
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

আওয়ামী লীগ থাকলে, বাংলাদেশ থাকবে

হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তত ১২৩ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নিহত: রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নই প্রধান সমস্যা

জামায়াতকে কি সত্যি ইগনোর করা হয়েছে?

রাষ্ট্রনায়কের মুখোশে, কূটনীতিকের ভূমিকায় অভিনয়ে- ড. ইউনুস….

ঈদুল আজহার শিক্ষা ও করণীয়

মানুষের প্রত্যাশা মোকাবিলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ
সেই থেকে ‘কালো’ চঞ্চল

স্বাধীনতার পর চঞ্চল তার বাবার ইয়াসিকা ক্যামেরাটা নিয়ে প্রায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় যেতেন। তখন তিনি এইটে পড়েন। বঙ্গবন্ধু ফটোগ্রাফারদের খুব পছন্দ করতেন, প্রশ্রয় দিতেন। আর শিশুদের প্রতি তাঁর মমতার অন্ত ছিল না। কম বয়সী আলোকচিত্রী চঞ্চলকে প্রথম দেখেই বঙ্গবন্ধু ‘তুই’ বলে ডাকলেন। সেই ‘তুই’ ডাকটা চঞ্চলের মনে চিরদিনের মতো গেঁথে যায়।
একদিন চঞ্চল ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখেন বঙ্গবন্ধু ভাত খাচ্ছেন। দূর থেকে ছবি তুলতে দেখে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এই ভাত খাইতাছি, গেঞ্জি পরে ভাত খাই; আর তুই ছবি তোলস? বয় এইখানে। ওই ওরে ভাত দে। কই মাছ দে।’
বঙ্গবন্ধু কই মাছ খুব পছন্দ করতেন। এই ঘটনায় চঞ্চল অবাক হয়ে গেলেন। তিনি অবাক
হয়ে ভাবতেন, কী সুন্দর একটা মানুষ, কী সুন্দর চুল-গোঁফ, চুলগুলো হাত দিয়ে কী স্টাইল করে আঁচড়ান। এমনভাবে পাইপটা ধরাতেন সেই দৃশ্য ভুলতে পারেন না চঞ্চল। মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই খাড়া, ঠিক করে লই; এইবার তোল।’ বঙ্গবন্ধু এভাবেই কথা বলতেন। তাঁর বলার মধ্যে কোনো ভণিতা ছিল না। মাঝে মাঝে বকাও খেয়েছেন। সকালে কবুতরের খোয়াড়গুলো যখন খোলা হতো তখন কবুতরগুলো বঙ্গবন্ধুর মাথায় এসে বসতো, দুই কাঁধে বসতো। উনি কথা বলতেন কবুতরগুলোর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তখন প্রধানমন্ত্রী। একদিন চঞ্চল দেখলেন, ৩২ নম্বরে যে পাহারাদার থাকতো তাকে বঙ্গবন্ধু ঘাড়ে ধরে বললেন, ‘আয়, তোর মুখটা শুকায়ে গেছে।’ পাহারাদার তো কাঁচুমাচু হয়ে বলে “স্যার”। বঙ্গবন্ধু তাকে বেড়ে খাওয়ালেন। এই
দৃশ্য দেখে চঞ্চল অবাক হয়ে ভাবলেন, ইনি তো অন্য এক মানুষ। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট সকালে চঞ্চল রেডিওতে শুনলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। শুনে তিনি অস্থির হয়ে গেলেন। দৌড়ে চলে গেলেন ৩২ নম্বরের দিকে। আশপাশে যারা ছিলেন, তারাও এলেন। দেখলেন, বাড়িটার জায়গায় জায়গায় গুলির ক্ষত। বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। প্রথমে ব্যারিকেড ছিল না। ব্যারিকেড দেওয়া হয় পরে। কয়েক ঘণ্টা লাশগুলো এমনিতেই পড়েছিল। চঞ্চল এই দৃশ্য দেখে ফিরে এলেন নাখালপাড়ার রূপকার স্টুডিওতে। তার মাথা থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে। বমি শুরু হলো। রূপকারের মালিক লুৎফর বারী লাল তাকে ফার্মগেটের একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। স্যালাইন দেওয়া হলো। কিন্তু হেঁচকি থামছে না। ভয়ার্ত মুখ
দেখে ডাক্তার বললেন, ছেলেটার মনে হয় আপন কেউ মারা গেছে। তখন লুৎফর বারী লাল ডাক্তারকে সব ঘটনা খুলে বললেন। ৮ দিন ছিলেন হাসপাতালে। সুস্থ হয়েও শোকে আচ্ছন্ন চঞ্চল কয়েকদিন ভাত খেতে পারেননি। এরপর তিনি প্রায়ই ৩২ নম্বরের উল্টোদিকের রাস্তায় চুপচাপ বসে থাকতেন। নীরবে কাঁদতেন। গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা তাকে দেখতেন। তারা বুঝতে পারতেন, ছেলেটা কেন কষ্ট পায়। অনেককে উঠিয়ে দিলেও তাকে দিতেন না। পঁচাত্তর সালেই ১৮ বছরের যুবক চঞ্চল সিদ্ধান্ত নিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কালো কাপড় পরার। রঙিন কোনো কিছু আর পরবেন না। তার আলোকচিত্রের গুরু মনজুর আলম বেগ বলেছিলেন, কালো সব কিছু শুষে নেয়। সেই থেকে কালো পরা শুরু। শুধু পোশাকই নয়, তার
স্টুডিও কিংবা বাসার প্রায় বেশির ভাগ জিনিসপত্রের রঙই কালো, এমনকি তার কাচের দরজাটাও। বঙ্গবন্ধু চঞ্চলকে একটা পতাকা উপহার দিয়েছিলেন। অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে তিনি ওই পতাকাটা সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। একদিন তার স্ত্রী বলল, ফাঙ্গাস পড়ে গেছে, ধুয়ে দিই। চঞ্চল বলেন, ‘কী বলো! ধুলে তো বঙ্গবন্ধুর স্পর্শই চলে যাবে।’ অনেকে তাকে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তো শেষ হয়ে গেছে, এখন কালো পোশাক ছেড়ে দেন।” চঞ্চল তাদের বলেন, এটা তার নীরব প্রতিবাদ। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এটা তিনি ছাড়বেন না। সেই থেকে ৪৯ বছর ধরে তিনি কালো কাপড় পরিধান করেন। পঁচাত্তরের সেই টগবগে প্রতিবাদী যুবকটিই এখন দেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ। গ্ল্যামার, মডেল ও ফ্যাশন ফটোগ্রাফার হিসেবে এ
দেশের মানুষ তাকে একনামে চেনে।
হয়ে ভাবতেন, কী সুন্দর একটা মানুষ, কী সুন্দর চুল-গোঁফ, চুলগুলো হাত দিয়ে কী স্টাইল করে আঁচড়ান। এমনভাবে পাইপটা ধরাতেন সেই দৃশ্য ভুলতে পারেন না চঞ্চল। মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই খাড়া, ঠিক করে লই; এইবার তোল।’ বঙ্গবন্ধু এভাবেই কথা বলতেন। তাঁর বলার মধ্যে কোনো ভণিতা ছিল না। মাঝে মাঝে বকাও খেয়েছেন। সকালে কবুতরের খোয়াড়গুলো যখন খোলা হতো তখন কবুতরগুলো বঙ্গবন্ধুর মাথায় এসে বসতো, দুই কাঁধে বসতো। উনি কথা বলতেন কবুতরগুলোর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তখন প্রধানমন্ত্রী। একদিন চঞ্চল দেখলেন, ৩২ নম্বরে যে পাহারাদার থাকতো তাকে বঙ্গবন্ধু ঘাড়ে ধরে বললেন, ‘আয়, তোর মুখটা শুকায়ে গেছে।’ পাহারাদার তো কাঁচুমাচু হয়ে বলে “স্যার”। বঙ্গবন্ধু তাকে বেড়ে খাওয়ালেন। এই
