ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন: নেপথ্যে আছেন যারা
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গীতে অভিযান
দুয়ার সার্ভিসেসের আইপিও স্থগিত
আজ ৪ সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দেবে
সচিবালয়ের সামনে থেকে শিক্ষানবিশ এসআইদের সরিয়ে দিল পুলিশ
বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা
‘বাংলাদেশে কিছুই নেই’, ফের শুভেন্দুর কটাক্ষ
প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা ভাগবাঁটোয়ারা
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর ‘ডেঞ্জার জোন’ থেকে নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন ওই চক্রের সদস্যরা। মানিকগঞ্জ জেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের অবৈধ দখলে ছিল এই বালুমহাল। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। এরপর বাশার গোপনে বালু উত্তোলনে ইজারাসংক্রান্ত চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন তাসলিমা আবেদীন নামের এক মহিলার সঙ্গে। এই তাসলিমা হচ্ছেন আনসার-ভিডিপির পরিচালক আম্মার হোসেনের স্ত্রী। আর এই অপকর্মের নেপথ্যে আছেন ফরিদপুর নৌ পুলিশের এসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলাল হোসেন। বিগত সরকারের দোসর এই
আবুল বাশার স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তার সহযোগিতায় ইজারা শর্ত লঙ্ঘন করে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষে ইউএনও বেলাল হোসেনের এই অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদের বিষয়ে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা বাশারের সঙ্গে আগে থেকে সম্পর্ক থাকায় উচ্ছেদের পরিবর্তে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতায় নেমেছেন। যার ‘পুরস্কার’ হিসাবে গত এক বছরে তিনি মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেয়েছেন-এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিমত-‘ডেঞ্জার জোন’ এ অপরিকল্পিতভাবে দিন-রাত ড্রেজার চালিয়ে বালু তোলার কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১ (ইডব্লিউআইসি-১) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুটি টাওয়ার
হুমকির মুখে পড়েছে। আলোকদিয়া এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ৭ ও ৮ নম্বর টাওয়ারের মাঝে বালু উত্তোলন করায় যে কোনো সময় বিদ্যুতের টাওয়ার ধসে পড়ে সারা দেশের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আছে যমুনার অব্যাহত ভাঙন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বলেন, নৌ পুলিশের এসপি আনসার কর্মকর্তা ও ইএনওর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে হবে। আর শিবালয়ের ইউএনওর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই অভিযান চালাতে পাবনা, রাজবাড়ি,
সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও নৌ পুলিশের সহায়তা লাগবে। আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, যমুনা নদীর মানিগঞ্জের আরিচাঘাটের উজানে অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১-এর বিদ্যুৎ সংযোগ ৭ ও ৮ নম্বর টাওয়ার। এই টাওয়ারের আশপাশেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত বাল্কহেডে বালু বোঝাই করা হয়। দ্রুত বাল্কহেড বোঝাই করতে ড্রেজার দিয়ে শত শত ফুট গভীর থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। নৌ পুলিশের এসপি (ফরিদপুর) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করবেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আমার যতটুকু করার আমি করছি। টাকা ভাগাভাগির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা সঠিক নয়। এর আগে ড্রেজারসহ দুজনকে গ্রেফতার
করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়। নথিপত্রে দেখা গেছে, অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদের বিষয়ে এলাকার মানুষ দফায় দফায় দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। কারণ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বালু ব্যবসায় নেমেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া অভিযোগের এক স্থানে বলা হয়, ‘মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ’র মালিক আবুল বাশারের খোঁজে তার বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ যোগাযোগ করেন। এ সময় তারা জানিয়েছেন, আলোকদিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার সঙ্গে আবুল বাশারের কোনো সম্পর্ক নেই। একটা টাকাও তিনি কিংবা তার আত্মীয়স্বজন পাচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক
