সংস্কার প্রস্তাবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে – ইউ এস বাংলা নিউজ




সংস্কার প্রস্তাবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪৫ 20 ভিউ
কোনো ব্যক্তিই এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংস্কারের প্রস্তাবে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। সংবিধান যেন কাউকেই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী না করে। একই সঙ্গে বিরোধী মতকে সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ড. কামাল হোসেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সার্বিক সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তা এখনই সম্পন্ন করা কঠিন। অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তী সরকার জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে পারবে। তাই কাঠামোগত ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। বাংলাদেশের

সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহালকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ ও অপসারণ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। নিম্ন আদালত তদারকির ক্ষমতাও সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকুক। তিনি সুপ্রিম কোর্টের জবাবদিহি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। নিম্নে সাক্ষাৎকারের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে ধরা হলো– প্রশ্নকর্তা : সংবিধান সংস্কারের বর্তমান উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন? ড. কামাল হোসেন : সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয়। এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধান পর্যালোচনা করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে কোনো সংস্কারের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান আমাদের

স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। বাংলাদেশের সব মানুষের ত্যাগ ও ঐক্যবদ্ধ আকাঙ্ক্ষার ফসল। কোনো ব্যক্তিই এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে। সমাজের বর্তমান চাহিদা ও আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, সংবিধান যেন কাউকেই কোনো নির্যাতনের সুযোগ না দেয়। সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের পাশাপাশি বৈষম্য নিরসন এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিগুলো প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রশ্নকর্তা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কেন হলো? ড. কামাল হোসেন : ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুধু কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছিল না; এটি ছিল আমাদের তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘ ১৬ বছরের জমে থাকা যন্ত্রণা ও বঞ্চনার

এক তীব্র বহিঃপ্রকাশ। এই ক্ষোভ কেবল কোটা ইস্যুতে সীমাবদ্ধ থাকেনি; এটি গণতান্ত্রিক সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে বিস্তৃত হয়েছিল। প্রশ্নকর্তা : সকল স্তরের মানুষ কীভাবে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন? ড. কামাল হোসেন : বিগত সরকার মানুষকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পেশিশক্তি ব্যবহার করেছে। দুর্নীতি ও অপকর্ম টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে। সংবিধানের বিরুদ্ধে একের পর এক আইন প্রণয়ন করেছে। সাজানো নির্বাচন আয়োজন করে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এর ফলে যখন ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো হয়, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয় এবং নির্বিচারে নাগরিকদের হত্যা করে দমননীতি প্রয়োগ করা হয়–

তখন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনজীবী, পেশাজীবী, শ্রমিক, দিনমজুরসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হয়। প্রশ্নকর্তা : অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী? ড. কামাল হোসেন : অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হলো জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ সরকারকে অবশ্যই সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে দেশের সব জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। প্রশ্নকর্তা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কী ভূমিকা হওয়া উচিত? ড. কামাল হোসেন : অন্তর্বর্তী সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলো গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। তাদের উচিত হবে প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি

ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা, যাতে জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপিত হয়। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পটভূমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তায়– এই অভ্যুত্থানের সব প্রেক্ষাপট নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করা এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধে ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি যারা গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ছাড়া যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে পুনর্বাসনের বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ছাড়া তাদের উচিত হবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার ভিত্তি তৈরি করা। বিচার এবং ক্ষতিপূরণ,

সত্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে জরুরি সংস্কার উদ্যোগও প্রয়োজন রয়েছে। বিচারিক হয়রানির অনেক উদাহরণ আছে অতীতের, বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলের। এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করার জন্যও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রশ্নকর্তা : সংস্কারের পর নির্বাচন, নাকি নির্বাচনের পর সংস্কার– এ বিতর্কে আপনি কোন পক্ষে? ড. কামাল হোসেন : আমি মনে করি, প্রথমেই কাঠামোগত সংস্কার নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ এটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত। ইতোমধ্যে ১৫তম সংশোধনী আইনের কিছু অংশবিশেষ বাতিল হয়েছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দিকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এগিয়ে গেছি। আমাদের সামনে ১৩তম সংশোধনীর রিভিউ আবেদন এখনও বিচারাধীন। যদি সেই রিভিউও সংশোধনীর পক্ষে আসে, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রশ্নকর্তা : বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে কিছু বলবেন? ড. কামাল হোসেন : বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার সংস্কারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে আমি চাই, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিয়োগ ও অপসারণ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ করা হোক– নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে, যাতে কোনো স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ না ওঠে এবং নিম্ন আদালত তদারকির ক্ষমতাও সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকুক। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সচিবালয় প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টেও জবাবদিহি বাড়ানো উচিত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার ভূমিকা নেওয়ার জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে আরও শুনানি করার, মানুষের কাছে আইনি সহায়তা পৌঁছানোরও চেষ্টা চালানো উচিত। এই সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন হওয়া জরুরি। কারণ, এগুলো ছাড়া ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি পূরণ হবে না। প্রশ্নকর্তা : আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন? ড. কামাল হোসেন : সম্পূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তা এখনই সম্পন্ন করা কঠিন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তী সরকার জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে পারবে। তাই আমি মনে করি, কাঠামোগত ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে এবং পরবর্তী সরকারের কাজকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
যে কারণে শাশুড়ির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্যাটরিনা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ ট্রেইনি চিকিৎসকদের সাদপন্থি নেতা মুয়াজ বিন নূর ৩ দিনের রিমান্ডে গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কারকুমা’ ফাংশনাল ফুড দীর্ঘ ১২ বছর পর দামেস্কে কাজ শুরু করল তুরস্কের দূতাবাস মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইরানের ‘স্বপ্নভঙ্গ’, বিকল্প কী সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করল যুক্তরাষ্ট্র সেই তাহেরীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা হামাসের সাথে শান্তি চুক্তি চায় ৭২ শতাংশ ইসরাইলি ‘অখণ্ড বাংলাদেশ’ গঠনের ডাক, তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল্লির রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ রাজধানীতে ছিনতাইয়ের বাড়বাড়ন্ত সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনায় মিঠুন চক্রবর্তীর সতর্কবার্তা জার্মানি নির্বাচনে ইলন মাস্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩ মন্দিরে হামলা, প্রশ্নবিদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’ ‘খুনি হিসেবে র‌্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না’ দিল্লিতে নির্বাসিত হাসিনা, বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্কে টানাপোড়ন: এবিসি আমাদের পাকঘরে উঁকি মারবেন না: ভারতকে ডা. শফিকুর রহমান