ফারাক্কার ৫০ বছর, বাংলাদেশের নদনদীতে কী প্রভাব পড়েছে? – ইউ এস বাংলা নিউজ




ফারাক্কার ৫০ বছর, বাংলাদেশের নদনদীতে কী প্রভাব পড়েছে?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ মে, ২০২৫ | ৫:০৫ 10 ভিউ
ফারাক্কা বাঁধের ৫০ বছর পূর্তিতে, বাংলাদেশের নদ-নদী ও পরিবেশে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব গভীর উদ্বেগের বিষয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এ বাঁধটি অবস্থিত। ১৯৬১ সালে এ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ২ হাজার ২৪০ মিটার (৭ হাজার ৩৫০ ফুট) লম্বা যেটা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় বানানো হয়েছিল। যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক পরিবেশগত ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আন্তসীমান্ত নদীর গতিপথে এই বাঁধ বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের পদ্মাসহ এর শাখা নদ-নদীর ওপর। খবর বিবিসি বাংলার। ভারতে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি সরিয়ে নেওয়ার কারণে পাঁচ

দশকে বাংলাদেশের পদ্মায় চর জেগেছে, শুকিয়ে মরে গেছে পদ্মার উৎস থেকে সৃষ্ট বেশকিছু নদ-নদী। বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে অস্বস্তির কারণ হয়ে থেকেছে যে বিষয়টি–– সেটি হচ্ছে ফারাক্কা। এ বিতর্কিত বাঁধের কারণে বহু নদীর মৃত্যু, জীবন-জীবিকা ও জীববৈচিত্রের ক্ষতিসহ বহুমাত্রিক প্রভাব বিবেচনায় বাংলাদেশ-এমনকি ভারতের কিছু অংশেও এর জোরালো বিরোধিতা রয়েছে। গত ৫০ বছরে ফারাক্কা ব্যারাজ বাংলাদেশের নদ-নদীতে যে বিরূপ প্রভাব রেখেছে তার বড় সাক্ষী বাংলাদেশে পদ্মা পাড়ের মানুষ। ফারাক্কা পয়েন্টে ভারত পানি সরিয়ে নেওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় মারাত্মক পানি সংকট তৈরি হচ্ছে। এক সময়ের খরস্রোতা প্রমত্তা পদ্মার বুকে বিশাল চর জেগেছে, নদীর গতিপথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে, নদীটিই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আবার বর্ষাকালে সেই ফারাক্কারই

সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এরে ফলে প্রায় প্রতিবছরই গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা ও ভাঙনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পদ্মায় ফারাক্কার প্রভাব ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পদ্মা নদী। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এ নদীটি উত্তরবঙ্গে রাজশাহী বিভাগ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদী গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের দীর্ঘতম এ নদীর গতিপথ থেকে শুরু করে এর শাখা নদনদীর প্রবাহে মারাত্মক ক্ষতি করেছে ফারাক্কা। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা যায় ধু ধু বালুচর। রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন জানান, তাদের এক গবেষণায় দেখেছেন উজানে ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগের সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মার ৮০ শতাংশ পানির প্রবাহ কমে গেছে এখন। পদ্মা নদী-তীরবর্তী হাকিমপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ

সানাউল্লা ৭০ বছর ধরে দেখে আসছেন পদ্মা নদী। ফারাক্কা বাঁধের আগে-পরে পদ্মার চরিত্র এবং পানির প্রবাহ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ী ঘাটে। দুই সময়ের তুলনা করে তিনি বলেন, আগে অনেক স্রোত ছিল, নদী বড় ছিল। এখন তো পুরো চর। তিনি বলেন, এখন আর তখনের বহুত ডিফারেন্স। বাঁধ ছিল না। যখন তখন পানির খুব বেগ, ক্ষমতা আর স্রোত ছিল। এ নদীর একটা পাড়ে নৌকা ভেড়াতে চারজন লোকও ঘাবড়ে গেছে, কারণ পানির এত স্রোত ছিল। এখন তো শুধু ডাঙ্গা। ছোট বেলা থেকেই রাজশাহী এলাকায় পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেন মোহাম্মদ রাব্বির হোসেন। পদ্মা নদীতে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নদীর পানি কমে

