পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পে ৭ কোটি টাকা গচ্চা! – ইউ এস বাংলা নিউজ




পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পে ৭ কোটি টাকা গচ্চা!

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৩:৫৯ 28 ভিউ
যে প্রকল্পে উজাড় হবে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনায়ন, কাটা পড়বে হাজার হাজার গাছ, অস্তিত্ব হারাবে খরস্রোতা নদী এবং জীবিকা হারাবে শত শত জেলে-এসব কিছু আড়ালে রেখেই জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি ডেকে আনা সেই প্রকল্প জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল থেকেই অনুমোদন করা হয়েছিল। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সঙ্গে চরফ্যাশন উপজেলা হয়ে ভোলা জেলা শহরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৪ বছর আগে ‘ক্রসড্যাম’ (আড়াআড়ি সংযোগ বাঁধ) নির্মাণের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। শুরুতেই বনের দুই হাজার গাছ কাটা পড়েছিল। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কাটা পড়ত প্রায় অর্ধলক্ষ গাছ; এ তথ্য নিশ্চিত

করে বন বিভাগ। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী এ প্রকল্প বন বিভাগের আপত্তিতে এক-তৃতীয়াংশ কাজ করেই ইতি টানতে হয় আট বছর আগে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকল্পের এক বাঁধ নির্মাণে পৌনে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। নির্মিত বাঁধটি কোনো কাজেই আসছে না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য গঠন করা জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের ব্যয় হওয়া টাকা গচ্চা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সমীক্ষা ছাড়া বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে অপরিকল্পিত প্রকল্প অনুমোদনের ফল এটি। সরকারি টাকা অপচয়ের এ দায় সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে। সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে পথ (রুট) দেখানো হয়েছিল, সেটি রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন থেকে চর বনানী

হয়ে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরইসলাম থেকে চরমাইনকা পর্যন্ত। বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের ৩ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রাঙ্গাবালী অংশের এবং বাকি ১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার ছিল চরফ্যাশন অংশের। এ দুই অংশের রাঙ্গাবালী প্রান্তের দক্ষিণে ‘বনানী’ নদীতে একটি বাঁধ এবং চরফ্যাশন প্রান্তের উত্তরে তেঁতুলিয়া নদীর একটি শাখায় আরেকটি বাঁধ নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক করার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা যায়, জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ২০১১-১২ অর্থবছরে নেওয়া এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘চরমাইনকা-চরইসলাম-চরমোন্তাজ ক্রসড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক প্রকল্প। ২০১০ সালের

৩০ নভেম্বর এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কাজটি পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন’। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ প্রকল্পের শুরুতেই কাটা পড়েছিল বনের কয়েক শ গাছ। রাঙ্গাবালী অংশের চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন থেকে চরলক্ষ্মী পর্যন্ত ‘বনানী’ নদীর বুকে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। এতে উজাড় হয়েছিল ম্যানগ্রোভ বনায়নের প্রায় দুই হাজার গাছ। বন বিভাগের ভাষ্যমতে-কেওড়া, ছইলা ও গেওয়া প্রজাতির এসব গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরে বন বিভাগের আপত্তিতে চর বনানী থেকে উত্তরে যাওয়া সংযোগ সড়ক এবং চরফ্যাশন অংশের বাঁধ নির্মাণকাজটি বন্ধ হয়। শুরু হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন বিভাগের চিঠি চালাচালি।

এতেই কেটে যায় পাঁচ বছর। বন বিভাগের চরমোন্তাজ রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ম্যানগ্রোভ বাগানের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে বন বিভাগ কর্তৃক কোনো প্রকার অনাপত্তিপত্র গ্রহণ ছাড়াই চরবেষ্টিন-চরলক্ষ্মী হয়ে ভোলার অংশ পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাগানের ৪০ থেকে ৪৫ হাজার গাছ কাটা পড়ত। বন বিভাগ বাগান রক্ষার্থে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সৃজিত বনের গাছ না কাটার জন্য এবং ওই এলাকা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ না করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালীকে লিখিত ‘আপত্তিপত্র’ দেয়। পরে বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মিজানুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জেনেছি,

