রাষ্ট্র কি প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংসের অনুমতি দিতে পারে? – ইউ এস বাংলা নিউজ




রাষ্ট্র কি প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংসের অনুমতি দিতে পারে?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২ মে, ২০২৫ | ৯:১৩ 72 ভিউ
প্রাণপ্রকৃতি মানেই আমাদের জীবন, আমাদের ভবিষ্যৎ। বন, নদী, পাহাড়, বৃক্ষ, দেখা অদেখা প্রাণ বা প্রাণবৈত্র্যি, এই সবকিছুর সমষ্টিতেই গঠিত আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রেরও। তবে বাস্তব নানা ঘটনা অঘটন ও পরিবেশকে গুরুত্ব না দিয়ে, উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যখন পরিবেশ ধ্বংস করে কিছু কার্যক্রম করা হচ্ছে, তখন প্রশ্ন উঠছে: রাষ্ট্র কি কখনো প্রাণপ্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসের অনুমতি দিতে পারে? এটি একটি নৈতিক, আইনগত ও বাস্তব প্রশ্ন। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনীতি তৈরিতে জনগণের কতটা অংশগ্রহণ থাকে তা একটি অমীমাংসিত বিষয় শুরু থেকেই। একদল শাসক গোষ্ঠী বা সমাজের উচুঁ শেণীর সুশীল বুদ্ধিজীবীরা জনগণের দোহাই দিয়ে, জনগণের উন্নয়নের কথা বলে, সমতার কথা বলে

যখন জনগোষ্ঠীকেই কষ্টে ফেলতে বা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে গুরুত্ব না দিয়ে সেই সম্প্রদায়েরই ক্ষতির আইন নীতি তৈরি করে তখন কতটা যন্ত্রণার হয় তা শুধু ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীই বলতে পারে। এসব আইন নীতি কতটা জনবান্ধব বা জনগণের মতো করে তা বিবেচনায় নেয়া হয় না। আবার সেই আইন নীতির দোহাই দিয়ে চলে জনসংস্কৃতি এবং প্রাণপ্রকৃতির সম্পর্ক ভাংগার খেলা। বলা হয় সংবিধান, রাষ্ট্র ও জনগণ একই সূত্রে গাঁথা। তবে এখানে শুধু মানুষ নয়, দেখা অদেখা সকল প্রাণবৈচিত্র্য একই সূত্রে গাঁথা সেটিও বলা জরুরি। আমরা মানুষের উন্নয়নে যখন শুধুই মানুষকে বিবেচনা করে উন্নয়ন পথে হাঁটতে চাইছি, তা কতটা ভয়ংকর যখন দিনে দিনে পরনির্ভশীল জাতি হয়ে উঠছি।

গাছ কাটো, নদী জলাধার শেষ করো, গরমে অতিষ্ট হয়ে এসি কেনো, কার্বন বাড়াও, কার্বন ট্রেডিং, কৌশলে ব্যবসা করো। মানুষকে দিনে দিনে সস্তা শ্রমিক বানাও। রাতে দিনে শ্রমের পিছনে ছোটো, দু হাত ভরে টাকা কামাও। টাকার স্বপ্নে বিভোর হও। তোমার নিজস্ব সংস্কৃতি, তোমার এলাকার বন গাছ বৃক্ষ সবই কেটে ফেলো। সকাল দুপুরে পাখির গান ভুলে যাও। সব কেটে সাবার করে কলকারখানা আর সস্তা শ্রমিকের কর্মসংস্থান বানাও। চারিদিকে শুধু কর্পোরেট কলকারখানা আর সস্তা শ্রমিক বানানোর একটা ধারাবাহিকতায় বেগবান। নগর থেকে গ্রামে, বড় শহর থেকে ছোট শহরে চারিদিকে বেগবান এই উন্নয়নের ঘোড়া। উন্নয়ন দৌড়ে প্রতিশ্রুতি ও পরিবেশবান্ধব পরিকলপনাও ভুলে যাচ্ছি আমরা। রাজধানী ঢাকায়

পান্থকঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাশয় রক্ষায় শতদিন পার হলেও তার প্রতিশ্রুতি যেমন বাস্তবায়ন করছে না সরকার। তেমিন নতুন করে বড় শহর থেকে ছোট শহরের পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। সরকারের মসনদে যারা কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনগণকে সেবা দেবার জন্য বসে আছেন, তারাও সব শুনে যেনো চুপ করে আছেন। সেই সুযোগে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বেড়েই চলেছে। লিজ নেবার কথা বলে, বারো হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তথা শ্রমিক বানানোর ছবক দিয়ে একটি কোম্পানি খরাপ্রবণ ও অত্যাধিক গরম এলাকা রাজশাহীতে শতাধিক বৃক্ষ কর্তন করেছে। একইসাথে একটি পুকুর তারা ভরাট করেছে। স্থানীয় মানুষের দাবি এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত

হবার পর রাজশাহীর নাগরিক সমাজ এর প্রতিবাদ করে। তারা এই বৃক্ষ কর্তন বন্ধ এবং পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরে আনতে বলে কোম্পানি কতৃপক্ষকে। এর জন্য তারা মানববন্ধনও করে এবং রাজশাহী জেলা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপিও দেয়। কিন্তু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোনো দাবি না মেনে তারা নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি কোম্পানিটিকে সবুজ শহর রাজশাহীর বৃক্ষ কাটার অনুমতি দিয়েছে? সরকার কি পানি সংকটাপন্ন রাজশাহীর পুকুর ভরাট করার অনুমিত দিয়েছে? এমনটা হবার কথা নয়। কারণ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অঙ্গীকারাবন্ধ। রাষ্ট্রের পরিচালনায় দায়িত্বরত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণে একটা স্পষ্ট অঙ্গীকার করেছে। সেখানে বলা আছে ‘কোনো উন্নয়ন যেনো পরিবেশ

ও মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না হয়।’ অন্যদিকে আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে ১৮ক-তে স্পষ্ট করে বলা আছে- “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।” এখন কথা হলো, রাষ্ট্র পরিচালিত সরকার কি তাহলে নিজেই নিজের নিয়ম ভেঙ্গেছে? নাকি কোম্পানিটি রাষ্ট্রের সাথে লীজ নীতির দোহাই দিয়ে রাজশাহীর পরিবেশ ধ্বংস করছে। রাষ্ট্র কি কোম্পানিটিকে গাছগুলো কাটার অনুমতি দিয়েছে? অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না-মহামান্য হাইকোর্টের রায় কি মেনেছে প্রতিষ্ঠানটি? নাকি তারা হাইকোর্টের রায়কেও অমান্য করেছেন। এসব প্রশ্নের সমাধান চায় রাজশাহীর মানুষ। কারণ রাজশাহীর মানুষ চায় না- তাদের শহরের

আর একটা গাছ কাটা পড়ুক। স্থানীয় জনগণ মনে করেন, বিগত সরকার উন্নয়নের নামে যে হারে রাজশাহী শহরের পুরাতন সকল বৃক্ষ কেটেছে তা কয়েক যুগের মধ্যে রেকর্ড করেছে। যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর তীব্র তাপদাহ বাড়ছে, এর মধ্যে এভাবে বৃক্ষ কর্তন করলে, রাজশাহীকে বৃক্ষশূন্য করলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। রাজশাহীর পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের বিশেষ দৃষ্টি একান্তভাবে কাম্য। কারণ বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খরা এবং তীব্র গরম, তাপপ্রবাহ হয়ে থাকে এই রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে। তাই পরিবেশ বৈচিত্র্য সুরক্ষায় আরো সতর্ক হতে হবে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে এখানে আর কোনো পুকুর ভরাট কিংবা বৃক্ষ কর্তন করা যাবে না। বড় বড় বৃক্ষগুলো সংরক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এই পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপ বন্ধে এবং জনগোষ্ঠীর চাওয়া পাওয়াকে জরুরিভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব এসব জনদাবিকে গুরুত্ব দেওয়া।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার পাঠ্যবই ছাপার আগেই ৭শ টন কাগজ বাতিল অটোমেশন বাতিল চান বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকরা যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ৩ পুলিশ সদস্য নিহত লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৬ বাংলাদেশি রাজধানীতে আজ কোথায় কী বাংলাদেশসহ ৫ দেশকে ‘হুমকি’ ভাবছে ভারত আগামী মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান টিআইবির চট্টগ্রাম কাস্টমসে ঘুষকাণ্ডে নতুন মোড় বৃহস্পতিবার থেকে ৫ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে ৭ দল অবশেষে চালু হচ্ছে আল-নাসিরিয়াহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২২ বছর ধরে আয়কর দেয় না হলি ফ্যামিলি কলেজ ও হাসপাতাল অবশেষে কমলো স্বর্ণের দাম ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩৮ বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে ট্রাম্প, ‘বিশেষ সম্পর্ক’ জোরদারের আশা দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আটকা পড়েছেন ১৭৮ যাত্রী আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য নতুন নির্দেশনা মাউশির সাবেক ডিসি সুলতানার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন