৫৪ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ১৩ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার – ইউ এস বাংলা নিউজ




৫৪ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ১৩ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৫ | ৮:০২ 56 ভিউ
৪ সেপ্টেম্বর শনিবার। ক্যালেন্ডারের পাতায় সালটা ১৯৭১। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার ৫ মাস ৯ দিন পেরিয়ে গেছে। ঘটনাস্থল নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মোহাম্মদপুর গ্রামের রাজার বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাজার বাড়ির সামনের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ের আঙিনায় চলতো মুক্তিকামীদের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষক ছিলেন আবদুর রশিদ ও গোলাম মোস্তফা। আবদুর রশিদ ইপিআর সদস্য ছিলেন বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এখানে প্রশিক্ষণের জন্য আসত এলাকার মুক্তিকামী তরুণ যুবক। সপ্তাহ দুয়েকের মতো সেই ট্রেনিং শেষ হয়েছিল তখন। এক কান দুই কান করে রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিকামী জনতার প্রশিক্ষণের তথ্য পৌঁছে যায় হানাদার পাকিস্তানিদের কাছে। ৪ সেপ্টেম্বর ভোর আনুমানিক সাতটা। তখনো

আবদুর রশিদ ও গোলাম মোস্তফা কেউ আসেনি। কয়েকজন মুক্তিকামী তরুণ যুবক প্রশিক্ষণার্থী স্কুলের আঙিনায়। প্রশিক্ষক আসলেই শুরু হবে ট্রেনিং। এরই মধ্যে অপরিচিত ৭-৮ জন মানুষ অস্ত্র নিয়ে হাজির। তারা এসে প্রথমে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেয়। বিষয়টি নিয়ে সেখানে উপস্থিত কারও কারও মনে তখন খটকা লাগে। একসময় তারা কিছুটা নিশ্চিত হন এরা রাজাকার। তখন প্রশিক্ষণ নিতে আসা আবুল বাশার বাদশা এক রাজাকারের হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের ওপর উপর হামলা করে বসেন। এরই মধ্যে একজন রাজাকার রাস্তায় গিয়ে পেছনে অপেক্ষমাণ থাকা হানাদারদের উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলেন, ‘সাব! মুক্তি কা কমান্ডার ভাগ যা রা, ভাগ যা রা।’ এ কথা শোনার পর

রাজাকারদের পেছনে থাকা ২০ থেকে ২৫ জনের পাক হানাদার বাহিনী এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ৫৪ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ১৩ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার আবুল বাশার পাশের খালের পানিতে ঝাঁপ দেন। পেছন থেকে চলে গুলির পর গুলি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি৷ খাল পেরিয়ে ধান ক্ষেতের পানিতে ডুবে ডুবে পার্শ্ববর্তী মলংচর গ্রামের দিকে চলে যান। সেদিন আবুল বাশার পালিয়ে গেলেও হানাদার ও রাজাকাররা তার বড় ভাই আব্দুল জলিলকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে আসে। এভাবে আশপাশের বাড়ি থেকে আরও কয়েকজনকে তুলে আনা হয় এখানে। তাদের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আশপাশের যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন, তাদের ঘরেও আগুন দেওয়া হয়। আবুল বাশারের ভাইকে তুলে আনার

সময় তার বাবা আব্দুল কাদের বাধা দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা প্রথমে আব্দুল কাদেরের হাত থেঁতলে দেয় ও গুলি আর বেয়োনেট দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে। সেদিন এই স্থানে একে একে শহীদ করা হয় ১৩ মুক্তিকামী জনতাকে। গুলি আর বেয়োনেটের নিষ্ঠুর আঘাতে একে একে শাহাদাত বরণ করেন মোহাম্মদপুর গ্রামের রাজার বাড়ির আব্দুল কাদের ও আব্দুল জলিল; নুর মিয়া ব্যাপারী বাড়ির আমিন উল্যাহ, মোমতাজ মিয়া ও জহুরুল হক; কালাগাজী ব্যাপারী বাড়ির আবুল খায়ের; ইয়াসীন মন্দার বাড়ির ফজলুর রহমান; তিব্রা বাড়ির শিরাজ মিয়া; বেচার বাড়ির চান মিয়া; পটোয়ারী বাড়ির লাল মিয়া; রমার বাড়ির রাজেন্দ্র চন্দ্র নাথ, যতীন্দ্র চন্দ্র নাথ ও মনোরঞ্জন নাথ। শহীদ আবদুল কাদেরের