যাওয়ায় মাছও অনেক কমে গেছে। অতীতে তারা যেসব মাছ পেতেন, এখন আর সে ধরনের মাছ নদীতে ধরা পড়ে না। বর্ষা মৌসুমে কিছু মাছ ধরা পড়লেও বছরের অন্যান্য সময় বড় বড় মাছ এখন নদীতে মিলছে না। অনেকে মাছ ধরা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানান রাব্বির হোসেন। প্রায় ৩৫ বছর নদীতে থাকার অভিজ্ঞতার স্মৃতি থেকে রাব্বির হোসেন বলেন, পদ্মার অনেক শাখা নদীও গত ৫০ বছরে শুকিয়ে গেছে। আগে পদ্মা কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। শুষ্ক মৌসুমে এখন অনেক যায়গায় সরু খালের মতো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, চর পড়ে নদীর কন্ডিশন খারাপ। নদী আগে অনেক বড় ছিল। বড় বড় ডিঙি নৌকায় মাল লিয়া যাইতো। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থাইকা

ঢাকা যাইতো মাল লিয়া; আপনার আম, সবজি-তরকারি লিয়া ঢাকা যাইত, আমার বয়সে আমি দেখেছি। সেরকম এখন যায় নাতো আর। পদ্মা নদী শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে রাব্বির হোসেন আশপাশের বেশকটি শাখা নদী মরে যেতে দেখেছেন বলেও উল্লেখ করেন। পদ্মার শাখা নদ-নদীর মৃত্যু ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মার বেশ কিছু শাখা নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। পানি প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সবগুলো শাখা নদীর। পানি সংকটের কারণে পদ্মার যে শাখা নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বড়াল। রাজশাহী থেকে ভাটিতে চারঘাটে বড়াল নদীর উৎসমুখ। সরেজমিনে গিয়ে বড়ালের উৎসমুখে দেখা যায় বিশাল চর জেগেছে, সেখানে পানির প্রবাহ নেই। বড়ালের দুই পাশে চর পড়ে উঁচু হয়ে গেছে। মাঝখানে সরু নালার মতো। পদ্মা থেকে রাজশাহী, নাটোর হয়ে বড়াল

নদীর গতিপথ যমুনা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ নদীর জীবন মৃত্যুর সাক্ষী চারঘাট এলাকার শিক্ষক মোহাম্মদ রেজাউল করীম। এ নদীতে বড় বড় নৌকা চলতে দেখেছেন বলে জানান তিনি। তার বর্ণনায়, বড়ালে মালবাহী নৌযানের সঙ্গে যাত্রীবাহী নৌকাও চলাচল করত। ষাটের কাছাকাছি নিজের বয়স উল্লেখ করে রেজাউল করীম বলেন, কলেজ জীবনে বড়াল নদীতে নৌকায় চলাচল করতেন তিনি। এমনকি শিক্ষকতা জীবনের শুরুতেও কলেজ থেকে বাড়িতে বড়াল নদী দিয়েই তার যাতায়াত ছিল। তিনি বলেন, যখন কলেজে পড়ি তখন তো নদীপথে এসে কলেজ করছি। এ নদীর শুকিয়ে যাওয়ার দুটি কারণ। একটা হলো ফারাক্কার বাঁধের জন্য এ নদীতে পানি আসছে কম। নদীটা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর আরেকটা কারণ হলো এখানে স্লুইচ গেট দিয়ে পানি এদিকে যেতে পারছে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার মানুষ তেলআবিবে সামরিক স্থাপনায় ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উত্তেজনার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল পাকিস্তান রাশিয়ার পালটা হামলায় ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ৪৬ পহেলগাঁওয়ে হামলা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন ভারতীয় সাংবাদিক ইউক্রেনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রুশ বন্দরে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি সেদিন সাকিবকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন, জানালেন মেজর হাফিজ এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বড় পদক্ষেপ নিল ভারত হামজাকে দেখেই লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ানোর সিদ্ধান্ত সামিতের ৪৭২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি রশিদ খানের ‘লুকিয়ে প্রেম করতেই ভালো লাগে, বিষয়টা এনজয় করি’ চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ল কিশোর গাজায় থামছেই না ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ, নিহত আরও ৪৩ হেফাজতের মহাসমাবেশ, ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দীতে নেতাকর্মীদের ঢল নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা কেন দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, প্রকাশ করলেন পিনাকী ভট্টাচার্য ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে বজ্রবৃষ্টির আভাস, বাড়তে পারে তাপমাত্রা ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সমাবেশকে ভাসিয়ে দিয়েছেন নাহিদ’ বাসর রাতেই স্বামীর মৃত্যু ‘রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদি না করে মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করুন’