
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
বিস্ময়ের বাংলাদেশে অধরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা

মহান স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। যে আকাঙ্ক্ষায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তা আজও অধরা বলে মন্তব্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের মতে, মানুষ স্বাধীন দেশ পেয়েছে কিন্তু মুক্তির স্বাদ পায়নি। মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। সমালোচনা করলে সহ্য করতে হয়েছে জেলজুলুম। হতে হয়েছে গুম। দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট ছিল প্রকাশ্যে। দেশের অর্থসম্পদ পাচার হয়ে গেছে বিদেশে। এসবের অনিবার্য পরিণতি ছিল ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পালিত হচ্ছে দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে স্বাধীনতার প্রত্যাশা-প্রাপ্তি এবং নতুন প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে কথা
হয় দেশের প্রথিতযশা সম্মুখসারির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সঙ্গে কথা বলেন তারা। ৫৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তি না মেলায় অনেকটা হতাশা ও ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে মহান স্বাধীনতা পেয়েছি সেই অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারিনি। গত ৫৪ বছরে দেশের মানুষ পদে পদে বঞ্চিত হয়েছে। একেক দল ক্ষমতায় এসেছে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানি করেছে। পরাধীনতার শিকল ভাঙতে ’৭১-এর পর একাধিবার অভ্যুত্থান হয়েছে। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার দেখা মেলেনি। পরাধীনতার শিকলে বন্দি থাকা মানুষদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর ক্ষুব্ধতা থেকে ২৪-এর জন্ম হয়েছে। এখন নতুন করে
পথচলা শুরু হবে স্বাধীন দেশের মানুষের। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে চাওয়া-পাওয়ার ফারাক বিশাল মন্তব্য করে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিবও তিনি। তার মতে, রাজনীতির হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলগুলো ৫৪ বছরে মহান স্বাধীনতার অর্জন ভূলুণ্ঠিত করেছে। দলীয় পেশিশক্তি বাড়াতে গিয়ে সাধারণ মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫৪ বছরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই দেশ শাসনের নামে সাধারণ মানুষকে শোষণ করেছে। লুটপাট করেছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আসেনি। স্বাধীনতার নামে পরাধীনতায় বন্দি হয়ে আছি। এখান থেকে
বাঁচতে হবে। প্রকৃত স্বাধীনতা উপভোগ করতে হলে দেশের অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস দূর করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৬ নম্বর সেক্টরে জুনিয়র লিডার (জেএল) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। দেশের মানুষ সব সময় প্রকৃত স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছেন। যার অনিবার্য পরিণতি ছিল ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনাও ছিল একই কারণে। মানুষ তার স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে সেদিন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন যা আমাদের কাম্য ছিল না। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এই সদস্য বলেন, মানুষ নির্দ্বিধায় কথা বলতে চায়, সমালোচনা করতে চায়। এজন্য রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক কোনো নিপীড়নের শিকার হবে
না। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চাওয়া। শুধু তাই নয়, মানুষ নির্বিকারচিত্রে তার প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। কিন্তু কখনোই সুষ্ঠুভাবে রায় দিতে পারেনি। প্রতিফলিত হয়নি আকাঙ্ক্ষা। তার অনিবার্য পরিণতিই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আবু জাফর বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে নানা বিষয় নিয়ে আফসোস হয়। আমরা একমাত্র জাতি যেখানে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সরকার গঠন করেনি। সরকার পরিচালনা করেছে একটি দল। অথচ যদি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ পরিচালনা করত তাহলে দেশের মানুষকে সরকার পতনের মতো আন্দোলন করতে হতো না। আগেও ঘুস দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হতো এখনো সরকারি অফিসে ঘুস দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হয়। তবে যে বৈষম্য বিলোপের উদ্দেশ্য নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে তা বাস্তবায়ন
