
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

দুনিয়া কাঁপানো ভাইরাল ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন নির্মাতা

অস্ত্র হস্তান্তর শুরু পিকেকের, এরদোয়ানের সাফল্য

অবৈধ সমুদ্রপথে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ

মুসলিম একটি দেশে মৃত্যুদণ্ড ২৪৫, যাবজ্জীবন ৯৫৫

তালেবান নেতাদের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: নারী-কিশোরী নিপীড়নের অভিযোগ

রেস্তোরাঁ থেকে ইসরায়েলিদের তাড়িয়ে দিলেন ম্যানেজার

ভারত আসতে রাজি নয়, ২৪ জুলাই ঢাকায় এসিসি সভা হবে তো?
লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘ভালো ইংরেজি’ জানেন কীভাবে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইংরেজি বলার প্রশংসা করে আলোচনায় এলেন। তার এই প্রশংসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে উপহাস ও সমালোচনা।
হোয়াইট হাউসে আফ্রিকার পাঁচ নেতার সঙ্গে এক বৈঠকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাইকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, তোমার ইংরেজি তো দারুণ! তুমি এত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে শিখলে কোথায়? এরপর নিজেই প্রশ্ন করেন, লাইবেরিয়ায়? বোয়াকাই হেসে উত্তর দেন, “জি স্যার। ”
লন্ডনের চিন্তাচর্চা কেন্দ্র চ্যাথাম হাউজের আফ্রিকা প্রোগ্রামের প্রধান অ্যালেক্স ভাইনস আল জাজিরাকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আফ্রিকা সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে প্রেসিডেন্ট বোয়াকাইয়ের ইংরেজি নিয়ে করা মন্তব্যে।
লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা হলো ইংরেজি। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের পুনর্বাসনের
জন্য একটি উপনিবেশ হিসেবে দেশটি ১৮২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল কিছু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যার ফলেই তাদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাইবেরিয়া: আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্রের গল্প লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ, যেখানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তর-পশ্চিমে সিয়েরা লিওন, উত্তরে গিনি, পূর্বে আইভরি কোস্ট এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ঘিরে রেখেছে দেশটিকে। ১৮২২ সালে দেশটির গোড়াপত্তন হয় এবং ১৮৪৭ সালে এটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতন্ত্র। ইথিওপিয়ার সঙ্গে এটি একমাত্র আফ্রিকান দেশ যেটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলের সময় কখনো উপনিবেশে পরিণত হয়নি। দেশটির স্থানীয় জনসংখ্যা মূলত ১৬টি আদিবাসী
গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যার মধ্যে কপেলে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড়। লাইবেরিয়া কীভাবে ও কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? ১৮২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের সময় ৮৬ জন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আজকের লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় এসে পৌঁছান। এই শহর এখন দেশটির প্রধান সমুদ্রবন্দর। তাদের পুনর্বাসনের পেছনে কাজ করছিলেন জেহুদি অ্যাশমুন নামের এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যিনি আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির প্রতিনিধি ছিলেন। সংগঠনটি মূলত আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করেছিল। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, আবার অনেককে চাপ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এটি ছিল একদল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের প্রচেষ্টা, যারা মনে করতেন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখতে হুমকি। তাদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, কৃষ্ণাঙ্গরা কখনোই আমেরিকান সমাজে সমঅধিকার পাবে না। তাই আফ্রিকায় তাদের
জন্য একটি নতুন আবাস তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তা স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত আফ্রিকান-আমেরিকান জোসেফ জেনকিন্স রবার্টস হন স্বাধীন লাইবেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রথমদিকে স্থানীয় আদিবাসীরা জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন নৌ কর্মকর্তা একজন স্থানীয় নেতাকে চাপে ফেলে জমি বিক্রি করান। রাজধানীর নাম রাখা হয় জেমস মনরোর নামে, যিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। ১৮২০ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে আনুমানিক ১২ হাজার মুক্তিপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান লাইবেরিয়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা কারা? মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বংশধর, যাদের বলা হয় আমেরিকো-লাইবেরিয়ান, তারা স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে
আধিপত্য বিস্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তারা বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ, তারা বহু বছর আদিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত রেখেছিলেন। বাকি জনসংখ্যা মূলত পশ্চিম সুদান থেকে আগত আদিবাসীদের বংশধর, যারা মধ্যযুগে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। আরও অনেকে পাশের দেশগুলো থেকে দাসবাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক দখলের সময় লাইবেরিয়ায় এসে বসতি গড়েন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি প্রতিবেশী দেশগুলোর গৃহযুদ্ধপীড়িত মানুষদেরও আশ্রয় দিয়েছে, বিশেষ করে আইভরি কোস্ট থেকে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা কী? লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি। আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের নেতৃত্বে ১৮৪৭ সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় ইংরেজিকে মূল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে দেশটিতে ২৫টির বেশি আদিবাসী ভাষাও প্রচলিত, যেগুলো মূলত নাইজার-কঙ্গো ভাষা
পরিবারের ম্যান্ডে, কওয়া এবং মেল শাখার অন্তর্ভুক্ত। লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণ কী ছিল? দেশটি দুটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা পেরিয়েছে। এর পেছনে ছিল জাতিগত বৈষম্য ও ক্ষমতার লড়াই। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ক্রান-এর সদস্য স্যামুয়েল ডো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমেরিকো-লাইবেরিয়ান সরকারের পতন ঘটান এবং প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্টকে হত্যা করেন। যদিও তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। ১৮৮৯ সালে প্রথম গৃহযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাওয়া দাসের বংশধর চার্লস টেলর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এতে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ ): বিদ্রোহী সংগঠন লার্ড প্রতিবেশী গিনির সহায়তায় টেলরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। যুদ্ধ গিনি ও সিয়েরা
লিওনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং টেলরের পদত্যাগের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। পরে টেলরকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। বর্তমানে লাইবেরিয়ার অবস্থা কেমন? দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশটি স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে। ২০১৭ সালে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন হয়, যা ১৯৪৪ সালের পর প্রথম। ২০২৩ সালের নির্বাচনে জোসেফ বোয়াকাই ৫০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ফুটবল তারকা জর্জ উইয়াহকে পরাজিত করেন। বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাইনস বলছেন, আজকের লাইবেরিয়ায় জাতিগত পরিচয় তেমন গুরুত্ব পায় না এবং আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের প্রভাব অনেকটাই কমেছে। তবে লাইবেরিয়ানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখনও ঘনিষ্ঠ। অনেক লাইবেরিয়ানই গ্রিন কার্ডধারী, যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তবে আফ্রিকায় ইউএসএইডের বাজেট কমিয়ে দেওয়া দেশটির জন্য ছিল একপ্রকার ধাক্কা। ট্রাম্প কেন লাইবেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন? সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে লাইবেরিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব দেশের ভূমি, খনিজ এবং তেলসম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, দারুণ উর্বর এলাকা, দুর্দান্ত খনিজ ও চমৎকার মানুষ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে উপস্থিতি ছিল একটি সুযোগ, কারণ তিনি আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। এটি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। আফ্রিকা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অথচ ট্রাম্প অতীতে আফ্রিকাকে নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন—যেমন আফ্রিকার দেশগুলোকে তিনি অবমাননা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকার যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি, তাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা চালাচ্ছে। বৈঠকে এমন একটি প্রস্তাবও উঠেছে বলে শোনা যায়, যদিও ট্রাম্প কী বিনিময়ে অফার দিয়েছেন বা কোন নেতা রাজি হয়েছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইংরেজি বলার প্রশংসা করে আলোচনায় এলেন। তার এই প্রশংসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে উপহাস ও সমালোচনা। হোয়াইট হাউসে আফ্রিকার পাঁচ নেতার সঙ্গে এক বৈঠকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাইকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, তোমার ইংরেজি তো দারুণ! তুমি এত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে শিখলে কোথায়? এরপর নিজেই প্রশ্ন করেন, লাইবেরিয়ায়? বোয়াকাই হেসে উত্তর দেন, “জি স্যার। ” লন্ডনের চিন্তাচর্চা কেন্দ্র চ্যাথাম হাউজের আফ্রিকা প্রোগ্রামের প্রধান অ্যালেক্স ভাইনস আল জাজিরাকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আফ্রিকা সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে প্রেসিডেন্ট বোয়াকাইয়ের ইংরেজি নিয়ে করা মন্তব্যে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা হলো ইংরেজি। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের পুনর্বাসনের জন্য একটি উপনিবেশ হিসেবে দেশটি ১৮২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল কিছু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যার ফলেই তাদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাইবেরিয়া: আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্রের গল্প লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ, যেখানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তর-পশ্চিমে সিয়েরা লিওন, উত্তরে গিনি, পূর্বে আইভরি কোস্ট এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ঘিরে রেখেছে দেশটিকে। ১৮২২ সালে দেশটির গোড়াপত্তন হয় এবং ১৮৪৭ সালে এটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতন্ত্র। ইথিওপিয়ার সঙ্গে এটি একমাত্র আফ্রিকান দেশ যেটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলের সময় কখনো উপনিবেশে পরিণত হয়নি। দেশটির স্থানীয় জনসংখ্যা মূলত ১৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যার মধ্যে কপেলে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড়। লাইবেরিয়া কীভাবে ও কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? ১৮২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের সময় ৮৬ জন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আজকের লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় এসে পৌঁছান। এই শহর এখন দেশটির প্রধান সমুদ্রবন্দর। তাদের পুনর্বাসনের পেছনে কাজ করছিলেন জেহুদি অ্যাশমুন নামের এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যিনি আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির প্রতিনিধি ছিলেন। সংগঠনটি মূলত আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করেছিল। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, আবার অনেককে চাপ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এটি ছিল একদল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের প্রচেষ্টা, যারা মনে করতেন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখতে হুমকি। তাদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, কৃষ্ণাঙ্গরা কখনোই আমেরিকান সমাজে সমঅধিকার পাবে না। তাই আফ্রিকায় তাদের জন্য একটি নতুন আবাস তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তা স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত আফ্রিকান-আমেরিকান জোসেফ জেনকিন্স রবার্টস হন স্বাধীন লাইবেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রথমদিকে স্থানীয় আদিবাসীরা জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন নৌ কর্মকর্তা একজন স্থানীয় নেতাকে চাপে ফেলে জমি বিক্রি করান। রাজধানীর নাম রাখা হয় জেমস মনরোর নামে, যিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। ১৮২০ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে আনুমানিক ১২ হাজার মুক্তিপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান লাইবেরিয়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা কারা? মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বংশধর, যাদের বলা হয় আমেরিকো-লাইবেরিয়ান, তারা স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তারা বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ, তারা বহু বছর আদিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত রেখেছিলেন। বাকি জনসংখ্যা মূলত পশ্চিম সুদান থেকে আগত আদিবাসীদের বংশধর, যারা মধ্যযুগে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। আরও অনেকে পাশের দেশগুলো থেকে দাসবাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক দখলের সময় লাইবেরিয়ায় এসে বসতি গড়েন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি প্রতিবেশী দেশগুলোর গৃহযুদ্ধপীড়িত মানুষদেরও আশ্রয় দিয়েছে, বিশেষ করে আইভরি কোস্ট থেকে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা কী? লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি। আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের নেতৃত্বে ১৮৪৭ সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় ইংরেজিকে মূল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে দেশটিতে ২৫টির বেশি আদিবাসী ভাষাও প্রচলিত, যেগুলো মূলত নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের ম্যান্ডে, কওয়া এবং মেল শাখার অন্তর্ভুক্ত। লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণ কী ছিল? দেশটি দুটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা পেরিয়েছে। এর পেছনে ছিল জাতিগত বৈষম্য ও ক্ষমতার লড়াই। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ক্রান-এর সদস্য স্যামুয়েল ডো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমেরিকো-লাইবেরিয়ান সরকারের পতন ঘটান এবং প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্টকে হত্যা করেন। যদিও তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। ১৮৮৯ সালে প্রথম গৃহযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাওয়া দাসের বংশধর চার্লস টেলর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এতে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ ): বিদ্রোহী সংগঠন লার্ড প্রতিবেশী গিনির সহায়তায় টেলরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। যুদ্ধ গিনি ও সিয়েরা লিওনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং টেলরের পদত্যাগের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। পরে টেলরকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। বর্তমানে লাইবেরিয়ার অবস্থা কেমন? দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশটি স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে। ২০১৭ সালে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন হয়, যা ১৯৪৪ সালের পর প্রথম। ২০২৩ সালের নির্বাচনে জোসেফ বোয়াকাই ৫০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ফুটবল তারকা জর্জ উইয়াহকে পরাজিত করেন। বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাইনস বলছেন, আজকের লাইবেরিয়ায় জাতিগত পরিচয় তেমন গুরুত্ব পায় না এবং আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের প্রভাব অনেকটাই কমেছে। তবে লাইবেরিয়ানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখনও ঘনিষ্ঠ। অনেক লাইবেরিয়ানই গ্রিন কার্ডধারী, যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তবে আফ্রিকায় ইউএসএইডের বাজেট কমিয়ে দেওয়া দেশটির জন্য ছিল একপ্রকার ধাক্কা। ট্রাম্প কেন লাইবেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন? সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে লাইবেরিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব দেশের ভূমি, খনিজ এবং তেলসম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, দারুণ উর্বর এলাকা, দুর্দান্ত খনিজ ও চমৎকার মানুষ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে উপস্থিতি ছিল একটি সুযোগ, কারণ তিনি আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। এটি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। আফ্রিকা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অথচ ট্রাম্প অতীতে আফ্রিকাকে নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন—যেমন আফ্রিকার দেশগুলোকে তিনি অবমাননা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকার যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি, তাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা চালাচ্ছে। বৈঠকে এমন একটি প্রস্তাবও উঠেছে বলে শোনা যায়, যদিও ট্রাম্প কী বিনিময়ে অফার দিয়েছেন বা কোন নেতা রাজি হয়েছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
জন্য একটি উপনিবেশ হিসেবে দেশটি ১৮২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল কিছু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যার ফলেই তাদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাইবেরিয়া: আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্রের গল্প লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ, যেখানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তর-পশ্চিমে সিয়েরা লিওন, উত্তরে গিনি, পূর্বে আইভরি কোস্ট এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ঘিরে রেখেছে দেশটিকে। ১৮২২ সালে দেশটির গোড়াপত্তন হয় এবং ১৮৪৭ সালে এটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতন্ত্র। ইথিওপিয়ার সঙ্গে এটি একমাত্র আফ্রিকান দেশ যেটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলের সময় কখনো উপনিবেশে পরিণত হয়নি। দেশটির স্থানীয় জনসংখ্যা মূলত ১৬টি আদিবাসী
গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যার মধ্যে কপেলে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড়। লাইবেরিয়া কীভাবে ও কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? ১৮২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের সময় ৮৬ জন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আজকের লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় এসে পৌঁছান। এই শহর এখন দেশটির প্রধান সমুদ্রবন্দর। তাদের পুনর্বাসনের পেছনে কাজ করছিলেন জেহুদি অ্যাশমুন নামের এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যিনি আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির প্রতিনিধি ছিলেন। সংগঠনটি মূলত আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করেছিল। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, আবার অনেককে চাপ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এটি ছিল একদল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের প্রচেষ্টা, যারা মনে করতেন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখতে হুমকি। তাদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, কৃষ্ণাঙ্গরা কখনোই আমেরিকান সমাজে সমঅধিকার পাবে না। তাই আফ্রিকায় তাদের
