পহেলা বৈশাখ ও বাঙালিয়ানা

প্রত্যেক জাতির একটা নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এই সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণে তাকে একজাতি থেকে অন্য জাতির সঙ্গে সহজে পার্থক্য করা যায়। জাতি টিকে থাকে তার সংস্কৃতিকে ধারণ করে। এই সংস্কৃতিই তার মানসিক শান্তি ও আত্মউপলব্ধির কারণ। পৃথিবীতে যেমন বহু জাতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈচিত্র্যময় নানা সংস্কৃতি। এমনি একটি জাতি ও সংস্কৃতির নাম বাঙালি ও পহেলা বৈশাখ।
যে ব্যক্তি যে সংস্কৃতিতে বড় হয় সেই সংস্কৃতি ছাড়া ভিন্ন সংস্কৃতি তার কাছে মানসিক তৃপ্তি দেয় না। অল্প কিংবা বেশি যাই হোক তার কাছে নিজ সংস্কৃতিই বেশি প্রাধান্য পায়। সংস্কৃতিকে ধারণ করে গর্বের সঙ্গে নিজেকে বিশ্বায়নে পরিচয় দেওয়াটাই একজন
সংস্কৃতমনার কাছে গর্বের। একজন সংস্কৃতমনা তার সংস্কৃতি পালন করতে শত বাধা উপেক্ষা করে সংস্কৃতি পালন করে। সংস্কৃতিকে ধারণ করলে সেই সংস্কৃতির জন্য প্রাণ দেওয়ার হিসাবটাও থাকে না। এর বড় উদাহরণ ভাষা আন্দোলন, জাতীয় সংগীত ও পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিন। এই দিনকে ঘিরে থাকে নানান অনুষ্ঠান। ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা। রাস্তায় রাস্তায় সাজানো থাকে রঙিন রঙিন বাতি ও ফুলে ফুলে ভরা থাকে রাস্তার দু’পাশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এই দিনকে ঘিরে নতুন জামা পরে। পুরুষরা পরিধান করে সাদা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি। অনেকেই আবার পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামাও পরে থাকে। নারীরা সেই দিন
সাদা ডোরাকাটা শাড়ি পরিধান করে। ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী প্রতিটি ঘরে পান্তা ভাত ও ইলিশের আয়োজন করে থাকে। চৈত্র মাসের শেষ এবং পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাতকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় গ্রামীণ অনুষ্ঠান হয়। পহেলা বৈশাখের দিনের বেলায় নারী-পুরুষ, শিশু -কিশোর, ছেলে-মেয়ে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সকল পেশার মানুষ দিনটাকে উদ্যাপন করে। পরিবারের সঙ্গে এই দিনটাকে পালন ও একসঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করে। ভোর থেকেই শুরু হয় পহেলা বৈশাখের আমেজ। প্রাচীনকাল থেকেই সৌর পঞ্জি অনুসারে বাংলা মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ পালন করা হতো। আসাম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, বঙ্গ, পাঞ্জাব ইত্যাদি অঞ্চলে নববর্ষ পালনের রীতি ছিল। রাজা শশাঙ্কের সময়েই পহেলা বৈশাখ পালনের
ইতিহাস পাওয়া যায়। পর্যায়ক্রমে এদেশে মুসলিমরা শাসন করতে আসে। এই শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ছিল মুঘল সাম্রাজ্য। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কার্য সম্পাদন হতো আরবি মাসের চাঁদের ওপর নির্ভর করে। বঙ্গ ও অন্যান্য কৃষকরা আরবি মাসের চাঁদের ওপর ভিত্তি করে যে কর বা খাজনা দিত তা সব সময় গরমিল থাকতো। রাজা এবং প্রজাদের মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরিশেষে মুঘল সম্রাট আকবর আরবি মাসের সঙ্গে মিল রেখে বাংলা সন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেন। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে। তিনি বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন। এই নিয়ম কার্যকর হয় ১৫৫৬ সালের ১০ মার্চ থেকে। পূর্বে মুঘল
সাম্রাজ্যের পঞ্জিকার নাম ছিল তারিখে এলাহী। মাসের নাম ছিল আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর ইত্যাদি। এগুলোই পরবর্তীতে কালক্রমে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, নামে নামকরণ করা হয়। আবার অনেকে ধারণা করেন বাংলা মাসের নাম নক্ষত্রের নাম থেকে হয়েছে। বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জয়ীস্থা নক্ষত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ, শার নক্ষত্র থেক আষাঢ়, শ্রাবণী নক্ষত্র থেকে শ্রাবণ মাস হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আমেজ শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই শহর থেকে গ্রামে আসে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। গ্রাম ও শহরের অলিগলিতে থাকে বাঙালিয়ানার নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামেও বিশেষ করে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কৃষকেরা নতুন নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরিধান করে বের
হয়। কৃষাণিরা ঘরে পিঠা, মিষ্টি, নানান পদের ভর্তা অনেক কিছু তৈরি করে এবং দিনের সূচনা করে। কয়েক গ্রাম মিলে বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। শহরেও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখা যায়। রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে সকাল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। সকলের সমবেত কণ্ঠে বৈশাখে গানের সুরে সুরে স্বাগত জানায়। বৈশাখের অপর নাম বাংলা নববর্ষ। এর রঙ রামধনু। বৈশাখের কেন্দ্র করে বৈশাখী মেলা, আনন্দ শোভাযাত্রা, হালখাতা, ঘোড়া খেলা ও বউখেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়। বাঙালি দোকানদার এই দিনকে ঘিরে দোকানের হালখাতা করে। ক্রেতারা দোকানের বাকি পরিশোধ করে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অনুসারে বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল ও পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত শোভাযাত্রাকে ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। সোনারগাঁও অনুষ্ঠিত হয় বউখেলা। স্থানীয়রা এটাকে বলে বটতলা মেলা। হাড়িভাঙ্গা খেলা, ঘোড়াখেলা, কাবাডি, কানামাছি, গোল্লাছুটসহ গ্রামীণ অনেক খেলায় পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা বৈশাখ শুধু সমতল বাঙালিরাই পালন করে এমন নয়। পাহাড়ের আদিবাসী উপজাতীরাও নববর্ষকে নানা আয়োজনের মাধ্যমে স্বাগত জানায়। নববর্ষকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরাদের উৎসব হলো বৈসু, মারমাদের উৎসব সাংগ্রাই এবং চাকমাদের উৎসব বিসু। বর্তমানে এই তিন জাতি মিলে একত্রে অনুষ্ঠানটি করে থাকে এবং এর নাম দেওয়া হয়েছে বৈসাবি। পহেলা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি একটি দেশে সমগ্র জাতির একক দেশীয় সংস্কৃতি। এখানে ধর্মীয় কোনো প্রভাব নেই। ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ নেই। যারাই বাঙালি তারাই পহেলা বৈশাখের অন্তর্ভুক্ত। দেশীয় সংস্কৃতি আর ধর্মীয় সংস্কৃতি পুরোপুরি আলাদা। পহেলা বৈশাখ শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরাও পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি হয়। প্রশাসনের সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে সচেতন হতে হবে যেন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো ক্ষতি না হয়। সাম্প্রদায়িক কোনো ঝামেলা যেন সৃষ্টি না হয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে একটা অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাই এখানে নিরাপদ থাকবে। সকল ধর্ম সমান গুরুত্ব পাবে। সবাই একে অপরের বিপদে ছুটে আসবে। একে অপরের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। দুঃখ ভাগাভাগি করবে। সবাই একসঙ্গে বসবাস করবে। তখন গড়ে উঠবে সুন্দর বাংলাদেশ।
সংস্কৃতমনার কাছে গর্বের। একজন সংস্কৃতমনা তার সংস্কৃতি পালন করতে শত বাধা উপেক্ষা করে সংস্কৃতি পালন করে। সংস্কৃতিকে ধারণ করলে সেই সংস্কৃতির জন্য প্রাণ দেওয়ার হিসাবটাও থাকে না। এর বড় উদাহরণ ভাষা আন্দোলন, জাতীয় সংগীত ও পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিন। এই দিনকে ঘিরে থাকে নানান অনুষ্ঠান। ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে আনন্দের ফোয়ারা। রাস্তায় রাস্তায় সাজানো থাকে রঙিন রঙিন বাতি ও ফুলে ফুলে ভরা থাকে রাস্তার দু’পাশ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এই দিনকে ঘিরে নতুন জামা পরে। পুরুষরা পরিধান করে সাদা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি। অনেকেই আবার পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামাও পরে থাকে। নারীরা সেই দিন
সাদা ডোরাকাটা শাড়ি পরিধান করে। ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী প্রতিটি ঘরে পান্তা ভাত ও ইলিশের আয়োজন করে থাকে। চৈত্র মাসের শেষ এবং পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাতকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় গ্রামীণ অনুষ্ঠান হয়। পহেলা বৈশাখের দিনের বেলায় নারী-পুরুষ, শিশু -কিশোর, ছেলে-মেয়ে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সকল পেশার মানুষ দিনটাকে উদ্যাপন করে। পরিবারের সঙ্গে এই দিনটাকে পালন ও একসঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করে। ভোর থেকেই শুরু হয় পহেলা বৈশাখের আমেজ। প্রাচীনকাল থেকেই সৌর পঞ্জি অনুসারে বাংলা মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ পালন করা হতো। আসাম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, বঙ্গ, পাঞ্জাব ইত্যাদি অঞ্চলে নববর্ষ পালনের রীতি ছিল। রাজা শশাঙ্কের সময়েই পহেলা বৈশাখ পালনের
