
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ন্যায়বিচারের পথে এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ

শিশুদের ‘নোবেল’ শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত সাতক্ষীরার তরুণ সুদীপ্ত

বাতিল হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব মামলা, দায়মুক্তি পাচ্ছেন আসামিরা

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ আর নেই

বাংলাদেশে শুভেচ্ছা সফরে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমাম প্রশিক্ষণ দেবে তুর্কি ফাউন্ডেশন

উপদেষ্টা আসবেন বলে ২ কোটি টাকা গচ্চায় অস্থায়ী সংস্কার- চলে গেলেই তুলে নেবে সড়ক বিভাগ
বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলেই সন্দেহ, বন্ধ হচ্ছে একে একে ভিসার দুয়ার

একসময় মনে করা হতো—যে পাসপোর্টে যত বেশি দেশের ভিসা, সেটিই তত বেশি মর্যাদাপূর্ণ। বেশি দেশ ভ্রমণ মানেই শক্তিশালী পাসপোর্ট। কিন্তু সেই সময় এখন অতীত। বর্তমান বাস্তবতায় সবুজ মলাটের বাংলাদেশি পাসপোর্ট যেন বিশ্বের বহু দেশের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত এক বোঝা’। উন্নত দেশ তো দূরের কথা, এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশও বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।
এমনকি যেসব দেশে আগে ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা ছিল, সেসব দেশও এখন বিমানবন্দরে বাংলাদেশি যাত্রীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
তথ্য বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এখন বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব দেশে ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় বেড়েছে, প্রত্যাখ্যানের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিসা পেলেও বিমানবন্দরে পৌঁছে যাচাই-বাছাইয়ের
নামে অনেককে ‘অফলোড’ করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টের মূল্য কমে যাওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো পর্যটননির্ভর দেশগুলোতে। এসব দেশে নির্দিষ্ট শর্তে অন-অ্যারাইভাল ভিসার নিয়ম থাকলেও অনেক বাংলাদেশিকে সেখানে পৌঁছেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। একসময় ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশিদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিনামূল্যে দিত। এখন সেখানে ভিসা পেতে জমা দিতে হচ্ছে নানা নথিপত্র ও ফি, তবুও নিশ্চিতভাবে ভিসা মেলে না। অন্যদিকে, ভারত গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে সীমিতভাবে কেবল মেডিকেল ভিসা দেওয়া হলেও সামান্য ত্রুটি পেলেই যাত্রীদের অফলোড করা হচ্ছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ—বিশেষ করে দুবাই ও আবুধাবিও—নতুন করে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে। সবমিলিয়ে
এখন যেন আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশি পাসপোর্ট হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবিশ্বস্ত এক নথি। কেন এমনটা ঘটছে? অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে প্রবেশে অনীহা বৃদ্ধির বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিসার অপব্যবহার ও অবৈধ অভিবাসন। তাদের মতে, অনেকে পর্যটক ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই—আবুধাবে প্রবেশ করে দেশে ফেরেন না; ভিসার মেয়াদ শেষ হলে লুকিয়ে কাজ করেন বা পরে গ্রেপ্তার হয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। একই রুট ব্যবহার করে কিছু বাংলাদেশি অনৈবাচিতভাবে তৃতীয় দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন—এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনা বিশ্লেষণ হলে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ই জুলাই ৯৬ জন, ১৩ই জুলাই ১২৩ জন, ২৬শে জুলাই ৮০
জন এবং আগস্ট মাসে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৮ জন বাংলাদেশিকে বিমানবন্দরেই আটকে পরে পরবর্তী ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে দেশটির দৈনিক দ্য স্ট্রেইটস টাইম জানিয়েছে, পর্যটন ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈধ হোটেল বুকিং রাখাটা একটি মৌলিক শর্ত। ফেরত পাঠানো যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই হোটেল বুকিং সন্দেহজনক ছিল বা তারা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি; তাছাড়া যাদের কাছেই পর্যাপ্ত ভ্রমণকালীন অর্থ ছিল না, তাদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে। দলিল ও অভিযোজন অনুযায়ী, দালালদের ভুল বোঝানোয়ের শিকার হয়ে অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় শ্রমের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য এসব দালাল যাত্রীদের বিভিন্ন বেআইনি কৌশল শেখায়—যেমন অনিওফলোড হলে শ্রেণি থেকে