ক্ষমতাবলে নিজের লোক বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করছেন। মাঠপর্যায়ে থেকে এই টাকা নৌ পুলিশের এসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনসার কর্মকর্তা আম্মার হোসেন ও শিবালয়ের ইউএনওসহ কয়েকজন ভাগবাঁটোয়ারা করছেন।’ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে আলোকদিয়া গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, শিবালয়ের ইউএনও দু-একবার অভিযানে গিয়ে কাউকে পাননি বলে ফেরত এসেছেন। কারণ তিনি যাওয়ার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ড্রেজার পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়। সতর্কতার এই বার্তা পেয়ে কিছু সময়ের জন্য বালু তোলা বন্ধ করে ড্রেজার নদীর পাড়ে নোঙর করে রাখা হয়। তিনি ফিরে আসার পর আবার শুরু হয় বালু উত্তোলন। এভাবেই এলাকার সর্বনাশ করছেন ইউএনও। ইউএনওর
সংশ্লিষ্টতা : শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুবারে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু এই টাকা তো বালুখেকোদের ১ ঘণ্টার কামাই। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার কেন, এই অপরাধেই তো ড্রেজার আটক করে সরকারের অনুকূলে জব্দ করা যায়। কিন্তু ইউএনও অভিযানে গিয়ে ড্রেজার আটক না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ তো আর প্রকাশ্যে এসে ইউএনওকে টাকা দিচ্ছেন না। ইউএনওর রহস্যজনক কিছু আচরণ মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যোগদানের পর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করব না। তবে তার উচিত ছিল ৫ আগস্টের পর নিজেকে সংশোধন করা। ইউএনও এক বছরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকেও তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার দেখেও কেন সেটি আটক করেন না সেটা সবাই জানে। এই এলাকার মানুষ হিসাবে আমি চাই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ হোক। যমুনার ভাঙনে যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তারা আজ কোথায় থাকেন, কেউকি খোঁজখবর নিয়েছেন? যার যায় সেই বোঝে নদী ভাঙনের যন্ত্রণা।’ জেলা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা মানিকগঞ্জের ডিসি, এসপি, ইউএনও সবাই জানেন। কিন্তু সবাই বলেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ শব্দটি খুবই রহস্যজনক। আরে ভাই, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে আপনি জানতেছেন, শুনতেছেন, দেখতেছেন। কিন্তু নামকাওয়াস্তে অভিযান করছেন। বছরের পর ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সুযোগ-সুবিধার খেসারত হিসাবে শত শত পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ঠিকানাবিহীন হয়ে গেছেন। মানুষের এসব কষ্ট যখন লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায় তখন অনেক কিছু করতে মনে চায়। কিন্তু পারি না। তিনি বলেন, নৌ পুলিশের এসপি যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তারও বিচার হওয়া প্রয়োজন। কেননা দেশ পরিচালনার চিত্র পালটালে কর্মকর্তাদেরও চরিত্র পালটাতে হবে। ফরিদপুর অঞ্চলের দায়িত্বে নৌ পুলিশের যে পুলিশ সুপার রয়েছেন তিনি নিজেই বলতে পারবেন এ বিষয়ে কি করছেন। জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, আবুল বাশারকে আমি চিনতাম। নামও শুনেছি। কিন্তু তার অবর্তমানে আমার বিরুদ্ধে বালুমহাল পরিচালনার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারার স্থান বুঝিয়ে দেওয়ার পরও সংরক্ষিত এলাকায় ড্রেজার বসানো হয়। খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই, কিন্তু গিয়ে কাউকে পাইনি। লুটপাটের চিত্র : তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বালুখেকোদের নেতৃত্বে শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি ঘনফুট বালু আড়াই টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলনে ড্রেজার বাবদ খরচ ৫০ পয়সা বাদ দিয়ে প্রতিদিন উত্তোলিত বালুর নিট বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা। এই বালু উত্তোলন ও বিক্রির জন্য সামনে রাখা আবুল বাশারের মালিকানাধীন ‘মেসার্স তাকবীর এন্টাপ্রাইজ’র বালুমহালের ইজারার টোকেন। আবুল বাশার ৫ আগস্টের পর থেকে ৪-৫টি হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক আছেন। মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের বালুমহালের ইজারায় যে জমির দাগ নম্বর দেওয়া আছে বর্তমানে বালু উত্তোলনকৃত জায়গার আশপাশে ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে এর দাগ-খতিয়ান নেই। জেলা প্রশাসনের নথিপত্রে দেখা গেছে, ৬ জুলাই মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর রেহানা মজুমদার মুক্তি বালুমহাল ইজারাসংক্রান্ত নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ১৪৩১ বঙ্গাব্দে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৭ প্রতিষ্ঠানকে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শিবালয়ের যমুনা নদীর তেওতা বালুমহালটি ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের মালিকানাধীন মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজকে। এ সংক্রান্ত নথিপত্রে ইজারাকৃত স্থানের দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিণ তেওতা মৌজার আরএস ৪৪ দাগে জমির শ্রেণি উল্লেখ করে ‘নদীসিকস্তি’ মোট সাড়ে ৯ একর বালুমহালের চৌহদ্দি ঠিক করা