ইতিহাস পাওয়া যায়। পর্যায়ক্রমে এদেশে মুসলিমরা শাসন করতে আসে। এই শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম ছিল মুঘল সাম্রাজ্য। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কার্য সম্পাদন হতো আরবি মাসের চাঁদের ওপর নির্ভর করে। বঙ্গ ও অন্যান্য কৃষকরা আরবি মাসের চাঁদের ওপর ভিত্তি করে যে কর বা খাজনা দিত তা সব সময় গরমিল থাকতো। রাজা এবং প্রজাদের মধ্যে এ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরিশেষে মুঘল সম্রাট আকবর আরবি মাসের সঙ্গে মিল রেখে বাংলা সন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেন। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে। তিনি বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন। এই নিয়ম কার্যকর হয় ১৫৫৬ সালের ১০ মার্চ থেকে। পূর্বে মুঘল
সাম্রাজ্যের পঞ্জিকার নাম ছিল তারিখে এলাহী। মাসের নাম ছিল আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর ইত্যাদি। এগুলোই পরবর্তীতে কালক্রমে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, নামে নামকরণ করা হয়। আবার অনেকে ধারণা করেন বাংলা মাসের নাম নক্ষত্রের নাম থেকে হয়েছে। বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জয়ীস্থা নক্ষত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ, শার নক্ষত্র থেক আষাঢ়, শ্রাবণী নক্ষত্র থেকে শ্রাবণ মাস হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আমেজ শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই শহর থেকে গ্রামে আসে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। গ্রাম ও শহরের অলিগলিতে থাকে বাঙালিয়ানার নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামেও বিশেষ করে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কৃষকেরা নতুন নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরিধান করে বের
হয়। কৃষাণিরা ঘরে পিঠা, মিষ্টি, নানান পদের ভর্তা অনেক কিছু তৈরি করে এবং দিনের সূচনা করে। কয়েক গ্রাম মিলে বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। শহরেও অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখা যায়। রমনার বটমূলে ছায়ানটের উদ্যোগে সকাল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। সকলের সমবেত কণ্ঠে বৈশাখে গানের সুরে সুরে স্বাগত জানায়। বৈশাখের অপর নাম বাংলা নববর্ষ। এর রঙ রামধনু। বৈশাখের কেন্দ্র করে বৈশাখী মেলা, আনন্দ শোভাযাত্রা, হালখাতা, ঘোড়া খেলা ও বউখেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়। বাঙালি দোকানদার এই দিনকে ঘিরে দোকানের হালখাতা করে। ক্রেতারা দোকানের বাকি পরিশোধ করে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অনুসারে বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল ও পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত শোভাযাত্রাকে ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে। সোনারগাঁও অনুষ্ঠিত হয় বউখেলা। স্থানীয়রা এটাকে বলে বটতলা মেলা। হাড়িভাঙ্গা খেলা, ঘোড়াখেলা, কাবাডি, কানামাছি, গোল্লাছুটসহ গ্রামীণ অনেক খেলায় পহেলা বৈশাখে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা বৈশাখ শুধু সমতল বাঙালিরাই পালন করে এমন নয়। পাহাড়ের আদিবাসী উপজাতীরাও নববর্ষকে নানা আয়োজনের মাধ্যমে স্বাগত জানায়। নববর্ষকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরাদের উৎসব হলো বৈসু, মারমাদের উৎসব সাংগ্রাই এবং চাকমাদের উৎসব বিসু। বর্তমানে এই তিন জাতি মিলে একত্রে অনুষ্ঠানটি করে থাকে এবং এর নাম দেওয়া হয়েছে বৈসাবি। পহেলা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি একটি দেশে সমগ্র জাতির একক দেশীয় সংস্কৃতি। এখানে ধর্মীয় কোনো প্রভাব নেই। ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ নেই। যারাই বাঙালি তারাই পহেলা বৈশাখের অন্তর্ভুক্ত। দেশীয় সংস্কৃতি আর ধর্মীয় সংস্কৃতি পুরোপুরি আলাদা। পহেলা বৈশাখ শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরাও পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি হয়। প্রশাসনের সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে সচেতন হতে হবে যেন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো ক্ষতি না হয়। সাম্প্রদায়িক কোনো ঝামেলা যেন সৃষ্টি না হয়। সকল ভেদাভেদ ভুলে একটা অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সবাই এখানে নিরাপদ থাকবে। সকল ধর্ম সমান গুরুত্ব পাবে। সবাই একে অপরের বিপদে ছুটে আসবে। একে অপরের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। দুঃখ ভাগাভাগি করবে। সবাই একসঙ্গে বসবাস করবে। তখন গড়ে উঠবে সুন্দর বাংলাদেশ।