ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
শহিদ আলিফের পরিবারের জন্য কোটি টাকার তহবিল
জান্তাপ্রধানকে গ্রেফতারে পরোয়ানার আবেদন, স্বাগত জানাল বাংলাদেশ
বিচারে সরকারের উদ্যোগ নেই
শিশু বলাৎকারের জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি ইসকন
স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন
ইসকনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াত নেতাদের পিটিয়ে হত্যা: ১৮ বছর পর হাসিনার নামে মামলা
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়েও ফল নিম্নমুখী
পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে বাতিল হওয়া চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ড বাদে বাকি বোর্ডগুলোতে তিন গ্রুপের চারটি বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ার পর এইচএসসি স্থগিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে এবং বাতিল হওয়া বিষয়গুলোর ফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বিষয় (সাবজেক্ট) ম্যাপিং করে। তাতে পাসের হার বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা ছিল সংশ্লিষ্টদের। হয়েছে তার উল্টো। গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে
প্রায় ১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা
অনেক বেড়েছে। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ফলের তথ্য তুলে ধরেন। বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। গত বছর এই পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা এবার কমে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮। তবে
জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছর থেকে এবার ৫৩ হাজার ৩১৬ জন বেড়েছে। গত বছর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিল ৯২ হাজার ৩৬৫ জন। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জনে। এ ছাড়া শতভাগ পাসকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, একই সঙ্গে সংখ্যা বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানেরও। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটোই কমেছে। এ বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কারিগরি বোর্ড থেকে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন, যা গত বছর ছিল ৬ হাজার ৯৭৭ জন। দুটি
ক্ষেত্রেই এগিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এবার বোর্ডটিতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ড থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৭ জন, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন। তপন কুমার সরকার জানান, এবার ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১
লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এ দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান
বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল, সে হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে ক্ষোভ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের: পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কিছু পরীক্ষা বাতিল করে সেগুলোর মূল্যায়ন সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা বলেন, গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার আশা করেছিলাম। জিপিএ ৫ পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে পরীক্ষা হলে আরও ভালো করতে পারতাম। সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। যেহেতু
মানবিকের শিক্ষার্থী, ইতিহাসসহ অন্য বিষয়গুলোর প্রস্তুতি ভালো করে নেওয়া যেত। সেখানে কিছুটা প্রভাব পড়বে। একই প্রতিষ্ঠানের কমার্সের শিক্ষার্থী নাবিলা ইসলাম নেহা বলেন, এসএসসির চেয়ে এইচএসসিতে ভালো করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে ফল আশানুরূপ হয়নি। এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অবশ্যই পড়বে। সেখানে তো শর্ট সিলেবাস নেই। কাজেই যারা সময়টাকে কাজে লাগাবে, তারাই ভালো করবে। নাবিলার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও নাবিলা গোল্ডেন এ প্লাস পাবে—এমনটাই আশা ছিল; কিন্তু হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিং আমাদের ভালো লাগেনি। যারা পরিশ্রম করেছে, তাদের মূল্যায়ন ঠিকমতো হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে আমার মেয়ের মতো অনেকেই পরীক্ষায় খারাপ করেছে। এসব শিক্ষার্থী করোনার কারণে এসএসসিতে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মোট সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। এর মধ্যে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটির পরীক্ষা সবারই বাতিল হয়েছে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ও আইসিটির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বেশি। যে বোর্ডগুলোতে এ দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করেছে, সেখানে পাসের হারও কমেছে। এতে নিম্নমুখী হয়েছে গড় পাসের হার। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এবার সবার নিচে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রায় একই রকম পাসের হার যশোর বোর্ডেও। কাছাকাছি অবস্থানে চট্টগ্রাম বোর্ড। অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় এ তিনটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার তুলনামূলক অনেক কম, যার প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারেও। মূলত ইংরেজিতে বেশি ফেল করায় এ দুটি বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। তবে বন্যার কারণে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। তাদের পরীক্ষা হয়েছে চারটি, বাকিগুলোতে হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাপিং। ফল খারাপের পেছনে ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জুলাইয়ের শুরু থেকেই কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইংরেজি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র এবং আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওই সময় কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। যারা সরাসরি অংশ নেননি, তাদেরও দৃষ্টি ছিল এ আন্দোলনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এসব শিক্ষার্থী এসএসসি দিয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সে কারণে তাদের শিখন ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। এর প্রভাব হয়তো এইচএসসি পরীক্ষার ফলে পড়েছে। তবে জিপিএ ৫ বাড়ার কারণ হতে পারে যেসব পরীক্ষা তারা দিয়েছে, সেগুলোতে এসএসসির ফল ভালো ছিল। বাকি পরীক্ষাগুলো হলে হয়তো এত বেশি জিপিএ ৫ থাকত না। আবার যেহেতু আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিল করেছিল, সে কারণে খাতা দেখায় শিক্ষকরা হয়তো ঝুঁকি নিতে চাননি। তিনি বলেন, তবে এসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে। সেজন্য তাদের যে শিখন ঘাটতি, তা নিজস্ব উদ্যোগ ও অভিভাবকদের উদ্যোগে পূরণ করা যেতে পারে। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন পরীক্ষার্থীদের মানসিক ‘অস্থিরতা’ তৈরি করেছে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলনে নামেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনকার কিশোররাও সক্রিয়। এ ধরনের অস্থির সময়ে জানা থাকা বিষয়ও অনেক সময় ভুলে যেতে পারে একজন শিক্ষার্থী। মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তাতে ভিন্ন চিন্তা চলে আসে। পড়াশোনা বা খাতায় যে লিখবে তাতেও মন বসে না। পরীক্ষায় নিশ্চয়ই সেটার প্রভাব থাকতে পারে। নারীরা এবারও এগিয়ে: গত তিন বছরের মতো এবারও অসাধারণ ফল করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে মেয়েরা। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এ বছর ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছেন এবং ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসকৃতদের মধ্যে ছেলে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং মেয়ে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। জিপিএ ৫ পাওয়াদের মধ্যে ৮০ হাজার ৯৩৩ মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ ছেলে শিক্ষার্থী। বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছে মেয়েরা। এদিকে, এবারের এইচএসসির ফলে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এ বছর মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার ১০৭ ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের সবাই পাস করেছেন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার জন। ফল পুনর্নিরীক্ষণ শুরু আজ: প্রকাশিত ফল অনুযায়ী যদি কোনো পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য (ফেল) হন বা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পান, সেক্ষেত্রে ফল পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার থেকে আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিন সময় পাবেন। প্রতি পত্রের ফল পুনর্নিরীক্ষার ফি ১৫০ টাকা।
অনেক বেড়েছে। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ফলের তথ্য তুলে ধরেন। বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। গত বছর এই পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা এবার কমে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮। তবে
জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছর থেকে এবার ৫৩ হাজার ৩১৬ জন বেড়েছে। গত বছর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিল ৯২ হাজার ৩৬৫ জন। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জনে। এ ছাড়া শতভাগ পাসকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, একই সঙ্গে সংখ্যা বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানেরও। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটোই কমেছে। এ বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কারিগরি বোর্ড থেকে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন, যা গত বছর ছিল ৬ হাজার ৯৭৭ জন। দুটি
ক্ষেত্রেই এগিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এবার বোর্ডটিতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ড থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৭ জন, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন। তপন কুমার সরকার জানান, এবার ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১
লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এ দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান
বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল, সে হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে ক্ষোভ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের: পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কিছু পরীক্ষা বাতিল করে সেগুলোর মূল্যায়ন সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা বলেন, গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার আশা করেছিলাম। জিপিএ ৫ পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে পরীক্ষা হলে আরও ভালো করতে পারতাম। সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। যেহেতু