সন্তান ও শহীদ আবদুল জলিলের ছোট ভাই আবুল বাশার সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার তখন বয়স ছিল ১৮ থেকে ১৯। সেদিন আমি শুধু বাবা আর বড় ভাইকেই হারাইনি, ভগ্নিপতি চাঁন মিয়াকেও হারিয়েছি। এ তিনজনকে হারিয়ে আমাদের পরিবার আজ পর্যন্ত আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সরকার চাইলে আমাদেরও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারত।’ সেখানে ১২-১৫ জন নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিত বলেও তিনি জানান। আবদুল জলিলের সন্তান দুলাল জানান, ‘আমার বয়স তখন চার বছর। আমার বাবা ও দাদাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো স্বীকৃতি নেই। যে কারণে রণাঙ্গনে লড়াই করেও আমরা সরকারের কোনো সুবিধা পাইনি। কেউ আমাদের এই পরিবারগুলোর

খোঁজখবরও রাখেনি। দেশের জন্য জীবন দেওয়া এই ১৩ জন মানুষ তো ১৩টি পরিবার। আমরা সরকারের কাছে আর কিছুই চাই না, আমরা আমাদের ১৩ জন শহীদের স্বীকৃতি চাই।' স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী কানু লাল দেবনাথের বয়স ছিল তখন ১৭ বছর। তিনি বলেন, ‘রাজেন্দ্র, যতীন্দ্র ও মনোরঞ্জনকে বাড়ি থেকে ধরে এনে স্কুলের সামনে হত্যা করা হয়। সেদিন লাশ খুঁজে নিতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে তখন হাঁটুপানি ছিল। বাধ্য হয়ে নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার মধ্যবর্তী খালে ফেলে দিয়ে আসি লাশ তিনটি। পাকিস্তানিরা তাদের ঘরগুলোও পুড়িয়ে দিয়েছিল। পরে আশপাশের মুসলিম পরিবারগুলো মিলে পোড়া ঘরগুলো ঠিক করে দেয়।’ প্রশাসন কিংবা সরকারের কোনো উদ্যোগ না থাকায় একটা

সময় এ স্থানটিকে স্মরণীয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সেখানকার স্থানীয়রা। তারা সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যেটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। এ পরিবারগুলোর কেউ রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরি করে আবার স্বর্ণের কারিগরি করে দিনাতিপাত করছেন। শোক সইতে না পেরে যুদ্ধের পরে কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন। বিদ্যালয়ের যেসব শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে, ছাদে এ মুক্তিকামীদের ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ছিল ভবন পুরাতন হয়ে যাওয়ার কারণে সে ছাদ ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন করে টিন লাগানো হয়েছে। রঙের নিচে চাপা পড়ে গেছে দেয়ালের রক্তের দাগ। তবুও ভাগ্য বদল হয়নি এ পরিবারগুলোর। এই বিষয়ে জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি এ ঘটনা শুনেছি। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। আমি যতদূর জানি এ ঘটনাটি সম্পর্কে সঠিক ইতিহাসও কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। আমারা সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করব।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
জুবিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন পেছাল চাকসু নির্বাচন উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে সুপার টাইফুন ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬৪ খাটে মায়ের মরদেহ, ফ্লোরে পড়ে ছিল নিস্তেজ ২ সন্তান ১২ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চবির সব পরীক্ষা স্থগিত সুপার টাইফুনের কারণে স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা আজ হারলে বাংলাদেশের ওপর ‘নির্ভর’ করবে শ্রীলঙ্কার ফাইনাল খেলা! সব দেশের প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান সৌদির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারের পেছনে গাজা ইস্যু, কমলা হ্যারিসের বিস্ফোরক তথ্য নিউইয়র্কে হামলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি আছে : নাহিদ ইসলাম অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত মানুষ, বেড়েছে পারিবারিক অশান্তি কৌতূহলবশত বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে ঢুকে বিদেশে চলে গেল কিশোর কলকাতায় টানা বৃষ্টিতে বিপর্যয়, দুর্গাপূজার আগে ৭ জনের মৃত্যু ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন, হংকংয়ে বিমানবন্দর-স্কুল বন্ধ ঘোষণা টেলিকম লাইসেন্সিং নীতিমালার গেজেট প্রকাশ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ১৮ নভেম্বর শাবিতে ‘কিছু শর্তে’ মিলেছে ছাত্র রাজনীতির অনুমতি কুয়েটে সংঘর্ষ: ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৩২ জনকে সতর্কবার্তা ফরিদপুর-৪ থেকে ভাঙ্গাকে আলাদা করতে হাইকোর্টে রুল