পানিদূষণ, উদ্ভিদ ধ্বংস ভূমিধস বাড়ার শঙ্কা – ইউ এস বাংলা নিউজ




পানিদূষণ, উদ্ভিদ ধ্বংস ভূমিধস বাড়ার শঙ্কা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২২ মার্চ, ২০২৫ | ৪:৫৫ 4 ভিউ
ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে এর স্তর দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে নিচে নামছে। এতে দেশে দিন দিন পরিবেশগত সংকট বেড়েই চলেছে-এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার না বাড়ালে পানি উত্তোলন অতি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। এছাড়া পানিতে আর্সেনিকসহ অন্যান্য দূষণ বাড়তে পারে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উদ্ভিদ ধ্বংসের পাশাপাশি ভূমিধসের ঝুঁকিও রয়েছে। তাদের আরও অভিমত-দেশের শহরাঞ্চলে নিত্য ব্যবহৃত কাজে, শিল্পে ও গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি খরচ হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা করে পানি উত্তোলন ও ব্যবহার না করায় পানির অপচয় ঘটছে। শুধু ভূগর্ভস্থ পানি নয়, দেশের সার্বিক পানি ব্যবস্থাপনার চিত্র ভয়াবহ। খোদ রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা পানিই

না ফুটিয়ে পান করা যায় না। চট্টগ্রাম শহরের পানি লবণাক্ততায় বিষিয়ে তুলেছে ওই জনপদের জনজীবন। রাজশাহীর পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। খুলনায় সরবরাহ করা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানি না ফুটিয়ে পান করা যায় না। রয়েছে লবণাক্ততাও। গভীর নলকূপের পানিও নিরাপদ নয়, আর্সেনিক ও লবণাক্ততায় ব্যবহার করা দুষ্কর। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য-হিমবাহ সংরক্ষণ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতি দুর্যোগ মোকাবিলাসংক্রান্ত গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) নির্বাহী পরিচালক এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শহরাঞ্চলে নিত্য ব্যবহৃত কাজ এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে

বেড়ে গেছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা প্রতিরোধে ভূউপরিস্থ উৎসের পানির ব্যবহার বাড়াতে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মিঠা পানি সমৃদ্ধ বাংলাদেশেও সুপেয় পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ সুপেয় পানির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। খরার মৌসুমে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও নিরাপদ পানি মিলছে না। সরকারের জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থাও তা স্বীকার করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ অর্থাৎ

৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২২০ জন মানুষ সুপেয় পানি সুবিধার আওতায় এসেছে। আর সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে ৪১ ভাগ অর্থাৎ ৬ কোটি ৭৭ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ জন মানুষ। এখনো দেশের ১০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। নিরাপদ ভেবে বিষযুক্ত পানি পান করে প্রতিবছর নিয়মিত আর্সেনিক জরিপ পরিচালনা না করায় জনমনে আতঙ্ক ও ভয় কাজ করে। দেশের পানি ব্যবস্থাপনা ও সুপেয় পানি সরবরাহের সার্বিক চিত্র বলে দেয়, কোনো পানিকে নিরাপদ ভেবে পান করা যাচ্ছে না। তারা আরও জানান-ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ওয়াসা এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিরাপদ পানি সরবরাহের সক্ষমতা অর্জনে সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে।

এরপরও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সরবরাহ লাইনের ত্রুটি, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, গভীর নলকূপ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় এসব উৎস থেকেও সুপেয় পানি মিলছে না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. তানভীর আহমেদ এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে সুপেয় পানি বলা যায়। তবে সেখানে কোনো ময়লা ঢুকে পড়লে সেই পানিকে আর সুপেয় পানি বলা যাবে না। আর সুপেয় পানি না ফুটিয়েই পান করা যাবে; এটিই তার বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-তে বলা হয়েছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুপেয় পানি প্রাপ্যতার বিবেচনায় ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, চর এলাকা, বন্যাপ্রবণ এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, হাওড় এলাকা, বরেন্দ্র

অঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা। দেশের এই ৬ শ্রেণির এলাকা বিস্তৃত রয়েছে ১০০টি উপজেলায়। দেশের ১৫৯ সিটি ও পৌরসভায় সরবরাহ করা পানির মানও সুপেয় নয়; কেননা কোনো পানিই না ফুটিয়ে পান করার উপযোগী নয়। ওইসব এলাকায় ১৬৮টি পানি শোধনাগার, এক হাজার ৫০০টি গভীর নলকূপে ১৫ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সরকার চালু রেখেছে। গ্রাম পর্যায়ের ২০ লাখ টিউবওয়েলের পানি নিরাপদ হওয়ার কথা থাকলেও আর্সেনিক ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রণ সে পানিও জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্পাপ্য। এসব এলাকার বেশিরভাগ উপজেলায় গভীর

নলকূপ কার্যকর নয়। সেখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ৩ থেকে ৪ মাস খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে। স্বল্পসংখ্যক পুকুরই তখন হয়ে ওঠে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এসব এলাকার সীমিত সংখ্যক পুকুর, সিডর, আইলা ও আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জলাশয় ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে এ বছর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বরিশাল অঞ্চলের নলকূপে সুপেয় পানি পেতে অনেক গভীরে যেতে হয়। সেখানেও নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। এ কারণে ওই এলাকায় সুপেয় পানি নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার এবং ওই জনপদের মানুষ। ভূগর্ভস্থ পানি নেমে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে : স্বাভাবিক অবস্থায় মাটির ৬ থেকে ৭ ফুট নিচেই ভূগর্ভস্থ উৎসে পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু, সে অবস্থা এখন আর নেই। ঢাকায় পানি পেতে ৮০০ থেকে ৮৫০ ফুট বা তারও বেশি নিচে নামতে হচ্ছে। খুলনায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ২৫ থেকে ৩০ ফুট। রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে ১২০ থেকে ১৪০ ফুট নিচে নেমেছে। ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম সেখানকার ভূউপরিস্থ উৎসের যথাযথ ব্যবহার করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। অন্যদিকে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নেমে যায়। আর ২৫ ভাগ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫ থেকে ১০ মিটার নেমে যায়। বর্ষার মৌসুমে এসব এলাকার বেশিরভাগ অংশে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না। ওসব এলাকায় গড়ে ১ থেকে ২ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ড. আনোয়ার জাহিদ এক নিবন্ধে লিখেছেন-বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যে হারে নেমে যাচ্ছে, সে হারে পানির স্তর পূরণ হচ্ছে না। এজন্য সরকারকে কৃত্রিমভাবে বর্ষার মৌসুমে পানি মাটির নিচে প্রবেশের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকার সেসব নিয়ে চিন্তা করছে। এ ব্যাপারে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। এমন উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরনের পানি সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আইপিএলের উদ্বোধনী দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাবে না তো? আর মাত্র ৩৫ বছর, বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম হবে ইসলাম সুন্দরবনের কলমতেজী এলাকায় আগুন জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চলছে: রাশেদ খান প্রবাসীরা ভারতীয়রা কেন ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না? বাংলাদেশে এমন কোনো শক্তি নেই যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে—এ আরাফাত রেলওয়ের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে তিনটিতে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলো ভারত বীর বিক্রম ড. কর্নেল অলি আহমদ : দুর্নীতি, ক্ষমতা ও লোভ যাকে কখনই স্পর্শ করেনি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানালেন শবনম ফারিয়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর ডাকাতির সময় মেরিন ড্রাইভে জনতার হাতে ৩জন আটক ৫ কোটি টাকার ইয়াবাসহ রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪ বাংলাদেশ-মেক্সিকো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের পরিকল্পনা শুরু হলো নাজাতের দশক ‘কন্যা’ গানের জোয়ারে মেতেছেন চার তারকা ৩০টি নতুন বিমান কিনছে মালয়েশিয়া এমপি হয়েই নেমে পড়েন লুটপাটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার গাজা সেনাবাহিনী পাশে না দাঁড়ালে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হতো: নুরুল হক পানিদূষণ, উদ্ভিদ ধ্বংস ভূমিধস বাড়ার শঙ্কা