হয়। ডেঞ্জার জোনে ড্রেজার যে কারণে : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ তেওতা এলাকায় দাগ-খতিয়ান নির্ধারিত নদীতে বিলীন সাড়ে ৯ একর স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছেন। অথচ তিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছেন ঝুঁকিপূর্ণ আলোকদিয়া এলাকায়। ইজারার আওতাভুক্ত এলাকা থেকে এর অবস্থান অন্তত তিন কিলোমিটার উজানে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ইজারার আওতাভুক্ত নদীর সিমানায় আছে ভিটি বালু। এই বালু জমি ভরাটের কাজে লাগে। এটা স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী। এই বালুর যেমন বাইরে চাহিদা নেই, তেমনি দামও কম। প্রতি বর্গফুট বালু স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৫০ পয়সা। এ কারণে কনস্ট্রাকশনে ব্যবহার (সিমেন্ট মিশ্রিত বালু) উপযোগী বালু আছে ঝুঁকিপূর্ণ এই আলোকদিয়া এলাকায়। এই বালু স্থানীয় পর্যায়েই বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট দুই থেকে আড়াই টাকা। দর-দামের তফাতের কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার আলোকদিয়ার নিষিদ্ধ স্থানকে বেছে নিয়েছেন। ওই এলাকাকে সরকারিভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এই আলোকদিয়া এলাকার নদীর দুই তীরে বসানো হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১ (ইডব্লিউআইসি-১) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সুউচ্চ দুটি টাওয়ার। বিদ্যুৎ সঞ্চলানের এই লাইনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালি উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এই দুটি পিলার। যে কোনো সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন এই লাইন নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়াও পাশের ফসলি জমি ও বাড়িঘরও ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনও করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পুলিশে কর্মরত একজন সদস্য বলেন, জেলা প্রশাসক বালুমহালের বিরুদ্ধে অভিযান না চালালেও নৌ পুলিশের এসপি অবৈধ বাল্কহেডসহ ড্রেজার জব্দ করতে পারেন। তিনি অভিযান পরিচালনার সময় ইজারার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না পেলে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে পারেন। কিন্তু এখানে কাঁচা টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে ইজারাসংক্রান্ত যে চুক্তি করেছিলেন তাসলিমা আবেদীন, তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর তার স্বামী আম্মার হোসেনের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর এ বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে আবুল বাশারের সঙ্গে তাসলিমা আবেদীনের বালুমহাল ইজারাসংক্রান্ত চুক্তিপত্রে তিনজনকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সাক্ষীর নাম রাসেল মাহমুদ। তিনি ঢাকার পূর্ব শেওড়াপাড়ায় থাকেন। চুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিসিএস আনসার কর্মকর্তা আম্মার হোসেন তার বন্ধু। চুক্তিনামা সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
আবুল বাশার স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তার সহযোগিতায় ইজারা শর্ত লঙ্ঘন করে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষে ইউএনও বেলাল হোসেনের এই অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদের বিষয়ে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা বাশারের সঙ্গে আগে থেকে সম্পর্ক থাকায় উচ্ছেদের পরিবর্তে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতায় নেমেছেন। যার ‘পুরস্কার’ হিসাবে গত এক বছরে তিনি মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেয়েছেন-এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিমত-‘ডেঞ্জার জোন’ এ অপরিকল্পিতভাবে দিন-রাত ড্রেজার চালিয়ে বালু তোলার কারণে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১ (ইডব্লিউআইসি-১) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুটি টাওয়ার
হুমকির মুখে পড়েছে। আলোকদিয়া এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ৭ ও ৮ নম্বর টাওয়ারের মাঝে বালু উত্তোলন করায় যে কোনো সময় বিদ্যুতের টাওয়ার ধসে পড়ে সারা দেশের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আছে যমুনার অব্যাহত ভাঙন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার বলেন, নৌ পুলিশের এসপি আনসার কর্মকর্তা ও ইএনওর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে হবে। আর শিবালয়ের ইউএনওর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই অভিযান চালাতে পাবনা, রাজবাড়ি,
সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও নৌ পুলিশের সহায়তা লাগবে। আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, যমুনা নদীর মানিগঞ্জের আরিচাঘাটের উজানে অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১-এর বিদ্যুৎ সংযোগ ৭ ও ৮ নম্বর টাওয়ার। এই টাওয়ারের আশপাশেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত বাল্কহেডে বালু বোঝাই করা হয়। দ্রুত বাল্কহেড বোঝাই করতে ড্রেজার দিয়ে শত শত ফুট গভীর থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। নৌ পুলিশের এসপি (ফরিদপুর) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করবেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আমার যতটুকু করার আমি করছি। টাকা ভাগাভাগির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা সঠিক নয়। এর আগে ড্রেজারসহ দুজনকে গ্রেফতার
করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়। নথিপত্রে দেখা গেছে, অবৈধ বালুমহাল উচ্ছেদের বিষয়ে এলাকার মানুষ দফায় দফায় দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। কারণ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বালু ব্যবসায় নেমেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া অভিযোগের এক স্থানে বলা হয়, ‘মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ’র মালিক আবুল বাশারের খোঁজে তার বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ যোগাযোগ করেন। এ সময় তারা জানিয়েছেন, আলোকদিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার সঙ্গে আবুল বাশারের কোনো সম্পর্ক নেই। একটা টাকাও তিনি কিংবা তার আত্মীয়স্বজন পাচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক
ক্ষমতাবলে নিজের লোক বসিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করছেন। মাঠপর্যায়ে থেকে এই টাকা নৌ পুলিশের এসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, আনসার কর্মকর্তা আম্মার হোসেন ও শিবালয়ের ইউএনওসহ কয়েকজন ভাগবাঁটোয়ারা করছেন।’ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে আলোকদিয়া গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, শিবালয়ের ইউএনও দু-একবার অভিযানে গিয়ে কাউকে পাননি বলে ফেরত এসেছেন। কারণ তিনি যাওয়ার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ড্রেজার পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়। সতর্কতার এই বার্তা পেয়ে কিছু সময়ের জন্য বালু তোলা বন্ধ করে ড্রেজার নদীর পাড়ে নোঙর করে রাখা হয়। তিনি ফিরে আসার পর আবার শুরু হয় বালু উত্তোলন। এভাবেই এলাকার সর্বনাশ করছেন ইউএনও। ইউএনওর
সংশ্লিষ্টতা : শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুবারে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু এই টাকা তো বালুখেকোদের ১ ঘণ্টার কামাই। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার কেন, এই অপরাধেই তো ড্রেজার আটক করে সরকারের অনুকূলে জব্দ করা যায়। কিন্তু ইউএনও অভিযানে গিয়ে ড্রেজার আটক না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ তো আর প্রকাশ্যে এসে ইউএনওকে টাকা দিচ্ছেন না। ইউএনওর রহস্যজনক কিছু আচরণ মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যোগদানের পর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করব না। তবে তার উচিত ছিল ৫ আগস্টের পর নিজেকে সংশোধন করা। ইউএনও এক বছরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাকেও তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার দেখেও কেন সেটি আটক করেন না সেটা সবাই জানে। এই এলাকার মানুষ হিসাবে আমি চাই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ হোক। যমুনার ভাঙনে যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তারা আজ কোথায় থাকেন, কেউকি খোঁজখবর নিয়েছেন? যার যায় সেই বোঝে নদী ভাঙনের যন্ত্রণা।’ জেলা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা মানিকগঞ্জের ডিসি, এসপি, ইউএনও সবাই জানেন। কিন্তু সবাই বলেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ শব্দটি খুবই রহস্যজনক। আরে ভাই, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে আপনি জানতেছেন, শুনতেছেন, দেখতেছেন। কিন্তু নামকাওয়াস্তে অভিযান করছেন। বছরের পর ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সুযোগ-সুবিধার খেসারত হিসাবে শত শত পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ঠিকানাবিহীন হয়ে গেছেন। মানুষের এসব কষ্ট যখন লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায় তখন অনেক কিছু করতে মনে চায়। কিন্তু পারি না। তিনি বলেন, নৌ পুলিশের এসপি যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তারও বিচার হওয়া প্রয়োজন। কেননা দেশ পরিচালনার চিত্র পালটালে কর্মকর্তাদেরও চরিত্র পালটাতে হবে। ফরিদপুর অঞ্চলের দায়িত্বে নৌ পুলিশের যে পুলিশ সুপার রয়েছেন তিনি নিজেই বলতে পারবেন এ বিষয়ে কি করছেন। জানতে চাইলে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, আবুল বাশারকে আমি চিনতাম। নামও শুনেছি। কিন্তু তার অবর্তমানে আমার বিরুদ্ধে বালুমহাল পরিচালনার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারার স্থান বুঝিয়ে দেওয়ার পরও সংরক্ষিত এলাকায় ড্রেজার বসানো হয়। খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই, কিন্তু গিয়ে কাউকে পাইনি। লুটপাটের চিত্র : তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বালুখেকোদের নেতৃত্বে শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি ঘনফুট বালু আড়াই টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলনে ড্রেজার বাবদ খরচ ৫০ পয়সা বাদ দিয়ে প্রতিদিন উত্তোলিত বালুর নিট বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা। এই বালু উত্তোলন ও বিক্রির জন্য সামনে রাখা আবুল বাশারের মালিকানাধীন ‘মেসার্স তাকবীর এন্টাপ্রাইজ’র বালুমহালের ইজারার টোকেন। আবুল বাশার ৫ আগস্টের পর থেকে ৪-৫টি হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক আছেন। মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজের বালুমহালের ইজারায় যে জমির দাগ নম্বর দেওয়া আছে বর্তমানে বালু উত্তোলনকৃত জায়গার আশপাশে ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যে এর দাগ-খতিয়ান নেই। জেলা প্রশাসনের নথিপত্রে দেখা গেছে, ৬ জুলাই মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর রেহানা মজুমদার মুক্তি বালুমহাল ইজারাসংক্রান্ত নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ১৪৩১ বঙ্গাব্দে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৭ প্রতিষ্ঠানকে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শিবালয়ের যমুনা নদীর তেওতা বালুমহালটি ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের মালিকানাধীন মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজকে। এ সংক্রান্ত নথিপত্রে ইজারাকৃত স্থানের দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিণ তেওতা মৌজার আরএস ৪৪ দাগে জমির শ্রেণি উল্লেখ করে ‘নদীসিকস্তি’ মোট সাড়ে ৯ একর বালুমহালের চৌহদ্দি ঠিক করা হয়। ডেঞ্জার জোনে ড্রেজার যে কারণে : খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ তেওতা এলাকায় দাগ-খতিয়ান নির্ধারিত নদীতে বিলীন সাড়ে ৯ একর স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পেয়েছেন। অথচ তিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছেন ঝুঁকিপূর্ণ আলোকদিয়া এলাকায়। ইজারার আওতাভুক্ত এলাকা থেকে এর অবস্থান অন্তত তিন কিলোমিটার উজানে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ইজারার আওতাভুক্ত নদীর সিমানায় আছে ভিটি বালু। এই বালু জমি ভরাটের কাজে লাগে। এটা স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী। এই বালুর যেমন বাইরে চাহিদা নেই, তেমনি দামও কম। প্রতি বর্গফুট বালু স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৫০ পয়সা। এ কারণে কনস্ট্রাকশনে ব্যবহার (সিমেন্ট মিশ্রিত বালু) উপযোগী বালু আছে ঝুঁকিপূর্ণ এই আলোকদিয়া এলাকায়। এই বালু স্থানীয় পর্যায়েই বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট দুই থেকে আড়াই টাকা। দর-দামের তফাতের কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার আলোকদিয়ার নিষিদ্ধ স্থানকে বেছে নিয়েছেন। ওই এলাকাকে সরকারিভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এই আলোকদিয়া এলাকার নদীর দুই তীরে বসানো হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১ (ইডব্লিউআইসি-১) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সুউচ্চ দুটি টাওয়ার। বিদ্যুৎ সঞ্চলানের এই লাইনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালি উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এই দুটি পিলার। যে কোনো সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন এই লাইন নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়াও পাশের ফসলি জমি ও বাড়িঘরও ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনও করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পুলিশে কর্মরত একজন সদস্য বলেন, জেলা প্রশাসক বালুমহালের বিরুদ্ধে অভিযান না চালালেও নৌ পুলিশের এসপি অবৈধ বাল্কহেডসহ ড্রেজার জব্দ করতে পারেন। তিনি অভিযান পরিচালনার সময় ইজারার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না পেলে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে পারেন। কিন্তু এখানে কাঁচা টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের সঙ্গে ইজারাসংক্রান্ত যে চুক্তি করেছিলেন তাসলিমা আবেদীন, তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর তার স্বামী আম্মার হোসেনের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর এ বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে আবুল বাশারের সঙ্গে তাসলিমা আবেদীনের বালুমহাল ইজারাসংক্রান্ত চুক্তিপত্রে তিনজনকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সাক্ষীর নাম রাসেল মাহমুদ। তিনি ঢাকার পূর্ব শেওড়াপাড়ায় থাকেন। চুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিসিএস আনসার কর্মকর্তা আম্মার হোসেন তার বন্ধু। চুক্তিনামা সম্পর্কে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।