মতোই স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার গতি আরো বেড়েছে। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচাম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে যাদের ব্যাপারে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াতে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের যাতে ক্ষতি না হয় সেটি দেখতে হবে। তাদের প্রতিষ্ঠানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান আছে। কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বজায় রাখতে হবে। সূত্র মতে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগিতায় অর্থ পাচার, অনিয়ম-লুটপাটের রাজত্ব করে দেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রভাবশালী গ্রুপে পরিণত হয় এস আলম গ্রুপ। অথচ পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন ব্যাংক কঠোর অবস্থান নেয়ায় এক সময়ের প্রভাবশালী কিন্তু বর্তমানে বিতর্কিত চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এখন তাদের কারখানাগুলো সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের এক সময়ের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ অতীতে আটটি ব্যাংকের ওপর প্রভাব রেখেছিলেন। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। এস আলম গ্রুপের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এটি প্রায় দুই ডজন কোম্পানির মালিক, যার মোট সম্পদের মূল্য আনুমানিক দেড় লাখ কোটি টাকা। গ্রুপটি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য কারখানা পরিচালনা করে। ব্যাংকিং খাতের এবং এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এখন ব্যাংকগুলো এস আলম গ্রুপের সঙ্গে নতুন ব্যবসায় জড়াতে আগ্রহী নয়। আর যেসব ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে রাজি হচ্ছে, সেগুলোও গ্রুপটির কুখ্যাতির কারণে শতভাগ মার্জিন দাবি করছে। গত ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার বিদায় নেয়ার পর থেকে মাসুদ এবং তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে গেছেন অথবা দেশত্যাগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের সমস্যা আরো গভীর হয়েছে। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে এস আলম গ্রুপ ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানা বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মীকেও ছাঁটাই করা হয়েছে। কোম্পানিটি তাদের পূর্বের উৎপাদনশীলতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে। এস আলম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার আশীষ কুমার নাথ জানিয়েছেন, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল এবং এস আলম রিফাইন্ড সুগার নামক দুটি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য কারখানাও একই ঝুঁকিতে রয়েছে। একই সঙ্গে আমরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলোও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এস আলম গ্রুপের এইচআর ও অ্যাডমিন ম্যানেজার এম হোসেন রানা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং ও বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও, গ্রুপের ১২টি আমদানি-নির্ভর কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছেন, যারা আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছেন। এদিকে বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষ থেকে বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে তিন প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো গ্রুপ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে একটি প্রস্তাব জমা দেয়। তাতে তিনটি প্রস্তাব করা হয়। প্রথম প্রস্তাবে বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকে থাকা ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে রাখার অনুরোধ জানায়। সেই সঙ্গে দায় পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় ও ঋণ পরিশোধে দুই বছরের ছাড় চেয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের অক্টোবর মাসের বেতন দিতে গত মঙ্গলবারের মধ্যে ৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল তারা। পাশাপাশি আরো ৭০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা চায় গ্রুপটি। এ জন্য বেক্সিমকো কারখানা কর্তৃপক্ষ নতুন করে ৬৮৩ কোটি টাকার সম্পত্তি (জমি ও শেয়ার) বন্ধক রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বেক্সিমকোর সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থের সংস্থান, গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংস্থানের জোগান ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকে বেসরকারিভাবে অর্থের জোগান নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় প্রস্তাবে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানি বন্ধ করতে হলে ২৪ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এতে শ্রমিকের পাওনা ৫৫৯ কোটি টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে কোম্পানি বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই। পাশাপাশি বেক্সিমকো এ-ও জানিয়েছে, তাদের গ্রুপে ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। তাই তারা কারখানা বিক্রি বা বন্ধ করার পক্ষে না। অপরদিকে বেক্সিমকোর প্রস্তাবের জবাবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরও তাদের সুপারিশ জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছেÑ জনতা ব্যাংকের দেয়া ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণ সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে কোম্পানি চালু রেখে বেক্সিমকোর ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়। বেক্সিমকোর প্রায় ৬৮৩ কোটি টাকা বাজার মূল্যের সম্পত্তি বন্ধক রাখার প্রস্তাবের বিপরীতে কোম্পানিকে ৬০০ কোটি টাকা ফান্ডেড ও ৪০০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড নতুন রফতানি ঋণ দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে কমিটি। এই ঋণ দেয়া হলে নতুন রফতানি করা ঋণ সুবিধার ৬০০ কোটি টাকা থেকে শুধু শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন ও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় হিসেবে নির্বাহ করার শর্ত দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানিটি চালু থাকা অবস্থায় প্রাপ্ত মুনাফা থেকে জনতা ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ আগের ঋণের দায় পরিশোধ করা যেতে পারে। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব অনেক। এই সরকারকেই ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ব্যক্তির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বিপাকে আছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারকে বসতে হবে, কথা বলতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই যাতে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে না যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে অর্থনীতির প্রাণ এ সব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।