যৌন নির্যাতনে বেশি জড়িত আপন ও পরিচিতজনরা – ইউ এস বাংলা নিউজ




যৌন নির্যাতনে বেশি জড়িত আপন ও পরিচিতজনরা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ মার্চ, ২০২৫ | ৯:০২ 62 ভিউ
নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন ও সহিংসতায় আপন বা পরিচিতজনরাই বেশি জড়িত। ৮৫ শতাংশ ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ধর্ষক বা যৌন নির্যাতনকারী ভিকটিমের পরিচিত। সম্প্রতি মাগুরায় আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় তারই বোনের স্বামীর সহায়তায়। শুক্রবার মানিকগঞ্জ সদরে বিয়ের অনুষ্ঠানে তিন বছরের এক কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলে-এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার রাজধানীর গুলশান এলাকায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেফতার হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তারা ধর্ষকদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

দাবি করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। ধর্ষণে জড়িতদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইন দিয়ে নারী-কন্যাশিশুর ওপর হিংস তা রোধ সম্ভব নয়। আইনের শাসনের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনজন দ্বারা সহিংসতা রোধে প্রতিটি ঘরের অভিভাবকসহ পরিবারের সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু আইন দিয়ে নারী-শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো বর্বর ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে আইন রয়েছে-খুন করলে ফাঁসি। এটা প্রায় সবাই জানেন-কিন্তু খুন কি বন্ধ

হচ্ছে? খুনিরা কি আইন বোঝে? প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে খুন-ধর্ষণের কঠোর শাস্তির কথা লিপিবদ্ধ আছে। যদি আইন দিয়ে অপরাধ দূর করা যেত, তাহলে কোনো সমাজে খুন-ধর্ষণ হতো না। নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের ক্ষেত্রে আপনজন-পরিচিত ব্যক্তিরাই বেশি জড়িত। তবে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিচার সম্পন্ন করতেই হবে। ঘরে-বাইরে নারী ও কন্যাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘দেশে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে সমাজও এক প্রকার নীরব। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, ধর্ষক বা নির্যাতনকারীদের পক্ষেই বেশির ভাগ মানুষ অবস্থান নিচ্ছে। ফলে নারী

ও কন্যা নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে। জুলাই বিল্পবের পর পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এক প্রকার সমন্বয়নহীতা বিরাজ করছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে নির্যাতনকারীরা। হঠাৎ করেই যে নারী ধর্ষণ-নির্যাতন বাড়ছে এমনটা নয়। তবে হঠাৎ করেই বেশি খারাপ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ খুবই জরুরি। রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ কঠোর হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্র কঠোর হচ্ছে না বলেই নারীকে ঘরে বন্দি রাখতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হচ্ছে। নারীর পোশাক থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীবিদ্বেষী হয়ে উঠছে পুরুষরা। নারীরা ঘরে-বাইরে নিরাপদ থাকবে, নিরাপদে হাঁটবে-এমন পরিবেশ রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।’ ইউনিসেফের তথ্যমতে, বিশ্বে এ মুহূর্তে ৩৭ কোটি নারী অর্থাৎ প্রতি আটজনে একজন

নারী ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত আট বছরে ৩ হাজার ৪৩৮টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ৫৩৯ জনের বয়স ছয় বছরের কম। আর সাত থেকে বারো বছরের মধ্যে আছে ৯৩৩ জন। আইন ও সালিশকেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের গবেষণা অনুযায়ী, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আপন কিংবা পরিচিতদের দ্বারাই নারী ও শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনের ঘটনার অধিকাংশই আড়ালে থেকে যায়। আপনজন বা পরিচিতিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তরাও চায় না, এসব নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হোক। অনেক সময়

ঘটনা মিথ্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। আপনজন দ্বারা সহিংসতা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের সঙ্গে ঘটা ১০০টি যৌন নির্যাতনের ঘটনার ৯৩টির ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ভুক্তভোগী পরিচিত কেউ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আরএআইএনএন এ তথ্য দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারী শিশু সহিংসতার বিরুদ্ধে ঘর ও সমাজ থেকেই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, কিছু মানুষ তার অবদমিত ইচ্ছা পূরণের জন্য সহজ পথ খোঁজে। তারা শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী-কন্যাশিশুদের টার্গেট করে। কারণ অপরাধীরা ধরেই নেয়-শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও প্রকাশ করতে পারবে না। তাই এমন একটা

সমাজ দরকার, যেখানে নারীর প্রতি যে কোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে সেই সমাজ সোচ্চার হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকদের মতে, কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কমিটি করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে পারলে, ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো ঘটনা কমত। তাছাড়া যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ বন্ধে উপায় হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি। পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের বিচার। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হলে অপরাধ কমে আসবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের দিক থেকে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
হার্ট ভালো রাখতে খাবেন যে ৭ খাবার নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি সরকারি ডাক্তারদের ৮ নির্দেশনা দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজ নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, কে এই সুশীলা ‘আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ দুর্দান্ত ফর্মে আছে’ ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট বিক্রিই হচ্ছে না, জানা গেল কারণ নেপালে যেভাবে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ দেশের বেকারত্বের হার প্রকাশ বিবিএসের নেত্রকোনায় স্পিডবোট-নৌকার সংঘর্ষে নিখোঁজ ৪ শিশু হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ বলায় স্টাফদের নিন্দা জানাল বিবিসি অবশেষে ক্ষমা চাইলেন পপি খেলা ছাড়ার আগেই চাকরি পেলেন উসমান খাজা নিউজিল্যান্ডের ক্যাফে থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল কোহলি-আনুশকাকে! লঘুচাপের পূর্বাভাস, ৫ দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে যেসব জায়গায় ওয়াশিং মেশিন নিয়ে তর্ক করায় যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ব্যক্তির শিরশ্ছেদ জাকসু নির্বাচনের দায়িত্বপালনকালে পোলিং অফিসারের মৃত্যু অপহরণ লিবিয়ায়, মুক্তিপণের লেনদেন বাংলাদেশে সবজির বাজারে উত্তাপ, চড়া মাছের বাজারও ‘কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না, এ জায়গা আমাদের’