যে বাড়ির সামনে কেউ জুতা পায়ে, ছাতা মাথায় হাঁটতেন না – ইউ এস বাংলা নিউজ




যে বাড়ির সামনে কেউ জুতা পায়ে, ছাতা মাথায় হাঁটতেন না

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৮ আগস্ট, ২০২৫ | ৮:৫৬ 25 ভিউ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের গুপ্ত জমিদার বাড়িটি প্রায় তিনশ বছর আগের ঐতিহাসিক স্থাপনার নিদর্শন। স্থানীয়ভাবে এটি অদ্দার বাড়ি বলে পরিচিত। জমিদার রামমোহন গুপ্তের হাত ধরে এ বাড়ির গোড়াপত্তন। বাড়িটি মূলত কাঠ, চুন, সুরকি এবং ইট দিয়ে নির্মিত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এর স্থাপত্যে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর কারুকাজ বিদ্যমান। দুই ভাগে বিভক্ত বিশালাকার এ বাড়িটির একটি বাইরের অংশ, অপরটি ভেতরের। বাইরের অংশে আছে কাছারি ঘর। যেখানে জমিদারেরা বৈঠক করতেন, প্রজাদের অভিযোগ শুনতেন ও বিচার করতেন। ভেতরের অংশটি হলো অন্দরমহল। বাড়িটির চারদিকে আছে বড় বড় পুকুর, দীঘি ও মন্দির। তবে এখন সর্বত্র আগাছা ও ঝোপ–জঙ্গলে ভরে গেছে। দরজা, জানালার কোনো চিহ্ন নেই। দেয়ালে

ও বড় ফটকে জন্মেছে বট গাছের চারা। বাড়ির আঙিনা ও ভেতরের অংশে বাসা বেঁধেছে সাপ। কথিত আছে- একসময় বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ কখনো জুতা পায়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটতেন না। স্বয়ং ব্রিটিশরাও এ জমিদার বাড়িকে সম্মান জানাতেন। ইতিহাস ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, এই জমিদার বংশধররা ময়মনসিংহ জেলা থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। তখন এই এলাকাটি আরকান রাজ্যের অধীনে ছিল এবং এখানে একচেটিয়া আদিবাসিদের অর্থাৎ মং, চাকমা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। তখন তারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করত। তাই মং, চাকমা ও অন্য আদিবাসিদের এই এলাকা ছাড়ার জন্য রামমোহন গুপ্ত হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতিকে নিয়ে আদিবাসী হটাও আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে

তারা একসময় এই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। এর ধারাবাহিকতায় রামমোহন গুপ্ত হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতির কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন এবং সবার বিপদ আপদে সাড়া দিতেন। তার সঙ্গে একসময় এক মুসলিম মহিলার পরিচয় হয়। যার সঙ্গে তিনি ধর্মবোনের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। হঠাৎ একদিন ওই মহিলা স্বপ্নের মাধ্যমে গুপ্তধনের সন্ধান পান। তখন তিনি তার ধর্মভাই রামমোহনকে নিয়ে উক্ত গুপ্তধন উদ্ধার করেন। তবে তার আপন কেউ না থাকাতে ধর্মভাই রামমোহনকে সব সম্পদ দান করেন। আর এই বিশাল সম্পদ দিয়ে রামমোহন গুপ্ত তার এই জমিদারির সূচনা করেন। এরপর তিনি ও তার বংশধররা জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির আগপর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। রামমোহন গুপ্ত

ছিলেন অত্যন্ত প্রজাহিতৈষী জমিদার। তিনি তার প্রজাদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অনেক মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। জমিদার রামমোহন গুপ্ত তার ধর্মবোন মারা গেলে তার জন্য প্রতি বছর তিনি একই রঙের প্রায় আটটি গরু জবাই করে মেহমানদারির আয়োজন করতেন। জমিদার রামমোহন গুপ্ত মারা যাওয়ার পর পরবর্তী জমিদাররা আস্তে আস্তে রামমোহনের ধর্মবোনেরর জন্য করা মেহমানদারি বন্ধ করে দেন। বিভিন্ন তথ্যমতে, জমিদার রামমোহন গুপ্ত ১৭০০ সালের শেষের দিকে এই ভবন নির্মাণ করেন। ১৯৪৮ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেলে এই বাড়ির দুর্দশার শুরু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকারেরা বাড়িটিতে আগুন দেয়। বহু মূল্যবান পুরাকীর্তি লুট করে। কালের সাক্ষী এ ভবন

সরকারিভাবে সংরক্ষণ প্রয়োজন। প্রায় ১০ একর জায়গার উপর ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন, কাছারি ঘর, নাচঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দিরসহ অনেক কিছু এখানে তৈরি করা হয়েছে। ১২০ কক্ষের বাড়িটিতে এখন মাত্র ২০টি কক্ষ অবশিষ্ট রয়েছে। এখানে এখনো জমিদার বংশের উত্তরসূরিরা বসবাস করছেন। তবে এখন আর তাদের সেই জমিদারি জৌলুস নেই। এখন কষ্টে ও অনাহারে তাদের দিন কাটাতে হয়। সরেজমিন দেখা যায়, এক সময়ের প্রতাপশালী জমিদার রামমোহনের উত্তরসূরিদের এখন দিন কাটছে অভাব-অনটনে। পুরো ভবনটিরই এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। যে কোনো সময় ভেঙে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে এ ভবনে বসবাস করছেন কিছু বংশধর। বাকিরা চট্টগ্রাম শহরে। অন্য একটি অংশ ভারতে চলে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, গুপ্ত জমিদার

বাড়িটি সরকারিভাবে সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে দিনে দিনে বিলীন হয়ে যাবে। ইতিহাস থেকে নাম মুছে যাবে ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ির। নতুন প্রজন্ম দেখতে পারবে না শেষ স্মৃতিটুকুও। প্রাচীন এ জমিদার বাড়ি বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। কালের সাক্ষী এই ভবন সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে অভিমত বিশিষ্টজনের। পদুয়া জমিদার বাড়ির নিকটাত্মীয় প্রধান শিক্ষক সুনীল চৌধুরী বলেন, গুপ্ত বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ বাড়ির সৌন্দর্য ও দাপট ছিল অপরিসীম। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখনো এ বাড়ি দেখতে আসে। সংস্কারের অভাবে এ বিশাল জমিদার বাড়ি একেবারেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বর্তমান সরকার যদি বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তাহলে ভবিষ্যৎ

প্রজন্ম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। পদুয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিকায়ত আলি বলেন, ঐতিহাসিক পদুয়া গুপ্ত জমিদার বাড়িটির সংরক্ষণের দাবি অনেক দিনের। এই ভবনকে অবিলম্বে পুরাকীর্তির স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী পদুয়া জমিদার বাড়িটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গুপ্ত জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
জিমে ঘাম ঝরাচ্ছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা, জানালেন ফিট থাকার রহস্য ঢাবির হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা কর্তৃপক্ষের নীরবতায় ক্ষুব্ধ তিস্তাপাড়বাসী, নদী গর্ভে শত শত বিঘা জমি অসুস্থ স্ত্রীকে কবর দেওয়ার চেষ্টা স্বামীর, ভিডিও ভাইরাল গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার ৪ সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে ফাইনালের আগে যুবাদের দুর্দান্ত জয় ডেঙ্গুতে টালমাটাল চট্টগ্রাম মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাবি জুলাইয়ে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার, কারাগারে ভুয়া ডাক্তার শুল্ক ইস্যুতে বিশ্ববাজারে বাড়ল সোনার দাম মাদুরোকে ধরিয়ে দিলে ৫ কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ বাক্স মাথায় পড়ে শিশুর মৃত্যু প্রবাসীদের জন্য সুখবর গরম নিয়ে দুঃসংবাদ আবহাওয়া অফিসের এস আলমের ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক রাখার নির্দেশ মেঘনায় নিখোঁজের ১৯ ঘণ্টা পর শিশুর লাশ উদ্ধার ২২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল ভারত