জন্য একটি নতুন আবাস তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তা স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত আফ্রিকান-আমেরিকান জোসেফ জেনকিন্স রবার্টস হন স্বাধীন লাইবেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রথমদিকে স্থানীয় আদিবাসীরা জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন নৌ কর্মকর্তা একজন স্থানীয় নেতাকে চাপে ফেলে জমি বিক্রি করান। রাজধানীর নাম রাখা হয় জেমস মনরোর নামে, যিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। ১৮২০ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে আনুমানিক ১২ হাজার মুক্তিপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান লাইবেরিয়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা কারা? মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বংশধর, যাদের বলা হয় আমেরিকো-লাইবেরিয়ান, তারা স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে
আধিপত্য বিস্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তারা বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ, তারা বহু বছর আদিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত রেখেছিলেন। বাকি জনসংখ্যা মূলত পশ্চিম সুদান থেকে আগত আদিবাসীদের বংশধর, যারা মধ্যযুগে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। আরও অনেকে পাশের দেশগুলো থেকে দাসবাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক দখলের সময় লাইবেরিয়ায় এসে বসতি গড়েন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি প্রতিবেশী দেশগুলোর গৃহযুদ্ধপীড়িত মানুষদেরও আশ্রয় দিয়েছে, বিশেষ করে আইভরি কোস্ট থেকে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা কী? লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি। আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের নেতৃত্বে ১৮৪৭ সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় ইংরেজিকে মূল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে দেশটিতে ২৫টির বেশি আদিবাসী ভাষাও প্রচলিত, যেগুলো মূলত নাইজার-কঙ্গো ভাষা
পরিবারের ম্যান্ডে, কওয়া এবং মেল শাখার অন্তর্ভুক্ত। লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণ কী ছিল? দেশটি দুটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা পেরিয়েছে। এর পেছনে ছিল জাতিগত বৈষম্য ও ক্ষমতার লড়াই। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ক্রান-এর সদস্য স্যামুয়েল ডো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমেরিকো-লাইবেরিয়ান সরকারের পতন ঘটান এবং প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্টকে হত্যা করেন। যদিও তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। ১৮৮৯ সালে প্রথম গৃহযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাওয়া দাসের বংশধর চার্লস টেলর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এতে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ ): বিদ্রোহী সংগঠন লার্ড প্রতিবেশী গিনির সহায়তায় টেলরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। যুদ্ধ গিনি ও সিয়েরা
লিওনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং টেলরের পদত্যাগের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। পরে টেলরকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। বর্তমানে লাইবেরিয়ার অবস্থা কেমন? দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশটি স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে। ২০১৭ সালে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন হয়, যা ১৯৪৪ সালের পর প্রথম। ২০২৩ সালের নির্বাচনে জোসেফ বোয়াকাই ৫০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ফুটবল তারকা জর্জ উইয়াহকে পরাজিত করেন। বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাইনস বলছেন, আজকের লাইবেরিয়ায় জাতিগত পরিচয় তেমন গুরুত্ব পায় না এবং আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের প্রভাব অনেকটাই কমেছে। তবে লাইবেরিয়ানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখনও ঘনিষ্ঠ। অনেক লাইবেরিয়ানই গ্রিন কার্ডধারী, যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তবে আফ্রিকায় ইউএসএইডের বাজেট কমিয়ে দেওয়া দেশটির জন্য ছিল একপ্রকার ধাক্কা। ট্রাম্প কেন লাইবেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন? সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে লাইবেরিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব দেশের ভূমি, খনিজ এবং তেলসম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, দারুণ উর্বর এলাকা, দুর্দান্ত খনিজ ও চমৎকার মানুষ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে উপস্থিতি ছিল একটি সুযোগ, কারণ তিনি আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। এটি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। আফ্রিকা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অথচ ট্রাম্প অতীতে আফ্রিকাকে নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন—যেমন আফ্রিকার দেশগুলোকে তিনি অবমাননা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকার যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি, তাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা চালাচ্ছে। বৈঠকে এমন একটি প্রস্তাবও উঠেছে বলে শোনা যায়, যদিও ট্রাম্প কী বিনিময়ে অফার দিয়েছেন বা কোন নেতা রাজি হয়েছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইংরেজি বলার প্রশংসা করে আলোচনায় এলেন। তার এই প্রশংসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে উপহাস ও সমালোচনা। হোয়াইট হাউসে আফ্রিকার পাঁচ নেতার সঙ্গে এক বৈঠকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাইকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, তোমার ইংরেজি তো দারুণ! তুমি এত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে শিখলে কোথায়? এরপর নিজেই প্রশ্ন করেন, লাইবেরিয়ায়? বোয়াকাই হেসে উত্তর দেন, “জি স্যার। ” লন্ডনের চিন্তাচর্চা কেন্দ্র চ্যাথাম হাউজের আফ্রিকা প্রোগ্রামের প্রধান অ্যালেক্স ভাইনস আল জাজিরাকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আফ্রিকা সম্পর্কে সীমিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে প্রেসিডেন্ট বোয়াকাইয়ের ইংরেজি নিয়ে করা মন্তব্যে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা হলো ইংরেজি। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের পুনর্বাসনের জন্য একটি উপনিবেশ হিসেবে দেশটি ১৮২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতিকে ‘সমস্যা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল কিছু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যার ফলেই তাদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাইবেরিয়া: আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্রের গল্প লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ, যেখানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তর-পশ্চিমে সিয়েরা লিওন, উত্তরে গিনি, পূর্বে আইভরি কোস্ট এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ঘিরে রেখেছে দেশটিকে। ১৮২২ সালে দেশটির গোড়াপত্তন হয় এবং ১৮৪৭ সালে এটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতন্ত্র। ইথিওপিয়ার সঙ্গে এটি একমাত্র আফ্রিকান দেশ যেটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দখলের সময় কখনো উপনিবেশে পরিণত হয়নি। দেশটির স্থানীয় জনসংখ্যা মূলত ১৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যার মধ্যে কপেলে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড়। লাইবেরিয়া কীভাবে ও কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? ১৮২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের সময় ৮৬ জন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আজকের লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায় এসে পৌঁছান। এই শহর এখন দেশটির প্রধান সমুদ্রবন্দর। তাদের পুনর্বাসনের পেছনে কাজ করছিলেন জেহুদি অ্যাশমুন নামের এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, যিনি আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির প্রতিনিধি ছিলেন। সংগঠনটি মূলত আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করেছিল। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, আবার অনেককে চাপ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এটি ছিল একদল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের প্রচেষ্টা, যারা মনে করতেন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখতে হুমকি। তাদের অনেকে বিশ্বাস করতেন, কৃষ্ণাঙ্গরা কখনোই আমেরিকান সমাজে সমঅধিকার পাবে না। তাই আফ্রিকায় তাদের জন্য একটি নতুন আবাস তৈরি করাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব তা স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত আফ্রিকান-আমেরিকান জোসেফ জেনকিন্স রবার্টস হন স্বাধীন লাইবেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রথমদিকে স্থানীয় আদিবাসীরা জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন নৌ কর্মকর্তা একজন স্থানীয় নেতাকে চাপে ফেলে জমি বিক্রি করান। রাজধানীর নাম রাখা হয় জেমস মনরোর নামে, যিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। ১৮২০ থেকে ১৮৬১ সালের মধ্যে আনুমানিক ১২ হাজার মুক্তিপ্রাপ্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান লাইবেরিয়ায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। লাইবেরিয়ার জনসংখ্যা কারা? মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বংশধর, যাদের বলা হয় আমেরিকো-লাইবেরিয়ান, তারা স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তারা বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। যদিও তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ, তারা বহু বছর আদিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত রেখেছিলেন। বাকি জনসংখ্যা মূলত পশ্চিম সুদান থেকে আগত আদিবাসীদের বংশধর, যারা মধ্যযুগে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। আরও অনেকে পাশের দেশগুলো থেকে দাসবাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক দখলের সময় লাইবেরিয়ায় এসে বসতি গড়েন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি প্রতিবেশী দেশগুলোর গৃহযুদ্ধপীড়িত মানুষদেরও আশ্রয় দিয়েছে, বিশেষ করে আইভরি কোস্ট থেকে। লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা কী? লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি। আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের নেতৃত্বে ১৮৪৭ সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় ইংরেজিকে মূল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে দেশটিতে ২৫টির বেশি আদিবাসী ভাষাও প্রচলিত, যেগুলো মূলত নাইজার-কঙ্গো ভাষা পরিবারের ম্যান্ডে, কওয়া এবং মেল শাখার অন্তর্ভুক্ত। লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণ কী ছিল? দেশটি দুটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা পেরিয়েছে। এর পেছনে ছিল জাতিগত বৈষম্য ও ক্ষমতার লড়াই। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ক্রান-এর সদস্য স্যামুয়েল ডো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমেরিকো-লাইবেরিয়ান সরকারের পতন ঘটান এবং প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টলবার্টকে হত্যা করেন। যদিও তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। ১৮৮৯ সালে প্রথম গৃহযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাওয়া দাসের বংশধর চার্লস টেলর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এতে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ ): বিদ্রোহী সংগঠন লার্ড প্রতিবেশী গিনির সহায়তায় টেলরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। যুদ্ধ গিনি ও সিয়েরা লিওনে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং টেলরের পদত্যাগের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। পরে টেলরকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। বর্তমানে লাইবেরিয়ার অবস্থা কেমন? দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশটি স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে। ২০১৭ সালে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন হয়, যা ১৯৪৪ সালের পর প্রথম। ২০২৩ সালের নির্বাচনে জোসেফ বোয়াকাই ৫০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ফুটবল তারকা জর্জ উইয়াহকে পরাজিত করেন। বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাইনস বলছেন, আজকের লাইবেরিয়ায় জাতিগত পরিচয় তেমন গুরুত্ব পায় না এবং আমেরিকো-লাইবেরিয়ানদের প্রভাব অনেকটাই কমেছে। তবে লাইবেরিয়ানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখনও ঘনিষ্ঠ। অনেক লাইবেরিয়ানই গ্রিন কার্ডধারী, যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তবে আফ্রিকায় ইউএসএইডের বাজেট কমিয়ে দেওয়া দেশটির জন্য ছিল একপ্রকার ধাক্কা। ট্রাম্প কেন লাইবেরিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন? সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে লাইবেরিয়া, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব দেশের ভূমি, খনিজ এবং তেলসম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, দারুণ উর্বর এলাকা, দুর্দান্ত খনিজ ও চমৎকার মানুষ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের এই বৈঠকে উপস্থিতি ছিল একটি সুযোগ, কারণ তিনি আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। এটি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। আফ্রিকা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অথচ ট্রাম্প অতীতে আফ্রিকাকে নিয়ে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন—যেমন আফ্রিকার দেশগুলোকে তিনি অবমাননা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকার যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি, তাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা চালাচ্ছে। বৈঠকে এমন একটি প্রস্তাবও উঠেছে বলে শোনা যায়, যদিও ট্রাম্প কী বিনিময়ে অফার দিয়েছেন বা কোন নেতা রাজি হয়েছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।