
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা

গাড়ির জ্বালানি বরাদ্দ দ্বিগুন পেলেন ঐকমত্য কমিশন সদস্যরা

অভিনব জালিয়াতি ঋণের নামে

পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ গাড়ি

খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অসন্তোষ

রাখাইনে মানবিক করিডর, বাংলাদেশে কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?

প্রেস অফিসারদের জন্য আইফোন বরাদ্দ বাড়াবাড়ি মনে হয়নি: মারুফ কামাল
সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার তাগিদ

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমায়ের রাখাইন প্রদেশ কৌশলগত কারণে চীন, ভারতসহ এ অঞ্চলের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক মাস ধরে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন। বিরোধপূর্ণ এলাকায় ঢুকতে পারছে না জাতিসংঘ। পূর্বাভাস রয়েছে-এ বছর খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে, তাই মানবিক বিপর্যয় আসন্ন। সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। সীমান্তে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে মানবিক করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকারকে পুনর্বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জাতিসংঘের এই আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার নানামুখী ঝুঁকি আছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা, প্রতিবেশী ভারত ও চীনের অনাপত্তি, করিডর পরিচালনা এবং নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত না করতে পারলে ভুগতে হতে পারে বাংলাদেশকে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত-এমন সিদ্ধান্ত
নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার কথা বলছেন তারা। নীতিগত এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছে তারা। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দলগুলো। যদিও মানবিক করিডর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে আলোচনা করেনি। সরকারের অবস্থান হলো-রাখাইন রাজ্যে যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা থাকে, তাহলে বাংলাদেশ সরবরাহ সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সরকার পরামর্শ
করবে। জানতে চাইলে মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, পরিকল্পনাটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাদের পরিষ্কার করে বলা হয়নি। যেহেতু উপদেষ্টা বলেছেন কাজটা শর্তসাপেক্ষে বলা হয়েছে, আমরা ঠিক বলতে পারব না। দ্বিতীয়ত, রাখাইন একটি সংঘাতময় এলাকা। আর যে কোনো সংঘাতময় এলাকার সঙ্গে জড়িত হওয়া যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখানে যদি করিডর স্থাপন করি, তাহলে এটা কার সম্মতি নিয়ে করা হচ্ছে, এটা আমরা জানি না। করিডর স্থাপনের একটা প্রধান শর্ত হচ্ছে দুই পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে। এখানে আমরা জানি যে দীর্ঘদিন থেকে রাখাইনে একটা সংঘর্ষ চলে আসছে। দুইটি পার্টের একটি মিয়ানমার রাষ্ট্র বা মিয়ানমার সরকার, অপরদিকে হচ্ছে আরাকান
আর্মি। এখানে মিয়ানমার সরকারের কোনো সম্মতি আছে কি না, আমরা জানি না। কাজেই সম্মতি ছাড়া যদি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিপরীত করিডর স্থাপন করা হয়, সেটা কতটুকু আইনসম্মত, সে ব্যাপারে আমাদের জানতে হবে। করিডর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিরাপত্তা জড়িত থাকে এবং নিরাপত্তা কারা প্রদান করছে, সে ব্যাপারেও আমাদের বলা হয়নি বা নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারে যদি আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জনবলের ওপরে পালটা নিরাপত্তা হুমকি যে আসবে না, এর নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। কাজেই আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে এখানে কী আছে, এটা আমরা পুরোপুরি পরিষ্কার না। বরং দেখতে পাচ্ছি, এখানে ঝুঁকি অনেক এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করার সম্ভাবনা এরচেয়েও বেশি। তিনি
বলেন, ভারত, চীন ও রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে যদি কিছু করা হয়, তাহলে তাদের পক্ষ থেকে যে কোনো পর্যায় থেকে প্রতিহত করা হবে। জাতিসংঘের ব্যানারে আমরা মনে করছি সেখানে সাহায্য নিয়ে যাব, বড় অন্যান্য শক্তি এটাকে প্রতিহত করবে না, তা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না। দেশে সংসদ নেই। তার পরিবর্তে যে রাজনৈতিক শক্তি বা দলগুলো আছে, তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তাদের সম্মতি নিতে হবে। তাদের মতামত নিতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রের জন্য এটি খুব বড় ধরনের সিদ্ধান্ত। এটিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে
একটি মানবিক করিডর প্রদানে সম্মত হয়েছে। উদ্বেগজনক প্রশ্ন হলো-এই মানবিক সাহায্য কার জন্য? আরাকান আর্মির জন্য? যারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জোর করে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে এবং যারা এখনো রোহিঙ্গাদের তাদের (মিয়ানমারের) নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছে? তাই বাংলাদেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার আগে অবিলম্বে একটি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে। গবেষক ও সাংবাদিক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, ভারত ও চীন মুখোমুখি আছে অনেক বিষয়ে। ফলে উভয়ে এরকম বিষয়ে রাজি হবে কি না, সেটা একটি চ্যালেঞ্জ। কোনো এক দেশ যদি রাজি
না হয়, তাহলে বাংলাদেশ এটি নিয়ে এগিয়ে যাবে কি না, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেবে কি না। এ ধরনের মানবিক করিডর যে কোনো সময় ভবিষ্যতে একটা সামরিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তো অনির্বাচিত সরকার। এখানে কোনো সংসদ নেই। এ ধরনের বিষয় সাধারণত সংসদে আলোচনা হওয়ার ব্যাপার। কিন্তু যেহেতু এখন নেই, সরকারের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, মার্চে মানবিক করিডরের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। কারণ, সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছিল। করিডরের প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হলে আপাতত যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সেটা কমতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের বিষয়টি আরাকান আর্মিও ইতিবাচকভাবে দেখবে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে, যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ চলে, সেখানে মানবিক করিডর বা সহায়তা খুবই স্পর্শকাতর। কারণ, এর সঙ্গে সামরিক বিষয় চলে আসে। কুর্দিস্তান, বসনিয়া ও ইউক্রেনে মানবিক করিডর নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যেও সেনাবাহিনীর বোমা বর্ষণ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বিবেচনা করে মানবিক করিডরের জন্য বাংলাদেশের বিকল্পগুলোও পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবারই ঠাকুরগাঁওয়ে বলেছেন, এই করিডরের কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকায় করিডরের প্রসঙ্গটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। মঙ্গলবার কুমিল্লা মহানগরের শুরা সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, রাখাইন রাজ্য নিয়ে আমাদের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা, সশস্ত্র যুদ্ধ ও জাতিগত হানাহানিতে বিপর্যস্ত এই রাজ্যের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবলই মানবিক না। বরং এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত হয়ে পড়েছে। তাই বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। জাতিসংঘের অনুরোধে শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসাবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানাই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’ রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে ১২ দলীয় জোট। মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তা করিডর বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার কথা বলছেন তারা। নীতিগত এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছে তারা। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দলগুলো। যদিও মানবিক করিডর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে আলোচনা করেনি। সরকারের অবস্থান হলো-রাখাইন রাজ্যে যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা থাকে, তাহলে বাংলাদেশ সরবরাহ সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সরকার পরামর্শ
করবে। জানতে চাইলে মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, পরিকল্পনাটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাদের পরিষ্কার করে বলা হয়নি। যেহেতু উপদেষ্টা বলেছেন কাজটা শর্তসাপেক্ষে বলা হয়েছে, আমরা ঠিক বলতে পারব না। দ্বিতীয়ত, রাখাইন একটি সংঘাতময় এলাকা। আর যে কোনো সংঘাতময় এলাকার সঙ্গে জড়িত হওয়া যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখানে যদি করিডর স্থাপন করি, তাহলে এটা কার সম্মতি নিয়ে করা হচ্ছে, এটা আমরা জানি না। করিডর স্থাপনের একটা প্রধান শর্ত হচ্ছে দুই পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে। এখানে আমরা জানি যে দীর্ঘদিন থেকে রাখাইনে একটা সংঘর্ষ চলে আসছে। দুইটি পার্টের একটি মিয়ানমার রাষ্ট্র বা মিয়ানমার সরকার, অপরদিকে হচ্ছে আরাকান
আর্মি। এখানে মিয়ানমার সরকারের কোনো সম্মতি আছে কি না, আমরা জানি না। কাজেই সম্মতি ছাড়া যদি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিপরীত করিডর স্থাপন করা হয়, সেটা কতটুকু আইনসম্মত, সে ব্যাপারে আমাদের জানতে হবে। করিডর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিরাপত্তা জড়িত থাকে এবং নিরাপত্তা কারা প্রদান করছে, সে ব্যাপারেও আমাদের বলা হয়নি বা নিরাপত্তা প্রদানের ব্যাপারে যদি আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জনবলের ওপরে পালটা নিরাপত্তা হুমকি যে আসবে না, এর নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। কাজেই আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে এখানে কী আছে, এটা আমরা পুরোপুরি পরিষ্কার না। বরং দেখতে পাচ্ছি, এখানে ঝুঁকি অনেক এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করার সম্ভাবনা এরচেয়েও বেশি। তিনি
বলেন, ভারত, চীন ও রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে যদি কিছু করা হয়, তাহলে তাদের পক্ষ থেকে যে কোনো পর্যায় থেকে প্রতিহত করা হবে। জাতিসংঘের ব্যানারে আমরা মনে করছি সেখানে সাহায্য নিয়ে যাব, বড় অন্যান্য শক্তি এটাকে প্রতিহত করবে না, তা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না। দেশে সংসদ নেই। তার পরিবর্তে যে রাজনৈতিক শক্তি বা দলগুলো আছে, তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তাদের সম্মতি নিতে হবে। তাদের মতামত নিতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রের জন্য এটি খুব বড় ধরনের সিদ্ধান্ত। এটিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে
একটি মানবিক করিডর প্রদানে সম্মত হয়েছে। উদ্বেগজনক প্রশ্ন হলো-এই মানবিক সাহায্য কার জন্য? আরাকান আর্মির জন্য? যারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জোর করে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে এবং যারা এখনো রোহিঙ্গাদের তাদের (মিয়ানমারের) নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছে? তাই বাংলাদেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার আগে অবিলম্বে একটি সর্বদলীয় সভা আহ্বান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে। গবেষক ও সাংবাদিক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, ভারত ও চীন মুখোমুখি আছে অনেক বিষয়ে। ফলে উভয়ে এরকম বিষয়ে রাজি হবে কি না, সেটা একটি চ্যালেঞ্জ। কোনো এক দেশ যদি রাজি
না হয়, তাহলে বাংলাদেশ এটি নিয়ে এগিয়ে যাবে কি না, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেবে কি না। এ ধরনের মানবিক করিডর যে কোনো সময় ভবিষ্যতে একটা সামরিক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তো অনির্বাচিত সরকার। এখানে কোনো সংসদ নেই। এ ধরনের বিষয় সাধারণত সংসদে আলোচনা হওয়ার ব্যাপার। কিন্তু যেহেতু এখন নেই, সরকারের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. বায়েজিদ সরোয়ার বলেন, মার্চে মানবিক করিডরের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। কারণ, সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছিল। করিডরের প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হলে আপাতত যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সেটা কমতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের বিষয়টি আরাকান আর্মিও ইতিবাচকভাবে দেখবে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে, যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ চলে, সেখানে মানবিক করিডর বা সহায়তা খুবই স্পর্শকাতর। কারণ, এর সঙ্গে সামরিক বিষয় চলে আসে। কুর্দিস্তান, বসনিয়া ও ইউক্রেনে মানবিক করিডর নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যেও সেনাবাহিনীর বোমা বর্ষণ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বিবেচনা করে মানবিক করিডরের জন্য বাংলাদেশের বিকল্পগুলোও পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবারই ঠাকুরগাঁওয়ে বলেছেন, এই করিডরের কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকায় করিডরের প্রসঙ্গটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। মঙ্গলবার কুমিল্লা মহানগরের শুরা সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, রাখাইন রাজ্য নিয়ে আমাদের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা, সশস্ত্র যুদ্ধ ও জাতিগত হানাহানিতে বিপর্যস্ত এই রাজ্যের জন্য মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কেবলই মানবিক না। বরং এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত হয়ে পড়েছে। তাই বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। জাতিসংঘের অনুরোধে শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসাবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানাই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’ রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে ১২ দলীয় জোট। মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তা করিডর বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।