পিছু হটিয়া বিমানবন্দরের বিশ্রামাগারে লুকিয়ে থাকা এবং শিফট বদল হলে আবার লাইনে ফিরে দেখা। এই প্রক্রিয়া ও নৈরাজ্যজনিত আচরণের কারণে মালয়েশিয়া বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ওপর আরও কড়া নজর রাখছে। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার কথা বলে এদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেও প্রাসঙ্গিক আমন্ত্রণপত্র বা ঠিকানাসহ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন; এ ধরনের অসঙ্গতি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মনে সন্দেহ জাগায় যে তারা হয়ত অনৈবাধভাবে কাজ করতে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখার একটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা অনেকেরই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে—দালালরা তাদের বিভ্রান্ত করে ট্যুরিস্ট ভিসায় কাজ করাতে পাঠায় এবং বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য নানা অনৈতিক কৌশল শেখায়। এ কারণেই
মালয়েশিয়া এখন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক। এ ছাড়াও, কেউ কেউ মালয়েশিয়াকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে লিবিয়ার মধ্যমে ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছেন—যাওয়ার পথে এই রুটেও ঢের ঝুঁকি ও অনৈতিক কৌশল ব্যবহার হচ্ছে। ভিসা দিলেও বৃদ্ধি পেয়েছে জটিলতা, লাগছে লম্বা সময় থাইল্যান্ড এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে গড়ে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে, যেখানে অন্য দেশগুলোর জন্য প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত। পর্যটননির্ভর এই দেশটি প্রতিবেশী ভারতীয় নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিচ্ছে, অথচ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে একগাদা কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবেদনকারীদের পাসপোর্টের কপি, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, অফিসের অনাপত্তিপত্রসহ ডজনখানেক নথি জমা দিতে হয়।
কাগজে-কলমে ৭-১০ কার্যদিবসে ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এখন তা ৪৫ দিন বা তারও বেশি সময় লাগছে। ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, থাইল্যান্ডে ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু হলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে। নতুন পাসপোর্টধারীদের ভিসা মঞ্জুর বা বাতিল করতে দেশটি ৪৫–৫০ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে, অনেক সময় আরও বেশি। এতে অনেকে নির্ধারিত ট্যুর বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে প্রতিবেশী ও পর্যটনবান্ধব অনেক দেশই এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ বা সীমিত করেছে—যেমন ভারত, কাতার, বাহরাইন, মিশর, দুবাই, আবুধাবি ও ভিয়েতনাম। তুরস্কে ভিসা পেতে অতিরিক্ত সময় লাগছে, ফিলিপাইন প্রক্রিয়াটি জটিল করেছে, আর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ভিসা দিলেও বিমানবন্দরে অনেককে অফলোড করছে। ফলে বিদেশগামী পর্যটক সংখ্যা কমে যাওয়ায় দেশীয় ট্যুর অপারেটররা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা জানান, থাইল্যান্ডে প্রবেশের পর অনেক বাংলাদেশি অন্য দেশে চলে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করছেন। এ কারণে অন্যান্য দেশ থেকে থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশিদের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে সিঙ্গাপুরে আবেদন জমা দেওয়ার সাত দিনের মধ্যেই ভিসা সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তবে এই বছর দেশটিতে ভিসা রিজেকশনের হারও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নিকটবর্তী দেশগুলোতে যেতেও হয়রানি দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ একে একে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করলেও, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা পূর্ব পর্যন্ত ব্যতিক্রম ছিল। নেপাল বছরে একবার বিনামূল্যে ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, নতুন পাসপোর্টধারী অনেক যাত্রী পাসপোর্ট নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে নেপালে প্রবেশ করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতার অভাবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সন্দেহ তৈরি হয়, অনেকে নেপালকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অন্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কা থাকায়। কিছু যাত্রী ভুয়া হোটেল বুকিং বা ভ্রমণ পরিকল্পনা দেখিয়ে নেপালে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। থাইল্যান্ডে ই-ভিসা ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কেউ নিজেই আবেদন করতে পারলেও, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। নতুন পাসপোর্টে ভিসা দেওয়ার বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেশটি ৪৫–৫০ দিন সময় নিচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকের ট্যুর ভেস্তে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কাতেও অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কলম্বো বিমানবন্দরে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার প্রতিবেদককে প্রায় ৬-৭ মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ১৭টি দেশের ভিসা পাসপোর্টে থাকা সত্ত্বেও অফিসার জানতে চান, ট্যুরিস্ট ভিসায় কেন এসেছেন, ছয় দিনের হোটেল বুকিং, কোথায় ঘুরবেন এবং কীভাবে ঘুরবেন। পরিচয় জানতে চাইলে সাংবাদিক আইডি কার্ড দেখান। এরপরই পাসপোর্টে সিল দেওয়া হয়। অফিসার বলেন, “বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অনেকেই অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। তাই আমরা বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছি।” মালদ্বীপে অন-অ্যারাইভাল ভিসার ন্যূনতম শর্ত হলো আগাম হোটেল বুকিং দেখানো। অনেক বাংলাদেশি ভুয়া বুকিং কপি নিয়ে যান বা ঠিকানা জানাতে ব্যর্থ হন, ফলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খল মনোভাবের কারণে অনেক দেশের ধারণা, বাংলাদেশিরা সেখানে অপকর্ম করতে পারে। তাই তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলে সতর্কতা অবলম্বন করে। ট্যুর অপারেটরদের মতে, যদি বাংলাদেশিরা নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে, তখনই ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর হবে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি বলেন, “পর্যটনবান্ধব প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ বা সীমিত করেছে। ভারত, কাতার, বাহরাইন, মিশর, দুবাই, আবুধাবি, ভিয়েতনাম বন্ধ করেছে। তুরস্ক অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে, ফিলিপাইন প্রক্রিয়া জটিল করেছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ভিসা দিলেও বিমানবন্দরে অনেককে অফলোড করছে। পর্যটকরা বিদেশ ভ্রমণ কমাচ্ছে, ফলে ট্যুর অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উচিত দ্রুত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করা।” বাংলাদেশের শক্তিশালী পাসপোর্ট এখন শক্তিহীন যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রতি বছর বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচক প্রকাশ করে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। দীর্ঘ দুই দশক ধরে ক্রমশ অবনতি ঘটতে ঘটতে বর্তমানে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৯৪-এ। একই অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিন এবং আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। ২০২৩ সালে এই অবস্থান আরও শোচনীয় ছিল, ১০১তম। একই অবস্থা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কলম্বো বিমানবন্দরে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার প্রতিবেদককে প্রায় ছয় থেকে সাত মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পাসপোর্টে ১৭টি দেশের ভিসা থাকলেও অফিসার জানতে চান, ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এখানে আসার উদ্দেশ্য কী। ভিসা প্রদানে অনীহার কারণ জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, “একটি দেশ সাধারণত অন্য দেশের নাগরিককে ভিসা ইস্যু করে যেন তিনি সেখানে ভ্রমণ করে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখেন। কিন্তু অনেক বাংলাদেশি পর্যটক পর্যটন ভিসা নিয়ে অবৈধভাবে ওভারস্টে করছেন, কাজ করছেন, বা সমস্যার সৃষ্টি করছেন। এতে দেশ ও মানুষের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, যা ভিসা না দেওয়া এবং অফলোডের মূল কারণ।” তিনি আরও বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিশৃঙ্খল মনোভাবের কারণে অনেক দেশের ধারণা, বাংলাদেশিরা সেখানে অপকর্ম করতে পারে। এতে সেই দেশের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। আমরা যদি নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারি, তখনই ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হবে।”
নামে অনেককে ‘অফলোড’ করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টের মূল্য কমে যাওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো পর্যটননির্ভর দেশগুলোতে। এসব দেশে নির্দিষ্ট শর্তে অন-অ্যারাইভাল ভিসার নিয়ম থাকলেও অনেক বাংলাদেশিকে সেখানে পৌঁছেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। একসময় ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশিদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিনামূল্যে দিত। এখন সেখানে ভিসা পেতে জমা দিতে হচ্ছে নানা নথিপত্র ও ফি, তবুও নিশ্চিতভাবে ভিসা মেলে না। অন্যদিকে, ভারত গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে সীমিতভাবে কেবল মেডিকেল ভিসা দেওয়া হলেও সামান্য ত্রুটি পেলেই যাত্রীদের অফলোড করা হচ্ছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ—বিশেষ করে দুবাই ও আবুধাবিও—নতুন করে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে। সবমিলিয়ে
এখন যেন আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশি পাসপোর্ট হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবিশ্বস্ত এক নথি। কেন এমনটা ঘটছে? অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে প্রবেশে অনীহা বৃদ্ধির বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিসার অপব্যবহার ও অবৈধ অভিবাসন। তাদের মতে, অনেকে পর্যটক ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই—আবুধাবে প্রবেশ করে দেশে ফেরেন না; ভিসার মেয়াদ শেষ হলে লুকিয়ে কাজ করেন বা পরে গ্রেপ্তার হয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। একই রুট ব্যবহার করে কিছু বাংলাদেশি অনৈবাচিতভাবে তৃতীয় দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন—এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের ঘটনা বিশ্লেষণ হলে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ই জুলাই ৯৬ জন, ১৩ই জুলাই ১২৩ জন, ২৬শে জুলাই ৮০
জন এবং আগস্ট মাসে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৮ জন বাংলাদেশিকে বিমানবন্দরেই আটকে পরে পরবর্তী ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে দেশটির দৈনিক দ্য স্ট্রেইটস টাইম জানিয়েছে, পর্যটন ভিসায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈধ হোটেল বুকিং রাখাটা একটি মৌলিক শর্ত। ফেরত পাঠানো যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই হোটেল বুকিং সন্দেহজনক ছিল বা তারা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি; তাছাড়া যাদের কাছেই পর্যাপ্ত ভ্রমণকালীন অর্থ ছিল না, তাদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে। দলিল ও অভিযোজন অনুযায়ী, দালালদের ভুল বোঝানোয়ের শিকার হয়ে অনেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় শ্রমের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য এসব দালাল যাত্রীদের বিভিন্ন বেআইনি কৌশল শেখায়—যেমন অনিওফলোড হলে শ্রেণি থেকে
পিছু হটিয়া বিমানবন্দরের বিশ্রামাগারে লুকিয়ে থাকা এবং শিফট বদল হলে আবার লাইনে ফিরে দেখা। এই প্রক্রিয়া ও নৈরাজ্যজনিত আচরণের কারণে মালয়েশিয়া বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ওপর আরও কড়া নজর রাখছে। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার কথা বলে এদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলেও প্রাসঙ্গিক আমন্ত্রণপত্র বা ঠিকানাসহ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন; এ ধরনের অসঙ্গতি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মনে সন্দেহ জাগায় যে তারা হয়ত অনৈবাধভাবে কাজ করতে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখার একটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা অনেকেরই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে—দালালরা তাদের বিভ্রান্ত করে ট্যুরিস্ট ভিসায় কাজ করাতে পাঠায় এবং বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য নানা অনৈতিক কৌশল শেখায়। এ কারণেই
মালয়েশিয়া এখন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্ক। এ ছাড়াও, কেউ কেউ মালয়েশিয়াকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে লিবিয়ার মধ্যমে ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছেন—যাওয়ার পথে এই রুটেও ঢের ঝুঁকি ও অনৈতিক কৌশল ব্যবহার হচ্ছে। ভিসা দিলেও বৃদ্ধি পেয়েছে জটিলতা, লাগছে লম্বা সময় থাইল্যান্ড এখন বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে গড়ে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে, যেখানে অন্য দেশগুলোর জন্য প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত। পর্যটননির্ভর এই দেশটি প্রতিবেশী ভারতীয় নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিচ্ছে, অথচ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে একগাদা কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবেদনকারীদের পাসপোর্টের কপি, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, অফিসের অনাপত্তিপত্রসহ ডজনখানেক নথি জমা দিতে হয়।
কাগজে-কলমে ৭-১০ কার্যদিবসে ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এখন তা ৪৫ দিন বা তারও বেশি সময় লাগছে। ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, থাইল্যান্ডে ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু হলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে। নতুন পাসপোর্টধারীদের ভিসা মঞ্জুর বা বাতিল করতে দেশটি ৪৫–৫০ দিন পর্যন্ত সময় নিচ্ছে, অনেক সময় আরও বেশি। এতে অনেকে নির্ধারিত ট্যুর বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে প্রতিবেশী ও পর্যটনবান্ধব অনেক দেশই এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ বা সীমিত করেছে—যেমন ভারত, কাতার, বাহরাইন, মিশর, দুবাই, আবুধাবি ও ভিয়েতনাম। তুরস্কে ভিসা পেতে অতিরিক্ত সময় লাগছে, ফিলিপাইন প্রক্রিয়াটি জটিল করেছে, আর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ভিসা দিলেও বিমানবন্দরে অনেককে অফলোড করছে। ফলে বিদেশগামী পর্যটক সংখ্যা কমে যাওয়ায় দেশীয় ট্যুর অপারেটররা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা জানান, থাইল্যান্ডে প্রবেশের পর অনেক বাংলাদেশি অন্য দেশে চলে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করছেন। এ কারণে অন্যান্য দেশ থেকে থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশিদের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে সিঙ্গাপুরে আবেদন জমা দেওয়ার সাত দিনের মধ্যেই ভিসা সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তবে এই বছর দেশটিতে ভিসা রিজেকশনের হারও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নিকটবর্তী দেশগুলোতে যেতেও হয়রানি দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ একে