ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন : ট্রাম্প ফেরায় বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা – ইউ এস বাংলা নিউজ




ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন : ট্রাম্প ফেরায় বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:০৭ 8 ভিউ
ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ওপর তাদের রফতানি নীতি কার্যকর করলে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়তে পারে। বাড়তে পারে রফতানিও। নীতি অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে পারে। চীন এরই মধ্যে এই নীতিকে মাথায় নিয়ে তাদের তৈরি পোশাকসহ আরো অনেক শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগও করছে। বাংলাদেশও এই সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো(ইপিবি)-র ভাইস চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর প্রশাসক মো.আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, চীন থেকে আমাদের সঙ্গে এরইমধ্যে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা তাদের আগ্রহের জায়গাগুলো বিবেচনা করছি। তবে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতি বিষয়ক জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. সেলিম রায়হান বলেন, এর আগেও

ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়ায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আমরা তো তখন সেই সুযোগ নিতে পারিনি। কারণ, তখন আমাদের সেই সক্ষমতা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়াতে পারে। এই পরিমাণ শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য বিক্রি প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। গত ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি বিজয়ী হলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবেন। ফলে চীন তার অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে স্থানান্তর করতে পারে। আবার তারা ওইসব দেশে যৌথ বিনিয়োগেও শিল্প স্থাপন করতে পারে। চীনের তৈরি পোশাক

ও চামড়াজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বাধার মুখে পড়লে ওইসব বাংলাদেশি পণ্যের রফতানিও বেড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের গড়ে ১৫.৬২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। চীনাদের দিতে হয় ২৫ শতাংশ। আর বাংলাদেশ বর্তমানে চীনে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশ থেকে পণ্য নিয়ে নিজ দেশে সস্তায় বিক্রি করতে পারছে। ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছিলেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়। এবার নতুন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সুতা, বস্ত্র এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ নিয়ে চীনের

অনুসন্ধান চলছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশে ১.০৩ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬২৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগ কমে হয় মাত্র ৯১ মিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে চীন ৪০৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পর তা আরো বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে ১৮৭ মিলিয়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬০ মিলিয়ন ডলার হয়। চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের কারণে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক বিক্রি বেড়েছে। কমেছে চীনের পণ্য বিক্রি। পাঁচ বছর আগে পোশাকের বিশ্ববাজারে চীনের অংশ ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি, এখন তা ৩১ শতাংশ। পাঁচ বছরে বিদেশে পোশাক

বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশ পাঁচ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় আট শতাংশ হয়েছে। তৈরি পোশক রফতানিতে বিশ্ববাজারে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থান বাংলাদেশের। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র ভাইস চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ-র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এখন যে পোশাক রফতানি করি, তা কটন-বেজড। কিন্তু বিশ্বে কৃত্রিম সুতার তৈরি পোশাকের বাজার মোট বাজারের ৭০ শতাংশ। এখন আমাদের এখানে কৃত্রিম সুতার পোশাক তৈরি বাড়ছে। চীনা বিনিয়োগ এবং কারখানা এখানে স্থানান্তর হলে ওই বাজারও ধরতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা ওই বিনিয়োগ ধরার জন্য নানা পরিকল্পনা করছি। বিশেষ করে জ্বালনি খাতে যাতে কোনো সমস্যা না থাকে তার জন্য আমরা কথা বলছি। কারণ, জ্বালানি সমস্যা থাকলে আমাদের বিনিয়োগ আনতে

বেগ পেতে হবে। ২০২৬ সালের পরে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স নির্দেশনা। এই নির্দেশনার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে টেকসই ও দায়িত্বশীল কর্পোরেট আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ, স্থায়িত্ব ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সেই কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্স কারখানা বাড়ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সনদ পাওয়া পোশাক কারখানার সংখ্যা ২৩০টি। পরিবেশবান্ধব কারখানার হিসাবে এটিই সবচেয়ে বেশি। বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, বাংলাদেশে কমপ্লায়েন্স কারখানা আরো বাড়ছে। গ্রিন কারখানা যত বাড়ছে, বাংলাদেশের পোশাক খাত আরো শক্তিশালী হচ্ছে। আর চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন

আরো শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশ দুইভাবে লাভবান হতে পারে। প্রথমত, চীনা তৈরি পোশাকের রফতানি যুক্তরাষ্ট্রে কমে গেলে আমাদের রফতানি সেখানে বাড়বে। যদি ২০ শতাংশও কমে, তাহলে সেটা অনেক বড় সম্ভাবনা তৈরি করবে। আর চীনা পোশাক কারখানাসহ আরো অনেক শিল্পের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর হতে পারে। আমাদের সঙ্গে চীন থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চীনারা এখনই এখান পোশাক তৈরি করে মেইড ইন বাংলাদেশ সিল দিয়ে রফতানি করছে। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই)-র সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, চীনারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতসহ আরো কয়েকটি খাতে খোঁজ খবর নিচ্ছে। তারা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ট্রাম্প কী করতে পারেন, সেটা মাথায় নিয়ে কাজ করছে। তবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও বিনিয়োগ পরিস্থিতিও তারা দেখছে। আমাদের এখানকার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতে হবে। তিনি বলেন, তারা কিছু পোশাক কারখানা বা টেক্সটাইল ইন্ডাষ্ট্রি বাংলাদেশে শিফট করতে চাচ্ছে। তবে আমরা বলছি, তোমরা এখানে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ করো। আর বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে তাদের আগ্রহ আছে। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশের কয়লা খনি নিয়ে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশে চীন বিনিয়োগে আগ্রহের আরেকটি কারণ ইইউ করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স। তাদের ইইউর কঠোর শর্তের মুখে পড়তে হবে। আর বাংলাদেশে চীনের চেয়ে পরে এটা কার্যকর হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(বিডা)-ও চীনের নতুন বিনিয়োগ আগ্রহ নিয়ে খোঁজ খবর রাখছে বলে জানা গেছে। তারা মনে করছে, জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। তবে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতি বিষয়ক জাতীয় শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. সেলিম রায়হান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করবে, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু আমরা কি সুযোগ নেয়ার আশায় থাকবো? আসলে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। তাহলে বিনিয়োগ এমনিতেই আসবে। এর আগে যখন ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিলেন, তখনো কিন্তু এই সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ নিতে পারিনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশ সুবিধা নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। ইইউ কর্পোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স নির্দেশনা আমাদের মানতে হবে। আমরা যখন এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবো, তখন অনেক ধরনের সুবিধা পাবো না। আমাদের শিল্পে কাজের পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের দিকে নজর দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ফসলের মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ধানের শীষ পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২ এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময় ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩ মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক : শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে হাইকোর্টের অভিমত : কুরআন অবমাননা ও মহানবীকে কট‚ক্তির শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করতে পারে সংসদ কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন : ট্রাম্প ফেরায় বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ -এ পদার্পণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি স্টার্ককে ছাড়িয়ে আইপিএলে ২৫ কোটির রেকর্ড হবে কার?