হোক এই প্রত্যাশা করি। রণাঙ্গনের যোদ্ধা এস. কে. জবিউল্লাহ বলেন, শুধু দেশের মাটি ও মানুষের স্বাধীনতা চেয়েছি। মাটির স্বাধীনতা পেলেও মানুষের স্বাধীনতা পাইনি। দেশ স্বাধীনের পর দেশের বড় তিনটি দল ক্ষমতায় ছিল। তারা কেউই প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ মানুষকে দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ শুধু স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করেছে। বিনিময়ে দেশ এবং মুক্তিযোদ্ধারা কিছুই পায়নি। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার একটাই চাওয়া-দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বদলে উল্টো বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্যবাদী রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির দাপট বেড়েছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সেই বৈষম্যহীন
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আবার সামনে এনেছে। সে কারণে আমি মনে করি, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান আসলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জনগণের লড়াই ও প্রত্যাশারই ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক কমান্ডার ফাহিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, কিছু পাওয়ার জন্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমাদের দেশটা স্বাধীন হবে, সমৃদ্ধ হবে। আমরা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করব। কিন্তু সেটা হয়নি। এখনো অনেক সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের শাসক মনে করেন। প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নতুন একটি ইতিহাস তৈরি হলেও দেশে নতুন করে অরাজকতা শুরু হয়েছে। লোভ থেকে নেতাদের বেরিয়ে না এলে এই দেশের উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরে নৌকমান্ডো বাহিনীর কমান্ডার আবুল বাশার বলেন, স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একাধিক মুক্তিযোদ্ধা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তন বেড়েছে অনেক। অবকাঠামোর বিস্তার ঘটেছে, জিডিপি বেড়েছে বহুগুণ, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু একই সময়ে শ্রেণিবৈষম্যও বেড়েছে প্রকটভাবে। দেশের বিপুল সম্পদ লুণ্ঠিত ও পাচার হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে, বারবার স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে আটকে গেছে দেশ। বাকস্বাধীনতা ছিল আইনের প্যাঁচে বন্দি। সরকারের সমালোচনা করলেই মিলত জুলুম, নির্যাতন ও জেল। থাকত গুম হওয়ার আশঙ্কা। শ্রমজীবী মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা, বঞ্চনা ও জুলুম অব্যাহত আছে। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান শ্রেণিবৈষম্যের অন্যতম চিহ্ন। তারা বলেন, গত জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা একটি গভীর দুর্নীতিগ্রস্ত ও অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করেছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের পর বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে, স্বৈরাচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের জন্য শক্তিশালী জনমত তৈরি হয়েছে।
হয় দেশের প্রথিতযশা সম্মুখসারির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সঙ্গে কথা বলেন তারা। ৫৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তি না মেলায় অনেকটা হতাশা ও ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে মহান স্বাধীনতা পেয়েছি সেই অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারিনি। গত ৫৪ বছরে দেশের মানুষ পদে পদে বঞ্চিত হয়েছে। একেক দল ক্ষমতায় এসেছে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানি করেছে। পরাধীনতার শিকল ভাঙতে ’৭১-এর পর একাধিবার অভ্যুত্থান হয়েছে। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার দেখা মেলেনি। পরাধীনতার শিকলে বন্দি থাকা মানুষদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর ক্ষুব্ধতা থেকে ২৪-এর জন্ম হয়েছে। এখন নতুন করে
পথচলা শুরু হবে স্বাধীন দেশের মানুষের। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে চাওয়া-পাওয়ার ফারাক বিশাল মন্তব্য করে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিবও তিনি। তার মতে, রাজনীতির হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলগুলো ৫৪ বছরে মহান স্বাধীনতার অর্জন ভূলুণ্ঠিত করেছে। দলীয় পেশিশক্তি বাড়াতে গিয়ে সাধারণ মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫৪ বছরে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই দেশ শাসনের নামে সাধারণ মানুষকে শোষণ করেছে। লুটপাট করেছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আসেনি। স্বাধীনতার নামে পরাধীনতায় বন্দি হয়ে আছি। এখান থেকে
বাঁচতে হবে। প্রকৃত স্বাধীনতা উপভোগ করতে হলে দেশের অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস দূর করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৬ নম্বর সেক্টরে জুনিয়র লিডার (জেএল) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। দেশের মানুষ সব সময় প্রকৃত স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছেন। যার অনিবার্য পরিণতি ছিল ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনাও ছিল একই কারণে। মানুষ তার স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে সেদিন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন যা আমাদের কাম্য ছিল না। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এই সদস্য বলেন, মানুষ নির্দ্বিধায় কথা বলতে চায়, সমালোচনা করতে চায়। এজন্য রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক কোনো নিপীড়নের শিকার হবে
না। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চাওয়া। শুধু তাই নয়, মানুষ নির্বিকারচিত্রে তার প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। কিন্তু কখনোই সুষ্ঠুভাবে রায় দিতে পারেনি। প্রতিফলিত হয়নি আকাঙ্ক্ষা। তার অনিবার্য পরিণতিই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক আবু জাফর বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে নানা বিষয় নিয়ে আফসোস হয়। আমরা একমাত্র জাতি যেখানে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সরকার গঠন করেনি। সরকার পরিচালনা করেছে একটি দল। অথচ যদি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ পরিচালনা করত তাহলে দেশের মানুষকে সরকার পতনের মতো আন্দোলন করতে হতো না। আগেও ঘুস দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হতো এখনো সরকারি অফিসে ঘুস দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হয়। তবে যে বৈষম্য বিলোপের উদ্দেশ্য নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে তা বাস্তবায়ন
হোক এই প্রত্যাশা করি। রণাঙ্গনের যোদ্ধা এস. কে. জবিউল্লাহ বলেন, শুধু দেশের মাটি ও মানুষের স্বাধীনতা চেয়েছি। মাটির স্বাধীনতা পেলেও মানুষের স্বাধীনতা পাইনি। দেশ স্বাধীনের পর দেশের বড় তিনটি দল ক্ষমতায় ছিল। তারা কেউই প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ মানুষকে দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ শুধু স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করেছে। বিনিময়ে দেশ এবং মুক্তিযোদ্ধারা কিছুই পায়নি। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার একটাই চাওয়া-দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বদলে উল্টো বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্যবাদী রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির দাপট বেড়েছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সেই বৈষম্যহীন
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে আবার সামনে এনেছে। সে কারণে আমি মনে করি, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান আসলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জনগণের লড়াই ও প্রত্যাশারই ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক কমান্ডার ফাহিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, কিছু পাওয়ার জন্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমাদের দেশটা স্বাধীন হবে, সমৃদ্ধ হবে। আমরা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করব। কিন্তু সেটা হয়নি। এখনো অনেক সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের শাসক মনে করেন। প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নতুন একটি ইতিহাস তৈরি হলেও দেশে নতুন করে অরাজকতা শুরু হয়েছে। লোভ থেকে নেতাদের বেরিয়ে না এলে এই দেশের উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরে নৌকমান্ডো বাহিনীর কমান্ডার আবুল বাশার বলেন, স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একাধিক মুক্তিযোদ্ধা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তন বেড়েছে অনেক। অবকাঠামোর বিস্তার ঘটেছে, জিডিপি বেড়েছে বহুগুণ, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু একই সময়ে শ্রেণিবৈষম্যও বেড়েছে প্রকটভাবে। দেশের বিপুল সম্পদ লুণ্ঠিত ও পাচার হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে, বারবার স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে আটকে গেছে দেশ। বাকস্বাধীনতা ছিল আইনের প্যাঁচে বন্দি। সরকারের সমালোচনা করলেই মিলত জুলুম, নির্যাতন ও জেল। থাকত গুম হওয়ার আশঙ্কা। শ্রমজীবী মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা, বঞ্চনা ও জুলুম অব্যাহত আছে। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান শ্রেণিবৈষম্যের অন্যতম চিহ্ন। তারা বলেন, গত জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা একটি গভীর দুর্নীতিগ্রস্ত ও অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করেছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের পর বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে, স্বৈরাচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের জন্য শক্তিশালী জনমত তৈরি হয়েছে।