একে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করলেও, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা পূর্ব পর্যন্ত ব্যতিক্রম ছিল। নেপাল বছরে একবার বিনামূল্যে ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, নতুন পাসপোর্টধারী অনেক যাত্রী পাসপোর্ট নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে নেপালে প্রবেশ করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতার অভাবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সন্দেহ তৈরি হয়, অনেকে নেপালকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অন্য দেশে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কা থাকায়। কিছু যাত্রী ভুয়া হোটেল বুকিং বা ভ্রমণ পরিকল্পনা দেখিয়ে নেপালে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। থাইল্যান্ডে ই-ভিসা ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কেউ নিজেই আবেদন করতে পারলেও, বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। নতুন পাসপোর্টে ভিসা দেওয়ার বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেশটি ৪৫–৫০ দিন সময় নিচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকের ট্যুর ভেস্তে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কাতেও অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কলম্বো বিমানবন্দরে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার প্রতিবেদককে প্রায় ৬-৭ মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ১৭টি দেশের ভিসা পাসপোর্টে থাকা সত্ত্বেও অফিসার জানতে চান, ট্যুরিস্ট ভিসায় কেন এসেছেন, ছয় দিনের হোটেল বুকিং, কোথায় ঘুরবেন এবং কীভাবে ঘুরবেন। পরিচয় জানতে চাইলে সাংবাদিক আইডি কার্ড দেখান। এরপরই পাসপোর্টে সিল দেওয়া হয়। অফিসার বলেন, “বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অনেকেই অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। তাই আমরা বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছি।” মালদ্বীপে অন-অ্যারাইভাল ভিসার ন্যূনতম শর্ত হলো আগাম হোটেল বুকিং দেখানো। অনেক বাংলাদেশি ভুয়া বুকিং কপি নিয়ে যান বা ঠিকানা জানাতে ব্যর্থ হন, ফলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খল মনোভাবের কারণে অনেক দেশের ধারণা, বাংলাদেশিরা সেখানে অপকর্ম করতে পারে। তাই তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলে সতর্কতা অবলম্বন করে। ট্যুর অপারেটরদের মতে, যদি বাংলাদেশিরা নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে, তখনই ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর হবে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি বলেন, “পর্যটনবান্ধব প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ বা সীমিত করেছে। ভারত, কাতার, বাহরাইন, মিশর, দুবাই, আবুধাবি, ভিয়েতনাম বন্ধ করেছে। তুরস্ক অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে, ফিলিপাইন প্রক্রিয়া জটিল করেছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ভিসা দিলেও বিমানবন্দরে অনেককে অফলোড করছে। পর্যটকরা বিদেশ ভ্রমণ কমাচ্ছে, ফলে ট্যুর অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উচিত দ্রুত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করা।” বাংলাদেশের শক্তিশালী পাসপোর্ট এখন শক্তিহীন যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রতি বছর বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচক প্রকাশ করে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। দীর্ঘ দুই দশক ধরে ক্রমশ অবনতি ঘটতে ঘটতে বর্তমানে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৯৪-এ। একই অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিন এবং আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। ২০২৩ সালে এই অবস্থান আরও শোচনীয় ছিল, ১০১তম। একই অবস্থা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কলম্বো বিমানবন্দরে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার প্রতিবেদককে প্রায় ছয় থেকে সাত মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পাসপোর্টে ১৭টি দেশের ভিসা থাকলেও অফিসার জানতে চান, ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এখানে আসার উদ্দেশ্য কী। ভিসা প্রদানে অনীহার কারণ জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, “একটি দেশ সাধারণত অন্য দেশের নাগরিককে ভিসা ইস্যু করে যেন তিনি সেখানে ভ্রমণ করে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখেন। কিন্তু অনেক বাংলাদেশি পর্যটক পর্যটন ভিসা নিয়ে অবৈধভাবে ওভারস্টে করছেন, কাজ করছেন, বা সমস্যার সৃষ্টি করছেন। এতে দেশ ও মানুষের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, যা ভিসা না দেওয়া এবং অফলোডের মূল কারণ।” তিনি আরও বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিশৃঙ্খল মনোভাবের কারণে অনেক দেশের ধারণা, বাংলাদেশিরা সেখানে অপকর্ম করতে পারে। এতে সেই দেশের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। আমরা যদি নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারি, তখনই ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হবে।”