মানবিকের শিক্ষার্থী, ইতিহাসসহ অন্য বিষয়গুলোর প্রস্তুতি ভালো করে নেওয়া যেত। সেখানে কিছুটা প্রভাব পড়বে। একই প্রতিষ্ঠানের কমার্সের শিক্ষার্থী নাবিলা ইসলাম নেহা বলেন, এসএসসির চেয়ে এইচএসসিতে ভালো করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে ফল আশানুরূপ হয়নি। এর প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অবশ্যই পড়বে। সেখানে তো শর্ট সিলেবাস নেই। কাজেই যারা সময়টাকে কাজে লাগাবে, তারাই ভালো করবে। নাবিলার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, এসএসসির মতো এইচএসসিতেও নাবিলা গোল্ডেন এ প্লাস পাবে—এমনটাই আশা ছিল; কিন্তু হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিং আমাদের ভালো লাগেনি। যারা পরিশ্রম করেছে, তাদের মূল্যায়ন ঠিকমতো হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে আমার মেয়ের মতো অনেকেই পরীক্ষায় খারাপ করেছে। এসব শিক্ষার্থী করোনার কারণে এসএসসিতে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মোট সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। এর মধ্যে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটির পরীক্ষা সবারই বাতিল হয়েছে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ও আইসিটির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বেশি। যে বোর্ডগুলোতে এ দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করেছে, সেখানে পাসের হারও কমেছে। এতে নিম্নমুখী হয়েছে গড় পাসের হার। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এবার সবার নিচে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রায় একই রকম পাসের হার যশোর বোর্ডেও। কাছাকাছি অবস্থানে চট্টগ্রাম বোর্ড। অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় এ তিনটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার তুলনামূলক অনেক কম, যার প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারেও। মূলত ইংরেজিতে বেশি ফেল করায় এ দুটি বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। তবে বন্যার কারণে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। তাদের পরীক্ষা হয়েছে চারটি, বাকিগুলোতে হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাপিং। ফল খারাপের পেছনে ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জুলাইয়ের শুরু থেকেই কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইংরেজি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র এবং আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওই সময় কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। যারা সরাসরি অংশ নেননি, তাদেরও দৃষ্টি ছিল এ আন্দোলনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এসব শিক্ষার্থী এসএসসি দিয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সে কারণে তাদের শিখন ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। এর প্রভাব হয়তো এইচএসসি পরীক্ষার ফলে পড়েছে। তবে জিপিএ ৫ বাড়ার কারণ হতে পারে যেসব পরীক্ষা তারা দিয়েছে, সেগুলোতে এসএসসির ফল ভালো ছিল। বাকি পরীক্ষাগুলো হলে হয়তো এত বেশি জিপিএ ৫ থাকত না। আবার যেহেতু আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বাতিল করেছিল, সে কারণে খাতা দেখায় শিক্ষকরা হয়তো ঝুঁকি নিতে চাননি। তিনি বলেন, তবে এসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে। সেজন্য তাদের যে শিখন ঘাটতি, তা নিজস্ব উদ্যোগ ও অভিভাবকদের উদ্যোগে পূরণ করা যেতে পারে। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন পরীক্ষার্থীদের মানসিক ‘অস্থিরতা’ তৈরি করেছে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলনে নামেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনকার কিশোররাও সক্রিয়। এ ধরনের অস্থির সময়ে জানা থাকা বিষয়ও অনেক সময় ভুলে যেতে পারে একজন শিক্ষার্থী। মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তাতে ভিন্ন চিন্তা চলে আসে। পড়াশোনা বা খাতায় যে লিখবে তাতেও মন বসে না। পরীক্ষায় নিশ্চয়ই সেটার প্রভাব থাকতে পারে। নারীরা এবারও এগিয়ে: গত তিন বছরের মতো এবারও অসাধারণ ফল করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। এবারও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে মেয়েরা। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এ বছর ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছেন এবং ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসকৃতদের মধ্যে ছেলে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং মেয়ে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। জিপিএ ৫ পাওয়াদের মধ্যে ৮০ হাজার ৯৩৩ মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ ছেলে শিক্ষার্থী। বোর্ডের তথ্যানুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছে মেয়েরা। এদিকে, এবারের এইচএসসির ফলে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এ বছর মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার ১০৭ ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের সবাই পাস করেছেন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার জন। ফল পুনর্নিরীক্ষণ শুরু আজ: প্রকাশিত ফল অনুযায়ী যদি কোনো পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য (ফেল) হন বা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পান, সেক্ষেত্রে ফল পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার থেকে আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিন সময় পাবেন। প্রতি পত্রের ফল পুনর্নিরীক্ষার ফি ১৫০ টাকা।