দৃশ্য দেখে চঞ্চল অবাক হয়ে ভাবলেন, ইনি তো অন্য এক মানুষ। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট সকালে চঞ্চল রেডিওতে শুনলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। শুনে তিনি অস্থির হয়ে গেলেন। দৌড়ে চলে গেলেন ৩২ নম্বরের দিকে। আশপাশে যারা ছিলেন, তারাও এলেন। দেখলেন, বাড়িটার জায়গায় জায়গায় গুলির ক্ষত। বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। প্রথমে ব্যারিকেড ছিল না। ব্যারিকেড দেওয়া হয় পরে। কয়েক ঘণ্টা লাশগুলো এমনিতেই পড়েছিল। চঞ্চল এই দৃশ্য দেখে ফিরে এলেন নাখালপাড়ার রূপকার স্টুডিওতে। তার মাথা থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে। বমি শুরু হলো। রূপকারের মালিক লুৎফর বারী লাল তাকে ফার্মগেটের একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। স্যালাইন দেওয়া হলো। কিন্তু হেঁচকি থামছে না। ভয়ার্ত মুখ
দেখে ডাক্তার বললেন, ছেলেটার মনে হয় আপন কেউ মারা গেছে। তখন লুৎফর বারী লাল ডাক্তারকে সব ঘটনা খুলে বললেন। ৮ দিন ছিলেন হাসপাতালে। সুস্থ হয়েও শোকে আচ্ছন্ন চঞ্চল কয়েকদিন ভাত খেতে পারেননি। এরপর তিনি প্রায়ই ৩২ নম্বরের উল্টোদিকের রাস্তায় চুপচাপ বসে থাকতেন। নীরবে কাঁদতেন। গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা তাকে দেখতেন। তারা বুঝতে পারতেন, ছেলেটা কেন কষ্ট পায়। অনেককে উঠিয়ে দিলেও তাকে দিতেন না। পঁচাত্তর সালেই ১৮ বছরের যুবক চঞ্চল সিদ্ধান্ত নিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কালো কাপড় পরার। রঙিন কোনো কিছু আর পরবেন না। তার আলোকচিত্রের গুরু মনজুর আলম বেগ বলেছিলেন, কালো সব কিছু শুষে নেয়। সেই থেকে কালো পরা শুরু। শুধু পোশাকই নয়, তার
স্টুডিও কিংবা বাসার প্রায় বেশির ভাগ জিনিসপত্রের রঙই কালো, এমনকি তার কাচের দরজাটাও। বঙ্গবন্ধু চঞ্চলকে একটা পতাকা উপহার দিয়েছিলেন। অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে তিনি ওই পতাকাটা সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। একদিন তার স্ত্রী বলল, ফাঙ্গাস পড়ে গেছে, ধুয়ে দিই। চঞ্চল বলেন, ‘কী বলো! ধুলে তো বঙ্গবন্ধুর স্পর্শই চলে যাবে।’ অনেকে তাকে বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তো শেষ হয়ে গেছে, এখন কালো পোশাক ছেড়ে দেন।” চঞ্চল তাদের বলেন, এটা তার নীরব প্রতিবাদ। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এটা তিনি ছাড়বেন না। সেই থেকে ৪৯ বছর ধরে তিনি কালো কাপড় পরিধান করেন। পঁচাত্তরের সেই টগবগে প্রতিবাদী যুবকটিই এখন দেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ। গ্ল্যামার, মডেল ও ফ্যাশন ফটোগ্রাফার হিসেবে এ
দেশের মানুষ তাকে একনামে চেনে।