ওইসময় কাজ করার অনুমতি নেওয়ার জন্য তারা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের আবেদনটি রিজেক্ট হয়। এ কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি তারা করতে পারেনি। সে কারণে চরবেষ্টিন থেকে চরলক্ষ্মী পর্যন্ত ৬৫০ মিটার ক্রসড্যাম নির্মাণ করে প্রকল্পটি সেখানেই সমাপ্ত করা হয়। জানা যায়, ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য প্রয়াত মাহবুবুর রহমান তালুকদার। সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রফাদফা করে ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের তৎকালীন সংসদ-সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। ২০১৪ সালে জ্যাকব পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী হয়ে বন্ধ থাকা কাজটি শুরু করার

জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। প্রকল্পের শুরুতে ভোলার সঙ্গে রাঙ্গাবালীর সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল রাঙ্গাবালীবাসীকে। তাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে না তাকিয়ে উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু জ্যাকবের মূল টার্গেট ছিল রাঙ্গাবালী থেকে চরমোন্তাজ এবং অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট ‘সোনারচর’কে ছিন্ন করে চরফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত করার। আর এই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজে বসবাসরত সমাজকর্মী আইয়ুব খান বলেন, যেখানে বন নেই, সেখানে বাঁধটি করা যেতে পারত। তাহলে পরিবেশঘাতী সিদ্ধান্ত হতো না। নষ্ট হতো না টাকাও। তিনি মনে করেন, চরমোন্তাজের সঙ্গে যদি ভোলার সড়ক যোগাযোগের কাজটি আর না-ই হয়, তাহলে বনের ভেতরের এ বাঁধ কোনো উপকারে আসবে না। বরং বাঁধটির কারণে নদীটি ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। ওই নদীতে মাছ ধরা শত শত জেলে জীবিকা হারিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মো. শাহরিয়ার জামান বলেন, নদীতে বাঁধ দিলে দুটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত হতে হয়। এক. নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে, দুই. নদীর নাব্য সংকট দেখা দেয়। ফলে ওই নদীর জলজ জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। বাঁধের সঙ্গে সংযোগ সড়ক স্থাপনের বিষয়টিও থাকে। চরবেষ্টিনের ওই নদীর দুপাশে যে বিস্তীর্ণ বনভূমি এবং নানা প্রজাতির বনায়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই বন অনেকটাই ধ্বংস হতো। কাজেই সঠিক সমীক্ষা ছাড়া যে বাঁধটি নির্মাণ করা হলো, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা জলে গেল-এ দায়িত্ব কে নেবে?

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গৃহবন্দি চঞ্চল চৌধুরী: রাজনৈতিক হয়রানীর শিকার শিল্পীরা ট্রাম্পের বিদেশ নীতি: বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দ্রুত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বার্তা টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ ও ইউনুস সরকারের ধাক্কা জনগণের আশা পূরণে ব্যর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গাজায় দুর্ভিক্ষের তথ্য লুকানোর অভিযোগ কাঁটাতার নিয়ে সংঘাত; ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব আমাদের ঈমান ঠিক আছে তো? প্রশ্ন অভিনেত্রী জয়ার ৪ স্ত্রীর পাশাপাশি ১০০ বাঁদি রাখা নিয়ে তোপের মুখে মুফতি কাসেমী জরিপ: আওয়ামী লীগের প্রতি ৬১ শতাংশ জনগণের আস্থা নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সোহেল তাজ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পূজা চেরি ! ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ড. নুরুন্নবীর পদত্যাগ মিরপুরে বাটার শোরুমের আগুন নিয়ন্ত্রণে ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলায় রাখা হয়নি বসার স্থান, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ও গুলির হিসাব চায় প্রসিকিউশন বিদ্যমান ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নেই রুশ হেলিকপ্টার মিলছে না, ঝুঁকিতে অর্থ ফেরত ট্রাম্পের প্রথম দিন থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান